Friday, July 19, 2013

খাই খাই চন্দননগর -- Part 2

বলাই এর চিকেন কাটলেট হাতে নিয়ে স্ট্র্যান্ড এর দিকে এগোতে ফাস্ট ফুড এর স্বর্গরাজ্যে এসে পরবে। আজ পর্যন্ত যত পার্ক ঘুরেছি , চন্দননগর স্ট্র্যান্ড এর মত খাওয়াদাওয়ার অতিরিক্ততা আর কথাও পাইনি। বঙ্গভূমিতে যত ধরনের চটপটা সান্ধ্য খাবারদাবারের নাম করা যায় মনে হয় সবকিছুই স্ট্র্যান্ড এ পাওয়া যায়। প্রেমিকাকে বগলদাবা করে ছোলার  চাট থেকে শুরু করে, বন্ধুদের সাথে কলেজ বিড়ি  বা বার্ধক্যের দাবা খেলতে খেলতে মসলা চায়ে চুমুক সবই হাতের কাছে পাওয়া যায়। স্ট্র্যান্ড এর ফরাসী কায়দার  চেয়ার ধরে ফুরফুরে গঙ্গার হাওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানোর মজা নিয়ে যারা বড় হয়েছে তাদের আমি নিতান্তই ভাগ্যবান মনে করি। 

কিন্তু স্ট্র্যান্ড এ যাওয়ার আগে চার্চ আর স্ট্র্যান্ড এর মাঝ খানে এক গুচ্ছ দোকানের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া তিনটি দোকানের কথা এখানে বলব। এই লেখাটা শুরু করেছিলাম বেনারসী কে দিয়ে। তার রাজত্ব শুরু হয় এখানেই। এক সময় এই জায়গাই ছিল বড় বড় গাছ আর একদিকে দুপ্লের বাড়ির বিশাল পাঁচিল আর আরেকদিকে ডুপ্লে কলেজ। সে সময় কলেজের গায়ে লাগানো ছোট্ট একটু বাচ্চাদের পার্ক ছিল। আর তার সামনেই বসত চার পাঁচটা ফুচকাবালা। কিন্তু যখন এই জায়গাটা একটা প্যারিসের এক রাস্তার ( নামটা ভুলে গেছি ) অনুকরণের বানিয়ে তোলা হয় তখন ফুচকার ষ্টল গুলো প্রাধান্য পায় একটা গোল মত জায়গায়। চার্চ পেরিয়ে দান হাতে পরে সেই গোলটা। আর তার মাঝখানেই রমরমা বিসনেস বেনারসী সিং এর ফুচকার দোকান। আমার ছোটবেলায় সে আমাদের স্কুল( কানাই লাল বিদ্যামন্দির) এর সামনে টিফিনের সময় ফুচকা বেচতো। কচিকাঁচার দল সামলাতে সামলাতে তার অতিরিক্ত তিরিক্ষে মেজাজ মোটেই আমার ভালো লাগত না। কিন্ত বেশ কিছু বছর পর যখন প্রেমিকা বগলে নিয়ে তার কাছেই গেলাম ফুচকা খেতে , তখন তার আপ্যায়ন দেখে কে।  ফুচকা র বৈচিত্র তাদের পরিমাপের বৈচিত্রে নির্ভর করে। বেনারসী সেই সময় একমাত্র ফুচকাওয়ালা ছিল যে ফুচকার জলে পুদিনা আর লেবু রস দিত। আর তার বানানো ফুচকার মসলা তো অসাধারণ। আর সবথেকে বড় কথা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। যা চাইবে তাই পাবে। জল বেশি পুর কম, জল কম পুর বেশি, ঝাল বেশি ঝাল কম, কাঁচা লঙ্কার ঝাল বা গুঁড় লঙ্কার ঝাল সব তোমার ইচ্ছা। এতটাই customized যে মুডের সাথে পরিবর্তিত স্স্বাদের পূর্ণ পরিতৃপ্তির gurranty. তবে একটা কথা, ভিড় কিন্তু প্রচুর। অপেক্ষা না করতে হলে অন্য কথাও যেতে পারো। শুধু ভুলে যেওনা সবুরে মেওয়া ফলে। 

