আঙুরফল খুব টক। কিন্তু এ তো তেঁতুল । আজকাল এই প্রি ওয়েডিং ফটোশুট তো রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে যে বিয়েটা কম বয়সে না করলেই হতো। কেয়ার অফ শ্যাওড়া বিকেম ডানাকাটা পরী। হোঁদলকুতকুত বিকেম মাইকেল এঞ্জেলো। আর পাশের পাড়া এখন অমরাবতী। দ্যাবা , দেবী , লোকেশন ও ফটোশপ। একের পর এক বেরিয়ে আসছে স্বপ্ন , স্বপ্নের মধ্যে কল্পনা আর কল্পনার মধ্যে ইচ্ছা। ঠিক এমনটাই দেখতে লাগে যখন দেখি জাঙ্গিয়া পরে বিড়ি খাওয়া কলেজ মেসের জুনিয়র এক হাত আকাশে তুলে এক হাতে একটা মেয়েকে ধরে আছে। চার পাশ আবছা আবছা আর দুজনে ফুটে বেরিয়ে আসছে ফটো থেকে।
কে না হতে চায় হিরো। অন্তত একজনের কাছে হলেও। আজন্মকাল থেকে তার প্রচেষ্টাই করে এসেছে নরনারী। ঘটি গরম করে ধুতি ইস্ত্রি থেকে শুরু করে বাট ক্লিভেজের নিচে কেলভিন ক্লেইন দেখানো পর্যন্ত মানুষ পোশাক পারিপাট্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করে গেছে যুগের পর যুগ। ময়ূরের পেখম মেলা থেকে শুরু করে কুকুরে ঠ্যাং তোলা সবই ইমপ্রেস করার প্রচেষ্টা। কিন্তু এই হঠাৎ ছবির মধ্যে নিজেকে অদ্ভুত (সুন্দর) ভাবে পরিবেশন করে কাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে এই ফ্যাক্ট ডিস্টরটিং ইলুমিনেশন একটিভিটি। বাংলায় যাকে বলে প্রক্ষালিত সত্য পরিবেশন।
সমস্যা তখন থাকে না যখন ট্যাঁপা আর টেঁপির গঠনশৈলী গার্নিশিং এর অভাবে পরিবেশনবঞ্চিত থাকে। কিন্তু হিরো আলম এখানে সালমান। আগে বিয়ের জন্য যে ছবি তোলা হতো , তাতে নানা রকম রং চং মাখিয়ে একই কাজ করা হতো। তফাৎ এই যে তখন সামনাসামনি হলে বর্জন। এখন আগে অর্জন তারপর মিথ্যা আস্ফালন। যারা সুন্দর তাদের ফটোশুট অসাধারণ। কিন্তু যারা কুৎসিত তাদের ফটোশুট খিল্লি এবং মনোৰঞ্জক।
প্রেমবিবাহে তাও এই ফটোশুট দেখলে পেটে খিল ধরে না। কারণ প্রত্যেক প্রেমিক প্রেমিকাই কোনো না কোনো ভাবে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে বন্ধু বা পরিবারের অক্ষিগোচর হয়েছে। কিন্তু ধরে বিয়ে দেওয়া লোকেরা যখন এই ফটোশুট করে তখন মনে হয় আহারে শেষমেশ পেয়েছে, এবার ছিঁড়ে খাবে। কত প্রেম না পাওয়া ব্যাথা খাওয়া মানুষের গগন বিদারী চিৎকার , “ম্যাপেল গাছের ঝরা পাতার ওপর দিয়ে হেঁটে যাবো ” বা “ হাত ধরাধরি করে ব্রিজে পোজ দেব” বা “চোখে চোখ রেখে আমার পরান যাহা চায় গান গাইবো ” সব একসাথে পূর্ণ করেছে এই প্রি ওয়েডিং ফটোশুট। দেখেই বোঝা যায় ন্যাড়ার বেলতলা গমন।
যদিও বিবাহ পূর্ববর্তী স্বপ্নালু সময় ফ্রেমবন্দি করে রাখাটা বেশ আবশ্যিক। নাহলে ছেলেমেয়েদের দেখিয়ে বলতে হবে তো দেখ বাবা কাঁঠালপাতা চেবাচ্ছে। এক মাস পরেই জবাই। তারপর শুধু শুটিং , ধাঁই ধাঁই ধুম ধুম। বা বই থেকে চোখ না তোলা বাবা বলতেই পারে দেখ আমিও নাচতাম। বা গলা বুক কোমর পেট এক হয়ে যাওয়া মা বলবে আমিও ছিলিম ছিলাম - তোর বাবা ফুঁকে দিয়েছে।
