Sunday, May 27, 2018

৪৯) আধ্যানের ডায়েরী - বাবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম



মাঝে মাঝেই দেখি বাবা বাড়িতে।  কি, না ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  সে আবার কি ? আমি তো রোজ ডে কেয়ারে যাই। সারাদিন কত কিছু করি।  বাবার মতে সেটা অল প্লে , নো ওয়ার্ক।  কিন্তু আমার কাছে সেটাই ওয়ার্ক।  এন্ড আই ডু ইট লাইক ওয়ার্ক।  সারা দিন না খেয়ে দেয়ে , কখনো ভিলেজে , কখনো কিচেনে , কখনো আবার বল পিট্ এ , আমি সারা দিন আমার কাজ করে চলি।  আর বাবা , বাবা সারাদিন বাড়িতে বসে থাকে।  

একদিন ইচ্ছা হলো, বাবা কি করে দেখি।  সেদিন দু চার বার বেশি পটি করে দিলাম আর মা বাবাকে বললো , ‘তুমি যখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমই করছো তখন ছেলেটা থাক। ‘ বাবা মায়ের কাছে বিশেষ কিছু বলতে পারেনা।  আগে একবার সাত দিন বাড়িতে ছিলাম তখন ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি।  এখন ভালো করে বুঝতে হবে যে করে কি লোকটা সারা দিন।  

মা চলে যেতেই , ফোন নিয়ে বসে পড়লো।  আমাকে টিভি চালিয়ে দিয়ে ভলিউম টা আস্তে , মানে খু-ও-ও-ও-ব আস্তে করে দিলো।  আমি শুনতেই পারছিলাম না।  কিন্তু সে ঠিক আছে।  তখন আমার টিভিতে কি হচ্ছে তার দিকে নেশা নেই।  বাবা যখনিই ফোনে বসে থাকে , তখনই নাকি মিটিং এ থাকে।  মিটিং কি আর ফোনে হয় নাকি।  আমার যখন বন্ধুদের সাথে মিটিং থাকে তখন তো আমি গিয়ে সেই পার্কে হাজির হই , যেখানে আমার মতো সবাই থাকে।  কিন্তু বাবার শুধু ঢপবাজি।  ফোনে শুধু “হুঁ “ আর “হ্যাঁ” , এ আবার কিরকম  ধরণের মিটিং।  

আমি কিছু একটা বলতে যাবো , হটাৎ দেখি হাঁই মাই খাঁই করে কিছু একটা বলে দিলো।  তারপর আবার সেই  “হুঁ “ আর “হ্যাঁ” . সামনে আবার ল্যাপটপ খোলা।  সারাদিন ওই ল্যাপটপ নিয়ে যে কি করে বাবা , বুঝিনা বাপু।  খড় খড় করে শুধু আওয়াজ হতে থাকে।  মাঝে মাঝে টুং টাং।  

আমার কিন্তু ল্যাপটপটা বেশ খেলার জিনিস লাগে।  ওই কালো কালো জিনিস গুলোর ওপর হাত দিলেই দেবে যায় , আর পেছনে লাইট জলে ওঠে।  আর দুটো বাটন আছে।  সেগুলো এমনিতে সাদা থাকে , কিন্তু আমি প্রেস করলেই লাল হয়ে যায়।  আমার প্রথম টার্গেট ওটাই থাকে।  কিন্তু ওটা টিপে দিতেই বাবা চিৎকার করতে থাকে , ‘দিলি তো নেট টা কেটে’ . জাল কোথায়।  আর আমি কখন কেটেছি , বুঝিনা বাপু।  কিন্তু আমার খেলাটা বেশ লাগে।  ঠিক যেমন ফোনের মধ্যে ওই লাল বাটনটা টিপতে।  

সেদিন বাবার মিটিং শেষ হতে আমি গিয়ে বসলাম বাবার কাছে।  দেখবো কি করে।  বাবার নাকি খুব কাজ।  সারাদিন কাজ করে।  কিন্তু একি , বাবা শুধু এ বি সি ডি লিখছে।  ওই কালো জিনিস গুলোর ওপর এবিসিডি লেখা আছে।  সেটার ওপর প্রচন্ড স্পিডে আঙ্গুল চালাচ্ছে আর স্ক্রিনে লেখা ফুটে উঠছে।  এ বি সি ডি।  এই নাকি কাজ।  এর জন্যে নাকি পয়সা পাওয়া যায়।  আর তাই নিয়ে নাকি আমার টয় কেনা হয়।  এর চেয়ে আমায় বললেই হয়।  আমিই না হয় সারা দিন বসে বসে তোমার জন্য এবিসিডি লিখে দিতে পারি।  

আমি আমার হাত বাড়ালাম।  বাবা হাত সরিয়ে দিলো।  দেখলে কেমন মানুষ।  হাত বাড়ালে হাত ধরতে হয় , আর এই আহাম্মক বাবা , হাত দিলো সরিয়ে।  কিন্তু আমি বিশেষ কিছু মাইন্ড করিনা।  আমি আবার হাত বাড়ালাম।  এবার বাবা বিরক্ত মুখে আমাকে কোলে তুলে নিলো।  আর আমার কোলে ল্যাপটপ রেখে দিলো।  তারপর আমার আঙ্গুল গুলো নিয়ে ল্যাপটপের ওই কালো জিনিস গুলোর ওপর একটা একটা করে টিপতে লাগলো।  আর স্ক্রিনে এক এক করে এ বি সি ডি ই সব ফুটে উঠতে লাগলো।  বেশ মজাদার।  কিন্তু আরো বেশি মজা লাগছিলো যখন একটা কালোতে বার বার টিপছিলাম আর একই লেখা বার বার ফুটে উঠছিল।  আর বাবা যাচ্ছিলো রেগে।  

