পুরো প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন। এলো , এসে ধরিয়ে দিলো । তারপর কি ? খাবো না খেলবো এটা নিয়ে। সেটা তো আগে বল। প্রেক্ষাপট, আমার নতুন ডে কেয়ার। জনতা আমার মতো বেশ কিছু পাবলিক। আর ওয়ান অ্যান্ড অনলি ভিকটিম , আমি। এই ডে কেয়ার নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু আরো কিছুদিন থাকি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি তারপরে গুছিয়ে লেখা যাবে। আপাতত যেটা এখন সবথেকে বড় প্রব্লেম, সেটা হলো আমার খাওয়া। সে ডে কেয়ারেই হোক, বা পার্টিতেই হোক বা নিজের - একেবারে নিজের ঘরেতেই হোক। সব জায়গায় আমি হেনস্থা হচ্ছি।
কোন যে মহাপন্ডিত এসে মায়ের আর বিশেষত বাবার কানে এসে বলে দিয়ে গেছে যে ফিঙ্গার ফুড খাওয়াতে হবে , আর তাতেই দুজনে তুর্কি নাচন নাচছে, সাথে জুটেছে আমার ডেকেয়ারের দুই ডাকিনি আর যোগিনী। মা ব্যাপারটা বেশ ভালোই সামলাচ্ছিলো। যেহেতু আমি বাড়ন্ত বাচ্চা। হ্যাঁ, এখানে আমি কনসিডার করছি, আমি বাচ্চা। শরীরের দিক থেকে তো আমি শিশু। এনালিটিকাল এবিলিটি, কনফিডেন্স আর কমন সেন্স আমার বাকিদের থেকে বেশি হতে পারে বটে, কিন্তু আমার হাড় মাংস সবে বারো চোদ্দ কিলো। এই পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে হলে, শুধু বুদ্ধি দিয়ে টোকা দিলে হবে না। এম আর ভি বাড়িয়ে ধাক্কা মারতে হবে। এইসব নিরেট পাথর কেটে বানানোর মানুষের মাথাগুলোকে টোকা দিয়ে নলেজ ঢোকানো যায় বটে, বাট টু মুভ দেয়ার বাট , আই নিড টু গিভ দেম ধাক্কাস।
এনিওয়ে , মা আমাকে ভালোই নানা ফ্লেভারের খিচুড়ি করে খাইয়ে দিচ্ছিলো। আমিও মন দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে, কখনো আমার টেবিলে বসে , কখনো মায়ের কোলে শুয়ে খেয়ে নিচ্ছিলাম। আগেও বলেছি , আমার কাছে খাওয়া হলো মোস্ট আনপ্রোডাক্টিভ কাজ। তাই খাওয়া বাদ দিয়ে বাকি সব করতে করতে খেতে হবে , এইটা হচ্ছে ব্রিলিয়ান্ট এপ্রোচ। মা যখন মুখের কাছে ধরে, তখন মায়ের মনে হতে পারে যে আমি মাথা ঝাঁকিয়ে খাচ্ছি না। আসলে মা কে ব্যাপারটা বুঝতে হবে যে টিভিতে তখন ভার্সাটাইল ইমোশনের এক্সপ্লোশন হচ্ছে। যদি আমি দু চারটে ছিটেও গায়ে লাগাতে পারি তাহলে মায়েরই লাভ। শোকেস করে ঘ্যাম খেতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু না , বাবার জ্ঞান আর ডে কেয়ারের ধাক্কায় মাও গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লো। হুম, এবার ফিঙ্গার ফুড দিতেই হবে।
