worldometer এর পেজ রিফ্রেশ করতে পৃথিবীর নাম্বারে ৭টা সংখ্যা দেখালো। ওদিকে আমেরিকা আড়াই লক্ষ ছুঁই ছুঁই। এদিকে জীবনে এসে গেছে “আর ভালো লাগছে না।” বিরক্তিতে মুখ পাঁচের মতো করে দিবারাত্রি অফিসের কাজ করে চলেছি আর খবরে পরে চলেছি সারা পৃথিবীর অতিসামাজিক কার্যকলাপের কথা।
মানুষ এখনো সেই প্লেগের গল্পের মতো কথা বলে চলেছে। “আমার হবে না”। সবাই তাই ভেবেছিলো। আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল এমন এক রাজ্যে , যেখানে শুধু বড় বড় জঙ্গল আর স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। টুইলাইটের ভ্যাম্পায়ারই বেঁচে থাকে ওই রাজ্যে। কেউ তাই বিশেষ পাত্তাই দেয়নি। এরপর স্বাভাবিক কারণে নিউ ইয়র্ক আর ক্যালিফোর্নিয়া , আমেরিকার সবথেকে বড় দুই বহির্জগতের গন্তব্য যখন সংক্রমিত হতে লাগলো। তখনও শুধু নিজের রাজ্য ছাড়া মানুষ কিছু দেখেনি। আর ঘুরতে বেরিয়েছে। মিশিগান, ওহাইয়ো আর ইলিয়নয় যাকে এক সাথে মিড্-ওয়েস্ট বলা হয় সেখানে থাকা বন্ধু বান্ধবদের বলতে শুনেছি , “এখান পর্যন্ত আসবে না।” এখন প্রত্যেক দিন তারা এগিয়ে চলেছে। কম্পিটিশন চলছে কে কত সংক্রমিত লোকের নাম দেবে , আর কে কত মৃত্যু ঘোষণা করবে। কিন্তু মানুষ এখনো বলে চলেছে , “আমার কাউন্টি বা আমার শহরে তো হয়নি। চিন্তা কম।” ধীরে ধীরে সবার হবে।
আমেরিকা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি করোনা টেস্ট সম্পন্ন করেছে আজ পর্যন্ত, অন্তত এই নম্বর এখনো কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। কিন্তু আজ ডাক্তার বার্কস বললেন যে ১৩ লক্ষ টেস্ট করানোর পর শুধু ৬.৬ লক্ষ টেস্ট রেজাল্ট তার কাছে এসেছে। মানে এখনো ছবিটা বাকি আছে। যত টেস্ট করা হবে তত মৃত্যু সামনে আসবে।
সামনে আসবে সেই মানুষগুলোর কথা যারা এই নিদারুন সময়ে তাদের জীবনের তোয়াক্কা না করে মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। একবার কোনোদিন ডাক্তারদের পিপিই বা পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন , সাধারণ মুম্বাইয়ের বৃষ্টি পর্যন্ত ওই দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত খবর আসছে নির্দোষ ডাক্তারদের মৃত্যুর খবর। সেই ছবিটা দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল যখন চায়নার নানা প্রান্ত থেকে ডাক্তার রা হুয়ান প্রদেশে যাচ্ছিলো , আর তাদের পরিবাররা শেষ বিদায় দেওয়ার মতো কাঁদছিলো। এখন সেই ছবি চারপাশে , আসে পাশে।
আর এর মধ্যেই “নেপো”র উপদ্রব শুরু হয়েছে। ড্রাগ মাফিয়ারা এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে চোরাচালানে দ্রুতি এনেছে , ভ্যান গগের ছবি চুরি হয়েছে , আর নিউ ইয়র্কের ক্রাইম বেড়ে গেছে ১২ শতাংশ। পুলিশ সারা পৃথিবী জুড়ে নানা ভাবে ক্রিমিনাল দের কার্যকলাপ থামাতে বলছে। ক্রাইম রেট কমছে অনেক জায়গায়। কিন্তু তাও ছয়লাপ। দু ট্রিলিয়ন ডলার থেকে নেপোরা কতটা পাবে সেটা যেমন দেখার মতো , তেমনি ভারতের বুকে এর পরবর্তী যুগে বেরোবে করোনা স্ক্যাম। এই কোটি কোটি ডলারের গভর্নমেন্ট পয়সা উজাড় করলে কেউ যে হাত সাফ করবে না সে তো আর হয়না। ঠিক যেমন অনেকেই আমেরিকায় এখন আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট নেওয়ার জন্য হাত পেতেছে।
খবর আসছে বড় বড় কোম্পানির লে অফের। তুর্কিশ এয়ারলাইন্স ৯০% ছাঁটাই , ডিজনি বেশির ভাগ কর্মচারীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে , ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স আঠাশ হাজার লোক বার করে দিয়েছে এরকম খবর রোজ আসছে। অনেক কোম্পানি চেষ্টা করছে যাতে মাইনে কম দিয়ে চাকরি বাঁচিয়ে রাখানো যায়। অনেকে ছুটি ব্যবহার করে নিতে বলছে। কিন্তু কেউ জানেনা কি হতে চলেছে। সেই গুমনাম এক শত্রু নানা দিক থেকে চেপে ধরছে গলা।
এখনো দেশে এই আতঙ্ক ছড়ায়নি এতটা, তাই এখনো টিকটক চলছে। সময় আসলে আর সময় থাকবে না আল্লাহ , রাম, যীশুর নাম নেওয়ার। কালকে আবার বাঁচতে চাই , নিউ ইয়র্কের ওই রাস্তার ধারে পরে থাকা মোবাইল মর্গে শুয়ে থাকতে চাইনা। তাই কালকে উঠে আবার লিখবো।
No comments:
Post a Comment