বাবার সব কিছু নিয়ম মাফিক হতে হবে।  এ এর পর বি ই আসতে হবে।  কেন ? সে তো বলার সময়।  আমি দেখেছি বাবা যখন লেখে তখন রীতিমতো উল্টোপাল্টা লেখে।  এ এর পর ডি তারপর এইচ , তারপর ওয়াই তারপর আবার এ আবার এন লিখেই বলতে আরম্ভ করলো , আধ্যান।  এরকম উল্টোপাল্টা লিখতে তো আমিও পারি।  ওই কালোগুলোকে বলছে “কিই”।  সে আবার কি।  যাই হোক একবার এক দিক থেকে আরেক দিকে হাত ঘষে দিলেই তো অনেক লেখা ফুটে ওঠে।  কিন্তু আমাকে ধরে ধরে লেখানোর সময় সেই এ , বি , সি , ডি।  কিচ্ছু জানে না বাবা টা।  সারা জীবন তাই বাবা হয়েই থাকলো।  কিছু করতে পারলো না।  

আমি কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলাম ল্যাপটপ।  সেদিন আমার বাবাকে অবসার্ভ করাই উদ্যেশ্য , বাবার সাথে খেলা না। বাবা সারা দিন ফোনে গল্প করলো আর মাঝে মাঝে এবিসিডি লিখলো।  মাঝে আবার দেখি আমার টিভি চ্যানেল পাল্টে কি সব খেলা দেখছে  টিভিতে।  সবাই মিলে একটা বলের পেছনে দৌড়াচ্ছে।  আমি অবাক।  বাবার মতো সব বড় বড় লোক।  সবাই একটা বলের পেছনে দৌড়াচ্ছে কেন।  আমার কাছেই তো অনেক বল আছে।  রেড বল , ইয়ালো বল , পাপল বল, আমিই ওদের দিয়ে দিতে পারি।  সবাই খেলুক সেগুলো নিয়ে।  কিন্তু ওরা একটা বল নিয়েই খেলবে আর বাবাও হাঁ করে দেখবে।  বাবা  কি ওই খেলা দেখার জন্য পয়সা পায়।  

আমি দুপুরে দুধ খাওয়ার পর একটু ন্যাপ নি।  ঘুম ভেঙে দেখি বাবা পাশে শুয়ে সাংঘাতিক নাক ডাকছে।  আমি দু চার বার বললাম লোল ওভা , লোল ওভা, কিন্তু কোনো লাভ নেই।  বাবা সেই নাক ডেকেই চলেছে।  আমি আর কি করি , নিজের পড়াশুনা শুরু করলাম।  বাবাকে নিয়েই হেড , শোল্ডার, নিস্ এন্ড টোস করলাম।  আইস , এন্ড ইয়ার , এন্ড মাউথ এন্ড নোস্।  যেই  নাকের ফুটোয় হাত ঢুকিয়েছি বাবা সেই বিষম টিশম খেয়ে উঠে পড়লো।  আমি বুঝতেই পারলাম না ব্যাপারটা কি হলো।  

ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপ টা দেখলো অন আছে কি না।  বাবার হাতে মাউসটা লাগানো থাকে একটা ব্যান্ড এর সাথে। যখনিই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে তখনি এটা করে।  কি জানি কেন।  কিন্তু মায়ের যেমন ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে অন্ধকার হয়ে যায় , বাবার কিন্তু হয় না।  ল্যাপটপ চেক টেক করে দিব্যি আমার সাথে খেলতে আরম্ভ করলো।  আমার কিন্তু সেদিন কোনো রকম মন ছিল না যে বাবা আমার সাথে খেলুক।  আমি চাই বাবা কাজ করুক আর বিকালে আমার সাথে খেলুক।  কিন্তু ব্যাপারটা দেখি উল্টো, বাবা সারা দিন কোনো কাজই করলো না।  কিছুক্ষন এবিসিডি লিখে আর ফোনে মিটিং করেই কাটিয়ে দিলো।  

আমি ছোট হতে পারি।  কিন্তু রেস্পন্সিবল এবং এথিকাল। আই ডোন্ট টেক এনিথিং ফর গ্র্যান্টেড।  আমি সবার এন্টারটেইনমেন্ট করি , আর তার পরিবর্তে আমি খেতে পাই।  সেটা আমার কাজ।  বাবা কি করে ? কি করে শুনি।  সারা দিন সোফায় বসে থাকে নয়তো টেবিলে বসে থাকে।   সিটিং ইস দা নিউ স্মোকিং , শোনেনি কোনোদিন।  আর তার জন্যেই গাদা গাদা পয়সা পায়।  সেটাও জানিনা ছাই কি পায়।  নিশ্চয় খুব কম , নাহলে সব খেলনা মা কেন কিনে দেয় ? যাই হোক বাবার উচিত একটু কাজে মনোযোগ দেওয়ার।  তাতে নিজের আর ছেলের ভবিষ্যৎ মজবুত হবে।  মুড টা বিগড়ে গেলো বাবার অপকর্ম দেখে। আজেকে আর লিখছি না. 


আধ্যানের ডায়েরির  পাতাগুলি 

No comments:

Post a Comment