“গত পঞ্চাশ বছরে চারটে এপিডেমিক এনেছে চায়না। “
“আজ থেকেই সমস্ত চাইনিস দ্রব্য বর্জন করা হোক।”
“চায়না ক্ষতিপূরণ দিক।”
“ওই সস্তার মাল সব ফেলে দেওয়া হোক।”
করোনার গৃহবন্দীদের ঘরজামাই এর মতো এইসব আস্ফালন শুনতে ভালোই লাগছে। ফেসবুক ওয়ারিয়র বলে একটা নতুন প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা এইসব বেফালতু কমেন্ট মেরে উত্তর পূর্ব ভারতের নাক বোঁচা চোখ কুতকুত দের করোনা বলে গালাগালি দিয়ে বলছে দেশে ফিরে যাও।
আমেরিকা রেসিস্ট , গৃহযুদ্ধের কারণ এবং বহু বছর ধরে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের কারণ এই ভয়ঙ্কর রেসিজম। কিন্ত এই রেসিজমের কারণ অর্থনৈতিক। আর আমাদের দেশে অকারণ কাঠি করার কারণ এই রেসিজম। আমরা ভালোবাসি এমনি এমনি খেতে। আমার চোখ হাতির মতো কিন্তু মাথাটাও হাতির মতো তাই আমাকে অনেকেই হাঁসজারু মনে করে। কিন্তু যাদের চোখ ছোট আর নাক বোঁচা তারা কি বাদুড় খেয়ে করোনার মতো দেখতে হয়ে গেছে।
এখন প্রথম প্রশ্ন, সকলে মনে করে চাইনিসরা এই ভাইরাসের কারণ। কনস্পিরেসির গন্ধ পেলেই লোকে “উলুস” বলে ঝাঁপিয়ে পরে। জীবনে তো কোনোরকম উত্তেজনা নেই। এমনকি সেক্স করতে গিয়েও জোয়ান বয়সেও পেনেগ্রা খেতে হয়। তারাই এইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতে পারে। আর এখন তো ইরাকের পর বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এর তত্ত্ব যে কেউ খায়। যদিও পৃথিবী এখন এমন কন্ডিশনে যাচ্ছে , ৭ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের আওতায় চলে এসেছে তখন অবিশ্বাস করতেও ভয় হচ্ছে।
কিন্তু একবার ভেবে দেখুন এই যুদ্ধে লাভ কার আর ক্ষতি কার ? চায়না ম্যানুফ্যাকচারিং হাব। বিশ্বের লোকেদের ঘরে বসিয়ে রাখলে এদের লাভ কি। এদের ব্যবসায় তো সবথেকে বড় ক্ষতি। অর্থনৈতিক লাভ ছাড়া আর মনে হয় কোনো লাভের জন্য কোনো রাষ্ট্র এতবড় ক্ষতি করেনা। এরা তো রমেশ আর সুরেশ না, যারা খান্তমণির প্রেমে পাগল হয়ে সুইসাইড করতে চলেছে।
এবার আসি বর্জন করার কথা নিয়ে। বড় বড় কথা যারা বলছে তারাই সস্তার খোঁজে চাইনিস জিনিসের পেছনে দৌড়েছিলো। এই সস্তার চক্করে শেষ হয়ে গেছে প্রচুর দেশি কোম্পানি। কিন্তু এরা এখনো দৌড়োচ্ছে আর দৌড়াবেও। সমস্যা চায়নার না , আমাদের। সস্তা বলে কোনো জিনিস হয়না। তোমার কাছে আমার কাছে সস্তা মানে কোনো দেশে কোনো মানুষ তার জীবনের মূল্য শূন্য করে আমাদের জন্য জিনিস বানাচ্ছে। তাই দাম দিয়ে জিনিস কিনুন। আর যদি ক্ষমতা না থাকে , তাহলে যারা সস্তায় যোগান দিচ্ছে তাদের সম্বন্ধে বোকা বোকা কমেন্ট করা ছাড়ুন।
মেক ইন ইন্ডিয়ার সিংহ কেনিয়ার জঙ্গলেই এখনো ঘুরছে। গির থেকে বেরিয়ে যদি বিশ্বমাঝে ঘুরতো , তাহলে হয়তো আমাদের এইসব কথা বলা মানাতো।
আর ক্ষতিপূরণ !!!! আমেরিকার একজন কেস করেছে দেখলাম। কিসের ক্ষতি আর কিসের পূরণ। এইসমস্ত ভুলচুলের জন্য , অদ্ভুত ভাবে চায়নার সত্যি আবার ধামা চাপা পরে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী যখন হাজার হাজার লোক যোগ করছে এই মহামারীতে, তখন চায়না একেবারে থেমে গেছে। বুঝতে পারছেন তো , ওখানের মানুষগুলোর কি অবস্থা। সত্য গোপনে চায়না সবথেকে উপরে। আর আরো বেড়ে যাচ্ছে।
আর চায়নার ভুলের ফসল নিজের দেশের মানুষদের দেওয়া কেন? নর্থ ইস্ট তো আমাদের দেশের অংশ। আমাদের মানুষ। মোদিকেই ভোট দিয়েছে , জনগণমনই গায় , পাসপোর্ট এ এখনো ইন্ডিয়ানই লেখা আছে, ওদের ভগবানও শচীন টেন্ডুলকার। তাহলে ? সমস্যা কি ?
এই বন্দী জীবনে আলো দেওয়ার জন্য অনেক কিছু আছে। সুন্দর গান আছে , গল্প আছে এমনকি কল্পবিজ্ঞান আছে। অবাক হয়ে পৃথিবীর ভুলচুল দেখার সময় আছে। গুরুগম্ভীর তত্ব আছে , পানু আছে , সময় কাটানোর সমস্ত সরঞ্জাম আছে। তাহলে এসব কি ?
ওসব চায়না টায়না ছেড়ে এবার নিজের দেশের দিকে নজর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো ছাড়ুন।
No comments:
Post a Comment