ভোর তখন পাঁচটা কিছু একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন
দেখে ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলাম সারা গা ঘামে ভিজে জবজব করছে। ঘাড়ের কাছটা ব্যাথা। এক কাতে শুয়েছিলাম
বলেই হয়তো। দেখলাম বালিশের এক
জায়গায় গোল করে ভেজা। মানে বেশ কিছুটা নালও ফেলেছি। এতো ঘামার কারণ খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম রাতে যে
ডাউনলোড লাগিয়ে শুয়েছিলাম সেটা মাঝখানে
বন্ধ হয়ে গেছে। এর দুটো কারণ হতে
পারে , হয় মাঝখানে কারেন্ট চলে
গেছিলো। নয় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে। উঁকি মেরে রাউটারের দিকে তাকাতে দেখি তিনটে সবুজের একটা লাল। মানে ইন্টারনেট নেই। অনেক সময় এমন হয় যে কারেন্ট চলে গেলে
রাউটার রিকানেক্ট করতে পারেনা। উঠে রিস্টার্ট করতেও দেখি সেই কেস। কম্পিউটারে চেক করতে গিয়ে চোখ পড়লো তারিখের
দিকে। চব্বিশে এপ্রিল। প্রত্যেক মাসের ২৩ তারিখে আমার ইন্টারনেট
প্যাকেজ রিনিউ করতে হয়। এমনি খাজা
ইন্টারনেট কোম্পানি , না মনে করিয়ে
দিলে রিচার্জ করে না। কাল ভুলে গেছিলাম।
আজ ইন্টারনেট বন্ধ।

চা করার জন্য জল
চাপালাম। ফ্রিজ থেকে কালকের আনা দুধের প্যাকেট থেকে কাঁচা দুধ খানিকটা সসপ্যানে
ঢেলে বাকিটা দুধের পাত্রে ঢেলে দুটো গ্যাস জ্বালিয়ে দিলাম। আমার সিটিসি চা করার ধরণ একটু অন্য। দুধ ,
চা
, জল , চিনি আর এলাচ এক সাথে ঢেলে দিয়ে কম আঁচে
ফোটাতে থাকি। ধীরে ধীরে চা যখন ঘন হয়ে যায়
তখন নামিয়ে নিয়ে ছেঁকে নি। বেশ কিছুটা সময়
যায় বটে, কিন্তু চা তোফা
হয়। এই
সময়টার মধ্যে আমি ব্রাশ টা সেরে নিই।
আজ ব্রাশ সেরে রান্নাঘরে ঢুকে দেখি দুই পাত্রে ছানা। সাদা ছানা আর বাদামি ছানা। একে জল নেই।
ধরা জল আছে , কিন্তু রানিং
ওয়াটার নেই। তাই বাসন ধোয়ার বেশ চাপ।
বেসিনে নামিয়ে রাখলাম। রাত আটটায় জল আসবে
তখন ধোবো। আরেকটা ছোট বাসনে জল চাপিয়ে , র - চা বানিয়ে নিলাম।
ইন্টারনেট নেই। কিন্তু আজ রিচার্জ না করলে কাল থেকে ফোনেও ফোর
জি নেই। তাই চা খেতে খেতে পেটিএম খুলে ফোর
জি রিচার্জ করলাম। টুং করে মেসেজ এসে গেলো
যে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে গেলো। কিন্তু
রিচার্জ ফেলিওর। যাহ শালা। একটা ছোটো টপ আপ করলাম। সেটাও ফেলিওর , কিন্তু টাকা রিটার্ন এসে গেলো নিমিষের মধ্যে। ফোর জি তে ৪০০
টাকার রিচার্জ মেরেছি। সে তো আর ফিরছে
না। কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করতে করতে মেসেজ
এসে গেলো যে ভোডাফোনে সমস্যা। যদি দু
