Wednesday, November 22, 2017

মুম্বাই - কল্পনা vs বাস্তব



ত্রিভান্দ্রামে ট্রেনিং প্রায় শেষ।  এবার সবাই ছড়িয়ে যাবো সারা ভারতের নানা শহরে।  সবাইকে তিনটে শহরের অপসন দেওয়া হয়।  আমাকে দেওয়া হয়েছিল কলকাতা, মুম্বাই আর ব্যাঙ্গালোর।  ততদিনে কলকাতায় চাকরি খুঁজতে খুঁজতে হেদে গেছিলাম।  দেখবো এবার বিশ্বটাকে ভাব নিয়ে বাকি শহরের দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিলাম।  বাবার এল এফ সির দৌলতে সারা দেশ প্রায় ঘোরা।  শুধু হয়নি , মুম্বাই।  স্বপ্নের শহর সাধের শহর।  আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হিরো হওয়ার সাধ কখনই হয়নি।  কিন্তু সিনেমায় যখন কুইন্স নেকলেস দেখতাম তখন মনে হতো ব্যালকনি থেকে ঐটা না দেখলে আর কি করলাম জীবনে। 

অপসনে তিনটিতেই মুম্বাই সিলেক্ট করেছিলাম।  বেজায় খুশি।  কল্পনায় মাঝে মাঝেই চলে যেতাম মেরিন ড্রাইভে। চুল উড়তে থাকতো ফুরফুরে হাওয়ায়।  শহরের দিকে পেছন করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কতবার না সুস্বাদু বড়াপাও এ কামড় দিয়েছি তা আর বলতে। পাশ দিয়ে অনিল আম্বানি জগিং করছে।  মাঝে মাঝে শিল্পা শেট্টি যোগব্যায়াম করছে।  আমি দেখছি।  সকালে ওঠার আমার অনেক দিনের অভ্যাস।  এর ফল মিলতে চলেছে।  অফিস তো বেলাতে শুরু হবে।  ক্লায়েন্ট তো ইউ এস এ র তাই কোনো সমস্যাই থাকবে না।  দেরি করে অফিস গিয়ে রাত করে ফেরা।  সিটি নেবার স্লিপ এর সাথে একাত্ম হতে মন যেন পাগল হয়ে যেত।  মোহময়ী মুম্বাই দিবাস্বপ্নে স্বপ্নদোষে একেবারে একাকার হয়ে গেছিলো।  

গার্লফ্রেন্ড কে বলেছিলাম শুধু দুটো জিনিসের জন্য তোমাকে ছাড়তে পারি - ওরাকল আর ক্যাটরিনা কাইফ।  একটা হয়নি কিন্তু আরেকটা হওয়ার সম্ভবনা সফল হতে চলেছে।  তখনও গুগল ম্যাপ বা স্ট্রিট ভিউ এতো প্রখর হয়নি।  তখন অর্কুট এর যুগ।  আর তখনও লোকে ইন্টারনেটে শুধু ভালো ভালো জিনিসই দিতো।  আমার আত্মীয়রা আবার মুম্বাইএর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত।  একটা না একটা গল্প তো সিওর প্রোডিউসারকে দিয়ে খাইয়েই নেবো।  ইঞ্জিনিয়াররা তো আবার প্রচন্ড ডায়নামিক হয়।  চাকরির সাথে সাথে নানা রকম শিল্প সাহিত্যে নাম করে নিচ্ছে।  আমার কিছু একটা তো হয়েই যাবে।  

চারপাশে থিক থিক করবে সেলিব্রিটি।  রাস্তায় ফুচকার সাথে থুড়ি পানিপুড়ির সাথে চলবে ষ্টার গেজিঙ।  যেহেতু মডেল ইন্ডাস্ট্রি সেহেতু মডেলের ছড়াছড়ি।  সুন্দরীদের সাথে থাকলে মনও ভালো থাকে।  লোকে বলে মুম্বাইতে নাকি পয়সা ওড়ে।  হঠাৎ বড়োলোক হয়ে ওঠার একমাত্র শহর মুম্বাই।  আমার এতো ক্যালিবার।  বিশেষ করে শিল্প সাহিত্যে।  কিছু না কিছু একটা হয়েই যাবে।  নাহয় না হবে।  কিন্তু টিফিন টাইমে তো সমুদ্রের হওয়া খেতে পারবো।  আর কি চাই।  লিভিং লাইফ লাইক কিং সাইজ।  

