Friday, January 12, 2018

22) ডিম মহিমা


কথায় আছে প্রেম নিয়ে না লিখলে সাহিত্যিক হওয়া যায়না।  আর আমি বলি ডিম নিয়ে না লিখলে খাদ্যরসিক হওয়া যায়না।  ডিম কে না ভালোবাসে?  হে হে ভেজিটেরিয়ানরা অস্ত্রে শান দিচ্ছে।  বাবা ধর্মের থেকে ডিমের মহিমা অনেক বেশি।  শুধু ডিমের জন্য ভেজিটেরিয়ান থেকে বেরিয়ে গিয়ে একদল লোক নিজেদেরকে এগিটেরিয়ান বলে।  অসুবিধা কি আছে।  প্রাণহত্যা বা ভ্রুন হত্যা তো করছে না রে বাবা।  যে ডিম থেকে বাচ্চা হবে না সেই ডিমই খাওয়া হয়।  বলতে গেলে মুরগির রজঃস্রাব।  না না আগের লাইনটা ভুলে যাও।  বিন্দাস ডিম খাও।  বুদ্ধদেব বলে গেছেন ধর্মচক্রপ্রবর্তন সূত্রে, ইহজীবন দুঃখময় , দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব আর সেই নিবৃত্তির পথই হলো জীবন এবং পুনর্জন্ম।  তাই ভেজিটেরিয়ানদের জন্য , চিকেন মাটন থাক কিন্তু তোমাদের জীবন সত্যি দুঃখময়, দুঃখের কারণ হলো ডিম না খাওয়া ,  দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব যদি ডিম খাও , আর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ডিম খেয়ে অতৃপ্ত হয়ে মরে গিয়ে এই ধরাধামে ফিরে আসার একটাই কারণ হলো ডিম।  

থাক সে কথা। যারা ডিম খায়, তারা জানে একমাত্র গিল্ট ফ্রি ফুড হচ্ছে ডিম।  কোলেস্টেরল রুগীদের ছাড়া।  এই একমাত্র জিনিসে ডিম মার খাচ্ছে বটে।  কিন্তু তার জন্যেও ব্যবস্থা আছে।  কুসুম বাদ।  কিন্তু কুসুমেই তো স্বাদ।  হাঁসের ডিমের লালচে কুসুম , পোল্ট্রির ফ্যাকাসে , quail ( নানা কোয়েল না quail) এর ছোট্ট কুসুম, রাজহাঁসের গোদা , উটপাখির বিশাল কুসুম সবই অত্যন্ত উপাদেয়।  কুসুমের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হবে না , কম খাও তাহলেই চলবে।  স্বয়ং পৃথিবী কে যখন বলা হলো সূর্যের চারপাশে কি ভাবে ঘুরবে।  বললো ডিমের ধার ধরে ধরে।  তাহলেই বোঝো।  ডিমই একমাত্র খাবার যা প্রকৃতি বিরুদ্ধ নয়।  

শিশু থেকে বৃদ্ধ , দাঁত উঠছে বা দাঁত পড়ছে , হাত পা চলছে , বা নড়ছে না, সবার জন্য এই ডিম।  শৈশবে দেশী মুরগির ডিম , যৌবনে হাঁস , কচ্ছপ , রাজহাঁস, বার্ধক্যে পোল্ট্রি।  ডিম সবার জন্য।  কখনো সাদা , কখনো নীলচে , কখনো ব্রাউন আবার কখনো ছিট্ছিট্।  রোজ একটি বা দুটি  ডিম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।  মায়ের দুধ শেষ হতেই প্রথমেই বলে দেশী মুরগির ডিম সেদ্ধ খাওয়াও , যৌবনে শুরু হয় শরীর চর্চা তখন তো প্রোটিনের জন্য দিনে দশটা ডিমও খাওয়া যায়। দারুর সাথে ওমলেট বা রাজহাঁসের বিশাল ডিমের ভুরজি তো অত্যন্ত উপাদেয়।  জরা যখন সব কিছু খাবার এক এক করে প্লেট থেকে সরিয়ে নিয়েছে তখনও কিন্তু ডিম বিরাজ করছে, রাজার মতো।  সকলেই আসে জীবনে আর ছেড়েও চলে যায় কিন্তু ডিম থাকে সাথে , শুরু থেকে শেষের পাতে।  