বেনারসীর জায়গা ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে গনেশের চাউমিন। একটা বিশাল তাওয়াতে করে চাউমিন তৈরী হয়েই চলেছে আর তোমার ইচ্ছামত customized করে দিচ্ছে তাওয়ার আরেক দিকে। ডিম মেশাও , চিকেন মেশাও , বেশি সস কম সস, হাফ প্লেট ফুল প্লেট, বাড়ি নিয়ে যাও বা দাড়িয়ে খাও যেমন চাও তেমন। যদিও স্বাদে হয়ত প্রথম তিনে রাখতে এখন সমস্যা কারণ মুম্বাই এর ফুটপাতে বাঙালি chowmin এর দোকানে, সেজওয়ান chowmin আমার কাছে এখনকার মত সেরা। তবু স্ট্র্যান্ড এ যদি যাও তাহলে ভুলেও অন্য জায়গায় chowmin খেয়ে পয়সা নষ্ট কর না। 

এবার একটু নিরপেক্ষতা হটিয়ে দিয়ে রবিনদার চায়ের দোকানের পক্ষপাতিত্ব করি। আমার লেখা , আমি যা ইচ্ছা করতে পারি। আর রবিনদার জন্য পক্ষপাতিত্ব করা নিতান্তই কিছু সুমধুর স্মৃতির pay-off. চায়ের পরিমান এবং কোয়ালিটিতে হয়ত রবিন্ দার চা প্রথম পঞ্চাশেও আসবে না। কিন্তু চায়ের দোকান হিসেবে আর দোকানের মালিক হিসেবে রবিনদার জুরি মেলা ভার। আর চায়ের দোকান চিরকালই একটা আড্ডার ক্ষেত্র, আর দোকানের মালিকের ছোট ছোট টিপ্পনি যখন আড্ডার গাড়িতে পেট্রল ভরে দেয় তখন লং ড্রাইভ তো করতেই হবে। দীর্ঘ সাত বছর তাই একটানা আমি বা আমাদের ঠেক রবিনদার পার্মানেন্ট খদ্দের। আমার মতে রবিনদার চায়ের দোকান হলো স্ট্র্যান্ড এর নিউস চ্যানেল আর রবিনদা তার একমাত্র journalist, রিপোর্টার আর নিউস রিডার। 

চায়ের ভাঁড় টা সঠিক জায়গায় না ফেললে ডায়লগ খেতে পর, তাই ঠিক dustbin এ ফেলে এবার ঢুকে পর স্ট্র্যান্ড এ। গঙ্গার ধারের এক কিলোমিটার বাঁধানো এই স্ট্র্যান্ড একটা কখনো না শেষ হওয়া মিলন মেলা। কলকাতার কফি হাউস এর মতই যেখানে সেখানে পরে থাকা স্মৃতি কুড়োতে কুড়োতে যে কোনো সময় যে কোনো ফাঁকা চেয়ার এ বসে স্মৃতি মন্থন বা চারণ করাই এখানে এক মাত্র কাজ। যৌবনের সৌন্দর্য মাখিয়ে হাজার স্মৃতি বানিয়ে ভবিষ্যতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার নাম ঠেক। প্রত্যেক চেয়ার কোনো না কোনো যুবক গোষ্ঠির ঠেক। ভদ্রতা অভদ্রতা মাইল মিশে একাকার। তাই প্রেমিকা নিয়ে কোনো চেয়ার এ বসলেও ভাববেন না যে সেটা সেই সন্ধ্যার জন্য আপনার। ঠিক সমযে এর চারপাশে জমে উঠবে কিশোর আর তরুনের ভিড়। তাদের নিরব প্রতিক্ষা ধীরে ধীরে কটাক্ষে পরিবর্তিত হার আগেই চেয়ার ছেড়ে চলে যান স্ট্র্যান্ড এর ঠিক মাঝ খানে যেখানে সিঁড়ি নেমে গেছে গঙ্গায়। বেছে নিন একটা ধাপ আর একটা দিক। শুধু ভুলে যাবেন না এক ঠোঙ্গা সেদ্ধ ছোলার মিক্সচার নিয়ে যেতে। কারণ এই ছোটো ছোটো মোড়ার ওপরে ছোলা আর মটর সেদ্ধ নিয়ে বসা দোকানি রা আজকাল আর ঘুরে বেড়ায় না। এর পাশেই সময়ে সময়ে পেয়ে যাবে ঘুগনির ঠেলা, বা ভুট্টা পোড়ানো। 

