Thursday, January 18, 2018

রেসিগনেশানের ঠিক আগে


ডান , ডান ,ডান  এবার মেলটা সেন্ড করে দিলেই মুক্তি। শালা অনেক জ্বালিয়েছে।  সেই কবে থেকে প্রোমোশনের জন্যে পাগলের মতো খাটছি , অথচ কোথাও কোনো উচ্চবাচ্চা নেই।  আর আমার হাঁটুর বয়সী ওই মেয়েটার দু দুটো প্রমোশন হয়ে গেলো।  হবে না কেন।  লিপস্টিক লাগিয়ে ও যা পারে , আমি কি তা পারি।  হ্যাঁ মানছি ভালো কথা বলতে পারে সে ।  কিন্ত আমি যা কাজ করি তার তো তিলমাত্রও করতে পারে না।  কথা বলাটা যদিও একটা বিশাল স্কিল। আমিও চাইলেই ডেভেলপ করতেই পারি।  কিন্তু সবাই যদি কথা বলে, তাহলে কাজ কে করবে?  ম্যানেজারটা সময় অসময় খুব বাজে ভাবে অপমান করে।  আমি যখন চলে যাবো, তখন বুঝবে ঠেলা।  আদৌ কি বুঝবে?  নো ওয়ান ইস ইনডিসপেন্সেবল।  কিন্তু তাও, ঝটকা তো লাগবে।  লোকে বলে রিসাইন করার পর নাকি সব কিছু বদলে যায়।  অনেক কিছু নাকি অফার টফার করে।  ঐতো, চন্দ্রিলকে কত কিছু অফার করলো।  কিন্তু ও তাতেও মানলো না।  থুতু ফেলে চলে গেলো। আমাকেও কি অফার করবে ? যদি করে , তাহলে আমি কি করবো ? ছেড়ে দেব।  নাকি অফার একসেপ্ট করব।  বীর হয়ে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ার থেকে পিছিয়ে গিয়ে আবার এটাক করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি ? আমি কি একবার আবার ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নেবো ?  যদি  মেনে যায়।  অপমানের জন্য ছাড়ছি,  না টাকার জন্য ছাড়ছি?  মাইনে যদি বাড়িয়ে দেয় , তাহলে কি আমি থাকবো ? মাইনে বাড়ানো এই বড় কোম্পানিতে হয়তো হবে না।  তাহলে নিশ্চই কিছু ভালো কাজ অফার করবে, বা প্রমোশন দিয়ে দেবে।  প্রমোশন দিলে তো মাইনে বাড়বেই।  বলে দেখতে ক্ষতি কি কালকে?  সবাই তো জানে আমি ডিপ্রেসড।  যখন বলবো আমি অন্য চাকরি পেয়ে গেছি তখন হয়তো নড়ে বসবে।  যদি নড়ে বসে নোটিস পিরিয়ডের মধ্যে  সব কিছু আমার রিপ্লেসমেন্টকে  শিখিয়ে নেওয়ার ধান্দা করে তাহলে তো বিজনেস এস ইউসুযাল। কোনো ঝামেলাই হবে না।    পাত্তাও দেবে না। ধুর ,কাজ হয়তো ট্রান্সফার করা যায়, কিন্তু এক্সপিরিয়েন্স কী করে নিংড়ে নেবে? আসল ক্রাইসিস টাইমে তো অভিজ্ঞতাই ডিসিশান মেকিং এর কাজে লাগে।  ভুগবে শালারা।   ওদের ভুগিয়ে আমার কি কোনো লাভ আছে।  নেভার বার্ন এ ব্রিজ।  যদি খাপ্পা হয়ে গিয়ে কোম্পানি থেকে ব্লাকলিস্টেড করে দেয়? তাহলে।  এতো বড় কোম্পানি যদি ব্ল্যাক লিস্ট করে, তাহলে অন্যরাও আর নেবে না। নানা , লেটারের ভাষাটা পাল্টে দিতে হবে।  কিন্তু এতো সহ্য করেও বুঝিয়ে যাবো না  এদের ডুয়াল ক্যারেক্টার।  যে কোম্পানি এমপ্লয়ি স্যাটিসফ্যাকশান নিয়ে  এতো বড় বড় কথা বলে সেই কোম্পানিরই লোক ছেড়ে চলে যাচ্ছে শুধু ডিস স্যাটিসফাই  বলে।  