এই ফিঙ্গারফুড জিনিসটা প্রথমেই লিঙ্গুইস্টিকালি চটকানো। ফিঙ্গার চিপস লম্বা লম্বা আঙুলের মতো , ফিশ ফিঙ্গারও আঙুলের মতো , ইভেন লেডিস ফিঙ্গার সবুজ আঙুলের মতো। কিন্তু ফিঙ্গার ফুড মোটেও কোনো শেপ বা সাইজ মানে না। ট্যারা ব্যাঁকা করে ফল পাকড় কেটে , বা চন্দ্রপুলির মতো আলু ভাজা , গোল চৌকো কুকি , এমনকি ভাতকেও এরা ফিঙ্গার ফুড বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ইংরেজরা সারা পৃথিবীর ঘড়িতে বারোটা বাজার সাথে সাথে কেটে পড়েছে। যাইহোক, এই পি ইউ টি পুট আর বি ইউ টি বাট আমাকে মেনে নিতেই হলো। কিন্তু সমস্যা বাঁধে ভ্যারাইটিতে আর ওয়ে অফ টেকিং এ।
এ থেকে জেড , অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত খাবার, সব যেন এখন ধীরে ধীরে ফিঙ্গারফুডে পরিণত হতে থাকলো। আর কিরকম যেন একটা কুকুর মনিব ভাব এসে গেলো বাবা মার মধ্যে। নিজেরা খাচ্ছে। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম, আর দুচারটে ভাত তুলে, ‘নে টমি খা’। আমারও কি জানি কি হয় , আমিও থেবড়ে বসে ওগুলো তুলে মুখের মধ্যে ঢালার চেষ্টা করি। ব্যাপারটা আর কিছুই না, আমার এখন চোখের দৃষ্টি যাকে বলে আই সাইট দিনে দিনে শার্প হয়ে যাচ্ছে। সারা কার্পেটে পরে থাকা ছোট ছোট দানা গুলো আমার ছাড়া কার পেটে যাবে? আমি না খেলে ওগুলো হয় পচবে , নয় শুকোবে, দুটোই ওয়েস্টেজ। তাই আমি রেস্পন্সিবল মেম্বার অফ হাউস হয়ে একটা একটা করে খুঁটে খেতে থাকি।
কিন্তু এই ভ্যারাইটির চক্করে কোনটা এডিবল, কোনটা টক্সিক আর কোনটা পয়সন সেটা বুঝতে পারিনা। লম্বা লম্বা বাসমতি চালের ভাত আর বাবার দাঁত দিয়ে নখ কেটে ফেলে রাখা নখ দেখতে প্রায় এক, কিন্তু ডাইজেশনে দুটো স্কেলের দুদিকে। সর্ষে ইস গুড , কিন্তু মায়ের কানের দুল থেকে ঝড়ে পড়া কালো বিডস খতরনাক। চুল মাথায় থাকলে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু পেটে গেলে আর রক্ষে নেই। সবজি সবই ভালো, কিন্তু নিচে পরে থাকা খোসা নাকি ডেঞ্জারাস। আমি কি আর অতো ছাই বুঝি নাকি। হাজার তার নাম, হাজার তার রূপ। এখন সব মিলিয়ে ভোকাবুলারি দুশো শব্দ ( বোকা বোকা সাইকোলজিস্টরা গুল দেয় , আর আমি এটাই ইউস করে নেপোয় দই মারি ) . আমার এখন শেপ , সাইজ এন্ড টেস্ট ইম্পরট্যান্ট , হাইজিন আর এতিকেট নয়।
