আজকাল নানা ফেসবুক গ্রূপে ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝেই
চোখে পড়ছে “জয় শ্রী রাম” ধ্বনি। একটা করে
ছবি পোস্ট আর তার নিচে “জয় শ্রী রাম” লেখা। আবার বলছে ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। কেউ কেউ সময় মেপে বলে দিচ্ছে দু সেকেন্ডের মধ্যে লাইক করুন। কেউ কেউ আবার বলছে “হিরোদের জন্য তো লাইক দিতে পারেন
শ্রী রামের জন্য কতগুলো লাইক পরে দেখি ” . সবথেকে সাংঘাতিক হচ্ছে কমেন্টস সেকশানে।
যেখানেই গরম ডিসকাশন সেখানেই মাঝে মাঝে “জয় শ্রী রাম ” । পাকিস্তানে এটাক করেছি
“জয় শ্রী রাম” , সকালে ব্রাশ করে প্রথম পোস্ট “জয় শ্রীরাম” , সাপোর্টিং “জয়
শ্রীরাম” , এমনি এমনি জয় শ্রীরাম, জাগো হিন্দু “জয় শ্রীরাম ” ভাগো মুসলিম “জয়
শ্রীরাম” হাগো বাংলা “জয় শ্রীরাম ”।
ব্যাপারটা ভালোই। বাঙালি
শেষমেশ ধর্ম কর্মে মন দিয়েছে। ভাগ্যিস
কমুনিস্ট গর্মেন্ট গেছে , নাহলে পুরো একটা গোটা জাতি এক সাথে নরকে চলে যেত। কারণ “জয় শ্রী রাম ” স্লোগানের বদলে স্বর্গের টিকিট
পাওয়া যাচ্ছে। মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র লো গ্রেডেড ডিফিকাল্ট প্রোপাগান্ডা । এখন কত কি দেখা যাচ্ছে বাংলার পথে ঘাটে। ছোটোবেলা থেকে দেখে আসা গ্রানাইট পাথরকে হঠাৎ করে লাল
সিঁদুরে চুবিয়ে হনুমানের মন্দির। এক মাইল লম্বা
“জয় শ্রী রাম ” চিৎকার করা মিছিল। মিছিলে আবার শুধু তরোয়াল। আচ্ছা রামায়ণে তরোয়াল কি বলা ছিল। কানফাটা শব্দে সেই চিৎকারের সুরটা কিন্তু একেবারে
মডার্ন। ইন্টারনেটে খুঁজেই ফেললাম। প্রথমে তো প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান মিষ্টি সুরের “জয়
শ্রীরাম” পেলাম। সেতো এটা
নয়। খুঁজতে খুঁজতে শেষমেশ পেয়ে গেলাম ডি জে মিক্সটা। অসাধারণ। কানে
লেগেই আছে। মডার্ন ভাবে ধর্ম কে না নিলে ধর্ম বাঁচবে কি করে।
বাঙালি চিরকালই পরিবর্তন কে সাদরে অভ্যর্থনা করেছে আর এখন তো পরিবর্তনের জোয়ার। উলঙ্গ কালীর লাল জিভ ইস টু ভালগার। তাই কালীর প্রসাদ ওল্ড মঙ্ক ছেড়ে আসল রামে মজেছে
বাঙালি। রাম যদিও জীবৎকালে কখনো বাঙালিকে পাত্তা দেননি। এপার বলো বা ওপার বাংলা রামায়ণে ঠিক মহাভারতের মতো
পান্ডববর্জিত জোলো জায়গা বলে স্রেফ “থূ” বলে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কি। মহম্মদ তো ধানের ক্ষেতও দেখেননি। কিন্তু যে কালীর নাম নিয়ে বিবেকানন্দ সাগরপাড়ি
দিয়েছিলেন সে তো জংলী ইল-কালচার্ড -আদিবাসী - ব্যাকওয়ার্ড - ট্রাইবাল গডেস। বিবেকানন্দ স্মার্ট , কারণ অনসাইট গেছিলেন আর
চিকাগোতে স্কচ খেয়েছিলেন , কিন্তু “জয় শ্রী
