Thursday, January 29, 2015

মোদী ও গদি



ওবামা দেশের মাটিতে পা রাখার পরই ফেইসবুক টুইটার ওয়াটসআপ এ ঝড়।  একজন বলে উঠল , "মোদী কি করলো দেখলি। " খবরের হেডলাইন , " সমস্ত প্রোটোকল ভেঙ্গে দিলেন মোদী" ভালো করে চোখ কচলে পুরোটা পরে বুঝলাম, জাদু কি ঝাপ্পি।  মোদী জড়িয়ে ধরেছে ওবামা কে।  আর তাতেই এত সরগরম।  কিন্তু সত্যি আমি বুঝতে পারলাম না এর মধ্যে বিশাল কি খবর আছে।  তাও যদি ইউক্রেন এর প্রধানমন্ত্রী কে জড়িয়ে ধরত।  না, পৃথিবীর দুই অন্যতম শক্তিশালী নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করেছে তাতে এত উহু আহা করার কি আছে বাপু।  আর যেমন ওবামা ওবামা চলে তেমন মোদী মোদী চলে।  কখনো কথাও খবরে পরলাম না - ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাপানে গিয়ে ড্রাম বাজিয়েছে। মোদী করেছে। মানে দেশের প্রধানমন্ত্রী হার মধ্যে কোনো ঘ্যাম নেই।  পাশের বাড়ির ভুটাই কে জিগ্গেস করলে বলবে , "বড় হয়ে মোদী হব।" প্রধানমন্ত্রী তো ভুলভাল লোকে হয়।  বা হয়ে , ভুলভাল হয়ে যায়।  বিচিত্র এক একনায়কতন্ত্র এখন পৃথিবীর হাওয়ায়।  শ্রীখন্ডি খোঁজার জন্য আনাচে কানাচে তল্লাশি। কেজরীওয়াল , মমতা, চন্দ্রবাবু এখন শাহরুখ খান।  ভোট ফর মোদী , পাঁচ সাল কেজরীওয়াল এসব নিয়ে দেশবাসী ভালই মেতে আছে।

চোখে ঠুলি পড়তে মানুষ যখন এতই ভালোবাসে তখন অন্তত সামনে যা ঘটছে সেটাতো ভালো করে দেখুক। মোদী জড়িয়ে ধরেছে সেটা নিয়ে "দেখলি মোদী কি করেছে?" বলার কি কিছু আছে? যা করেছে সেটা ক্যারিশমাটিক। বাংলা ঠিক বেরোলো না।  কিন্তু ক্যারিশমা দিয়ে তো চোখে ধাঁধা লাগে চোখ কচলে নিলেই তো সব  পরিস্কার। তখন শুধু সামনে ভেসে উঠবে ওবামার চোয়াল যেটা শক্ত করে একদিন এই মোদীকেই ভিসা দেয়নি।  আজ তার ক্যারিশমা বাড়াতে চুইনগাম চেবাতে চেবাতে হাজির হয়েছে প্রজাত্রন্ত্র দিবসের প্যারেডে। আর এখানেই মোদীকে ছাড়িয়ে গেছে তার গদি।

গদিতে তো অনেকেই বসেছে।  কিন্তু এইরকম গেম চেঞ্জার মনে হয় আগে কখনো বসেনি।  সিংহটা যখন Weiden+Kennedy র ঘর থেকে বেরিয়ে রাজপথে চলতে আরম্ভ করেছে তখন বোঝাই যাচ্ছে ওবামা হয়ত সামনের বার আবার যেতে পারে।  এখানেই সাফল্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওরফে মোদীর। শিক্ষিত জনসংখ্যার ভারে আজ ভারতের কাছে পৃথিবীর ত্রাহি ত্রাহি রব।  আর ঠিক সময়ে মোদীর আগমন হাতে হাতুড়ি , সামনে গরম লোহা।  কিন্তু এতই ক্যারিশমার প্রতি নজর , প্রোপাগান্ডা তো গয়েবেল্স কেও ছাড়িয়ে যায়।  যদিও কথা কম কাজ বেশি।  কাজ এখনো বিশেষ কিছু দেখিনি বটে।  তবে হ্যা , ভেবেছিলাম দাঙ্গা হবে।  হলো না।  এখানে গদি মোদীকে দিল হারিয়ে।

দৃঢ় প্রত্যয়ী কর্মীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে সাবলীল উত্তেজক বক্তৃতা মোদী গদির সামনে রেখেছিলেন তার প্রভাব ঘরে ঘরে।  আর এই উত্তেজনায় একের পর এক রাজ্য দখল করে চলেছে দল।  দখল করা উদ্যেশ্য শাসন নয়।  টাইমস এর প্রথম ১০০ জনে নাম তোলা সহজ কথা নয়।  দলাই লামা উত্খাত।  শিক্ষিতদের টেবিলে উঠে এসেছে একগুচ্ছ মোদী।  ক্যারিশমাটিক বিদেশযাত্রা, বাজপেয়ীর ভঙ্গিতে থেমে থেমে প্রত্যয়ী বাক্যব্যয় , গাড়ি থেকে নেমে অস্ট্রেলিয়ায় শিশুকে আদর সবই কিরকম আচ্ছন্ন করা এক নেশার মত।  স্বস্তিকার নেশা। এতেই মোদী হারিয়ে দিয়েছে গদিকে।  

আমার জ্ঞানত কোনো প্রধানমন্ত্রীর,  এরকম সুঠাম অবয়ব আমি দেখিনি, এই ব্যক্তিত্ব আমি দেখিনি, এরকম বক্তৃতা আমি শুনিনি,  বিশ্ব সম্মেলনে এরকম উজ্জল হতে আমি কাউকে দেখিনি।   কিন্তু সকলের মত নেশা ছন্ন হতেও আমি পারলাম না।  কারণ এখনো ডলার ষাট টাকা। আশা ও অপেক্ষার উপেক্ষা যেন না হয় এই কামনা করি।







No comments:

Post a Comment