ভিটি স্টেশনে ট্রেন এসে দাঁড়ালো।  ট্রেন চেঞ্জ করে থানে।  সেখানে ইন্ট্রোডাকশন হয়ে অফিস হলো আন্ধেরিতে।  পায়রার খোপ জোগাড় করলাম বোরিভালিতে। ওয়ান বেডরুমের কিচেনে হসপিটালের বেডের ওপর আমি ও আমার দুই পায়রা।  ব্যালকনি নেই কিন্তু জানলার বাইরে কাপড় শুকোনোর জন্য জায়গা। যখন ফাঁকা পেতাম উঁকি মেরে সামনের ফ্ল্যাটের জানলা থেকে ঝোলানো কুইন্স আন্ডারওয়ার দেখতাম।  সকালের বিস্বাদ পোহা উপমা আর বিকালের এসিডিটি জাগরুক বড়াপাও।  ট্রেনলাইনের ইস্ট এ কখনোও সমুদ্রের হাওয়া ঢুকতে পারে না।  ওয়েস্ট এর উঁচু উঁচু বাড়ি সব খেয়ে নেয়।  ডাইরেক্ট  বাসের ফ্রেকুয়েন্সি কম বলে চারটে বাস চেঞ্জ করে আন্ধেরির অফিস।  তাও ঝুলে ঝুলে।  ক্লায়েন্ট ব্রিটিশ তাই তাড়াতাড়ি যাওয়া।  কিন্তু আসা সেই সাড়ে এগারোরটা।  মাঝে মাঝে বিকেলের স্নাক্স গরম ঘুঘনি ঢালা আলুর বড়া।  নাম রগরা  প্যাটিস।  ঘুঘনি পাউরিটি আসল পাও আর তার মধ্যে কাঠিভাজা দিয়ে মিশাল পাও।  পয়সা যেখানে ওড়ে তার কারণ আমার মতো কারো লোকের পকেট থেকে সেই পয়সা উড়ে পালায়।  সুন্দরীদের মুখ ঢাকা ধোয়া আটকাতে। আর কাছে ঘেঁষা যায়না ঘামের গন্ধে।  আমার নাইটলাইফ বাসের পোলে শেক ইট আপ করতে করতেই চলে যেত।  আর সিটি নেবার স্লিপস এর সারা রাত যানবাহনের গুঁ গুঁ গুঞ্জন এখনো কানে বাজে।  আড়াই বছর মুম্বাই তে তিনবার সমুদ্র দর্শন।  তার মধ্যে নোংরা চৌপাটি , আর আরো নোংরা আকসা বিচ।  সেলিব্রিটি প্রচুর দেখেছি।  কিন্ত তারা রিয়্যাল সেলিব্রিটি , যারা এক স্টেশনে ট্রেনের পোল ধরে ঝুলে পরে।  পরের স্টেশনে ধাক্কা দিয়ে কেউ ঢুকিয়ে দেয়। একমাত্র মুভি ষ্টার জেক দেখেছি সে কয়েকদিন পরেই রেপকেসে জেলে - শাইনি আহুজা।  ফিল্ম সিটি কোথায় ? কেউ না নিয়ে গেলে বুঝতেই পারবে না ওটা ষ্টুডিও না কারখানা।  প্রায় দু বছর অভিমানে হিন্দি সিনেমায় দেখিনি। শেষে যখন বুঝলাম সব স্বপ্ন গুঁড়ো কাঁচ, তখন বুঝলাম সবথেকে বড় সত্যি কথা , “মুম্বাই গ্রো ইনসাইড ইউ .” তখন বাস্তব স্বপ্নের মতো লাগতে থাকলো।  সবাই সুইট ড্রিমস দেখে না নাইটমেয়ার বলেও কিছু হয়।  ……

বাকি প্রবন্ধগুলো 



No comments:

Post a Comment