সত্যি বলতে কি আজকাল তো বিয়ের আগেই হানিমুন হয়ে যায় তাই বিয়েটা এখন ন্যাকামিই বটে। তাই ওপরে আরেক লেয়ার ন্যাকামো পড়লে বিশেষ খারাপ লাগেনা। তবে হ্যাঁ কিছু বছর আগে পর্যন্ত বিয়ের ছবি বা ভিডিও যা হয়েছে তার থেকে এই ন্যাকামো বিস্ফোরক লেভেলের সুন্দর। গাছের পেছন থেকে টুকি টুকি খেলা (দিঘার ঝাউবন), ফাঁকা রাস্তার মাঝে ফুল দেওয়া (সকাল চারটের ফটোশুট), আগেই কোলে তুলে ওজন মেপে নেওয়া( এরেঞ্জ দের ) , দুজনে হাত বেঁকিয়ে হার্ট বানানো ( অন্য মানেও হয়) , ঝাঁপিয়ে পরে কাঁপিয়ে দেওয়া ( কোমরের ওপর খুব চাপ) , উড়ে যাওয়া ওড়না ( তেল দিয়ে চেপে রাখা চুল) , সুন্দর ব্যাকড্রপ ( সুইসাইড পয়েন্ট) , উড়ে যাওয়া পায়রা ( বিষ্ঠাপতন বাঁচিয়ে) , লেকের মধ্যে পিঠে পিঠ দিয়ে ( প্যান্ট ভিজে সপসপে ) , ধানের খেতে ( কাদায় পা ডুবিয়ে ) আরো কত কি করে এই সৌন্দর্য সৃষ্টি করা হয় তা আর বলতে।
যাইহোক , আসল কথা হলো যে যেভাবে পারে করছে , তা করুক। কিন্তু করতেই হবে এরকম কোনো কথা নেই। মানছি পিয়ার প্রেসার একটা বড় জিনিস। সবার নিজেকে সুন্দর দেখতে বা দেখাতে ভালো লাগে কিন্তু জীবনটা সিনেমা তো নয় , যে হিরোইন বদলে বদলে যাবে প্রত্যেক সিনেমাতে। সেই কুমড়োপটাশ আর শিরিঙ্গি দেড় সাথেই থাকতে হবে । আর ব্যাপারটা প্রি ওয়েডিং বলেই এতো বলা, নাহলে ছাগলছানার জবাইয়ে দিন তো ব্যাপারটাই অন্য রকম। সব ধরণের বেনারসি সব মিলিয়ে ছবিতে প্রায় একই রকম দেখতে লাগে ( মোটেই না , আমারটা একদম লেটেস্ট) আর ছেলেদের ধুতি পাঞ্জাবি তো বিদ্যাসাগরের যুগ থেকে একই । এখন যদিও লাল নীল ধুতি উঠেছে কিন্ত বিয়ের দিন তো সব ছেড়ে সেই সাদা গেঞ্জি আর সাদা জোড়। সারাদিন না খেতে পেয়ে শুকনো মুখে নাকে সিঁদুর নিয়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। সেই ছবিগুলো লুকোবে কোথায় ? মেগাপিক্সেল তো সর্বত্র। দশ দিনের মধ্যেই পেত্নী ব্যাক টু শ্যাওড়া এন্ড মামদো ব্যাক টু মগডাল। বাচ্চাদের দেখলেই পরে বলবে , “এ মা এতো ফটোশপ ( হ্যাঁ ফটোশপ এখন গালিও বটে) .” তাই ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।
এইরকম বিক্ষিপ্ত চিন্তার শেষে নেট এ খুঁজতে খুঁজতে একদিন পেয়ে গেলাম এমন একটা ছবি যা নিতান্তই অনাড়ম্বর ভাবে ব্যক্ত করে প্রি ওয়েডিং আসলে যা হওয়া উচিত তা নিয়ে। ইচ্ছা , কল্পনা ও বাস্তবের মিশ্রণ। হতে পারে , বা হবে এই ভাব নিয়ে রক্তমাংস বর্জিত পূর্ণ মানসিক প্রতিফলন ব্যাপৃত এই ছবিটির নিরহংকার সাত্বিক অবস্থান সম্বলিত সম্ভ্রমে ব্যক্ত করে সম্যক অব্যক্ত সত্যকে। আপনারাও তার আস্বাদ নিন। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এখন আবার মাঝে মাঝেই উঁকি মারছে প্রি ওয়েডিং ভিডিওশুট। সে নিয়ে আবার পরে একদিন লেখা যাবে।
Chheler biye hoyni bole onyoder dekhe irshay jolche.
ReplyDeleteE chele ek chele r baba....So nyara slreaal beltolay chole geche
ReplyDelete