“মাই
মাদার টাং ইস দ্যাট ল্যাংগুয়েজ , টু সেভ ইট পিপল
স্যাক্রিফাইসড দেয়ার
লাইফ .” যেখানেই সুযোগ পাই, এই কথাটাই বলি। কি
ভালো লাগে বলতে ও শুনতে। পৃথিবীর
মধ্যে একমাত্র ভাষা ( এখনো পর্যন্ত ) যার রক্ষার্থে মানুষ প্রাণ দিয়েছে। এতো বড় খেতাব আর কোনো ভাষার ভাগ্যে
জোটেনি। এ ভাষা এতো ঠুনকো না , যে তোমার আমার ইংরাজীর জন্য এ ভাষা ধ্বসে যাবে।
বাংলা
নানা ভাষার সংমিশ্রণ। আর
এই মিশ্রণ আর ক্রমপরিবর্তন সর্বদা এই ভাষাকে আগে নিয়ে গেছে। যে সয় , সে রয়। যে যুগের সাথে চলে , সে অমর। বাকি সব ফালতু। তাই বেশি প্যান প্যান না করে বাংলাকে
ভালোবাসাই এর নৈবেদ্য।
বাংলা
ভাষা এক ধর্ম। যারা
প্রাণ দিয়েছিলো তারা হতে পারেন মুসলমান , যারা বিশ্ববন্দিত তারা হতে পারেন হিন্দু
, যারা ভারবাহক তারা হতে পারেন বৌদ্ধ , যারা প্রচারক তারা হতে পারেন ক্রিশ্চান -
কিন্তু সবাই তো বাঙালি। যেদিন
গান্ডুজি এই দেশ ভেঙে দু টুকরো করে , সেদিন থেকে বাঙালির কাছে ইন্ডিয়া ফার্স্ট নয়।
বাংলা ফার্স্ট। বন্দুকের নলের সামনে
,” জি সাহাব , হাম গরিব আদমি হ্যায় ” বলে পিছু ফিরে আমরাই বলি , ‘ভালো মন্দ যাহাই
আসুক সত্যরে লউ সহজে .’ যখন বন্দুক ধরার তখন ধরেছি। যখন ভ্যাজাল বকে কাজ হয়েছে তখন
ভ্যাজাল বকেছি। কিন্তু
ধর্মের জোরজুলুমে কাত হয়ে যাইনি। আশফাক যখন প্রশ্ন করে নীললোহিত পড়েছিস , চন্দন
তখন উত্তর দেয় হিমু সমগ্রও পড়ে দ্যাখ। দুজনেই
কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ ঝাড়ে।
ভারতে
হিন্দুত্ববাদী , বাংলাদেশে মোল্লা , দুই
বাংলার কুলাঙ্গার অপমান করে চলেছে তাদের আসল ধর্ম কে। কে আল্লা বলছে, কে রাম বলছে , বলছে তো
সেই বাংলাতেই। আরবিক বা
দেবনাগরীর চ্যাংড়ামো ওদের নিন্দনীয় মরণের পারে। পৈতে ঝোলালে তবে ব্রাহ্মণ , খৎনা হলে
তবে মুসলিম বা জিউ , পাগড়ি পরলে তবে শিখ , ক্রস ঝোলালে তবে ক্রিশ্চান আর বাঙালি সে
তো ভাবলেই বাঙালি। কোন
ধর্ম সোজা। মানব
ধর্ম। আর সেটাই বাংলা ভাষা। এর তীর্থ সোফায় বসে , ধর্মাচরণ পাড়ার
ঠেকে , মানত করে বই পড়া, দন্ডি কেটে আনন্দ পাবলিশারে লাইন দেওয়া , এর থেকে সোজা আর
কোনো ধর্ম আছে। লাইব্রেরী
গঙ্গাজলে ধুতে হয় না , মক্কার দিকে
মুখ করে বই পড়তে হয় না , খিস্তিও মন্ত্র , দেব দেবীর ফটো আছে, পোর্ট্রেট নয় , পঞ্চেন্দ্রীয় দিয়ে একে
অনুভব করা যায়, আর হ্যাঁ ধর্মগ্রন্থ ওজন দরেও বিক্রি করলে কেউ এসে পেছনে বাঁশ
ঢোকায় না। সর্বধর্ম
সমন্বয়ে সবাই কে ভালো বলে এই ধর্ম। পুরান
থেকে কোরান আর বাইবেল থেকে ত্রিপিটক টুক টাক অনুবাদে সরলীকরণ করে বিন্দাস ইনটেক
হয়ে যাচ্ছে। আর কি
চাই।
কোনো
নিয়ম নেই , কোনো রাঙা চোখ নেই , কোনো বাধা বিপত্তি নেই , আছে শুধু আনন্দ। ধর্ম তা
, যা ধারণ করে। এই
