মৃত্যুর ঘন্টা শুনেছ কখনো। কেউ শোনেনি। সিঁড়দাঁড়া দিয়ে ওঠা ঠান্ডা স্রোত হয়ত সেই ভয়ের প্রথম ভাগ। ভয়ঙ্কর ভাবে ভয় পাচ্ছি। মৃত্যুভয়হীন মানুষ আমি দেখিনি বা যাদের শুনতাম , তারা সবাই মৃত্যুর আগে শেষ চেষ্টা করে গেছেন বাঁচার। একটা গল্প বাবা বলে , “এক প্রখর রৌদ্রের দিনে একটা মুটে, বিশাল একটা মোট নিয়ে যাচ্ছিলো। মোট পাশে লেখে গলার গামছা নিংড়ে ঘাম ঝেড়ে সারা গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো , “হে ভগবান , তুলে নাও না কেন ? ” পাশ দিয়ে যমদূত যাচ্ছিলো। বিকট মূর্তি নিয়ে প্রকট হয়ে বললো, “কি হে ! ডেকেছিলে? ” মুটেটি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো , “এই মানে না , আসলে কেউ তো ধারে কাছে নেই , একটু মোটটা পিঠে তুলে দেবেন?”
মৃত্যুকে ভয় করেনা মানুষ যখন সে মৃত্যু দেখেনা। আজ মৃত্যু চারপাশে। মৃত্যু প্রিয়জনের , মৃত্যু অপ্রিয়জনের , পরিচিতের - অপরিচিতের। বিশ্বব্যাপী বিশ হাজার মানুষ এক অজানা কারণে মারা গেলো। আর মানুষ করোনা ফেস্টিভ্যাল করছে।
আমেরিকার কাঁটায় যখন পঞ্চাশ হাজার উঠলো তখন চোখ বন্ধ করে ভাবলাম এই ফাঁকা দেশে ৫০ হাজার ছোঁয়াচে রুগী মরার অপেক্ষা করছে। চেষ্টা চলছে , কিন্তু এখনো ঠিকঠাক কেউ বলতে পারছে না যে সামনে কি ? প্রথমে বলেছিলো জোয়ান দের হবে না , জোয়ান মরলো , শিশুদের হবে না , শিশু মরলো , ফুসফুস যাদের কমজোরি তারা ছাড়া বাকিদের সমস্যা নেই , সুস্থ সবল মানুষ মারা যেতে লাগলো। তাহলে সত্য এখনো অজানা।
মৃত্যুভয় এখন কি সাংঘাতিক ভয়বহতায় দাঁড়িয়েছে তা মানুষ বুঝতে পারছে না। এখানে মানুষ মানুষের শত্রু। সেই মানুষকে মানুষের কাছে যেতে আটকাতে একমাত্র এই মৃত্যুভয়ই পারে। আটকে থাকা , গৃহবন্দী , বিরক্তি , ওয়ার্ক ফ্রম হোম , ফুড শর্টেজ সব মানুষ মেনে নেয় যখন জানে সামনে মৃত্যু।
অলিম্পিক বন্ধ হতে চলেছে। শেষবার কবে বন্ধ হয়েছিল জানেন নিশ্চই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। আবার সেরকমই পরিস্থিতি। সেইসময় বিশ্বভ্রাতৃত্বের কবরের পাশে পাঁচটি রিং বসেছিল , মানুষ কবে মানুষ হবে বলে। আজ আবার সেই দিন। এই ভয়ঙ্কর প্যানডেমিকের দায়িত্ব মানুষের ঘাড়ে , বাদুড়ের ঘাড়ে না। মানুষ ছড়িয়েছে এই রোগ। যারা না জেনে দোষ করেন তারা কেন জানেন না সেটাও দোষের। কিন্তু তাদের ছেড়ে দেওয়া যায়। আর যারা জেনে ভুল করে ?
তাই মৃত্যুভয়ই মানুষকে পারে মানুষের থেকে দুরে সরাতে। আর সেই মৃত্যু যদি এরকম নিঃসঙ্গ ও বীভৎস হয়। যে মৃত্যুতে প্রিয়জন কাছে আসতে চাইবে না, হসপিটালে বেড পাওয়া যাবে না , এমন শেষকৃত্যও হয়তো গণকবরে বা গণচিতায়।
আহমেদ বুখাতির এই লাস্ট ব্রিদ গানটি তখন শুনি যখন মৃত্যু নিয়ে ভাবি। ঠিক মৃত্যুর পরে কেউ গান লিখলে হয়তো এইরকম লিখতো। আর এই সুর যেন ভেতরটা নিংড়ে নেয়। আমি ভয়ে আছি , ভেতরে আছি , খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আপনারাও থাকুন ভয়ে। মৃত্যুই কিন্তু শেষ কথা। আপনিও জানেন না আর কটা দিন। সাবধানে থাকবেন। .. বন্দী থাকবেন। এই গানটা শুনে ভগবানের কাছে প্রে করতে বসে যাবেন না যেন। মানুষের ক্রিয়াকলাপে এখন ভগবানও ভয় পেয়ে আছে। ভক্ত না থাকলে ভগবান থাকবে কি ? ভগবানেরও মৃত্যুভয় আছে।
No comments:
Post a Comment