না না সব ঠিক হয়ে যাবে। উচ্চতা
তো ভালো। খারাপ কিসের। আজ ম্যায় উপর , আসমা
নীচে। কানের কাছে ফুরফুরে হাওয়া হয়তো দেবে
না কিন্তু তাতে কি? ওপর থেকে তো নীল পৃথিবী
দেখা যাবে। কি ভালো লাগতো যখন তিরিশ তলা বিল্ডিং
এর ছাদ থেকে নীচে দেখতাম। মানুষগুলো , জন্তু জানোয়ার গুলো সব ছোটো ছোটো গেঁড়ি গুগলির
মতো দেখতে লাগতো। আজ তবে কেন এতো ভয় করছে? ভয় করার তো কোনো কারণ নেই। আমি তো যাচ্ছি প্লেনে। বহু বছর ধরে পরীক্ষিত এক যন্ত্র। আমার আগে অনেকে তো মরেছে টেস্টিং এ। আর একটু আগেই তো বলে গেছে যে এমার্জেন্সিতে যদি
প্লেন ল্যান্ড করতে হয় তাহলে জলে ল্যান্ড করবে।
আর তারজন্যেই তো লাইফ জ্যাকেট দিয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্লেনটা তো সমুদ্রেই আছড়ে পড়েছিল। না না ওটা তো মাঝ সমুদ্রে। আমার ক্ষেত্রে হয়তো অন্যথা হবে। হাডসন রিভারেও তো প্লেন নেমেছিল। আর আমি তো সাঁতার
জানি, গঙ্গাও পারাপার করেছি । জ্যাক ও তো জানতো। কিন্তু মরলো তো রোসের জন্য। না , না পাশে বসা মেয়েটার সাথে কিছুতেই ভাব জমানো
যাবে না। নিজে বাঁচুন তারপর অপরকে বাঁচার সুযোগ
করে দিন। এই তো বলে গেলো, আগে নিজে অক্সিজেন মাস্ক পড়ুন তারপর অপরকে সাহায্য করুন।
হসপিটালে যারাই মরে , তাদের আগে অক্সিজেন মাস্ক পড়তেই হয়। তাহলে কি এরা যেটা বলে যে বায়ুর চাপের এদিক ওদিক
হলেই অক্সিজেন মাস্ক আপনা থেকে বেরিয়ে আসবে , সেটা আসন্ন মৃত্যুর পূর্বাভাস। না না এতো তাড়াতাড়ি মরলে তো চলবে না।
পিথাগোরাসের ত্রিভুজের দুই কোনে আমি ভূত ও ভবিষ্যৎ দুই ছেড়ে উপরে উঠেছি। কর্তব্য ও স্বার্থ দুটোরই ব্যবস্থা করতে হয় জীবনে। ইন্সুরেন্স টাকা নেওয়ার জন্য বসে আছে টাকা দেওয়ার
বেলায় হাজার নাটক করে। মা কে নোমিনি করা আছে
সব জায়গায়। ছেলে গেলে মা নোমিনির টাকা নিয়ে কি করবে। বৌ বাচ্চার কি হবে। যদিও বৌ এর চাকরি আছে। কিন্তু তাহলেও , যদি আমিই না থাকি তাহলে জীবন কি। যদিও দ্বিতীয়বার বিয়ে সে করতে পারে। কিন্তু বাচ্চাটার সব কিছু গুবলেট পাকিয়ে যাবে। সব ডকুমেন্টেশন ঠিক ঠাক করা আছে যদিও। সব ইউসারনেম আর পাসওয়ার্ড একটা ফাইলে স্টোর আছে। ফাইলটা যদিও পাঠিয়ে দিয়েছি বৌয়ের কাছে ইমেলে। ও ঠিক বার করে নেবে টাকা পয়সা কোথায় কি আছে। পারবে
কি? আমার মরে যাওয়ার পর যদি আমার একাউন্ট ও এক্সেস করে তাহলে সেটা তো ক্রাইম হয়ে যাবে। না না , স্পাউস তো মরে যাওয়ার পর বেটার হাফ, আর
