উচ্চ মাধ্যমিকের আর কয়েক দিন বাকি।
মোটে পাঁচ দিন। তার পর প্রায় এক মাসের যন্ত্রনা। যন্ত্রনা পরীক্ষার তো বটেই , সাথে
অটবী কে না দেখার। দিব্যর আড়া- পাড়া – প্রতিবেশী সবাই জানে দিব্য এবার ফেল করবে। ফেল
না করলেও মাধ্যমিকে স্টার পাওয়া ছেলে যে নারীসঙ্গে তারকা হীন স্লিপার ক্লাসে অজানা
ভবিষ্যতের দিকে রওনা দেবে সে ব্যাপারে সবাই একমত। অটবীর ভীরু চোখে তাই অপার সংশয়,
“পাস করবে তো?”
বিকালটা বেশ সুন্দর। গরম সাঙ্ঘাতিক হলেও হঠাৎ করে কোথা থেকে দমকা
ঠাণ্ডা ভেজা হাওয়া এসে বেশ মিষ্টি করে তুলেছে আবহাওয়া। আজ ছিল অনিল বাবুর ফিজিক্স ক্লাসের
শেষ দিন। ফাঁসির আগের দিনে শেষ দেখার মত। প্রতি বুধবারের মত আজকেও একই রাস্তা ধরে হাঁটতে
হাঁটতে অটবী আর দিব্য আর তাদের দুই সাইকেল চলছে। দিব্যর বাঁ হাত অটবীর সাইকেলের ডান
হ্যান্ডেলের ওপর রাখা, অটবীর হাতের ওপর। প্রশ্নটা শুনে একটুর জন্যে হলেও থতমত খেয়ে
যায় দিব্য, “কেন এমন বলছিস?”
“অলরেডি সবাই মনে করে আমি তোর বারোটা
বাজিয়েছি।”
“ভুল জানিস। আমি জীবনে রাঙ্ক করিনি।
তুই তো রাঙ্ক ছাড়া কিছু করিসনি।”
“তাতে কি? মাধ্যমিকে তুই তো বেশি,
কিন্তু টেস্ট এ তুই ধ্যারালি।”
“টেস্ট কি আর ফাইনাল নাকি। দেখ
না কি হয়।”
“আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে তোর
জন্য।”
“আর নিজের জন্য।”
“নিজের নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছি ভগবানের
ওপর।”
“বাহ । এই নাহলে উত্তর।”
“আমি কিন্তু এবার খুব সিরিয়াস।
আমাদের ব্যাপারটা যতটা গরিয়েছে আমার কিন্তু আর ফেরার পথ নেই।”
“ফেরার কথা উঠছে কেন। আর ফিরবি
বা কোথায়।”
“দেখ আমি অত ন্যাকামো করে হয়ত বলতে
পারিনা “হে প্রিয়তম তোমার সাফল্যে আমার সাফল্য” কিন্তু কাছাকাছি কিছু একটা ম্যাটার
করে। ”
“বহুদুরের কথা হলেও আমি তো প্রমিস
করেছি।”
“সেই জন্যই তো সমস্যা। প্রমিস না
থাকলে এক্সপেক্টেশান থাকতো না। দুদিনের খিল্লি দেন টা টা বাই বাই।”
“তুই কি এত কিছু হওয়ার পরও আমাকে
বিশ্বাস করিস না।”
“প্রশ্ন টা বিশ্বাসের নয়। প্র্যাকটিকালি
ভাব। তোর সাফল্যে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে।”
“এ তো প্রথম পদক্ষেপ। এত দূরের
কথা আজ না চিন্তা করলেই নয়।”
“কালকের কথাও তো না চিন্তা করলেই
হয়। সকালে নাও তো চোখ খুলতে পারে। তাহলে তো পরিক্ষাও দিতে হবে না। প্লিস অ্যাট লিস্ট
রেসে টিকে থাকার মত রেসালট করিস। তোর কাছে এইতুকু এক্সপেক্ট করছি।”
“ভেবেছিস পুরো বখে গেছি না?”