ঘন্টার মধ্যে রিচার্জ সাকসেসফুল না হয় ,
তাহলে
পয়সা রিটার্ন আসবে।
যেহেতু জল আর ইন্টারনেট
নেই। তাই জীবনে কাজ কিছুই নেই। ধরা জলে স্নান সেরে আহ্নিক করে একটা অফিসের কাজ
নিয়ে বসলাম। তখন সাড়ে আটটা। সাড়ে নটার আগে বাইরের ধোসা ইদলির দোকান খুলবে
না, আর ঘরে ব্রেকফাস্ট করার
বলতে ছিল দুধ আর কর্নফ্লেক্স যেটা কেটে গেছে।
তাই অফিসের ল্যাপটপটা চালাতে দেখলাম চলছে না। কি ব্যাপার? কালকে ব্যাগে ঢোকানোর আগে , সুইচড অফ করিনি। ঢাকাটা বন্ধ করে দিলে স্লীপ মোডে চলে যায়
বটে কিন্তু বন্ধ হয় না। ব্যাটারী পুড়তে
পুড়তে সব খেয়ে গেছে। ব্যাগ থেকে চার্জার
খুঁজতে গিয়ে দেখি চার্জার নেই ,
অফিসে
ফেলে এসেছি। খোলাই হয়নি ডেস্ক এর
প্লাগপইন্ট থেকে। আমি আবার ল্যাপটপ গুছিয়ে
ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে অফিসের সাজগোজ করে আরাম করে বসে একটা বই খুললাম।


সাড়ে নটা বাজতে সোজা
গিয়ে হাজির হলাম আমার ব্রেকফাস্ট এর
দোকানে। লোকটি বাড়ি থেকে বানিয়ে নিয়ে আসে
আর এক ঘন্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। ইডলি , মেদু বড়া আর ডাল বড়া সাথে সাদা চাটনি , ঝাল লাল চাটনি আর সাম্বার। পদ্ধতি অসাধারণ। সাম্বারটা শুধু গরম। কাগজের প্লেটে ইডলি বড়া দেয় আর সাথে আরেক
প্লেটে চাটনি সাম্বার
মিক্স করে দেয়।
তামিলিয়ান , তাই লোকের দেখা
দেখি আমিও চটকে খাওয়া শিখে গেছি ,
আর
ভালোও লাগে। কিন্তু আজ দেখি ভিড় কম। কি ব্যাপার ? "সাব বড়া থোড়া জল গয়া, সাম্বার জাদা
তিখা হো গয়া, চাটনি মে নমক
জাদা হ্যায়।" ঝাল হয়েছে তো কি হয়েছে,
আমার
ঝাল বেশ ভালোই লাগে। বললাম শুধু ইডলি আর সাম্বার দিতে। মুখে দিতেই ব্রম্ভান্ড
জ্বলে গেলো। ভদ্রলোকের ঠিক আছে, ঠিক আছে মাথা
নাড়িয়ে খেয়ে নিলাম বটে কিন্তু জানি পরের দিন সকালে কি হতে চলেছে। 
শেষমেশ যখন অফিসে
পৌছালাম তখন আমি ফিনকিরি দিয়ে ঘামছি।
বিশাল ঠান্ডা অফিস। তখনও লোকজন বেশি
আসেনি। আমার ডেস্কটা এক কোণে আর জানলার
কাছে তাই এসি থাকলেও আমার জন্য একটা টেবিল ফ্যানও দিয়েছে। আমি অন্যদের তুলনায় একটু বেশি ঘামি বলে এই
ব্যবস্থার জন্য আমি পৈতে তুলে আশীর্বাদ করি অ্যাডমিনকে। কিন্তু একি ? ফ্যান হাওয়া। যে
দমকা হাওয়ায় জল শুকানোর প্ল্যান করেছিলাম তা আর হলো না। ফোন তুলে কমপ্লেন করে ঘাড়ে মাথায় জল দিতে
বাথরুমের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম বাথরুমের সামনে লেখা আছে ক্লোস্ড ফর
