Saturday, October 5, 2019

(৫৬) আধ্যানের ডায়েরি - দূর্গাপূজা (২০১৮)

(৫৬) আধ্যানের ডায়েরি - দূর্গাপূজা


আমি টিভির সামনে নাচছিলাম।  নতুন নতুন গান এখন চলছে আমার জন্য।  আগের মতো এক ঘেঁয়ে রাইম্স নয়।  এখন রাইমসের সাথে সাথে স্টোরীটেলিং চলে।  ঘরে বেডরুমটা বন্ধ ছিল।  দরজা খুলে যেতেই মায়ের ওপর চোখ পড়তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো , "কুইন" . মা কে সত্যি কুইনের মতো লাগছিলো।  কি সুন্দর।  মা বাবাকে বলতে যাচ্ছিলো , " শাড়িটা একটু ধরো। ..... " কিন্তু আটকে গেলো যেই বললাম , "কুইন" বুঝতেই পারলাম মায়ের বেশ ভালো লেগেছে।  তাই আরো দু তিনবার বলতে মা এসে আমাকে চটকে আদর করে দিলো।  মা আজকে দারুন সেজেছে।  আর আমাকেও বাবা দারুন ভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে।  কেন জানিনা।  কি জানি কোথায় যাবো।

মা যে ড্রেসটা পরে আছে সেটা কিন্তু রোজ রোজ পড়তে দেখিনা। বাবাও অন্য ধরণের ড্রেস পরে আছে।  যদিও শার্ট প্যান্ট এর মতো কিন্তু অনেক বড়।  আর আমার যে ড্রেসটা সেটা তো হেব্বি মজাদার।  আমার জন্মদিনে এরকমই একটা ড্রেস পড়িয়েছিলো কিন্তু সেটা বেশ ভারী।  এটা কিন্ত বেশ হালকা।  মা একটা ভেতরে মোটা প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে বললো , "পরে নে।  নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।" বাইরে খুব হাওয়া চলছে।  আমাকে একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়েছে।  ও হ্যাঁ তাই তো , এটাকে পাঞ্জাবি বলে।  বাবাও ওরকম একটা কিছু পরে আছে।  কিন্তু বাবার টা বাবারে বড়।  আমাকে মাঝে মাঝেই বাবা নিজের জামা পরিয়ে দেয় আর আমি ঝল ঝল করে  হাঁটি , কিন্তু এটা একটু বাড়াবাড়ি বড়।  খাটের ওপর রাখা ছিল আমি ঢুকে গেছিলাম , আর বেরোতে পারছিলাম না।

আমারটা কিন্তু আমার গায়ের সাথে আঁট।  আসলে সেই যে দেশে গেছিলাম তখন নিয়ে আসা হয়েছিল।  তখন কি কেও জানতো যে আমি এরকম বড়সর হয়ে যাবো। যাকগে বাবা ফাইনালি এঁটে গেলেই হলো।  এঁটে গেলো , আর নিচে যে কাপড়টা আমার প্যান্টের ওপর পরিয়ে দিলো সেটা থেকে একটা কি জানি কোঁচকানো একটা কাপড় বেরিয়ে আছে।  সেটাকে নাকি বলে ময়ূরপুচ্ছ।  উচ্চারণই করতে পারছিলাম না।  শেষ পর্যন্ত পারিও নি।  কিন্তু মা ওটাকে ম্যানেজ করা ছাড়লো না।  পকেটের সাথে আটকে দিলো।  স্নান করার পর , মাঝে মাঝেই বাবা এরকম একটা কাপড় যাকে গামছা বলে সেটা জড়িয়ে দেয় আমার গায়ে।  সেটা বেশ টাইট থাকে, কিন্তু এটা এক্কেবারে ঝলঝলে।  কি বিরক্তিকর।  কি সাংঘাতিক বিরক্তিকর।  সামনে পা ফেলছি , পাশে টান পড়ছে।  এদিকে বাবা মা আমাকে ধরে টানছে।  যদি কোথাও যাওয়ার তারা থাকে আর বাবা মা র দেরি হয়ে যায় তাহলে মা চালু হয়ে যায় , "আধ্যান তাড়াতাড়ি কর , তাড়াতড়ি কর দেরি হয়ে যাচ্ছে। " সেদিনও তাই করছিলো।

আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম জায়গাটাতে , আমার কাছে জায়গাটা খুব একটা নতুন লাগলো না।  আগে এসেছি, আগে এসেছি মনে হতে লাগলো।  কিন্তু কিছুতেই মনে করে উঠতে পারলাম না।  কারণ এখন আমার মেমোরি বিল্ড হচ্ছে।  যেইদিন থেকে আমি মা বাবার মতো হড়হড় করে কথা বলবো তবে থেকে আমার সমস্ত মায়ের পেটের মেমোরি ওয়াইপ আউট হয়ে যাবে আর আমার এই মেমোরি গুলো সলিড স্টেট্ নেবে। যদিও আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ওয়াইপ আউট দোস মেমোরিস।  কিন্তু কি করবো। বড় তো হতে হবে।

বেশ বড় একটা হল ঘরে তখন প্রচন্ড ভিড়।  সবাই দাঁড়িয়ে আছে।  আর স্টেজে কিছু একটা হচ্ছে।  মা তড়বড়িয়ে এগিয়ে চললো।  আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই আর খুঁজে পেলাম না।  বাবার হাত ধরে ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।  কিন্তু কত আর বাবার হাত ধরে ঘোরা যায়।  কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে বাবার হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনে একটা টেবিলের দিকে।  সেখানে কত কিছু ছবির বই  ছড়িয়ে আছে।  আমাকে যেরকম পিকক টেইল ধুতি পরিয়ে দিয়েছে।  ওখানেও একজনের ছবি ছিল যে পিকক টেইল মাথায় পরে আছে। আমি উঁচু হয়ে দু তিনটে বই নিলাম আর তার পর একটার পর একটা সাজিয়ে ওয়ান টু থ্রি খেলতে লাগলাম।  বাবা ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেলো।

দেখলাম গন্তব্য সেই স্টেজটা।  মা ওই স্টেজেই দাঁড়িয়ে আছে।  কিন্তু স্টেজে ওঠে কি করে।  আমি এগোতে লাগলাম কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই পায়ের দেয়ালে আটকে যেতে লাগলাম।  স্টেজের নিচে অনেকক্ষন একবার এদিক থেকে ওদিক আর ওদিক থেকে এদিক ঘুরে ঘুরে চেষ্টা করতে লাগলাম ওপরে ওঠার।  আমাকে সবাই কোলে করে বসে যেতে লাগলো।  কি আপদ রে বাবা।  আর আমার একমাত্র বাবা পেছন থেকে "সরি সরি " করতে করতে ছুটতে লাগলো।  কিন্তু বাবা কি আর আমার সাথে পারে। এক ফাঁকে টুক করে ভিড়ের মধ্যে এমন ভাবে লুকিয়ে পড়লাম যে আর বাবা দেখতেই পেলো না।  কিন্তু আমিও বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম, কারণ আটকা পড়েছিলাম ভিড়ের মাঝে। না এগোতে পারছি , না পিছোতে।  পেছন ফিরে শুধু পা দেখতে পারছি , বাবা কে না।  ঠিক যেমন বিছানায় লেপের মধ্যে ঢাকা দিয়ে দিলে মাঝে মাঝে বেরোনোর পথ খুঁজে পাইনা , ব্যাপারটা ঠিক ঐরকম।  কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম দেওয়াল।  অনেক চেষ্টা করে দেওয়ালের ওপরে মুখ তুলে স্টেজ দেখতে পারলাম।  তারপর কি হলো জানিনা, কে আমাকে স্টেজে তুলে নিয়ে চলে এলো।  একদম মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

মা আমাকে ধরে দাঁড়িয়েছিল।  আমিও তখন হাঁফিয়ে টাফিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুইন দেখছিলাম।  এখানে সবাই মায়ের মতো কুইন।  অনেক অনেক কুইন।  আর ঠিক মাঝখানে ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ কুইন আর আর কিং আছে।  কি সুন্দর দেখতে তাদের।  আর তাদের কি সুন্দর সাজ।  সবাই ঝকঝক করছে।  আমাদের বাড়িতে দেওয়ালে যে কুইন গুলো ঝুলছে কিংগুলোর সাথে।  তাদের মতোই দেখতে।  হঠাৎ দেখি মায়ের হাতে চলে এসে এক গুচ্ছ ফ্লাওয়ার।  ইয়েলো , হোয়াইট আর রেড ফ্লাওয়ার।  ও মা সবার হাতেই তো ফ্লাওয়ার চলে এসেছে।  কোই আমাকে তো কেউ দিলো না।

