Tuesday, March 24, 2020

#গো_করোনা_গো ( 7 ) - ওয়ার্ক ফ্রম হোম

#গো_করোনা_গো ( 7 ) - ওয়ার্ক ফ্রম হোম 


 
 আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম করা নিয়ে অনেকেই হিংসা করে। অনেকেই চায় একটু বাড়িতে সোফায় ঠ্যাং ছড়িয়ে বসে নেটফ্লিক্স চালিয়ে আরাম করে কাজ করতে। ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে বা ট্রাফিকে এক্সিলারেটর আর ব্রেক এর মধ্যে তা থৈ তা থৈ করে যারা অফিসে গিয়ে বসের কাছে মুখোমুখি গালাগালি খায় তারা আমার এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমে হিংসা তো করবেই। আর তাদের অভিশাপেই হয়তো আজকের এই দীর্ঘ ওয়ার্ক ফ্রম হোম পাওয়া। 

সত্যি বলতে আমার ঘর থেকে কাজ করতে একদম ভালো লাগে না। কারণ অফিস থাকলে একটা নিয়ম থাকে। আর অফিস না থাকলে তুমি সারাদিন কাজ করে যাবে। সকালে উঠে অফিস যাওয়ার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে যখন অফিস গিয়ে পৌঁছবে তখন কেউ জিগ্গেস করবে না গত দেড় ঘন্টা তুমি অনলাইন ছিলে না কেন ? অনেক মিটিং চায়ের সিপ্ নিতে নিতে হবে। লাঞ্চ টাইমে সবাই ক্যান্টিনে দেখা হবে। আর কাজের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে কারো ডেস্কে উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে।  কলকাতার অফিসের মোচ্ছব তো আর বলার নেই।  ঝালমুড়ি মেখে খাওয়া হয়।  

তা আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম দু দিনের , সোমবার আর শুক্র বার।  এই দু দিন কিন্তু আমার দম নেওয়ার সময় থাকে না।  সপ্তাহের শুরু আর সপ্তাহের শেষ।  দুদিকেই শ্বাসরুদ্ধ করে ল্যাপটপে দাপাদাপি।  শুধু শান্তি একটাই , গিন্নি অফিসে আর ছেলে স্কুলে।  এই দু দিন ব্যাচেলারত্ব উপভোগ করি।  

কিন্তু আজ ব্যাপারটা একদমই আলাদা।  যখন লিখছি , তখন আমেরিকা ৫০ হাজার ছুঁতে চলেছে , করোনা ভাইরাসের কেস।  ছেলের স্কুল থেকে ফোন এসেছে এক মাসের আগে স্কুল খুলবে না। তার মানে গত সপ্তাহের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ভয়াবহ স্মৃতি অন্তত আরো একমাস চলবে।  

বেসমেন্টে একটা ছোট মতো অফিস বানিয়েছিলাম।  এখন সেটা ছেলের দখলে আর স্টোর রুমে পরিণত হয়েছে। গিয়ে বসলেই ছেলে এসে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে যে “তুমি বাবা। তোমার একা বসে কাজ করা চলবে না।” আমার কিবোর্ডে তাকে টাইপ করতে হবে।  আমার সাথে তাকে খেলতে হবে। বাবা মা বাড়িতে আছে অথচ তার সাথে খেলছে না সে আবার কি কথা ? 

তার সাথে আছে অফিসের চাপ।  যেহেতু সবাই বুঝতে পারছে গ্লোবাল রিসেশান আসতে চলেছে। আর ক্যাপিটালিসমে ডুবে থাকা আমেরিকায় চাকরি যেতে শুরু করেছে।  তখন কোপ সবার উপরেই আসবে।  তাই সবাই প্রচন্ড কাজ করছে।  যে জিনিস অন্তত তিন মাস পরে করার জন্য প্ল্যানিং করা আছে , সেটা সবাই আজকেই করে ফেলছে। আই টি যেহেতু সবসময় বাঁ হাত মানে প্রয়োজনীয় কিন্তু ডান হাতের মতো নয়।  তাই লোক কমাতে প্রথমে আইটি থেকেই বাজেট যাবে। 

এই প্রচন্ড কাজের চাপের সাথে থাকছে একটা ছোট্ট মানুষ, যে দস্যিপনার লিমিট ক্রস করে দিয়েছে।  কারণ কিছুই নয়।  তার সাড়ে তিন বছরের মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকছে না যে কেন স্কুল বন্ধ।  অফিসের কলিগদের কাছে শুনতাম যে গ্রীষ্মের ছুটিতে তাদের কি সাংঘাতিক অবস্থা হয়।  আর এখন গ্রীষ্মের ছুটির থেকেও খারাপ অবস্থা।  বলে না , বাচ্চা সামলানো অফিস করার মতো কাজ ( Handling kid is a full time job ) সেটা হাড়ে টের পাচ্ছি।  আর সাথে পাচ্ছি বুঝতে যারা ডাবল শিফট এ কাজ করে সংসার চালায় তাদের কষ্ট।  

অফিসের  মিটিং এ ঢুকছি ছেলে চ্যাঁচাচ্ছে “Daddy lets play soccer” সকার খেলতে বেসমেন্টে গিয়ে হাজির হলাম বৌ চ্যাঁচাচ্ছে , “প্রেসার কুকারে একটা সিটি পড়লে নামিয়ে দিয়ো। ” প্রেসার কুকার বন্ধ করতে গিয়ে মায়ের ফোন আসছে , “তাহলে বাজার টা করেই আনি।” বিচ্ছিরি ভাবে কাকুতি মিনতি গালাগালি করে মায়ের বেরোনো আটকাতে আটকাতে মেল্ চলে আসছে , “ Work from home doesn’t mean you will not respond in ping.” মেলের রিপ্লাই করতে করতে করতে ছেলে পটিতে বসে চিল্লাচ্ছে , “ড্যাডি , অল ডান . ক্লিন মাই পনু .” আমি গিন্নিকে চিৎকার করে ডাকতে জবাব দিলো  , “আমি মিটিঙে ঢুকলাম।  তুমি ছেলেকে একটু দেখো। ” ছেলের সোনাপোনা পরিষ্কার করে দেখলাম নোটিফিকেশন , “Home arrest skill development” অফিসের রাগ গিয়ে পড়লো ছেলের ওপর।  এমনি এমনি চিৎকার করতে যাবো,  নিরীহ মুখটা ঘুরিয়ে ছেলে বললো , “নো স্কুল টুডে।  অল ফ্রেন্ড আর সিক।” সাইড কাটিয়ে গিন্নি কে খ্যাকাতে গেলাম , “সারাদিন ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পরে থাকলে ছেলেকে দেখবে কে।” তার আগেই গিন্নি বেরিয়ে এসে বললো, “সারাদিন ছেলেটাকে টিভি চালিয়ে বসিয়ে রেখেছো।  আমি একা হাতে , রান্না , অফিস আর বাচ্চা কি করে সামলাই।” 

এবার ন্যাড়া হয়ে যাবো।  এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম তুলে না ভাই।  কিউমুলো নিম্বাসের ওপর যদি কেউ বসে থাকিস / থাকো / থাকেন তারা শুনলে এই করোনাকে একটু ওয়ার্ক ফ্রম দিয়ে দাও।     

No comments:

Post a Comment