ঘর থেকে বেরোবিনা। এক্কেবারে বেরোবিনা। সবার থেকে দূরে দূরে থাকবি। ছ ফুট দূরত্বে। এহঃ , প্রেম। ওসব দেখা টেখা , চুমু টুমু সব মুলতুবি, মাস্ক পরে কি আর চুমু হয়। ভেবে নে , এক বছরের অশৌচ। ওই দোকানদারের প্রেমে পড়েছিস নাকি। সারা পৃথিবীতে লোক মরছে , আর তুই পঞ্চব্যঞ্জনের জন্য হেদিয়ে পড়ছিস। দু দিন ডাল ভাত খেয়ে থাক। টাটকা সবজি টবজি না খেলেই নয়। বেশি সবজি খেলে হাগা হয়। ডাল ভাত খা। স্টোর করে রাখ। যেখানে যা পাচ্ছিস নিংড়ে খা। অতো নন ভেজ খাবার কি আছে। নিউট্রেলা খা।
কিন্তু মাসি তখন থেকে শুধু খাবার আর প্রেমের কথা বলে চলেছো। আমি বলছি চুলের কথা। মানুষের সংস্পর্শে যাবো না, তার হাজার পন্থা আছে। কিন্ত নিজের চুল নিজে কাটি কি করে।
মাস খানেক গৃহবন্দীর পর এই প্রশ্নে অখণ্ড নীরবতা পালন।
অঙ্ক কষে দেখেছি , কদমফুল থেকে পাখির বাসা হতে আমার পাক্কা তেত্রিশ দিন লাগে। যেদিন থেকে ঘরে খিল মেরেছি তবে থেকে এই চিন্তা মাথার মধ্যে উকুনের মতো ঘুরে চলেছে। নিজ প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে নিজেই পিঠ চাপড়ালাম , “দাড়ি কাটার ট্রিমার চালিয়ে উড়িয়ে দিই।”
একেতেই বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে মাথা গরম হয়ে আছে। চুল বাড়লে আরো গরম হবে। হতে হতে না হওয়া ডিভোর্স হয়তো আজই হয়ে যাবে। আর সবথেকে বাজে ব্যাপার আমার চুলে কিছুতেই স্টাইল নামক কিছু করা যায়না। লোকে এই সুযোগে নানা স্টাইলের চুল বাড়িয়ে ফেলবে। কিন্ত আমার শুয়োরের কুঁচির মতো চুলে গুটলি পাকানো ছাড়া কিছুই হবে না। শুধু সুন্দরীরা যখন চুল কাটে তখন কমপ্লিমেন্ট দেয় , যে এই টেকোদের নরকে আমি শক্ত চুলের ইন্দ্র। কিন্তু তারা তো জানে না , সেলুন থেকে বেরিয়ে কানে ফুরফুরে হাওয়া লাগিয়ে গুনগুনিয়ে গান গাই , “মুক্তির মন্দির সোপান তলে , কত চুল হলো বলিদান।”
তাই সেই মুক্তির স্বাদ , এই ট্রিমারই দিতে পারে। ভুরু বাদ দিয়ে সব উড়িয়ে দিই। এক্কেবারে ন্যাড়া। সেই কোন কালে শেষ ন্যাড়া হয়েছিলাম পৈতের সময়। সে সময় মশারিতে টাক আটকে যাওয়া ছাড়া সমস্যা কিছু ছিল না। এখন তো আরো আরাম। আমার মাথাটা বেশ বড় , মানে বিশাল , মানে সবথেকে বড় সাইজের হেলমেট বেশ টাইট হয়, সেইরকম বিশাল। চুলে কাঁচি চালালে কট কট করে আওয়াজ হয়। এই চুল রেখে কি হবে। যা ইস্টাইল দেয়না , কালবৈশাখীতেও ওড়ে না , কাটার পর দাঁড়িয়ে থাকে , এরকম বেয়াদপ চুলের জন্য সুন্দরীর নিস্বাসের করোনা খাবো কোনো দুঃখে। উড়িয়েই দেব শালা। ট্রিমারে ছেঁটে , রেজারে চেঁচে , ঘাম তেলে লেপটে হালকা হয়ে যাবো। না হয় একটা কোলাব্যাঙের মতো দেখতে লাগবে কিন্তু আমায় আর কে দেখবে।
ওদিকে যাকে দেখবে , সেই আমার পুত্র সন্তানের জিনবাহিত রোগ হিসেবে টুপি চুলের বিস্তারে তারও ভয়ানক অবস্থা। ওনাদের চুল কাটার দোকান আবার আলাদা। ওই চেয়ারের ওপর একটা পাটাতন রেখে উঠে বসে বাটি বসিয়ে কেটে দিলে চলবে না। এনার ওয়ান্ডারল্যান্ডের মতো দোকানে চুল কাটার থেকে স্বপ্ন দেখানো বেশি হয়। আর ছেলের চুল যে কাটে, সে reese witherspoon কে কপি করে। তাই এ সব ছেড়ে তারও বেশ সমস্যা। হাজার হোক , “মেন উইল বি মেন।” সে এই কসাই বাবার কাছে চুল কাটবে কেন। অথচ বাবার বিদ্যার দৌড় সেই কোদালেই।
এই সমস্ত চিন্তা ভাবনা করতে করতে বাড়িতে ফোন করতেই , “কি শুনছি রে ? আমরা বেঁচে থাকতে ন্যাড়া করবি কি ? ” মানে বিভীষণ খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর বাকিটা আর এগোলো না। আপাতত মিঠুন চক্কোত্তি হতে চলেছি,ভুঁরি নিয়ে ডিস্কো ডান্সার তো হতে পারবো না। তার বদলে ঘাড়ের চুল দুলিয়ে বলবো , “ ইয়ায়িশ। … সাপের ছোবল আর চিতার খাবল , যেখানেই পরবে , আড়াই কেজি মাংস তুলে নেবে।” ইয়ে, মানে, তখনও করোনা দা ছিলেন না আর কি।
No comments:
Post a Comment