উফফ একটু পরেই
আবার ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল । আবার সেই
মারামারি , আবার সেই লাথালাথি। একটু ঘরের মাঝে দঁড়িয়ে দেখি তো আর কি কিছু চাই। না তো , সবই তো আছে। শোনার জন্য স্পিকার আছে , দেখার জন্য
টিভি আছে , টিভিটা পাল্টালে হয় না। টিভি খারাপ
না হলে কি আর কেউ পাল্টায়? পাল্টায় বই
কি। বাবা শুধু পাল্টায়নি। আমি পাল্টাবো।
না থাক। কি হবে? দিব্যি চলছে। কিন্তু হেব্বি সেল দিচ্ছে। এই ফাঁকে না কিনলে সামনের বছর হয়তো
বেশি পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। জঘন্য এই সেল।
আবার গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে তিন ঘন্টা
আগে থেকে। তারপর মারামারি
গুঁতো গুঁতি তো আছেই। আর ভালো লাগে
না বাপু। ডোরবাস্টার
না ছাই , কন্সিউমারিজমের চক্করে পকেট বাস্টার। কিন্তু শব্দটা
হলো “সেল” । শালা ফ্রি তে ঘুঁটে দিলেও মনে হয় ঘরে এনে সাজিয়ে রাখি। মধ্যবিত্ত মন , বিলিয়ে যায় ধন। স্যান্ডুইচ মেকার আছে , কিন্তু পানিনি
গ্রিল এ ছাড় দিচ্ছে। কিনে রাখতেই
পারি। কি হবে , পাউরুটি তো আর ভালো লাগে না।
কিন্তু ভালো লাগা তো যে কোনো সময়ে পাল্টে
যেতে পারে। সস্তায় দিচ্ছে
তো। মিক্সিটা খারাপ হয়ে গেছে , যেকোনো সময়
দেহ রাখবে। একটা ব্যাকাপ
রেখে দিলে ভালোই হয়। এবার আর ল্যাপটপ
বা কম্পিউটার লাগবে না , কিন্তু একটা এক্সট্রা মনিটর হলে খারাপ হয় না। যেকোনো দিন ছেলে ভেঙে দিতে পারে। আরে এই অ্যাঙ্গেলটাতো আগে ভাবিনি। ছেলেটা যে হারে টিভি ধরে ঝাঁকাচ্ছে
, যেকোনো দিন তো ভেঙে দিতে পারে। আর টিভি তো
বাড়িতে ম্যান্ডেটরি , না হলে তো ছেলে খাবে না। ইচ্ছা না থাকলেও
যেতে হবে। কিন্তু ওই
ভিড়। শালা আগে থেকে ঠিক করে নিতে হয় কোনটা ডোরবাস্টার, কোনটা পরে আসবে , কোনটা ঝাঁপিয়ে
পরে নিতে হবে, কোনটা গালে থাপ্পড় মেরে নিতে হবে। নাহলে শুধু গিয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকতে
হবে। গত কাল দেখে আসলে ভালো হতো, কোথায় কোন
সেলের জিনিস রেখেছে। নাহলে হয়তো
ভুল লাইনে দাঁড়িয়েই জীবন শেষ হয়ে যাবে। ধুর ধুর ধুর।
তার ওপর ওই লোকগুলোকে দেখতে হবে , যারা
এক সাথে অনেক গুলো করে জিনিস কিনে রাখে আর থ্যাংকসগিভিং এর পরে লাভ রেখে বিক্রি করে।
কি যা তা। শালা , গুষ্টিশুদ্ধ লোক এসে
দাঁড়িয়ে থাকে , এমনকি দেখা যাবে নিউ বর্ন ও একটা কিছু নিয়ে বসে থাকবে। সব চোর জোচ্চোরের দল। কিন্তু কিছু করার
নেই , গিন্নি চোখ দেখিয়েছে। লাইনের সামনে
না দাঁড়ালে ফ্রি গুলো নাকি পাওয়া যাবে না। তাতে ঠান্ডা হোক , গরম হোক , মিষ্টি মামনির