তার আগে বিটার হাফ। কি সব চিন্তা করছি। পঁচাশি শতাংশ তো করেই রেখেছি। নতুন মিউচুয়াল ফান্ড শুধু ওই ফাইলে আপডেট করা নেই।
বাকি ও বার করে নেবে। আর বার বার মরে যাওয়ার
কথাই বা চিন্তা করছি কেন, হাত পা ভেঙে পঙ্গু হয়েও তো পরে থাকতে পারি। কত সৈনিকের ঘটনা
আছে। আর এরা তো আবার প্যারাসুটও দেয় না। শুধু নানা মিষ্টি আস্বস্তি ছড়ায়। এই তো সেদিন পড়লাম, প্লেনে দুটো ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে
গেলেও তেইশ হাজার ফুট থেকে শুধু হাওয়ায় ভাসিয়ে প্লেনকে গ্রাউন্ডে ল্যান্ড করানো যায়। কিন্তু তার জন্য দক্ষ পাইলট লাগে। বেসরকারি সিস্টেমে কি ভরসা করা যায়? কি ভাবে যে তাদের ট্রেন করা হয়েছে কে জানে। আমরাও তো ফ্রেশার দের দাঁড় করিয়ে দি ক্রিটিকাল এপ্লিকেশন
হ্যান্ডেল করতে। ফেল করলে ইয়ে , মানে , হচ্ছে
, আমতা আমতা করে কাটিয়ে দি। ফেল করলে ব্যাক
আপ তো আছে। আমার জীবনের ব্যাকআপ কি ? এই আছি
, হঠাৎ করে পেছন থেকে যম এসে ধপ্পা করলেই ফুড়ুৎ।
নো ব্যাকআপ। পাইলটের গলা তো শুনলাম।
একবার দেখে আসলে হতো না। আমার থেকে বয়স কি বেশি হবে? কিন্তু বয়স বাড়লেই তো
অভিজ্ঞতা বাড়ে না। অনেক বুড়োও গবেট হয়। লার্নিং দু প্রকারে হয় - অবসারভেশন আর আবসর্প্শন। মানে দেখে শেখা আর থেকে ঠেকে শেখা। যদি কো
পাইলট কে অন জব ট্রেনিং দিতে গিয়ে পাইলট এর ইচ্ছা করে কোনো একটা এরর জেনারেট
করে সেটা অন স্পট সল্ভ করে দেখানোর। আর যদি ঠিক করার সময় ফেল করে তবে? কি চাপ। না একবার দেখে আসলে ভালো হয় কে চালাচ্ছে। যাবোই
বা কি করে। এখুনি সুন্দরী এয়ারহোস্টেসগুলো
ক্যানাইন বার করে ঝাঁপিয়ে পরে বসিয়ে দেবে। এতক্ষন ধরে গলা ফাটাচ্ছিলো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস
বন্ধ করুন করে করে। কিন্তু পাশের মেয়েটি তো
দিব্যি ফেসবুক করে চলেছে। ওই তো, আজ ম্যায়
উপর লিখে ডাকফেসে ছবি দিচ্ছে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির
সত্যি যদি কোনো কনফ্লিক্ট হয়। এতো বড় যন্ত্রের
রেডিও সিগনালে কি এই মোবাইল সিগন্যাল কিছু করতে পারবে। কি জানি।
বিজ্ঞানে তো আটকে যাচ্ছে। কিন্তু সাবধানের
মার নেই। আবার সুন্দরীদের বলেও কোনো লাভ নেই। এর এই ছোট্ট ডিভাইস যদি কিছু গন্ডগোল করে তাহলে