রেনোভেশন। নিচের তলাতেও তাই। ব্যাপার কি ? সিকিউরিটি কে জিজ্ঞাসা করতে বললো , "স্যার , জলের শর্টেজ পড়েছে তাই দশটা বাথরুমের শুধু
একটা খোলা।" বাহ্ , মাল্টিন্যাশনাল
কোম্পানিতেও এরকম হয়। একেই বলে টার্গেট
ওরিয়েন্টেড কস্ট কাটিং।

আমি যদিও এই পনেরো
মিনিট হাতে রাখি। কারণ অফিস ফেরত অটোর
লাইনও অনেক বড়ো। অটোয় বসতেই সেই সকালের
মতো , "সামনে আজাইয়ে
সাব , লেডিস হ্যায়।"
পেছনের সিট্ থেকে সামনের সিটে বসার মধ্যে ঘুমন্ত পাখির হঠাৎ জেগে উঠে আমায় মনে পরে
গিয়ে সবুজ - সাদা সেলাম দিয়ে দিলো। বেশি
না ভেবে রুমাল দিয়ে পুঁছতে কাঁচে দেখি পিছনের সিটের দুই মহিলা নাক
সিঁটকোচ্ছে।
রাস্তায় পেলাম অভাবনীয়
জ্যাম আর সাথে জেলির মতো ঘাম। সামনের সিটে
অটোয়ালার বোঁটকা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে যখন পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে তখন মানিব্যাগ খুলে
খেয়াল হলো একটাও নোট নেই। আজকে অফিস এটিএম
থেকে টাকা তোলার কথা ছিল। বস আটকে নিয়ে সব গুবলেট পাকিয়ে দিয়েছে। ভাগ্যিস আমার খুচরোর কৌটো আমার ব্যাগে
থাকে। যখন একটা একটা করে দশটা দু টাকার
কয়েন বার করে দিলাম আর অটোয়ালা প্রত্যেকটা কয়েন উল্টে উল্টে দেখে নিলো যে কোনটি এক
টাকার কয়েন কিনা তখন পেছনের সিটে বিরক্তির মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে।

আধঘন্টা জল আসে বটে , কিন্তু তোড়ে আসে। নিমিষে সব ভরে যায়। আজ দেখলাম সাড়ে আটটার পরেও
জল পড়ছে। আমিও অতি উল্লাসে বাসনগুলো মেজে
ফেললাম। সমস্ত ঘড়া যখন ভোরে গেলো। বুঝলাম আজ আর জল যাবে না। কারণ আটটা চল্লিশ। তখনও জল পুরোদমে। বেশকিছুক্ষন ধরে শাওয়ারের
তলায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। শরীরটা ঠান্ডা হয়ে
গেলো। তারপর আচ্ছা সে সাবান শ্যাম্পু মেখে
যখন আবার শাওয়ার চালালাম তখন ফোওওওওশ করে একটা শব্দ হয়ে জল চলে গেলো। আমি তখন ইয়েতির মতো ফেনাময় সফেন সফেদ। সেই ধরা
জলেই আবার স্নান করে এই লেখা লিখতে বসলাম।
আর কারেন্ট চলে গেলো।
.......
এক অশরীরী আপনার আগে আগে চলেছে । নেগেটিভ এই সত্তা টি আপনাকে কস্তে ফেলে বেস মজা পাচ্ছে । কিন্তু আপনি তার তেমন সাথ দিলেন না । ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলে । সব কিছু আবার পজিতিভ হতে থাকল । আপনি লিখতে বসায় ও মনে মনে হায় হায় করে উঠলো । এই একটি জিনিস আছে যা আপনার সবার প্রিয় যা আপনি কোনও অবস্থায় ছাড়েন না এটা সে লক্ষ্য করে নি । সুত্রাং আবার সে নামলো কোমর বেঁধে এবার বাত্তি গোল করে দিল ।
ReplyDelete