ধার নিই
ও না, দিই ও না। বলে
দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। কি
মরতে যে হ্যা বললাম। ঠিক
করলাম কি ? বাবা চিরকাল ধার দেওয়ার এগেনস্টে ছিল। আমিও তো তাই। তবু কি যে মনে হলো। অতো ভালো বন্ধু। যদি না বলতাম তাহলে কি বন্ধুত্ব চলে
যেত? এখন যদি না বলি তাহলে কি বন্ধুত্ব চলে যাবে ? বন্ধুদের মাঝে তো পয়সা আসাই
উচিত নয়। ছিলোও না
তো ? তাহলে হঠাৎ করে ওর কি যে এমন দরকার পড়লো। হাত পেতে চেয়েও নিলো। মাইনে তো দুজনের
সমান। দুজনার বাবাও তো দুজনার জন্য
অট্টালিকা ছেড়ে যায়নি। তাহলে
কিজন্য দরকার পড়লো এতগুলো টাকা। জিজ্ঞেস
করলেই হয়। কায়দা
করে জিজ্ঞেস করেও তো উত্তরে শুধু ফেরত দেওয়ার দিনটাই বলেছিলো। শেয়ারে ইনভেস্ট করছে নাকি ব্যাটা। বলছিলো বটে ট্রেডিং ফ্রেডিং করছে.
পরের পয়সা নিয়ে লপচপামি না করলেই পারে। নিজে
কামাও নিজে খাও। কিন্তু
এটাও তো হতে পারে যে সত্যি ওর দরকার পড়েছে। আর
ওর কাছে নেই। কত বার
করে বলেছিলাম এরকম করে পয়সা ওড়াস না। কিন্তু
কে কার কথা শোনে। ওর
লাইফস্টাইল দেখে আমার বৌয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এমনিই হয়। শান্ত থাকতে হয়। আমি কেন সাহায্য করবো। আমার যখন দরকার পড়েছিল কেউ তো সাহায্য
করার থাকে না। আমি বাবা
এরকম করে হাত পাততে পারিনা। তাই
আমার জীবন খুব ম্যাড়মেড়ে। হোক
ম্যাড়মেড়ে। কারো
কাছে হাত তো পাততে হয় না। যেহেতু
বন্ধু তাই প্রশ্ন করছি না। কিন্তু
আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো সে তো ঠিকুজি কুষ্টি বার করে নিতো। হাজার প্রশ্ন করতো। ব্যাংকে গেলে তো হাজার ইনকোয়ারির পরে
লোন দেয়। তাই তো ,
ও তো বাড়িও কিনেছে। আর
তো লোনও পাবে না। এবার
বুঝেছি। ঝোঁকের বসে অতো দামি বাড়ি কিনে ফেলেছে
এবার তো ই এম এই দেওয়ার মতো টাকাই নেই। আমি
তো সেই জন্যই বাড়ি কিনতে পারছি না। সত্যি
মাইরি , লোকে পারেও বটে। কি
সুন্দর হাত পেতে নিজের জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে। আর
আমি ভেবেই মরছি। শুধু
এই লজ্জা শরম আর বাপ্ দাদার বেকার এথিক্স যদি ফেলে দিতে পারতাম , হয়তো আমারও কত
কিছু হতো। তার বদলে
শুধু গালাগালি খাচ্ছি। দুদিন
আগেই ব্যবসার কথা বলছিলো। তলে
তলে শুরু তো করে দেয়নি। বন্ধুদের
মধ্যে আমিই শুধু পরে থাকলাম ক্যাশ টাকা নিয়ে। লোকেদের
কাছে আমি কিপ্টে। কিছুই
করিনা। অথচ এর মতো লোকেরা হিরো। সব কিছু করছে ধার নিয়ে। আচ্ছা , যেদিন ডেট দিয়েছে সেদিন যদি
পয়সা না দেয় তাহলে ? কত লোকের কাছে কত কথা শুনেছি ধার নিয়ে ধার শোধ দেয় না। ও যদি সেরকম বেরোয়। তাহলে ? আমি গিয়ে রোজ রোজ হাত পাততে
পারবো না। কিভাবে
