Saturday, March 21, 2020

#গো_করোনা_গো ( 4 ) - গৃহবন্দীর আগের বাজার




ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা গৃহবন্দী হয়ে থাকার প্রথম সোপান হলো বাজার করা।  যেদিন ঠিক করলাম যে এবার বেসমেন্টের হোম অফিসে আটকে যাবো সেদিন প্রথম কাজ যেটা করলাম সেটা বাজার করতে গেলাম।  গিন্নি অফিস থেকে ফেরার পথে Costco  বাজার করে আসবে আর আমি যেহেতু বাড়িতে আছি সেহেতু  ইন্ডিয়া স্টোর করে আসবো। 

আমাদের ঠিক ছিল বিশেষ কিছু কেনার দরকার নেই। দুদিন আগেই কানেটিকাটের গভর্নর এমার্জেন্সি প্রিপারেশন ডিক্লেয়ার করেছিল।  প্রিপারেশন।  চারপাশের স্টেটে তখন চূড়ান্ত মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছিলো কেস।  বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক এ।  তাই প্রিভেনশন ইস বেটার দেন কিওর হিসেবে সমস্ত ব্যবস্থা করার ডাক দিয়েছিলো মাত্র।  কিন্ত যেমন ট্রাম্পের ট্রাভেল ব্যান করাকে লোকে ভুল ভাবে নিয়েছিল।  ঠিক সেরকমই প্যানিক বাটন প্রেস করেছিল গভর্নর।  

খবর আগেই এসে গেছিলো যে স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। আর স্যানিটাইজিং বাকি সামগ্রী এরই পাওয়া যাচ্ছে না।  মানে , ওয়াইপ, ক্লিনার , স্প্রে ইত্যাদি ইত্যাদি।  দুপুরে গিন্নি যখন গিয়ে হাজির হলেন কস্টকোতে তখন খালি থাকা পার্কিং লটে ছিল লম্বা লাইন।  প্রত্যেকটা কার্ট ভেতরে ঢোকানোর সময় সানিটাইজিং ওয়াইপ দিয়ে পুঁছে তার পর ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলো।  আমার গিন্নিও জুল জুল করে তাকিয়ে ছিল।  কিন্তু ওই একটা ওয়াইপই পাওয়া গেলো।  

যা পাওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে বিশেষ লাভ নেই। কিন্ত কস্টকো যাওয়ার প্রধান কারণ কস্টকো যেহেতু ওয়ারহাউস তাই স্টক অনেক বেশি।  কিন্তু সেই ধারণাকে কলা দেখিয়ে গিন্নি ঘোষণা করলেন , “চিকেন নাই।” “বল কি ? ফ্রোজেন না টাটকা। ” “দুটোই। এমনকি এখন বক্স ফুড শেষ হতে চলেছে।” পুরো রূপ যা বুঝলাম শুধুমাত্র খারাপ হয়ে যাওয়া খাবার বাদ দিয়ে সমস্ত কিছুই তুলে স্টক করছে মানুষ।  হিন্দুর ঘরে বিফ পর্ক স্টোর করা যাবে না অথচ সেটাই পরে আছে।  

সে থাক।  কিন্তু এই এতো এতো ক্লিনিং সামগ্রী নিয়ে করবে টা কি ? আর সবথেকে বড় বুদ্ধিহীনতা হলো পুরো স্টক তুলে নেওয়া।  যেখানে একে অপরের হেল্প করলে ছড়াবে না।  সেখানে আসলে সবাইকে খুন করার চেষ্টা হলো।  মানুষের এই বুদ্ধিহীনতা সর্বত্র।  গিন্নিকে বললাম চিন্তা কোরো না।  যা সাধারণ ভাবে তুলতে পারো দেখো।  

আমি ইন্ডিয়া স্টোরে গিয়ে দেখি বোমা পড়েছে কালকে। পরিচিত দোকানিরা দেখেই বললো , “সাব কুচ নেহি হয়।  সব পাগল হো গায়ে হ্যায়। “ আমি দেখলাম চাল নেই , ডাল নেই , আলু নেই, ম্যাগি নেই ( পতঞ্জলির নুডলস ও নেই ) পিয়াঁজ নেই , এমন কি ওল আর ফুলকপিও নেই।  আমি কিছু শাক আর বাকি কিছু দরকারি অদরকারি জিনিস নিতে গিয়ে গিন্নি ফোন করলো , “সর্ষে আর শুকনো লঙ্কা শেষ।  পারলে নিয়ে এসো।  আর ডাল যদি কিছু পাও।” তিনটেই নেই।  সাউথ ইন্ডিয়া সর্ষে আর শুকনো লংকার ওপরেই চলে।  আর উত্তর ভারতও শুকনো লংকার ওপর।  তাই সবাই তুলে নিয়েছে, বাঙালি ঝাড়ে।  

দোকান থেকে বললো , স্টক আছে।  কালকে আবার আসুন।  রি-স্টক করতে সময় লাগছে।  

এই প্রথম যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি দেখলাম নিজের চোখে।  জীবনে সব কিছু দেখতে চাই এই যুদ্ধ আর ভূমিকম্প ছাড়া।  কিন্তু এ যুদ্ধের থেকে খুব একটা কম না।  এই দোকানের গল্প এখনো বাকি।  

No comments:

Post a Comment