বিবেকানন্দ” সাউন্ডস অড , এবং উচ্চারণেও বেশ কষ্ট। বেশিরভাগ
মহান উপন্যাসে মূল চরিত্রের নাম ছোট্ট। গোরা ,
অর্ক , অমিত , নবীন , অপু , ফেলু ইত্যাদির
মতোই রাম সহজকথ্য ও সহজপাচ্য। এখন সব কিছু কিপ ইট সিম্পল। তাই রাম রক্স। গৌরাঙ্গ
বলতেই দাঁত ভেঙে যাবে আর বাকি সব আনন্দ যোগ করা ব্রম্ভানন্দ , প্রেমানন্দ,
যোগানন্দ , নিরঞ্জনানন্দ , সারদানন্দ , শিবানন্দ , তুরীয়ানন্দ , অভেদানন্দ ,
অদ্বৈতানন্দ তো সিম্পলি ইগনরেবল। লাটু মহারাজের লাটু তাও খায় কিন্তু “জয় শ্রী লাটু” তে শেষে হসন্ত নেই বলে এন্ডটা ঠিক ঠাক
হচ্ছে না। রামকৃষ্ণ একটু রাম ঘেঁষা , কিন্তু পরমহংস জুড়েই
গন্ডগোল করে ফেলেছে। ডি যে
মিক্স হবেই না। আসলে
ভদ্রলোকের ভদ্রতা বেড়ে বেড়ে “মা কালীর দিব্যি” খাওয়া উঠেই গেছে। তার ওপর ওগুলো আবার বাংলাজাত। বাংলা খেয়ে মাতাল হওয়ার থেকে “জয় শ্রী রামে” একটা দেশ
দেশ ঘ্যাম আছে। ফ্রম
অযোধ্যা টু শ্রীলংকা। ফ্রম অনুষ্কা শর্মা টু জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। রামকৃষ্ণ মিশন বা বেলুড় মঠ করেছে কি ? পড়িয়েছে ,
পৃথিবীর সবথেকে বোরিং কাজ। পড়াশুনা করে কি হবে,
তার থেকে কুল হও “জয় শ্রী রাম” বলো আর অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড বজরং দলের সাথে মিশে
যাও। বজরং নাম শুনলেই হনুমানের ম্যাচো ইমেজ চলে আসে ভুঁড়িওয়ালা বাঙালির মনে। ইস্কন
বলে “কৃষ্ণের ফুল ছিঁড়োনা” আর বজরং বলে চুমু খেতে দেখলেই থাপ্পর। কে দেশের ভালো করছে বলতো। অফিসে বসের লাথি আর বাড়িতে
বৌয়ের ঝ্যাঁটা খেয়ে কারো ওপর ঝাল তো মেটাতে হবে। এইসব দলই
তো সেই সুযোগ করে দেবে। সাথে কচি
মেয়েগুলোকেও একটু আধটু টিপে টাপে দেওয়া যাবে। তাই “জয় শ্রীরাম”। বাঙালি অকাল বোধন
ছাড়া এতকাল রামায়ণ থেকে বিশেষ কিছু নেয়নি। এমনকি সারা দেশের দিওয়ালিতে হয় লক্ষী
পুজো , আর আমাদের কালী পুজো। তাইতো
বাংলার কোনো উন্নতি নেই। নো লক্ষী, নো টাকা। রামের অযোধ্যা জেরুসালেমের পরেই ধর্মস্থান হিসেবে
পৃথিবী বিখ্যাত। আর কন্ট্রোভার্সিতেও। কেউ কি
মিনমিনে তুলসী কাঠের মালা ও চন্দন পরা চৈতন্যের মায়াপুরের নাম জানে? এখন ধর্ম মানে
জীবনধারণ না। মুসলিমদের যদি জেহাদ থাকে তো আমাদেরও ধর্মযুদ্ধ। পলিটিকাল
পার্টি প্রথমে ধর্মসঙ্কটে পড়েছিল , ধর্ম আগে না ভোট আগে। অনেক ভেবে যখন ভোটেই ভোট পড়লো তখন ডিস্টেন্স এটাক
করতে রামের তীর আর হনুমানের জ্বলন্ত ল্যাজ সবথেকে বেশি এফেক্টিভ। তাই “জয় শ্রী রাম” । রামের সাথে যে সব একশান গুলো