বলবো ? এই টাকা ফেরত দে ? এতদিনের বন্ধু। এরকম
ভাবে বলা যায়। কিন্ত না
বললে তো উপায় নেই। আমিও
তো ওই পয়সার ইন্টারেস্ট পাই। ব্যাংকের
থেকে যা ইন্টারেস্ট পাই ওর তো সেটা অন্তত দেওয়া উচিত। আমি কি ওর ঠেকা নিয়ে রেখেছি। আমার ক্ষতি করে ওর উপকার কেন করতে
যাচ্ছি। যদি সত্যি খেতে পড়তে অক্ষম হতো তাহলে
নাহয় কথা ছিল। কিন্তু এ
তো নেহাত ফালতু কারণ। যদিও
কারণ জানিনা, তবে নিশ্চয় মরণসঙ্কট হৰে না। এইতো
সেদিন একজনের কাছে শুনলাম যে সে ধার নিয়ে ধার শোধ করে। তাতে তাকে কখনো ব্যাংককে ইন্টারেস্ট
দিতে হয় না। থুল ভেঙে
থাল আর খাল ভেঙে থুল। আইডিয়া
খারাপ নয়। কিন্তু
একদিন না একদিন তো ধার দেওয়ার লোক শেষ হবে। ছাই
হবে। লোকের আবার অভাব। এই
হাত পাতাটা একটা অভ্যাস। ভিখারীদের
দেখো না। মাঝে মাঝেই তো খবরে শুনছি কোন ভিখারির ছেলে ডাক্তার হয়েছে, সে কিন্তু
ভিক্ষা নেওয়া ছাড়ছে না। এর
মানেটা কি , উইনিং মেক্স ইট এ হ্যাবিট। ধার
পেয়ে গেলেই সে জানে কি করে ধারের জন্য লোককে বলতে হয়। কিন্তু আমি এখন কি করি ? ধার দি না
দিই না। না দিলে কিছুদিন মন কষাকষি হবে ,
কিন্তু ফেরত না দিলে তো রাতের ঘুম চলে যাবে। কি
অবস্থা আমার। ভাবিয়া
করিও কাজ। করিয়া
ভাবিও না। টাকার
দরকার পড়লে আমি দেব , এরকম কথা বলা কখনো উচিত না। এখন বেশ হয়েছে। আমার এই কল্পতরু ভাব কোনোদিন না আমাকে
ল্যাংটো করে দেয়। অনেককেই তো না বলেছি। একে কেন না বলতে পারলাম না। যাদের না বলেছি তারা যদি জানতে পারে। তারাও যদি এসে হাত পাতে। সেই কাবুলিওয়ালার মত তখন ঘুরে ঘুরে
সবার কাছে হাত পাততে হবে। আমাকেও
হাত পাততে হবে। না
না এটা ঠিক নয়। কিন্তু
কথা দিয়ে কথার খেলাপ করাও তো ঠিক কথা নয়। ও
নিশ্চই আমার কথার ওপর ভরসা করে কিছু করতে চলেছে। আমি যদি এই সময়ে পিছু ফিরি তাহলে ওর
কি হবে। জেনুইন রিসন যদি সত্যি থাকে তাহলে বড়ই
অপমান হয়ে যাবে। আমার
কি আর হবে। নাহয়
ইন্টারেস্টটা পাবো না। ভারী
তো দু তিন পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট। ওই
নিয়ে কি কোটিপতি হয়ে যাবো জানিনা। পরের
উন্নতিতে ঈর্ষা করা ঠিক নয়। আমি
যা পারিনি তারা তাই পেরেছে। তাদের
থেকে না শিখে ক্রিটিসাইস করে কি লাভ। কিন্তু
আমারই তো রক্ত জলকরা টাকা। তাকাই
কি সব কথা। বন্ধুত্ব
কি সবথেকে বড় জিনিস না। মানুষ
আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর। কিন্তু
মানুষ যদি টাকা নিয়ে কেটে পরে। তাহলে
ধরবো কাকে। এতো
শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। নাহঃ
এই শেষ। আর কাউকে কখনো ধার দেব না। এই শেষ , এই শেষ, এই শেষ।
No comments:
Post a Comment