প্রাদার পারফিউমে মিশে যাওয়া হোমলেসদের গায়ে চড়ানো রাগ এর গন্ধ ছড়ানো জায়গায় হোক ,
আমাকে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বছর বছর অদরকারি
জিনিসে বোঝাই করে যখন ঘুরে এসে বলে পয়সা জমাওনি কেন তখন খ্যাঁক খ্যাঁক করে তেড়ে যেতে
ইচ্ছা করে। কিন্তু ওকে
বলে কি করবো, ব্ল্যাক ফ্রাইডে তো গেজেটের
সেল। আর পুরুষের গ্যাজেট প্রীতি কে না জানে।
আমিও হ্যাংলার মতো দাঁড়িয়ে থাকবো। এই তো কিছুক্ষন আগেও সমস্ত দোকানের
ফ্লায়ার গুলো চেক করছিলাম। এক একটা থ্যাংক্সগিভিং
এ লাইফস্টাইল একটু আপডেট করে নি। পোর্টেবল স্পিকার
থেকে , থ্রি চ্যানেল থেকে ফাইভ চ্যানেল। এবারের ব্ল্যাক
ফ্রাইডেতে “টুইটার” দেখি।
যদি চিক চিকে সাউন্ড টা বেশি বাড়ানো
যায়। সেনহেইজার না বোস , আপেল না কলা , তোমার
পেছনে না লোকের পেছনে , এই করে গেলাম শালা প্রত্যেক থ্যাংক্সগিভিং এ। অর্ধেক লোককে জিজ্ঞেস করলে বলবে ,
“থ্যাংক ইউ “ . পেটে জ্ঞান
থাকলে এই হ্যাংলামো কমে যেত। যেত কি ? উইকিপেডিয়ার
থ্যাংক্সগিভিং পেজের প্রথম ভিউয়ার মনে হয় আমি ছিলাম। তবুও তো এবারেও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
দু চারটে যদি ফ্রি মাল বাগানো যায়।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে , সব জায়গাতেই
একটা দুটো করে ফ্রি মাল দেয়। কিন্তু আমি
তো আর অমনিপোটেন্স বা সর্বভূতেহিতেরতাঃ নই। “লাইন কাটলেন
কেন “ এই বলে তেড়ে আসা ভুরিয়াল ভীতু বাঙালি।তাহলে
কি করা যায়। ওই একটা মোবাইল
গ্রূপ চালু করতে হবে আর কি। ভিখারিদের
অর্গানিজশন থাকাটা খুব দরকার। সারাদিনের
ভিক্ষার শেষ সবাই ঝুলি উজাড় করে দেব কুন্তীর সামনে। তারপর দ্রৌপদীকে ভাগ করে অর্জুনকে ভাগিয়ে
দেব। মাথা এক্কেবারে ঘেঁটে আছে। ছকে ফেলে বকে যাওয়া সোজা , কিন্তু কিছু
করা রীতিমতো চাপের। তার থেকে লুকিয়ে পড়ি। কোথায় লুকাবো।
নিজের থেকে তো আর লুকানো যায় না। সবাইকে দোষ দিচ্ছি বটে কিন্তু আমিও
যে ভিড় বাড়াচ্ছি সেটা মানতেই হবে। কিন্তু
গার্হস্ত্যের প্রথম সোপান হচ্ছে তিক্কি তিক্কি করে পয়সা জমানো। আর এই প্রসেসে পরে থাকা মাল আর গোবর
ঘুঁটে করে বেচার নামই ব্ল্যাক ফ্রাইডে । ভাগ্যিস দেশে কেউ থ্যাংক ইউ বলে লাইন দিয়ে
ঠ্যাং ভাঙার উপক্রম করে না। হোয়াটেভার, অল পোস্ট রেডি
, ওয়ালেট সামনের পকেটে , বাচ্চা স্ট্র্যাপড ইন স্ট্রলার , হেভি জ্যাকেট , মাসল ফ্লেকসড
, চলো বৌ রেডি স্টেডি গোও-ও-ও-ও।
ঠিক আগে সিরিজ
- রেসিগনেশানের
- নিউ ইয়ারের
- ডিভোর্সের
- প্রথম চুম্বনের
- বিদেশযাত্রার
- ধার দেওয়ার
- প্রপোস করার
- প্লেন ছাড়ার
- গর্ভাধানের
- সিঁদুরদানের
- সুইসাইডের
No comments:
Post a Comment