Friday, December 1, 2017

ডিভোর্সের ঠিক আগে


আর মাত্র একটা সই।  ব্যাস তারপরে মুক্তি।  অনেক সহ্য করেছি ওর অত্যাচার। বৌ না পাহারাদার সেটাই বুঝতে পারতাম না।  যা করতে যাই, তাতেই সমস্যা।  আমিও তো মানুষ।  আমারও তো ডিমান্ড আছে।  আর এই ফেমিনিজম এর তো মুখে এক লাথি। বর কে ঠোকার সময় আমি তুমি সমান, আর যখন কাজ ভাগাভাগির ব্যাপার থাকে তখন “পুরুষ” “মহিলা” আলাদা আলাদা।  তার ওপর আবার আমি কিছু করতে গেলেই ফোন তুলে বাড়িতে কমপ্লেন।  শশুরের না খাই না পড়ি।  কথা শুনবো কেন।  এই শালা বাঙালিদের জীবনেই সব প্রব্লেম।  আমরা বৌকে মাথায় তুলে রাখি বলেই কাঁধে পা রেখে হেগে দেয় ঘাড়ে।  ডিভোর্স খুব ভালো জিনিস। খোরপোশে যা যা চেয়েছে সব দিয়েছি।  যা চাইনি তাও দিয়ে দেবো।  শুধু বেতালকে ঘাড় থেকে নামাতে হবে।  ওই অফিস থেকে ফিরেই তিড়িং বিড়িং পিং পং বলের মতো আর নাচতে আর পারছি না।  আরে পুরুষ মানুষ আলাদা , মেয়েমানুষ আলাদা।  যদি মেয়েদের মানুষ হিসেবে মানার জন্য পৃথিবী তোলপাড় হচ্ছে ,তো পুরুষদেরও মানুষ হিসেবেও  বাঁচার অধিকার আছে।  সব বাঙালি সিংহ বিয়ের পর ইঁদুরছানা। সব কিছুতেই তো ফ্রিডম আছে, তাতেও কেন মন ভরে না।  তার কথা না মানলে আমি পুরুষজাতি।  আর মানলে বোকা হাতি। বিয়ে অবশ্য গ্রেটেস্ট ইনস্টিটিউশন , নাহলে ওরকম দিদিমনিরা করবে কি? শালা , জীবনটা ঝালাপালা করে দিলো।  বেশ তো চলছিল প্রেম পিরিতি।  বিয়েটা না করলেই হতো।  কানের কাছে দিন রাত ঘ্যান ঘ্যান ঘ্যান ঘ্যান।  প্রেমের সিকিউরিটি চেয়েছিল।  ব্রাকেটে মিষ্টি করে ষ্টার দিয়ে লেখা ছিল “আমার একটা টমি চাই .” আবার বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মায়ের কানে বলে গেছিলাম , “দাসী আনছি ”,  কাকিমাই বলিয়েছিলো।  সব মেয়ে একে অপরের গায়ে গু ছেটায়।  আর নাক বন্ধ করে পান্তা ভাত আমাদের খেতে হয়।  সেরিমোনিয়ালি বলেছিলাম , আর সেটাই চলে আসে যেকোনো ঝগড়ায়।  রাতের বাসন আমিই তো মেজে দিই।  তার পরেও কেন।  আমাদের পূর্বপুরুষগুলো যা বাঁশ দিয়ে গেছে না আমাদের।  তাদের ওই মেয়েদের দাবিয়ে রাখার থিওরির জন্য আমাদের এখন মরতে হচ্ছে।  তখন কোন কাজ ছিল না , তাই কি করি , বাচ্চা করি।  এখন তো সেটাতেও সমস্যা। বিয়ের এতবছর পরেও তো বাচ্চা নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই নেই।  শুধু ট্যাং ট্যাং করে শপিং মলে ঘুরে বেড়ানো।  আমার তাতেও কোনো আপত্তি নেই।  কিন্তু আমাকে ছাড়ো না।  আই লাভ ইউ ডিভোর্স।  এই সাইনটা মারবো।  বেরিয়ে সোজা একটা স্কচ কিনবো, নিব নয় পুরো সাড়ে সাতশো।  বাড়িতে গিয়ে একটা পুরো টিভির দখল। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ম্যাচ।  বিন্দাস জীবন শুরু।  কালকে থেকে পার্টি।  পরশুর পার্টিটার কি হবে।  উইথ ফ্যামিলি বলেছিলো।  ও ঠিক আছে , এখন তো আমি ব্যাচেলর।  খুল্লা ষাঁড়।  একাই যাবো।  কিন্তু প্রত্যেকবার যে কাপল গেম্স্ এ  আমরা দুজনা ফার্স্ট প্রাইস পাই , সেটা এবার আর হলো না।  মুভি টিকিটের কুপন গুলো তো এবার নষ্ট হবে।  সিনেমা একা দেখা যায় না।  বাড়িতে তো যায়।  