ইচ্ছা করছে কিছু একটা বড়সর ড্যামেজ করে দিয়ে যাই। এতদিন একই জিনিসে কাজ করছি বলে নাট বোল্ট গুলো তো সব আমার জানা।  কোনোটা আলগা করে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই সব চুর চুর করে ভেঙে পড়বে।  যদিও তাতে আমার যতটা না আনন্দ হবে , তার থেকে সেই লোকটার বাঁশ হবে যে আমার জায়গায় এসে কাজ করবে ।  সে তো কোনো দোষ করেনি। ফালতু তার ক্ষতি করে আমার আনন্দ পাওয়ার কোনো তো মানে হয়না।  দুদিন ডাউনটাইম যাবে, তৃতীয় দিনের থেকে আবার সব ঠিক।  মাঝখান থেকে আমার রেপুটেশনে গ্যামাক্সিন।  পৃথিবী তো এইটুকু।  কি জানি কবে এই লোকগুলোরই আবার দরকার পরে।  মানুষ আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর।  আমি সবথেকে বড় ভুল ওটাই  করেছি।  না মানুষ ধরেছি , না টাকা।  শুধু ভালো কাজ করতে ও দেখাতে  গিয়ে সব বাঁশ হয়ে গেছে। শুনতে হয়েছে “আই ওয়ান্ট ইউ দেয়ার হোয়ার ইউ ফিট বেস্ট ” . উচিত হয়নি আমার।  কিন্তু মানুষই বা ধরবো কি করে। এক একটা সান্ধ্য মদ্যপানে আমার রেটিংয়ের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে কেউ না কেউ।  আমি মদ সিগারেট খাই না বলে , ম্যানেজারের সাথে খাপিটা ঠিকঠাক  হয়নি। ওই যে নতুন ছেলেটা , ও তো যায় বিড়ি খেতে।  সিগারেট না হয় খারাপ, বা খেতেও বাজে।  কিন্ত মদ খেলে কি দোষ হতো।  দাদা তো ট্রিকটা শিখিয়ে দিয়েছিলো।  এক পেগ নিয়ে যা হ্যাজানোর হেজিয়ে জাবি।  শেষে অর্ধেক পেগ রেখে চলে আসবি।  নেটওয়ার্কিং ইস মোর ইম্পরট্যান্ট দেন এনিথিং। ভুলটা আমার।  পরের অফিসে ম্যানেজার কেমন হবে সে আর কি করে জানবো। একটা মানুষকে জানতে তো অনেকদিন লাগে।  বুঝতে তারও বেশি।  আপাতত এই ম্যানেজারের কর্মপদ্ধতি তো জানি।  জানি কি করে একে ম্যানিপুলেট করা যায়।  যা ওর চাই , তা আমি দিতে পারিনা বলেই না আমার কিছু হচ্ছে না।  আর আমি দিতে পারিনা না তা নয় , দিই না।  কিন্তু নতুন কোম্পানি তে তো জানিই না কি দিতে হবে।  উফফফ, ধুনকি তে ইন্টারভিউটা দিয়ে দিয়েছিলাম , ভাবিনি যে হয়ে যাবে।  এখন কি করি।  কিন্তু নিজের কমফোর্ট জোন থেকে না বেরোলে , উন্নতি করা যায় না।  আমি যা করেছি ঠিক করেছি।  আমার তরফ থেকে চেষ্টা করেছি , প্রচন্ড চেষ্টা করেছি।  যখন পাথর নড়েনি , তখন পালানোর চেষ্টা করছি।  কি ভুল করেছি তাতে ? পালাচ্ছি।  মানে , আমি এস্কেপিস্ট।  সব অফিসই তো আবর্জনার স্তুপ।  এক্সপ্লয়টেশন সর্বত্র। এর মধ্যে থেকেই পথ করে নিতে হবে। এখানেই তো আসল চ্যালেঞ্জ।  আমি পিছিয়ে গিয়ে শক্তিসঞ্চয় করে আক্রমণ করার চেষ্টা তো আর করছি না।  আমি পালিয়ে যাচ্ছি।  ছিঃ ছিঃ , কাপুরুষ কোথাকার।  পুরুষই বা কোথায় আছি।  লাথি ঝাঁটা তো চলছেই।  পাল্টা জবাব  দেওয়ার ক্ষমতা তো নেই।  