“আমার ভয় করছে। আর কিছু না। যদি
বলিস চুপ করে জেতে পারি।”
দিব্য জানে কি সাঙ্ঘাতিক সেই চুপ
করে যাওয়া। অটবী কিছু বলতে গিয়ে আটকে গেলে , থেমে যায়। কেমন যেন নিঃস্ব হয়ে যায়। শুধু
দু চারটে হুঁ হ্যাঁ ছাড়া আর বিশেষ কিছু বেরয় না। বাকি যে মুচকি হাসি , অঙ্গসঞ্ছালন,
ভুরু কুঁচকে তাকানো বা মিথ্যা অভিমানের ঠোঁট ফলানো, সব একসাথে উধাও হয়ে যায়। দিব্যর
কাছে সেগুলো অত্যন্ত মুল্যবান। অথচ আজকের দিনটাও তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই
ছোঁয়া, এই দুটো কথা যেন তার কাছে এক উদ্যেশ্য। অটবী হয়ত ভাবতে পারে যে তার স্বপ্ন ভাঙতে
চলেছে। কিন্তু দিব্য সেই ভাবনা অনেকদিন উড়িয়ে দিয়েছে হাওয়ায়। হতে পারে প্রেমের মাদকতায়
বেশ কয়েকদিন সে ফর্মুলার থেকে ছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছে কিন্তু অনেকদিন হল সেই সে তার
দুই মস্তিস্কের ওপর কন্ট্রোল এনে ফেলেছে । শুধু বুঝতে দেয়নি অটবীকে। কারন মেয়েরা সারপ্রাইস
পছন্দ করে। সব মেয়ে নয় , তবে অটবী।
“না । তুই বল। যা বলছিস বল। আমার
অসুবিধা নেই।”
“অসুবিধা তোর নয়, আমার। এখন যে
সমস্যায় আমি পরেছি তার থেকে আমি নিজের ক্ষমতায় বেরতে পারব না। তাই শুধু বলছি।”
“একটা কথা বল। আজকে এই কথাগুলো
বলে কি তোর মনে হয় আমি দু বছরের পড়া পাঁচদিনে পড়ে শেষ করে ড্যাং ড্যাং করে স্টার নিয়ে
আসব।”
“হয়তো নয়। হয়ত বা। কি জানি।”
“এই উদাসীন উত্তর কারা দেয় জানিস।
যারা হেরে যায়।”
“তাহলে বুঝছিস তো আমার কি অবস্থা?”
“শোন , ভরসা রাখ। পথ অনেকটা বড়।”
“তাই তো বলছি। প্লিস ফেল করিস না।”
“তুই আমার ওই কবিতা টা পরেছিস.......”
“আজকে আর তোর কবিতার দিকে তাকাতে
পারছি না প্লিস। ওটা জীবন নয়। পরীক্ষার খাতায় কবিতা লিখে আসিস না।”
“বরাবরের আপত্তি তোর এই কবিতায়।
ছাড় না এসব কথা। একবার ভেবেছিস আজ থেকে প্রায় এক মাস দেখা হবে না।”
“সে কি আর ভাব্ছি না। এক মাস। কিন্তু
থাক। এটা ভালর জন্যই। ভবিষ্যতের জন্য।”
“মানছি। আর সেই জন্যই তো বলছি এখন
মাইন্ড ফ্রেস কর। প্রান ভরে আমার সাথে কথা বল। আমি তোকে দেখি।”
“ও হো । আর আমি দেখব না বুঝি।”
“আমাকে আবার দেখার কি আছে। টেরিকটের
প্যান্ট আর গান্ধী চশমা।”
“ওটাই হয়ত আমার ভালো লাগে।”
“আজ কি আমি পরিক্ষার আগে আসতেরিক্স
এর পানীয় পেতে পারি?”