পাইলটের স্কিলের ওপর পুরো ভরসা করতে হবে। কিন্তু
যদি পাইলটের হঠাৎ হার্ট এটাক হয়। তাহলে তো
কো পাইলট আছে। কিন্তু যদি তারও এক সাথে হয়। এটাও তো হতে পারে যে ,যেহেতু পাইলট দারুন আর তাই
কো পাইলট কেয়ারলেস হয়ে ফ্রি মিনিয়েচার ভদকা দশ পেগ মেরে উল্টে পরে আছে আর ঠিক সেই সময়
পাইলটের হার্ট এটাক হলো। উফ কেন যে উঠতে গেলাম।
সারা পৃথিবী কেন ট্রেনে করে ঘোরা যায়না।
আমেরিকা শালা সবার থেকে আলাদা হয়ে বসে আছে। একদিকে প্যাসিফিক আরেকদিকে আটলান্টিক। না না কোনো ভয় নেই। ডর কে আগে জিৎ হ্যায়। ভয় কে আটকানোর জন্য সবাই বলে
ভয়ের কারণ অন্বেষণ করে কি করে তা সমাধান করা যায় সেটা জানতে হয়। এই এঙ্গেল এ চিন্তা
করলে প্রথমে আমাকে প্লেন চালাতে শিখতে হবে।
চার পাঁচ পেগের পর যদিও যে কেউ প্লেন চালাতে পারে, কিন্তু সেরকম নয়। আরেক পদ্ধতি হলো ভয় যেসব জায়গা থেকে ঢোকে সেগুলো
আটকে দেওয়া, মানে ভয় যেহেতু একটা সেন্স , তাই ইন্দ্রিয় গুলোকে ঢেকে দিলেই সব শান্তি। সেটাও করেছি, পুরোটা পারিনি কিন্তু অনেকটা করেছি। কানে ইয়ারফোন না, ইয়ারবাড্স গুঁজে মেটালিকা চালিয়েছি
, নাকের ঠিক নিচে আতর লাগিয়েছি , মুখে চুইংগাম চেবাতে চেবাতে গেম খেলছি এমনকি উইন্ডো
সিট পর্যন্ত নিই নি। আইল সিট্। তবু পেটে একবার খেজুরের একবার আঁখের গুড়। সবাই বলে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে কম ঝাঁকুনি হয়
কারণ অনেক উঁচু দিয়ে চলে , তার ওপর আবার বোয়িং হলে কথাই নেই। যত ভারী প্লেন তত নাকি ঝাঁকুনি কম। ঝাঁকুনি হোক
কিন্ত এয়ার পকেটে যেন না পরে। পড়লেই অনেক উঁচু
থেকে ধপাস করে পড়বে শুনেছি। যদি তখন আমি দাঁড়িয়ে
থাকি। সিট বেল্ট বাঁধা না থাকে। আগে থেকে তো এয়ারপকেট ধরা যায় না। বা যদি আমি তখন বাথরুমে থাকি। ধড়াম করে শূন্যে উঠে
মাথা ঠুকে গেলো, মাথা চেপে বেরোতে যাবো হঠাৎ করে বাথরুম আটকে গেলো। আমি তো ক্লস্ট্রোফোবিক। সাথে আক্রফোবিয়া তো আছেই। কি হবে আমার।
আর সাথে যদি দু একটা টেরোরিস্ট ওঠে তাহলে সিক্সটিন বানানা কমপ্লিট। আমার একেতেই ঘন ঘন মুত পায় জল বেশি খাওয়ার জন্য। টেরোরিস্টদের
এই একটা খুব বাজে জিনিস। বাথরুম করতে
যেতে দেয় না। আর এক দেশ থেকে আরেক দেশে ল্যান্ড
করায়। লেটেস্ট জেনারেল নলেজ ফলো করা বন্ধ করে
দিয়েছি। কোনো হোমরা চোমরা টেরোরিস্ট কি তিহার
জেলে আছে ? যাকে ছাড়ানোর জন্য প্লেন হাইজ্যাক করতে হবে। কিচ্ছু জানিনা।