যদি দিতে পারতাম ,আজকে আমি ম্যানেজার হতাম।  এই তেল দেওয়াটাও একটা আর্ট।  দীর্ঘকালের প্র্যাক্টিস। ওই যে বলে না , গিভিং ড্রপস অফ অয়েল ইন রেকটাম অফ ম্যানেজার।  কথাটা ঠিক নয়। সব ম্যানেজার এক জায়গায় তেল খায়না।  অনেকে তো আবার তেল পছন্দই করে না।  ওদের কারো বাটার চাই, কারো  আবার কোলেস্টেরল ফ্রি সয়াবিন অয়েল।  কে কি চায় সেটা বোঝাই তো আসলো তেলি , থুড়ি , এমপ্লয়ির কাজ।  এই সাজানো গোছানো সংসার ছেড়ে চলে যেতে সত্যি মন চাইছে না।  এখানে অন্তত লোকে জানে যে একে কাজ দিলে কাজ হয়ে যাবে।  লেট করে এসে তাড়াতাড়ি চলে গেলে তাই কেউ কিছু বলে না।  এমনকি ছুটি চাইলেও বারণ করে না।  সবাই আসে নানান  সমস্যা নিয়ে।  বেশ একটা রাজারাজা ভাব।  পয়সাই  কি সব কিছু , সম্মানটা কিছুই না? এখানে ম্যানেজার রেস্পেক্ট না দিলেও বাকি সবাই তো পায়ে পড়ে থাকে।  সবার কাছে আমি বিপত্তারিণীর মেল ভার্সন। নতুন কোম্পানি তে ট্রাভেলটাও অনেকটা।  কখনো কি ভেবেছিলাম এই কোম্পানি ছাড়তে হবে ।  তাই তো খুঁজে পেতে বেশি দাম দিয়ে অফিসের  কাছে বাড়ি নিলাম । এখন ছাড়লে আমাকে দুটো বাস চেঞ্জ করে অফিস যেতে হবে।  কত সমস্যা।  আর ওই যে লাঞ্চ গ্রূপ।  কতদিন আমরা এক সাথে খাবার শেয়ার করি।  ধুর ধুর কিসব যে ভাবছি। এতবড়ো ডিসিশনে লাঞ্চ গ্রূপ কোনো ম্যাটারই করে না।  না , যে পথে হাঁটা শুরু করেছি , সে পথে ফেরার পথ বন্ধ।  ফিরলেই , আপোষ করতে হবে।  আপোষ করবো না বলেই তো বালাপোশ থেকে বেরোবো ঠিক করেছি , ফিরলেই আবার পাপোশ। ওরা মনে করে নেবে আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাই পরে আছি সবার জুতো পরিষ্কারের জন্য।  জীবন অনেক বড়।  যখন এখানে এসেছিলাম , তখন কি ভেবেছিলাম এখান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো।  ধীরে ধীরে সব কিছুই তো হলো।  পরের কোম্পানিতে গিয়েও নিজের জায়গা বানিয়ে নেবো।  অন্তত চেষ্টা তো করতে পারি।  ধরাবাঁধা জীবন থেকে তো বেরোবো রে বাবা।  না না আমি ভুল করিনি।  পরিবর্তনই  কনস্ট্যান্ট।  আর পরিবর্তন যারা করতে পারেনা তারা অ্যামিবা। সবাই খায় , হাগে , ওষুধ খায় , আবার খায়।  কেউ তোয়াক্কা করে না।  আমাকে বেরোতেই হবে।  নাঃ আর দোনামোনা নয়।  লেটারের ভাষাটা পরিবর্তন করে, মিষ্টি ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে যে ওরা আমার সাথে যা করেছে , ঠিক করেনি।  তাতে অন্তত অন্যের উপকার হবে।  আর সকলের তরে সকলে আমরা। অনেককেই জানি যারা আমার মতো মাথা গুঁজে পরে আছে সাহসের অভাবে।  আমার এই এস্কেপ , ওদের কাছে গ্রেট এস্কেপ হয়ে অনুপ্রেরণা যোগাবে।  চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।  মাভৈ।  সেন্ড।  

ঠিক আগে সিরিজ

No comments:

Post a Comment