কুড়ি কোটি বাঙালিকে এক সাথে ধরে আছে কোন ধর্ম? পেটুক বাঙালির চিংড়ি ইলিশের লড়াই,
পোস্ত শুঁটকির কম্পিটিশনের মধ্যে কোথায় সেই শাপ দেওয়া - হাওয়ায় মেশা তেত্রিশ কোটি
না দেখা দেব দেবী। যীশু
, নবীর মতো আমাদেরও পিসি
সরকার আছে। অষ্টবসুর মতো কয়েকশো বসু আছে। দেবানন্দপুর
অমরাবতী। জোড়াসাঁকোয়
কৈলাশ। কলকাতা মক্কা আর ঢাকা মদিনা। জেরুসালেম
হুগলি নিয়ে মারামারি নেই। নেই
সিলেটি আর বর্ধমানের বাংলার মধ্যে ভেদাভেদ। না
আছে জিহাদ , না ধর্মযুদ্ধ , না ক্রুসেড -
আছে কবির লড়াই আছে তর্কের পর তর্ক। বিদেশের সনেট থেকে দেশি পয়ার। ছন্দে ছড়ার সাথে অমিত্রাক্ষর ছন্দের
কবিতার গুঁতো। দেহ পট
সনে নট সকলই হারায়। জিভ
অসার, অক্কা - সব শেষ। ফিরে আসার নেই গল্প, আছে লোকের মনে
মনে অমর হয়ে থাকা। নেই টোল , নেই মাদ্রাসা - আছে
শুধু মায়ের শব্দের ভালোবাসা। নেই কোনো খাদ্যে বারণ , নেই মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনি , নেই
স্নান সেরে প্রণাম করার বাঁধা , নেই দাড়ির চুলকানি , নেই আংটির হাজা , নেই টাক
ঢাকা টুপি , নেই টেকো হওয়ার ভয় , নেই দিব্যি -
নেই অভিশাপ , আছে শুধু ল্যাদ, আছে শুধু খিল্লি। আছে পরদুঃখে ভেঙে পড়ার ইচ্ছা , আছে
‘আয় বুকে আয় ‘ বলার সাহস। লেসবিয়ান
, গে , বাই সেক্সুয়াল , ট্রান্সসেক্সুয়াল , দলিত , শিয়া , সুন্নি , ক্যাথলিক ,
প্রটেস্টান্ট , দিগম্বর , শ্বেতাম্বর , হীনযান , মহাযান - নেই কোনো বিভেদ। ঘুমিয়ে
ঘুমিয়ে দেয়ালা , ব্রাশ করতে করতে বকবক , ট্রেনে , বাসে , দাঁড়িয়ে , শুয়ে , বাথরুমে
, ল্যাট্রিনে , যেখানে খুশি যেমন ভাবে এই ধর্ম পালন করা যায়। নেই বোরখা , নেই
হিজাব , নেই শুদ্ধ বস্ত্র , নেই মাথা ঢাকা দেওয়ার চাপ , নেই পৈতে কানে প্যাঁচানো
আর সকাল বেলা মাইক ধরে চ্যাঁচানো। খুশিতে আছে চিৎকার , আছে রঙ্গ তামাশা , আছে
দুঃখ, আছে কান্না , বিরহ আছে মিলন আছে , নেই খাজুরাহোর ক্রিটিক। বাঁ হাত ডান হাতে নেই বিভেদ। নেই ছোঁয়াছুঁয়ির ন্যাকামো। নেই কোনো ধর্মস্থানে ঢোকা বারণ , নেই
কোনো কথা বলা বারণ , নেই ঘুম থেকে উঠে প্রথম কোন পা ফেলবে তার বিধান।
এই ধর্ম
পালন করলেও তুমি ধার্মিক , আর না করলেও তুমি তাই। শুধু জ্ঞান নাও আর জীবন পথে এগিয়ে চল।
কেউ এসে বলবে না তুমি বাঙালি নও। তুমি ধর্মান্তরিতও হতে পারবে না। কেউ তোমাকে তাড়াবে না। কেউ তোমায় মারবে না। কেউ এসে চাঁদাও চাইবে না। শুধু তোমার ইচ্ছা তুমি বাংলা বলবে, কি
বলবে না। শুধু
তোমার ইচ্ছাই তোমার ধর্মপালনে ও স্বর্গারোহনে সাহায্য করবে। এখন তোমার ইচ্ছা
“বাঙালি ” না “বাঙালী” বলে তর্ক করবে না লেখাটা আরো একবার পরে পরেরবার সেন্সাসে
ধর্ম পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেবে।
No comments:
Post a Comment