“আবার হেঁয়ালি শুরু।”
“না , মানে ইয়ে। মানে ওই। মানে
বুঝতেই পারছিস।”
“ও – ও – ও –ও আচ্ছা। সেটা বুঝি
দশটা হাতির বল এনে দেবে।”
“সে আর বলতে।”
“না মোটেই না। বরঞ্চ বিভ্রান্ত
করে দিতে পারে। এ এক নেশা।”
“নেশা তো বটেই। উজ্জিবিত করাই তো
কাজ। ”
“কিন্তু কিছুক্ষন না পেলে আবার
তো সেই নেশা চাগবে। তখন।”
“তখন আর কি…… শোন অনেক ভেজাল
ন্যাকামো করেছি। হায়ার সেকেন্ডারি দিতে যাচ্ছি। এক বিদায় চুম্বন তো বনতা হ্যায়।“
“ও ব্বাবা … এ তো যুদ্ধে
যাচ্ছে মনে হচ্ছে।”
“হ্যা নারী, সাম্নের গলি অন্ধকার।
এ অন্ধকারে স্বপ্নও দেখা যায় আর খুনও করা যায়।”
রাস্তার এই ছোট্ট অংশটা সত্যি বেশ
অন্ধকার। ডান পাশে কুড়ি ফুট দেওয়াল। একটা হার্ডওয়্যার কম্পানি। ওপাশ থেকে আলো এসে রাস্তায়
পড়ে না। আর এক পাশে ছোট একটা মাঠের মতন। গুটি থেকে সিল্ক বার করার কুটির শিল্প। রাস্তার
গায়ে আর মাঠের শুরুতে কয়েকটি অদ্ভুত কাঠের কল লাগানো আছে তাঁতের মত দেখতে। আর মাঠের
ওপর অজস্র খুঁটি পোঁতা। দিনের বেলা লম্বা লম্বা নানা রঙের সিল্কের আঁটি আটকানো থাকে। রৌদ্রে চকচক করে নীল লাল সুতোর আঁটি
গুলো। মাঠের এক ধারে বাউন্দারি দিয়েছে বেশ কয়েকটা দেবদারু গাছ। আর তার পেছনেই আজ থেকে
এক বছর আগে এক জ্যোৎস্না সন্ধ্যায় দিব্য অটবী কে প্রথম চুম্বন করে।
সেদিনের ধস্তাধস্তি যেকোনো সময়
এসে হাজির হয় তাদের আলোচনায়।
“তার মানে আবার আমাকে সেই গাছের
পিছনে নিয়ে যাবি?”
“এমন বলছিস যেন তোকে রেপ করতে নিয়ে
গেছিলাম।”
“খুব একটা কিছু কম ছিল না সেটা।”
“যা তা বলিস না। প্রথম বার ওরকম
হয়ই।”
“মোটেই না। প্রীতি বলেছিল ওর প্রথম
চুমুর কথা। কত শান্ত সুন্দর। ঠিক সিনেমার মত।”
“হ্যা , এক পক্ষ পারদর্শী ছিল।
এরকম ব্র্যান্ড নিউ জিনিস তোর প্রীতি পায়নি। তুই যদি ছিবড়ে নিয়ে খুশি হতিস তাহলে ওই
সিনেমার মত ফ্রেঞ্চ কিস পেতিস।”
“আচ্ছা ফরাসীরাই কি এই ধরনের কিস
করত। বাকিরা কি পারত না।”
“ধুর এসব সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার
এর সময় বেরিয়েছে আর পৃথিবী তো বসেই আছে কপি করার জন্য। ফরাসিরাই কি শুধু আলু ভাজত।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তা আজকে কি সাহেবের
শুধুই অধর চুম্বন না অন্য কিছুও সাইডে আছে।”
“দেখ, সব কিছু ইম্প্রম্পটু হয়।
এত ডিসকাস করে বিবাহিতরা এগোয়। চৌষট্টি কলা, পঞ্ছান্ন বেদানা, বত্রিশ পাটি …”
দম ফাটা হাসি ঠোঁট দিয়ে চেপে নিল
অটবী। জায়গাটা নিশ্চুপ কিন্তু আসে পাশে বাড়ি আছে। কে জানে কে কোথায় বারান্দায় বেরিয়ে
আসবে আর বড় টর্চ ফেলবে ওদের ওপর। ব্যাস নীতির বোঝা নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।
সাইকেল রাস্তার ধারে একটা বাড়ির
দেওয়ালে এমন ভাবে রাখল যাতে মনে হয় অনেক দিন ধরে এখানে পরে আছে সাইকেলগুলো। যাতে রাস্তায়
জাতায়াত করা লোকেদের সন্দেহ না হয়। প্রথমে অটবীর লেডিস সাইকেলটা রেখে তার ওপর নিজের
সাইকেল রাখতেই দেখে চারটে লোক ওদের দিকে তাকাতে তাকাতে ওদের পার করে চলে যাচ্ছে। দেখে