জীবনের একটা বেশ বড় সময় ডিম এক সাথে মা আর বৌ এর কাজ করে।  ব্যাচেলার জীবন।  ঠিক এই সময় মনে হয় মুরগী ডিম পারে শুধু ব্যাচেলরদের জন্য।  কাঁচা , সেদ্ধ , হাফ বয়েল , ভুরজি , ওমলেট , পোচ , সানি সাইড আপ , ফুল ফ্রাই , হাফ ফ্রাই , স্ক্র্যাম্বলড নানা রূপে নানা ভাবে জ্বলে যাওয়া পেটের পরিতৃপ্তি ঘটায় এই ডিম্ব।  আর সবথেকে বড় কথা , সবার ভেতর আরামসে ঢুকে যায়।  আলুর সাথে সেদ্ধ ডিম চটকে নাও , পাউরুটি ডুবিয়ে ভেজে নিয়ে স্টাইল করে বলো ফ্রেঞ্চ টোস্ট , পাও তে সেদ্ধ ডিম পুরে দিয়ে আন্ডাপাও, ম্যাগি বানিয়ে তারওপর ডবল ডিমের একটা ওমলেট বসিয়ে দাও , পিয়াজ কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ওমলেট যদি বোর লাগে বাকি সবজি ভেজে নিয়ে অমলেট বানানোর পর একটা চিস স্লাইস দিয়ে চিস অমলেট বানিয়ে নাও , দোকান থেকে পরোটা কিনে এনে ওপরে অমলেট দিয়ে এগরোল তো মাশাআল্লাহ , প্রেসার কুকারে চাল , ডাল , আলু আর ডিম এক সাথে ফুটিয়ে ঘি দিয়ে ডিম ভাতে আলুভাতে ভাত,  যদি পিয়াজ রসুনের মন মাতানোর গন্ধের জন্য মন কেমন করে তাহলে ডিমের ডালনা আরো কত কত কি।  সত্যি ডিম ছাড়া ব্যাচেলর জীবনে আর কিছু ভাবা যায়না।  

ডিম এক বিশ্ববন্দিত খাবার।  ধর্ম -বর্ণ-জাতি-ভাষা-দৈর্ঘ-প্রস্থ-উচ্চতা-লিঙ্গ-বয়স  নির্বিশেষে সবাই এর গুণ গায়।  কিমচি থেকে হিবাচি , ওরিয়েন্টাল থেকে কন্টিনেন্টাল , ঝোল থেকে ডালনা , ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনারে ডিম সর্বভূতেহিতেরতাঃ।  ময়দা যখন ডিমের সাথে কোলাকুলি করে তখনি তো কেক পেস্ট্রির আসল মজা।  পৃথিবীর হাজার হাজার ধরণের কেক ও পাউরুটির জন্য রাজা হলো ময়দা আর ডিম হলো রানী। মিলনেই প্রিন্স চার্মিং ও প্রিন্সেস জেসমিন।  ওই ‘এগলেস’ তাদের জন্য ভালো , যারা অসুস্থ বা জানেনা আসল স্বাদ কি। তাই গ্লোবাল সিটিজেন হতে হলে  সকালে ঘুম থেকে উঠে দুধে কাঁচা ডিম চাই , তারপর ইংলিশ ব্রেকফাস্ট এ এগ বেনেডিক্ট , এরপর লাঞ্চ এ ফ্রিটাটা আর সালাদ উইথ মেয়োনিজ ড্রেসিং, বিকালে এগ ডেভিল , রাতে ওমলেট আর রুটি।   

সবই তো হলো , শেষে ফিরে আসি সেই ধর্মে।  হিন্দুর গরু খাওয়া বারণ (মৎস্য ও বরাহ অবতার থাকলেও এরা খায়), মুসলমানের শুয়োর খাওয়া বারণ , ক্যাথলিকদের শুক্রবারে চিকেন খাওয়া বারণ , জুডাইসম এ মাংসের সাথে ডেয়ারি মেশানো বারণ , কিন্তু ডিম কোথাও বারণ না।  হ্যা অবশ্যই জৈন , বৌদ্ধ বা বৈষ্ণব ধর্মে অহিংসা নীতির জন্য যেকোনো মাংস খাওয়া বারণ , কিন্তু দুধ খেতে গেলে যতটা অত্যাচার করতে হয় ডিমে কিন্তু কখনোই তা নেই।  সাধারণ নিয়মেই সময় মতো ডিম তৈরী হয় ও নিষেক না হলে সেই ডিম নষ্ট হয়।  তাই যেকোনো ধর্মেই এই ডিম খাওয়া যায় কিছু চিন্তা না করে।  

এতো গেলো খাওয়া , এবার বাকি গুলো ? হে হে।  ডিমের খোলা শিল্পীর ক্যানভাস, গুঁড়ো করলে ক্যালসিয়াম, ফেস ক্রিমে মেশালে স্ক্র্যাব, ভিনিগারে মেশালে যন্ত্রনা পরিহারক ,  পচা ডিমের গন্ধ সালফার লিকের পরিচায়ক ,  ছুঁড়ে মারলে নিরীহের প্রতিবাদের এক অস্ত্র , এগ হোয়াইট ফেটিয়ে নিয়ে চুলে লাগালে কন্ডিশনার , মুখে লাগালে আন্টি এজিং , জুতোয় লাগালে বুটপলিশ ,  এমনকি ডিম রাখার বাক্স গুলো মশা তাড়ানোর জন্য ধোঁয়া করার জন্য কাজে লাগে।  আর কি চাই।  

তাই আসুন আগামী ১২ অক্টবর থেকে প্রতি বছর পালন করি বিশ্ব ডিম দিবস যা সারা বিশ্ব পালন করছে 1996 থেকে।  



প্রবন্ধ

No comments:

Post a Comment