স্ট্র্যান্ড এর দুই কোণে  দুই দোকানের কথা বলব , দুটোই হয়ত স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় নয়। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয়তা যৌবনের জন্য অপরিসীম। একটি ধুম্রপানের  দোকান আর একটি একাকিত্বে যৌবন পানের দোকান। ধুম্রপান নিয়ে কিছু পসিটিভ কথা লিখলেই লোকে এখন তেড়ে আসে। অবশ্যয়ী তেড়ে আসার মতই ক্ষতিকারক কিন্তু মধ্যবিত্ত বঙ্গসমাজে সমাজে কৈশোর পর্যন্ত দুটি জিনিসকে বলা হয় , "বড়রা করে।" একটি ধুম্রপান আর একটি প্রেম। তাই বিড়ি না খেলে , হবে না বড় ছেলে। 

আমার হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশী Goodleaf সিগারেট দিয়ে। ৫০ পয়সায় কিং সাইজ। সে যে কি অখাদ্য ছিল সে আর বলে লাভ নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন স্বাদ আর পয়সার মিল্বন্ধনে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো বিড়ি, চারমিনার, ফ্লেক, ক্যাপস্টান , গোল্ড ফ্লেক এবং পরবর্তীকালে পাউচ তখন ভরসা ছিল এই দোকানটাই। SDO বিল্ডিং এর সামনে এই ছোট্ট দোকান টা ছিল সবার জন্য। সিগারেটের সবথেকে বেশি ভ্যারাইটি ছিল এখানে। পরে আরেকটি দোকান খুঁজে পেয়েছিলাম লক্ষীগঞ্জ বাজারে। কিন্তু উইলস ইনসিগ্নিয়া, নেপালি কাঁচি সিগারেট, চুরুট এবং পারুল বিড়ি এখানেই প্রথম পেয়েছিলাম। পাউচ এর তো প্রচুর ধরন ছিল। আমরা আবিষ্কার করেছিলাম মিনারের  পাউচ যা মনে হয় এখন আর চলেনা। আর সেটা পাওয়া যেত শুধু এই দোকানটিতে। তাই যখনি নতুন কিছু সিগারেটের ধরন টেস্ট করতে চান। চলে যান এখানে। 

দিতীয় দোকানটি স্ট্র্যান্ড এর অপর দিকে , রবীন্দ্রনাথ এর পাতাল বাড়ি আর ভাষা শহীদ স্মারকের ঠিক বিপরীতে রাসোই রেস্টুরান্ট। এর বৈশিষ্ট ছিল একান্ততা। ছোটো ছোটো পর্দাঢাকা কেবিনে কিশোর কিশোরী , তরুণ তরুণীর নিঃশব্দ একাকিত্ব এই দোকানটির খাদ্যমূল্য যথেষ্ট বাড়িয়ে তুলেছিল। স্ট্র্যান্ড এর মত খোলা জায়গায় হাতে হাত দিলেই লোকে ক্যামেরা তাক করে। তার থেকে কিছুক্ষণের নিস্তার ছিল এই শান্ত একান্ত পরিবেশ। এখানে যেন যা খেতাম তাই ভালো লাগত। তবে আমাদের প্রিয় ছিল মিক্স ফ্রাইড রাইস এন্ড চিলি চিকেন। দিদির বানানো চিলি চিকেনের পরই একে রাখব। যদি উচ্চাগ্র  স্বাদ আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে এই চিলি চিকেন আপনার জন্য নয়। হালকা স্বাদের ফুরফুরে মেজাজ এই চিলি চিকেনের। তাই সত্যি যদি একটা চিচ্কেনের পিস কে অর্ধেক করে কেটে একটু ফ্রাইড রাইস এ মেখে প্রেমিকার মুখের দিকে এগিয়ে দিতে চান বা খেতে চান তার হাত থেকে , চন্দন্নগরে এর থেকে ভালো জায়গা পাবেন না। বাগবাজারের মোড়ে আরো একটা কেবিন দেওয়া রেস্টুরান্ট ছিল। কিন্তু মোড়ের ভিড়ে মন মেরে যায়। তার থেকে গঙ্গার ধারে উত্তেজনা বাড়িয়ে সঠিক খাদ্যে উদরপূর্তির জন্য রসই একদম appropriate ডেস্টিনেশন। 