বিশেষ ভদ্রলোক মনে না হলেও নেহাতই নিরীহ মনে হল। ওরা চলে জেতে দুদিকের রাস্তায় চোখ
বুলিয়ে যখন ওরা দেখল কেউ আসছে না, তখন দুজনে
দৌড়ে গিয়ে সোজা পূর্বনির্ধারিত গাছের পিছনে।
এই গাছটা অটবী চিনে রেখেছিল আগে
থেকে। অন্যান্য দেবদারু গাছগুলোর থেকে এর গুঁড়ি একটু বেশি মোটা। দিব্যর কাঁধের থেকে
প্রায় চার ইঞ্ছি বেশি চৌরা । গাছের পেছনেই একটি বাড়ির দেওয়াল কিন্তু দেওয়ালের ওপারে
বাড়িটির পেছন দিক, তাই সামনের আলো বেশি পৌছায়না। তবে এক মায়াবি আলো ছেয়ে থাকে জায়গাটায়।
অন্ধকারে চোখ সয়ে গেলে জায়গাটা পরিস্কার দেখা যায়। আবার রাস্তার থেকে যদি কোনো গাড়ি
জোরালো আলো ফেলে তাহলেও গাছের গুঁড়ি সেই আলো আটকে দেয়। দিব্য লক্ষ্য করেছে গাছের পেছন
থেকে বেশ কিছুটা দুরত্বও দেখা যায় যাতে হঠাৎ করে কেউ এসে পরলে এক ছুটে মাঠের খোলা জায়গায়
চলে আসা যায় বা উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালানো যায়। অসাধারন গুপ্ততা ছেয়ে থাকে গাছের পিছনে।
অটবী গাছের গুঁড়ি তে হেলান দেয়।
দুষ্টু মিষ্টি হাসি লেগে থাকে মুখে। সয়ে যাওয়া চোখে অন্ধকারে ফুটে ওঠে দিব্যর মুখ।
দিব্য তার বাঁ হাত রাখে অটবীর কাঁধ ছুয়ে গাছের ওপর। ডান হাত রাখে অটবীর গালে। মাদক
দৃষ্টি দুজনার চোখে। এজায়গায় শুধু ঠোঁট নড়ে কিন্তু শব্দ শুধু শোনা যায় দ্রুত নিঃস্বাশ
। আলতো এক স্পর্শে দিব্য তার ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অটবীর। ডান হাত দিয়ে
অটবীকে বুকের কাছে টেনে আনে দিব্য। গভীর নিবিড়তায় অসাড় হয়ে অটবী এলিয়ে পড়ে দিব্যর বুকে।
অটবীর বন্ধ চোখে হারিয়ে দিব্য পরিবর্তন করতে থাকে ঠোঁট। হঠাৎ একটা তীব্র ফ্ল্যাশলাইট
এসে পড়ে মুখে।
থতমত খেয়ে আটকে যায় দিব্য। অটবীর
জ্ঞান ফেরে। দু হাত দূরে ডান দিক থেকে আলোটা প্রায় কাছে এসে পড়ে। পালানোর পথ নেই ।
লক্ষ্য করেনি তারা দুটো গাছের পরে আরেকটা গুঁড়ির নিচে একটি লোক গাঁজা টানছিল। আচমকা
আলো চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেওয়ায় কিছু দেখতে পারছিলো
না দুজনেই। টর্চটা পুরো মুখের ওপর মেরে লোকটা এগিয়ে আসছিল। টর্চ থেকে চোখ সরাতে
পেছনে ফিরতেই অটবী চাপা আর্তনাদ করে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে লোকটি অটবীর হাত চেপে ধরেছে।
পালানোর পথ নেই।
অপরদিক থেকে আরেকটা জোরালো জ্বলে
উঠল। দিব্য হতবাক। আজ কি সত্যি খুব খারাপ দিন। ওরা তো এখানে বার বার আসে না যে দূর
থেকে দেখে কেউ ওত পেতে বসে থাকবে। এটাও নয় যে সে অসাবধান ছিল। তাহলে এই দ্বিতীয় ব্যাক্তি কোথা থেকে এলো? হয়ত আলো দেখে এগিয়ে এসেছে।
হয়ত সাহায্যের হাত বাড়াবে । বাস্তব হল না কল্পনাটা।
আগের লোকটা চাপা গলায় বলল, “লাইট বন্ধ কর। ধরেছি মাগীটাকে।” মানে এ শুধু তাদের একার
লীলা ক্ষেত্র নয়।
“ওকে ছেড়ে দিন। আপনি কি চান বলুন।”
পাত্তাই দিল না প্রশ্নের, বলল, “চুপ করে বস।” লোকটা অটবীর হাত ধরে নীচে বসল। দিব্য
বুঝতে পারল না যে এরা নেহাতই উটকো লোক। স্বাভাবিক সরলতায় বসে পরল নীচে। পরের লোকটা