কিন্তু সমস্যা আরো। হয়তো হাইজিনিক পরিস্থিতিতে খাওয়া দেওয়া হলো, কিন্তু এটা বলে দেওয়া হলো না খাবো কি ভাবে , তখন ? আচ্ছা কয়েকটা এক্সাম্পল দিচ্ছি। দুধ খাই চুষে , চুষলেই গলায় ঢুকে যায়, ওষুধ খাই চেটে , জল খাই মাথা উঁচু করে , মায়ের আঙ্গুল খাই কামড়ে , কিন্তু এই ফিঙ্গার ফুড খায় কি করে। আমার যতদূর জানা ছিল বড়রা এসব খায়না। ওদের খাবারগুলোকে পাম ফুড বলা চলে। প্রথমে ঢেলে, তারপর চটকে মেখে তারপর গোল গোল করে মুখে ঢালে। আঙ্গুলগুলো পামের সাথে লেগে আছে তাই পামফুড। আচ্ছা, তাহলে বড় হলে আমি বাবার মতো করে খাবো। কিন্তু আমি কি বড় নই। আমি তো মেহেরের থেকে বড় , ঐশীর থেকে বড়। তাহলে লেটস ফলো দা বড়স, এন্ড মেক ইট বেটার।
এই ভেবে পরের দিন ডে কেয়ারে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম লাঞ্চের। কেউ জানেনা আমি কি করতে চলেছি। যদিও আমার বন্ধুদের বিশেষ যায় আসে না, কারণ তারা আমার থেকে একটু বেশি পাকা। এরা সব কিছু আগে থেকে শিখে এসেছে। মনে হয় ওরা এখানে আসার আগে অন্য কোনো স্কুলে দু তিন ঘন্টা থেকে আসে। ওরাও খায়, কিন্তু আমি ঠিক ওদের খাওয়া বুঝতে পারিনা। চামচ দিয়ে খায়। ফিঙ্গার ফুড খেতে দেয় , সবার হাতে দশ দশটা আঙ্গুল অথচ সবাই একটা চামচ নিয়ে খোঁচা মেরে মেরে খায়, জাস্ট ভোগাস। এরা নাকি দেশের ভবিষ্যৎ। অপ্টিমাইসড ইউস অফ ন্যাচারাল রিসোর্সেস না হলে কি আর দেশোদ্ধার হয়। যাইহোক দেশের প্রেসিডেন্ট একটাই হয়।
শেষমেশ খাওয়া এলো। লাল, সাদা, সবুজ , গোল চৌকো , ত্যাবড়া আর থ্যাবড়া। একবার চোখ বুঝে মা বাবার খাওয়া স্মরণ করলাম। তারপর প্রথম কাজ হলো বাটি উল্টে দেওয়া। ডিসিশনে একটু লেট্ হয়ে গেলো কারণ বাটি নেই। একটা থালার ওপর গোল গোল খাঁজ কাটা। ব্যাপারটা তো বাবার প্লেটে নোটিস করিনি। যাহোক মেন্ মুদ্দা হলো , প্রথমে উল্টোতে হবে। তাই পুরো থালাটা উল্টে দিলাম। সমস্ত কিছু গিয়ে পড়লো টেবিলে। কোনো প্রব্লেম নেই। এবার কাজ হচ্ছে চটকানো। বাবাকে আলুভাতে মাখতে দেখেছি। প্রথমে যেটাই একটু বসে থাকবে তার ওপর তালু দিয়ে জোরে চাপ দিলে শুয়ে যাবে, এই হোলো লজিক। আমি একটু আলাদা ভাবে তালু দিয়ে মারলাম এক থাপ্পড়। একদম সাকসেসফুল সবুজ সেদ্ধ বিনস একনিমিশে থেঁতো হয়ে গেলো। এরপর বাকি সব গুলো একে একে থেঁতলে তারপর চটকাতে থাকলাম। বেশ সব কিছু মিলে মিশে এক রামধনুর সৃষ্টি হলো। ব্রেভো আধ্যান ব্রেভো। এরপর মাখা। মাখা আর কিছুই নয় এদিকের জিনিস ওদিকে ঘষে ঘষে নিয়ে যাওয়া, আর তারপর সবগুলোকে মিশিয়ে দেওয়া। আমার আর ক্লারার টেবিল জোড়া। আমি ভাবলাম লেটস হেল্প দা পুওর লেডি। ওর টেবিল থেকেও টেনে টেনে ঘষে ঘষে আমার টেবিলের জিনিসের সাথে মাখিয়ে দিলাম। এবার খাওয়া।