ম্যাচের পরে স্কচ আর নেটফ্লিক্স।  কিছু ভালো একটা চাট জোগাড় করে নিয়ে যেতে হবে।  ও বেশ ঝাল ঝাল চাট বানাতো।  সেটা মিস করবো।  আজ পুরো বিছানা আমার।  পুরো লেপ টেনে নিয়ে , নিজে গরম থাকতো।  আর আমি হি হি করে কাঁপতাম।  তা আর হবে না।  কিন্তু কাঁপতে কাঁপতে ওর গরম শরীরটাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ঘুম কিন্তু দিব্যি হতো।  ও তো সকালে পরে পরে ঘুমোতো, ব্রেকফাস্ট জীবনে দেয়নি।  এবার আমি লার্জ ব্রেকফাস্ট করে যাবো।  নিজের মতো করে।  কিন্তু টিফিনটা তো বেশ গড়বড়।  ক্যান্টিনে খাওয়া তো আমার কোনোদিনও পছন্দ নয়।  রান্নাটা কিন্তু ও বেশ ভালোই করে।  ঝগড়া করতে করতে ঝাল ঝাল মাটন যা বানাতো না। থাক বাবা , রাঁধুনি রেখে দেব।  এটলিস্ট পেট ভরে খাওয়ার পর একটা সিগারেট তো খেতে পারবো।  এবার থেকে আর লুকিয়ে খাওয়ার চাপ নেই।  ঘরেই অ্যাশট্রে রেখে দেব।  কিন্তু ঘরে ঢোকার পর যে মিষ্টি ধূপের গন্ধ থাকে সেটাতো আর থাকবে না।  ধুর , রুম ফ্রেশনার আছে কি জন্য।  উফফ , স্বাধীনতা।  এর থেকে বেশি আর কি পেতে পারি।  ডিম খাবে না কোলেস্টেরল , আলু খাবে না সুগার , রেড মিট বন্ধ প্রেসার , বাটার বন্ধ চর্বি বাড়ছে।  এসব তো আর শুনতে হবে না।  লোকেদের বৌরা কি সুন্দর।  সবাই তো ম্যারেড কিন্তু কৈ ছেলেদের পার্টি হলে তাদের বৌরা তো দিনরাত ঝগড়া করে না।  এবার শান্তিতে গিয়ে মাতাল হওয়া যাবে।  এতেই ওর আপত্তি।  মাতাল হওয়া একটু চাপের ব্যাপার বটে।  সবাই তো আর ভালো নয় , পেটের কথা বার করার জন্য বসে থাকে।  এটলিস্ট এতদিন সেইসব গ্রুপ গুলো থেকে সরে ছিলাম , অজুহাতে বৌয়ের নাম গুঁজে দিতাম।  এখন বেশ সমস্যা হবে।  ডিভোর্স হয়ে গেলেও কমান ফ্রেন্ডরা তো আর চলে যাবে না।  শুরু হবে জ্ঞানের পাহাড়।  এতদিন শুনছিলাম যদিও , কিন্ত এবার আরও বাড়বে।  এখনো আত্মীয়রা জানে না।  জানলেই হয় জ্ঞান দেবে নয় অন্য মেয়েদের খোঁজ দেবে।  আবার ছাদনাতলা, ইম্পসিবল। কিন্ত ব্যাচেলর থেকে বেশিদিন হবেটাই বা কি।  এমনিতেই বন্ধুদের বাচ্চা  হয়ে যাওয়ার পর মাঝে মাঝেই ওদের থেকে আউটকাস্ট হয়ে যাই।  সবাই পটির কালার নিয়ে আলোচনা করে।  এখন তো দুরছাই করবে। সমব্যাথীদের সাথেই আলোচনা হয়। আমার না আছে সংসার না আছে বাচ্চা।  ব্যাপারটা বেশ চাপের।  এক থাকাটা সমস্যা বটে।  সেবার যখন ও বাপের বাড়িতে গেছিলো , প্রথম দু দিন হেবি ভালো লেগেছিলো। কিন্ত তৃতীয় দিন থেকে মনে হচ্ছিলো ঘরটা এসে আমার গলা টিপে ধরবে। অথচ আমাদের মধ্যে কথা বার্তা নেই অনেক দিন। কিন্তু ও থাকলে আরেকটা জীবন থাকে।  সকাল থেকে রাত অবধি ঠুং ঠাং শব্দ, রান্নার গন্ধ , ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের আওয়াজ , ঝগড়া , চিৎকার।  জীবনটা যেন গতিশীল থাকে।  নাহলে তো সেই পুরানো মেশ জীবন। মাঝে মাঝে কেউ ডেকে আহা বাছা বলে খাওয়াবে।  কিন্তু সে তো টেম্পোরারি।  দুদিন বাদে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা এসে সংসার নিয়ে ডিসকাস করবে, আর আমায় বলবে তুমি শুনে কি করবে কাকু।  কিন্তু আবার বিয়ে করলে যদি সেটাও এইরকম বেরোয়।  