এসে বলল, “শালা , জায়গাটাকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
আমি চললাম।” লোকটার মুখ এক ঝলক দেখে চিনতে পারল দিব্য। মোড়ের মাথায় এর বিড়ি সিগরেটের
দোকান। আর কিছু করার নেই। পাড়ার লোকের হাতে ধরা পড়েছে , সহজে ছাড় পাবে না।
“কোথায় বাড়ি।” দিব্যর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে হতচকিত দিব্য গড়গড় করে দুজনার নাম ঠিকানা বলে দিল। একবারের জন্য ভাবল
না এর পরে কি হতে চলেছে। অটবী কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল দিব্যর দিকে। এতটাই উজবুকের মত আচরণ। সে শুনেছে পুরুষের দায় নারীকে
রক্ষা করা। বসার সময় পাসের ঝোপে লেগে তার ওড়না ছিঁড়ে গেছে। লোকটি তার হাত এমন করে চেপে
ধরেছে মনে হয় ছাড়লে হাতে কালশিটের দাগ পরে যাবে। আর দিব্য এইরকম ভাবে হাল ছেড়ে দিচ্ছে।
ও কি পারেনা এক ঘুশিতে লোকটার নাক ফাটিয়ে দিতে। নিশ্চয় পারে। সর্বত্র শোনা যায় কি ভাবে
প্রেমিকার প্রান বাঁচাতে প্রেমিক কি করে ঝাঁপিয়ে পরে। আর দিব্যর এই আচরণ। ঘেন্নায় কান
গরম হয়ে যায় অটবীর।
দিব্য বসার আগে লোকটিকে ভালো করে লক্ষ্য করেছিল। বসতে গিয়ে হাতের
কাছে একটা আধলা ইঁট পেল। সেটা কাছে সরিয়ে নিয়ে
বসেছে সে। কিন্তু কিসের ভীতিতে সে সমস্ত সত্য উগড়ে দিল সেও বুঝতে পারল না। লোকটি অন্তত
এক হাত বেঁটে দিব্যর থেকে। এক ঝটকায় হাত টেনে দুটো থাপ্পর মেরে অনায়াসে বেরিয়ে চলে
জেতে পারে তারা। কিন্তু কিসের জন্য তাহলে সে অপেক্ষা করছে। দিব্য জানে বিপদে উগ্রতা
শেষ কথা। ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায় সে। অটবীকে স্পর্শ করেছে, তার প্রতিহিংশা নেওয়ার মত বোকা বোকা প্রেম
তার নেই। কিন্তু হঠাৎ আর অদ্ভুত ভাবে সে বলে ওঠে, “আমাদের ছেড়ে দিন। আমরা ভালো ছেলে
মেয়ে। সাইন্সের স্টুডেন্ট।” বলেই নিজে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। “সাইন্সের স্টুডেন্ট”
– একি তার নিতান্ত বোকাবোকা ঢাল না নিরীহতা প্রদর্শনের বিচিত্র চেষ্টা। অটবী হাল ছেড়ে দেয়। আর
লোকটি খ্যা খ্যা করে হেসে ওঠে , “সাইন্সের স্টুডেন্ট ।। হুহ। ছেড়ে দেব। যাহ ছেড়ে দিছছি।
গাছের পেছনে গিয়ে লাগা।”
“না আমরা চলে যাব । প্লিস ছেড়ে
দিন।”
“যা বললাম কর। নাহলে ছাড়াছুড়ি হচ্ছে না।”
“কি বলতে চান আপনি।”
“গাছের পেছনে যা, আমি পাহারা দিচ্ছি।
লাগা ওকে।”
দিব্যর হাতে উঠে এলো আধলা ইট কিন্তু
এখনও সময় হয়নি। এর থেকে একটু আগে এগোলেই যা করার নয় তাই করতে হবে দিব্য কে। হঠাৎ সেই
স্বেতি লোকটা এসে হাজির হল। আবার সেই টর্চ, “ছেড়ে দে ওদের।” এই লোকটি হঠাৎ করে অটবীর
হাত ছেড়ে দিয়ে বলল , “সাইন্সের স্টুডেন্ট , হা হা হা… এই চত্বরে যেন আর না দেখি। ” ছাড়া পেয়ে অটবী আর এক বারের জন্য
ফিরে তাকাল না দিব্যর দিকে। গায়ে মাটি লেগে
আছে। ছেঁড়া ওড়না। অটবী জৎপরনাস্তি দ্রুততায় সাইকেল তুলে প্যাডেল করতে লাগল। দিব্য সেখানেই
দাঁড়িয়ে রইল লোক গুলির সাথে, আরও কিছুক্ষন।
No comments:
Post a Comment