আজ হোক না রং ফ্যাকাশে তোমার আমার আকাশে ,
চাঁদের হাসি যতই হোক না ক্লান্ত।
বৃষ্টি নামুক নাই বা নামুক ঝড় উঠুক নাই বা উঠুক
মনের আকাশে সত্যি রং বড্ড ফ্যাকাশে। ঘরের বাইরে পরে থাকা মন এখন বাধ্য ঘরের বাঁধনে। প্রাণ হাতে নিয়ে বাইরে বেরোনো আর নিঃস্বাস আটকে ফিরে আসা এখন জীবনের অঙ্গ। টিভি , ল্যাপটপ আর ট্যাবলেটে ধ্বসে যাওয়া আউটডোরের আনন্দ রিওয়াইন্ড করে দেখতে দেখতে আর কত দিন কাটানো যায়।
গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎ শুরু হয়েছিল জিকা ভাইরাসের নাটক। মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে সেই ঘরে বন্দি হয়ে গেছিলাম। তারপর শীত আর বাধ্যতামূলক মনের শীতঘুম। কিন্তু আজ বসন্ত।
মানুষ যে ভাবে প্রকৃতির অপচয় করেছে , আজ প্রকৃতি জানলার বাইরে মেলে দিয়েছে রূপ আর বলছে , “দ্যাখ কেমন লাগে। ” ঘাস হয়েছে সবুজ। ফুটে উঠছে ড্যান্ডেলায়ন। শুকনো ডালে গজাচ্ছে নতুন পাতা। গোলাপি চেরি ব্লসম আর সাদা আপেল ব্লসম এর শেষে এখন হালকা সবুজ গাঢ় সবুজের খেলা। অবাধ সূর্যের ঔদ্ধত্ব রুখতে এখন মুখিয়ে উঠেছে কচি পাতা। দু হাত বাড়িয়ে শুষে নিচ্ছে সূর্যালোক , আর স্বাধীনতাকামি মানুষগুলোর বুভুক্ষ হৃদয়ে জেগে উঠছে হিংসা। কি সুন্দর আজ প্রকৃতি।
শীতে উত্তর আমেরিকার রুক্ষ ছবি এতটাই রুক্ষ যে ক্যামেরাতে ধরা পরে শুধুই সাদা কালো ছবি। দশটা পোশাক চাপিয়ে ভালুকের মতো কাটানো বছরের অর্ধেক সময় থেকে বেরিয়ে আজ উদ্দাম নগ্ন নৃত্য করতে ইচ্ছা করে মন। হিটারের শুকনো হাওয়ায় ঢোক গিলে হিউমিডিফায়ার চালিয়ে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত কে বন্ধ করতে হয় সারাটা শীত। তারপর বৃষ্টির ভিজে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে সময় পেরিয়ে যখন বসন্তের হাওয়া এসে শরীরকে শরীর বানায় তখন ভেঙে যাওয়া শরীর আবার বাঁচতে চায়।
সবুজ ঘাসে পা দিয়ে চলতে চলতে , নাম না জানা আগাছার লাল নীল ফুলের নাম দিতে দিতে, প্রথম গাছ বসায় মানুষ। শহরের ব্যালকনি , সাবারব এর ছোট্ট ফ্লাওয়ার বেড , গ্রামের ব্যাকিয়ার্ড সাজানোর সময় শুরু হয়। পাখির আওয়াজ বাড়তে থাকে। আর আসে হামিং বার্ড। চিনিগোলা জল দিয়ে তাদের ডেকে আনা হয় প্যাটিওতে। কিচির মিচির করে দৌড়ে বেড়ায় কাঠবিড়ালি আর খরগোশের ছানা। ট্রাফিক আটকে পার হয় ক্যানাডিয়ান গুস আর গোল বলের মতো ছোট ছোট গুসলিং। ফাঁকা মাঠে মাটি ফুঁড়ে ওঠা কেঁচো খেতে মাঠে ভিড় করে রবিন , ফিঞ্চ , চড়ুই আর মার্টিনের দল। আর তাদের কিচির মিচিরের সাথে শুনতে পাওয়া যায় খিল খিল করে হাসতে থাকা শিশুদের খেলার শব্দ।
আজ সবই বন্ধ। নানা সব নয়। মানুষগুলো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গরম নিঃস্বাস বাতাসে মিলিয়ে দিয়ে শান্ত হয় আবার ইউটিউব , নেটফ্লিক্সে ফিরে আসছে মানুষ। পাখি পাখির মতো উড়ছে , গাছে গাছে ফুল ফুটছে , গরম হয়েছে বাতাস। ম্যাগনোলিয়ার গন্ধে ম ম করছে বাতাস। বসন্ত তার মতো পাখনা মেলছে আর মানুষ গুটিয়ে নিয়েছে মনের পাখনা।
No comments:
Post a Comment