জড়িয়ে আছে আমার মনে হয় না আর কেউ অতো উত্তেজনা দিতে পারবে। রামনবমীর মিছিল না থাকলে হিন্দুরা মুসলমানদের মহরমের
জবাব দেবে কি করে। তীর ছুঁড়ে রাবন না জ্বালালে পাইরোটেকনিক ইন্ডাস্ট্রি বেঙ্গলে
বাড়বে কি করে। আমাদের ট্রাডিশনাল দেবদেবীও সফিস্টিকেটেড নয়। মনসা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না, শেতলা কিছু বললেই চিকেন
পক্স , কালী খড়্গ হাতে ল্যাংটো হয়ে দৌড়ে বেড়ায় , কৃষ্ণের নাহয় সুদর্শন চক্র ছিল
কিন্তু বাঙালি কৃষ্ণ তো ম্যাড়মেড়ে , শুধু বাঁশি বাজায় প্লাস ক্যারেক্টর খারাপ।
রাজপরিবারের প্রপারলি গ্রূমড রামের চরিত্র আর তীর একমুখী এবং এটাও তো মানতে হবে
রাম ছোটবেলা থেকে পলিটিকাল এনভায়রনমেন্টে বড় হয়েছে। দেশ ভালোই চালাবে। আর হ্যাঁ
বাঙালি মেয়েদের খুব বার বেড়েছে। মুখে মুখে
কথা বলে। রাম আসলে টাইট দেবে অগ্নিপরীক্ষা দিইয়ে দিইয়ে। সবকটা পুড়ে মরবে। শুধু
সেগুলো টিকে থাকবে যাদের পিষে মারা যায়। ব্যাশ আর
কি চাই। ধরো আর ব্যবহার করো , তারপর ছুঁড়ে ফেলে দাও। লব কুশ পেলেই হলো। রামরাজ্য
, সত্যযুগ, আহা কি দিননা আসছে। আমাদের
চন্ডি , শীতলা , মনসা , বুড়োশিব , ডাকাতে কালী , সিদ্ধেশ্বরী , বিপত্তারিণী ,
হংসেশ্বরী , দূর্গা , সরস্বতী , কার্তিক , গণেশ সব নিপাত যাক। উই লাভ ইমপোর্টেড
পিস। চায়না থেকে অনেক নিয়েছি এখন ভারত আমার ভারতবর্ষ। এতদিন চীনের দালালরা আমাদের
দেশপ্রেমে বাধা দিয়ে এসেছে। যে পবিত্র
হিন্দুস্থানে লেখা হয়েছে “আমার এই দেশেতেই জন্ম যেন এই দেশেতেই মরি” সেখানে আমাদের
দেশ থেকে দুরে রাখা হয়েছে। হোয়াট
বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমোরো থেকে আমরা এখন ইন্ডিয়া থিঙ্কস এন্ড
বেঙ্গল তু -মরো হয়েছে। আমরা
সবথেকে প্রগতিশীল জাতি। ধর্মের
ক্ষেত্রেও আমরা শাক্ত , শৈব ও বৈষ্ণব চিন্তা নিয়ে ভক্তি আন্দোলন করেছিলাম। আমরা
পারবো আবার সেই রামরাজ্য স্থাপন করতে যেখানে নিজের বৌকে শশুরবাড়িতে ছেড়ে দাদার
সাথে চলে আসবে ভাই , দাদার চটি সিংহাসনে রেখে দেশ চালাবে স্বয়ংসেবক , অজ্ঞ বিজ্ঞ
বা যেমনই হোক বিধর্মীদের নাশ করবো , আর বিভীষণ খুঁজে খুঁজে যুদ্ধে যাবো জিতে।
হাজার বছরের বস্তাপচা বাংলা ভাষায় লুকিয়ে থাকা রাবনের সময় শেষ হয়েছে। এবার
প্রায়মৃত বাংলা ভাষা ছেড়ে ভোজপুরির আগমনের সময়
হয়েছে। বঙ্গকে যারা ব্যঙ্গ করেছে তাদের পিষে দেব পুস্পক রথ দিয়ে আর স্থাপন করবো
রামরাজ্য। হে বাংলার নবজাগরণের গেরুয়া বসনধারী অগ্রগামী পথসরিক
গলার শির ছিঁড়ে চিৎকার করে বলো , “জয় শ্রী রাম ” “জয় শ্রী রাম” “জয় শ্রী রাম”
No comments:
Post a Comment