অনেক হলো সুরসুরি। বেরিয়ে এসো বাছা। প্রেমিকাকে বগলে নিয়ে হাঁটতে থাকো  দ এর ধারের দিকে। অরবিন্দ স্কুল এর নিচেই একটা মিস্তির দোকান আছে। এখানে দাড়িয়ে সকাল ৯ টার মধ্যে গরম টেপা কচুরি খাওয়ার কথা ভুলোনা। টেপা কচুরি অনেকেই ভালোবাসে , আমার কিন্তু অখাদ্য লাগে। মানে লাগত, যত দিন না এই দোকানের গরম টেপা কচুরি খেয়েছি। মুচমুচে গোল গোল কচুরি যখন মাঝ খান থেকে ভেঙ্গে ভেতরের গরম ধোয়া ওঠা পুর এ জিভ লাগাবে তখন ভুলে যাবে গান্গুরাম বা হলদিরামের বিখ্যাত টেপা কচুরির কথা। 

এবার একটু লম্বা পথ তাই রিক্সাই চেপে বলুন ভজহরির দোকান। দেখবেন রিক্সা ওয়ালাও জিভ চেটে  নেবে। এ দোকানে যে যায়নি সে চন্দননগরে থাকে না, বা থাকলেও বেরসিক বা পেটরোগা বা নিতান্তই খাদুক মহলে অচল বা বলা যেতে পারে জীবনের তেত্রিশ আনাই মাটি। ভজহরির চপ এক আলাদা মাত্র আলাদা ঐতিহ্য নিয়ে হাটখোলার মুখ উজ্জল করে রেখেছে। ভজহরি মনে হয় মারা গেছে কিন্তু তার চপ চন্দননগরের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। দোকানের পেছনেই ভজহরির দোতলা বিশাল বাড়ি, যার অর্থ যোগান দেয় ওই ছোট্ট দোকান। ব্যাটার টা এক হলেও ম্যাটার কিন্তু অনেক। বেগুনি, ভেজিটেবল , পটল, চিংড়ি, পিয়াজি ডট  ডট ডট। শেষ করা যাবে না। কারণ মরসুমী ফসলের সমস্ত কিছু দিয়েই চপ বানাতে পারে ভজহরি। দুখের বিষয় অতিরিক্ত হাইজিন এখন লোকেদের স্বাদ থেকে দুরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাই ঠোঙ্গায় করে করা করে ভাজা আলুর চপ আর মুড়ি লোকেদের আর পোষায় না। একবার যদি হাইজিন ছেড়ে একটা চপ ভেঙ্গে মুখে ফেলে দেন তাহলে আর ফিরে তাকাতে হবে না। দেখবেন ওখানেই বাড়ির প্লট খুঁজছেন। 

একটা কুমড়ো ফুলের চপ( খুব রেয়ার ) হাতে নিয়ে এগোতে থাকুন। ডান  হাতেই পরবে  মৃত্যুঞ্জয়ের আরেকটি শাখা। মৃত্যুঞ্জয়ের সমস্ত শাখার মিষ্টি আর দই এর যোগান এক জায়গা থেকে হয়। কিন্তু সিঙ্গারা আর ভাজাভুজি আলাদা আলাদা। এই দোকানটির সেরা ছিল সিঙ্গারা আর জিলিপি। সিঙ্গারার দাম সবথেকে বেশি ছিল চন্দননগরে কিন্তু এই সিঙ্গারার এক ঝাল মিষ্টি স্বাদ ছিল যা আমি আজ কোথাও পাইনি। সামোসা হয়ত অনেক জায়গায় অনেক ভালো খেয়েছি যেমন কলকাতার তিওয়ারির গ্রেনেডের সাইজের সামোসা। কিন্তু বাঙালি সিঙ্গারাই মৃত্যুঞ্জয় এখনো এক নম্বরে। বিশ্বাস না হয় খেয়ে আসুন। 