ইতিমধ্যে কি হলো একটা লোক আমার মতো ড্রেস পরে হাতে একটা কি নিয়ে কিসব বলতে লাগলো , আর সবাই সেরকমই কিছু একটা বলতে লাগলো।  মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি মাও প্রায় চোখ বন্ধ করে সেরকমই কিছু বিড়বিড় করে বলে চলেছে।  আমি আর কতক্ষন এই পাগলামির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।  আমি একটু স্টেজে ঘুরে আসতে গেলাম।  একটু এগিয়ে দেখি যে লোকটা ধুতি পরে স্টেজে দাঁড়িয়ে বকর বকর করছে সে আমার দিকে ওই হাতের জিনিসটা এগিয়ে দিলো।  ও নিয়ে আমি কি করবো।  ফুল ইগনোর মেরে এগিয়ে গেলাম ওই পাঁচ কিং কুইনের কাছে।  কিন্তু ওই সিক্সথটা কি।  এদের মধ্যে সুন্দরও নয় আবার এদের মতোই ড্রেস পড়া।  কুইন কুইন ভাব অথচ কুইনের মতো দেখতে নয়।  মাথার ওপর আবার কাপড় দেওয়া।  মুখটা তো দেখায় যাচ্ছে না।  হেড শোল্ডার নিস্ এন্ড টোস পর্যন্ত তো ঠিক আছে কিন্তু আইস এন্ড ইয়ার্স এন্ড মাউথ এন্ড নোস্ কি করে হবে ? তারজন্য তো ওই হেড থেকে কাপড়টা সরাতে হবে।  আমি গিয়ে যেই টেনেছি দেখি ভেতরে একটা ট্রি।  নো কুইন।  হেব্বি রেগে গিয়ে জোরে টান মারতেই মুখ থুবড়ে এসে পড়লো।  কি জ্বালাতন।  বাবা দেখি নিচ থেকে ছুটে এসেছে , মা বিড়বিড় করতে করতে ছুটে এসেছে। পাশে মায়ের মতো একজন ছিল সে আমাকে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।  চারপাশে একটা গেলোরে - গেলোরে ভাব চলে আসলো।

তারপর ব্যাপারটা খুব বোরিং।  ওই একঘেঁয়ে চলতে লাগলো।  আর শেষে আমরা খেয়ে দিয়ে চলে এলাম।  পরের দিনও আবার একই জায়গা।  কিন্তু ড্রেস আলাদা।  আমাকে জন্মদিনে যেটা পরিয়েছিল এবারও সেটাই পরে গেলাম।  কিন্তু জন্মদিনের পায়জামার জায়গায় এবার ধুতি।  বাবাও নীল পড়েছে আমিও নীল পড়েছি।  ওখানে গিয়ে সবাই দেখছি আমাকে ধরছে আর বলছে , "আজকেও কি কলাবৌ নিয়ে চলে জাবি। " " তোর কি কলাবৌ চাই। " ইত্যাদি ইত্যাদি।  আমি কিছুতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝে গেছি , সবাই আমাকে দেখেছে।  এনি পাবলিসিটি ইস  গুড পাবলিসিটি।  আমি তো সেলিব্রিটি।  আমার পাবলিসিটি না হলে চলে।

যাইহোক সবাই দেখলাম আমাকে বেশ সমীহ করে চলছে।  সবাই নিজের পেন লুকিয়ে রাখছে গোপনে।  আমাকে ওই কিং কুইনদের কাছে যেতে দিচ্ছে না।  আর গেলেই কেউ না কেউ ধরে আদর করে দিচ্ছে।  সব মিলিয়ে আমি বেশ চুবে ছিলাম।  পরে শুনেছিলাম ওটা দূর্গাঠাকুর আর আমি যাকে টেনেছিলাম সেটা ওঁর বৌমা নাম কলাবউ ।  ঠিক যেমন আমার মা আমার ঠাম্মার বৌমা।  তবে এই নামটা কিরকম শোনা শোনা মনে হচ্ছিলো।  কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।  যাক , যেমন চলছে তেমন চলুক।  কত বলবো , কত ভুলবো।  এই দুর্গাপুজোয় তবে এইটুকু থাক।  পরের বার কালীপূজার গল্প।

আধ্যানের ডায়েরীর আগের পাতাগুলো

No comments:

Post a Comment