কিন্তু এমনি এমনিও তো করতে পারে। আর
তাহলেই কমান্ডো একশান হবে। আর প্রথম ছিটকে
আসা গুলি আমার মাথাতেই লাগবে। আমি আমার ভাগ্য
সম্বন্ধে এইটুকু কনফিডেন্স তো রাখি। আর কত
আমেরিকা বিদ্বেষী দেশের ওপর দিয়ে প্লেনটা যাবে।
যদি কেউ নিচ থেকে গুলি করে। ইঞ্জিন
খারাপ হয়ে গেলে নাহয় পাইলট ঠিকঠাক প্লেন নামাতে
পারে, কিন্তু যদি ঠিক মাঝ বরাবর বাজুকা ছুঁড়ে দেয় আর এত বড় প্লেন বিস্কুটের মতো দু
টুকরো হয়ে যায়। এই রে , আমি আবার ফোর্টি ফোর
বি। ইমার্জেন্সি লাইনে। মানে ঠিক মাঝ বরাবর। ঠিক আমার লাইন দিয়েই দু টুকরো হয়ে যাবে আর আমি টুক
করে পরে যাবো। ধুর ধুর এসব কি ভাবছি। তার থেকে ফ্রি হুইস্কির কথা ভাবি। সাথে সুন্দর সুন্দর খাবার। আহা আলমন্ড দিয়ে ক্র্যানবেরি আপেল জুসের সাথে ভদকার
তো জুড়ি মেলা ভার। কিন্ত যদি খাবারে বিষ থাকে। অন্তর্ঘাত তো হতেই পারে। অন্তর্ঘাত না হলেও ফুড
পয়সন তো হতেই পারে। হাজার হোক ফ্লাইট মুম্বাই
থেকে ছাড়ছে আর মুম্বাইয়ে ইঁদুর মারা পাপ। আমি
বাবা কুড়কুড়ের যে প্যাকেট নিয়ে এসেছি তাই দিয়েই চালাবো। এমনিতেও ফ্লাইটের বাথরুম খুব ছোট পায়খানা পেয়ে গেলে
কি হবে। তারওপর কাগজ শুরু জল নেই। ওরে বাবা , সে আর এক চাপ। সব না হয় মেনে নিলাম কিন্তু যদি ওঠার সময় বা নামার
সময় রানওয়েতে গরু ঢুকে পরে , বা একটা গোটা ঈগল আত্মহত্যা করে তাহলে তো সবাইকে নিয়ে
মরবে এক সাথে। ধুর ধুর ধুর ধুর এই একরাশ বিচ্ছিন্ন
চিন্তাভাবনার কোনো মানে হয় না। যা হয় হবে। দেখা যাক না কি হয়। মরলে মরবো।
দুঃখ থাকবে একটাই, যে ফালতু মরবো। কিচ্ছু না করে , বসে বসে। কিন্তু ফেমাস হয়ে যাবো। অন্তত ছেলেপুলে বলতে পারবে যে ওই যে প্লেন এক্সিডেন্ট
হয়েছিল না লন্ডন থেকে ডেট্রয়েট যাওয়ার মধ্যে , ওই প্লেনে বাবা ছিল। আর পৌঁছাতে পারলে
তো সব ঠান্ডা। ওই শুরু হয়ে গেছে। প্লেন হঠাৎ
করে স্পিড নেওয়া আরম্ভ করেছে। ফেল করা ছেলে
হঠাৎ করে বাবাকে পেছনে দেখলে যে গতিতে দৌড়োয় ঠিক সেই ভাবে দৌড় শুরু করলো প্লেনটা। ঘটঘট
করে আওয়াজ হচ্ছে। রানওয়েটাও স্মুথ না। ভীষণ কাঁপছে।
এবার মনে হয় উড়ে যাবে। আমার পিঠ হেলে
গেছে। শরীর ভরশূন্য। পায়ের তলায় সুড়সুড়ি। পিঠে চাপ, চোখে সর্ষের ফুল , গলা মরুভুমি , রোস
হাত খামচে ধরেচে। যাঃ উড়েই গেলাম শেষমেশ । ...
No comments:
Post a Comment