ডিভোর্সিরা তো ডিভোর্সিকেই বিয়ে করে।  তাহলে আরেক বেতাল এসে ঘাড়ে চাপবে।  ব্যাপারটা সেরকম নাও হতে পারে।  কিন্ত হলে কি হবে ? আবার সেই একই ঝামেলা। না না আর বিয়ে নয়।  কিন্ত বুড়ো তো একদিন হতেই হবে।  তখন একা থাকলে তো লোকে জানতেও পারবে না যতদিন না বডি ডিকম্পোস হয়ে পচা গন্ধ বেরোয়।  আর যত বয়স বাড়ে তত তো মানুষ একলাই হয়ে যায়।  আব্দুল কালাম , বাজপেয়ী তো নই।  ছেলেপুলেরা সোশ্যাল প্রেসারে বাধ্য হয়ে  খোঁজ নেবে।  ভেবে দেখলে ঝগড়াটা কিন্ত বাড়েনি , বরঞ্চ কমেছে।  আগে যেসব কারণে ঝগড়া হতো এখন কারণগুলো গুরুতর কিন্ত পয়েন্ট অফ এটাক অনেক কম।  বিয়েটা বাঁচাতে গেলে বেশি আর কি করতে হবে।  সাইলেন্ট হয়ে গেলেই তো হয়।  সবথেকে বেশি ঝগড়া তো প্রত্যুত্তরের জন্য হয়েছে।  ইগনোর মারলেই হয়।  ও যখন আমাকে গার্বেজ হিসেবে ট্রিট করে আর মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে।  আমিও তো খোঁচাগুলো পাশ কাটিয়ে দিলেই হয়।  গীতায় তো বলেছে নিষ্কাম কর্মই বেস্ট ধর্ম। স্বামীদের তো করলেও নাম খারাপ , আর না করলেও।  তার থেকে না করেই নাম খারাপ থাকনা।  কে একজন আমাকে বলেছিল , বিয়ের পর দুটো কান জুড়ে দিতে হয়।  আমি ভুল করে ওকে শুধরানোর চেষ্টা করেছি। আমি যেমন তেমন তো লোকে নাও হতে পারে।  আর সে তো আরেকটা মানুষ।  ভালো মন্দে মিশে। আমার নোংরা করার স্বভাবের সঙ্গে যখন ও কম্প্রোমাইজ করে নিয়েছে তখন ওর নোংরা মুখের স্বভাবের সাথে কম্প্রোমাইজ করে নিলেই তো সব শান্ত।  ঝগড়া তো চলছে , চলবে।  বৌকে বেটার হাফ বা বিটার হাফ না ভেবে একটা পার্টনার ভাবলেই হয়।  যা করছে করুক।  আমার কাজ আমি করবো।  মানতে হয় মানো। না মানতে হয় তাহলে দুবার ঝগড়া করো।  নিজের কাজ করে ফেললে তারপর বলো।  সব কিছু বলে করতে গেলে তো অপিনিওনের বর্শা যে কেউ গিঁথবে।  আজ বৌকে ডিভোর্স দিলে কালকে পৃথিবীর হাজার হাজার লোকের সাথে যাদের সাথে মতের মিল হয় না, তাদেরও তো ডিভোর্স দিতে হবে।  না না , এসব ফালতু।  ডিভোর্স অনেক কমপ্লিকেশন।  পাসপোর্ট থেকে শুরু করে হাজার জায়গায় স্পাউস নাম এড হয়ে আছে।  হাজার জায়গায় চেঞ্জ করতে করতে দেখা যাবে দু তিন বছর কেটে গেছে।  ততদিনে ও যদি সত্যি আবার কারো সাথে বিয়ে করে নেয় তখন আমি মরা বাঁদর কোলে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো।  তার থেকে যা আছে থাক।  চাকরি বাঁচাতে হবে।  অনেক কষ্টে ফ্যামিলি পার্ট শান্ত করেছি। ক্রেডিট কার্ড থেকে শুরু করে জয়েন্ট একাউন্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় একে একে নমিনি করেছি ওকে।  ও ও আমাকে করেছে।  অনেক কষ্টে ফাইন্যান্স ম্যানেজ করে একটা ডকুমেন্ট বানিয়েছি কোথায় কি করছি বা কোথায় কি করতে চলেছি।  ডিভোর্স দিলে সব কিছু আবার কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে। নাঃ , যা আছে থাকে।  আজ আর সই করছি না।  বরঞ্চ আর্ট অফ লিভিং এ ভর্তি হয়ে কি করে ম্যারেড ব্রম্ভচারী হয়ে থাকা যায় সেই শিক্ষা অর্জন করার চেষ্টা করি।  ….. 

ঠিক আগে সিরিজ

No comments:

Post a Comment