এখান থেকে বেরিয়ে এসে সোজা চলে আসুন জ্যোতির মোড়। মাঝে কিছু নেই। জ্যোতির মোড় থেকে বাঁ দিকে একটু হাঁটলেই পর্বে মডার্ন টি হাউস। চা তো অনেকেই বিক্রি করে কিন্তু  মডার্ন টি হাউস এর মত চা পেতে আপনাকে প্রচুর পয়সা ঢালতে হবে। ভদ্রলোকের ডায়লগ ছিল, "ব্লেন্ডিং টা ইম্পর্টান্ট। অতিরিক্ত দামী চা এর এক মুঠো চা এর সাথে খাজা চা এক বস্তা মেশালে তবে আসে মধ্যম স্বাদ। যা পকেট আর মন একসাথে ঠান্ডা করে।" সেই অসাধারণ ব্লেন্ডিং মডার্ন টি হাউস কে এখনো আমার কাছে এখনও এক নম্বর করে রেখেছে। ইটা শুধু আমার কথা নয় আমি মুম্বাই এবং আমেরিকা তেও সেই চা নিয়ে গেছি যা সকলের কাছে প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছে। আমেরিকায় Teavana বলে একটা চায়ের দোকানে গোল্ডেন monkey বলে একটা চায়ে ঠিক সেই স্বাদ পাই কিন্তু তার দাম অনেক। তাই সস্তায় অসাধারণ চা খেতে চলে যান মডার্ন টি হাউস আর হা ফেরার সময় হাতে করে এক কিলো নিয়ে আসতে ভুলবেন না। 

মডার্ন টি হাউস এর পরেই একটা ঘুমটি , সেটা বাদ দিয়ে তার পরের দোকান k C Das এর মিস্তির দোকান। এই দোকান টা ছোটো বেলা থেকেই আমার কাছে অন্য একটা আকর্ষণ নিয়ে আস্ত। কারণ এর মিষ্টি গুলোর স্বাদে বাঙালিয়ানা কম ছিল। আর এই ভিন্নতাই এর বৈশিষ্ট। যদিও আমি কোনো মিস্টিকেই আমি উত্কৃষ্ট বলব না। তবে লস্যি আর কুলফি তে এর জুরি মেলা ভার। যারা ব্যারাকপুর স্টেশনে লস্যি খেয়ে ভাবেন সেরা খেয়েছি, বা অমৃতসরের লস্যি খেয়ে ভাবেন স্রষ্টা রাই শ্রেষ্ট তাহলে আমায় বলতে হয় একটা অতিরিক্ত পাতলা আর একটা অতিরিক্ত ঘন। কিন্তু  k C Das হলো পরিমিত। আর কুলফির স্বাদ হয়ত অনেক মারওয়ারী দোকানে অনেক ভালো পাওয়া যেতে পারে কিন্তু এই দোকানের প্লেট এ যে কুলফির decoration  থাকতো এবং সেই decorationএর নিজস্ব যে স্বাদ তা অনবদ্য। এই দোকানের আরও একটি ভালো জিনিস ছিল টক দই। অন্যান্য দোকানে হয় অতিরিক্ত টক নয় টক মিষ্টি দই পাওয়া যেত। এর টক দই আমার মতে চন্দননগরে সেরা। বাড়িতে লস্যি বানাতে চাইলে অন্য দোকান থেকে টক দই কিনে পয়সা নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। 

লস্যি খেয়ে পেছনে ফিরে কিছুটা হেঁটে মানকুন্ডু স্টেশন রোড ধরে দু চারপা হাঁটতেই দান হাতে পাবে একটা ছোট্ট ঘুমটি। এখান থেকে ডিমের ডেভিল খেতে ভুল না। সেরা সেই ডিমের ডেভিলের স্বাদ নিতে নিতে আরেকটু হাঁটতেই ডানহাতে পরবে  একটা ছোট্ট মুদিখানার ঘুমটি। যারা নদিয়া বা বর্ধমানের traditional  মুদিখানা দেখেছে তারা এই দোকানটার মূল্য বুঝতে পারবে। এই দোকানে একটা জিনিস পাবে যা ধীরে ধীরে বাঙালি খাদ্য তালিকা থেকে প্রায় উঠে গেছে। যেটুকু আছে তার মান গেছে কমে। নলেন গুড়ের মুড়কি। মুড়কি আজকাল লোকে খায় না। কিন্তু যারা খায় তারা সাধারণ দোকান থেকে খেলে এখন নাক কুঁচকে লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তাই তাদের উদ্দেশ্যে এই দোকানের খোঁজ দিলাম। এর স্বাদ আর গন্ধ অসাধারণ , শুধু উপাদানটা  মরশুমী। 

এক ঠোঙ্গা মুড়কি নিয়ে চেপে বসুন অটো তে। নামুন আমাদের শেষ ডেস্টিনেশন রথের সড়ক। অটো  থেকে নেমে রাস্তা পেরোতেই পাবেন এক পুরনো ধাঁচের মিষ্টির দোকান। সামনেই গনগনে আগুনের ওপর বসানো আছে করাই। তাতেই দিবারাত্র তৈরী হছে বিভিন্ন মিষ্টি। এই দৃশ্য আজকাল বিরল। তাই কিছুক্ষণ দেখুন, ভালো লাগবে। এই দোকানটির স্বাদ আপনাকে সারা দিন নিতে হবে। কোনো নাম নেই। advertise  একদম ই নেই। ফেমাস হওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু দুই ভাই এর হাতের জাদু খেতে সকাল সন্ধ্যে বেশ কিছু মানুষ লাইন দেয় , কিন্তু কেউ গিয়ে বলে না কথাও যে কি অসাধারণ ডালের বড়া খেলাম। যাইহোক এই দোকানে সকালে নিমকি খাবেন, দুপুরে সন্দেশ (কড়া পাক হওয়ার  আগে ... গরম গরম) , সন্ধ্যেতে মটর ডালের বড়া আর রাতে গরম রসগোল্লা।  এই চারটে জিনিস বাদে শুকনো বোঁদে আর গরম দরবেশের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।  

অনেক তো হলো, এক চক্কর তো ঘুরিযে আনলাম চন্দননগরের। কিন্তু সূর্য মোদকের কথা না বললে তো কিছুই শেষ হয় না। কারণ কলকাতার প্রায় সমসাময়িক এই শহরের প্রাচিনতায় এক ঐতিহাসিক পূর্ণতা এনেছিলেন সূর্য মোদক এক শত বছর আগে। মিষ্ঠান্ন প্রিয় বাঙালি সম্প্রদায়ে প্রথম আধুনিকত্ব দেখিয়েছিলেন করাপাকের সন্দেশের মাঝে নরম রস ভরে। বানিয়েছিলেন চন্দননগরের একমাত্র একান্ত আপন মিষ্টি জলভরা। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব একটা উত্কৃষ্ট মিষ্টির মধ্যে এটাকে ফেলবনা। এর কারণ আমার করা পাকের মিষ্টি বিশেষ জমে না। কিন্তু আবিস্কারের আধুনিক মনস্কতায় যেকোনো মিষ্টিকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে জলভরা। বারাসতে সূর্য্য মোদকের আদি দোকানে এই মিষ্টির প্রথম ছাঁচটা  আজ আছে। পারলে একবার চোখ দিয়ে ইতিহাস ছুঁয়ে আসবেন। 


অনেকের মতের সাথে আমার হয় না মিল । 
স্বাদের সাথেও তাই। 
কিন্তু আমার শহরের খাদ্যপ্রীতির জুরি নেই ভাই। 
সারা বঙ্গ , সঙ্গ করে হরেক খাবার থরে থরে। 
ভাবতে গেলেই এখন হঠাত মনটি কেমন করে।
আমার হয়ে সাঁটিয়ে খেও , বারে বারে এস ফিরে, 
সাজানো এই ছোট্ট শহর গঙ্গা নদীর তীরে।  
স্মৃতির পাতা উল্টে যখন উঠলো ঢেকুর টক, 
তখন কলম থামিয়ে ঘুমোতে যাওয়াই উচিত -- থামিয়ে বক বক।  

2 comments:

  1. tinte info:
    1) mordern tea house r chaa ami khani, kintu lokhhigonj bajare kumar r chaa amar kache ekhono obdi saade, gondhe otulonio. obosso kumar dokan tai emon kichu jinis pawa jai, ja chandannagar keno, tar charpasher sohor guloteo pawa jabena.
    2) chandannagar r (kathali) kola kintu bikhaato
    3) dukhher kotha balai r chop r dokaner pore je bakery ta chilo, ota bhenge ekhon okhane onno kichu hochhe, sunlam bakery ta abar toiri hobe, but ei info ta parle ektu reconfirm koro :)

    ReplyDelete
  2. arekta kotha: lokhhigonj bajare jekhane radharani cyle r dokan, tar pashe ekta naamhin bhangachora dokan ache, proti brihospotibaar sokal 7 ta theke sekhane ghee bikri hoi, oi ekdin i sara soptahe...oi quality r ghee ami aaj porjonto aar kothao paini...parle taste koro

    ReplyDelete