কিন্তু ওটা কি। একটা গোল মতো জিনিস। সবাই সসেজ সসেজ বলছে। কোনো রকমে জিনিসটা হাতে তুললাম। আমার গাড়ির চাকার মতো। দেখতেও ওরকম কিন্তু গন্ধটা বেশ "আয় খা , আয় খা " মতো। এটা নিয়ে কি খেলবো না খাবো। সবাই দেখছি সেই চামচ দিয়ে খোঁচানো শুরু করেছে। তাহলে আমাকেও খেতে হবে। আমার কিন্তু সেই মেথডিকাল এপ্রোচ। ঢালা, থ্যাঁতলানো , চটকানো , মাখা দেন খাওয়া।
টেবিলে ফেললাম , মারলাম এক থাপ্পড় কিন্তু ব্যাটা শুয়ে পড়ল না, উল্টে আমার হাতটাই কিরকম নোনতা আর চকচকে হয়ে গেলো। একটু চেটে নিয়ে দেখলাম। বেশ খেতে, নোনতা নোনতা। কিন্তু এটা তো থ্যাঁতলানো গেলো না , মাখব কি করে। ঠিক আছে , অনেক ভেবে বার করলাম যে এক্সেপশন বা ব্যতিক্রম তো থাকতেই পারে। যেমন সবকটা মূর্খদের মাঝে আমি পন্ডিত। তাই আমি এবার ওটা হাতে তুলে নিলাম। এবার সোজা মুখে ঢুকিয়ে দেব। ওয়ান - টু - থ্রি। একি, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে কেন? আর আমি স্বাদ পাচ্ছি না কেন। মা যখন খাওয়ায় বা একটু আগেই তো খেলাম, নোনতা নোনতা। কিন্তু এখন স্বাদ পাচ্ছি না কেন? আর কানেও যেন কম শুনছি। বাঁ হাত দিয়ে তুলেছিলাম , কিন্তু সেটা মুখে পৌঁছয়নি। কানে গেছে। কি লজ্জা, কি লজ্জা। আসলে মাথাটার খেয়াল আছে , কিন্তু মাথার কোথায় মুখটা সেটা সব সময় ঠিক ঠাওর করতে পারিনা। বাবা যখন খিচুড়ি খাওয়ায় আসলে মুখ, নাক , কান সব কিছুই ইউস করতে হয়। তাই মাঝে মাঝে একটু আধটু গন্ডগোল হয়ে যায়। কুচ পরোয়া নেই আধ্যান, কান টানলেই মাথা আসে। আর মাথাতেই কান আছে। আর কানে শুনলেই মুখে বলা যায়। তার মানে কানের কাছাকাছি মুখ আছে। শুধু খাবারটা টানলেই হলো।
টানতে টানতে নিয়ে এলাম সসেজটাকে এক জায়গায়, দেখলাম সবাই থমকে দাঁড়িয়েছে। সবার চোখ আমার দিকে। তার মানে ওটাই মুখ। এবার ফিঙ্গারে প্রেসার দিলেই ব্যাপারটা আলতো করে মুভ করে যাবে জিভের মধ্যে। একটু চাপ দিলাম , কিন্তু কৈ এখনো তো কোনো স্বাদ নেই। আরেকটু চাপ দিলাম , তাতেও কিছু হলো না। কিন্তু এবার আবার সবাই হেসে ফাটিয়ে দিলো। আমি লাল হয়ে গেলাম চেষ্টা করতে করতে। বেশ কিছুক্ষন ধস্তাধস্তি করেও যখন ঢুকলো না ভেতরে , তখন জোয়ান্নার দিকে তাকাতে বুঝলাম আমি কান আর মুখের মাঝখানে যে গালটা আছে সেটাতেই ঢোকানোর চেষ্টা করছি। লজ্জায় মাথা আরো নিচু হয়ে গেলো। কিন্তু শুরু করা কাজ, আমায় শেষ করতেই হবে। আবার পথ চলা শুরু। কিন্তু মুখের কাছে আসতেই থপাস। হাত থেকে গেলো পরে। এবার সোজা মুখে পুরবো। একটু হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে নিলাম নোংরা হয়ে যায়নি তো। দেখলাম, না , বেশ ঠিকই আছে। কিন্তু সোজা মুখে পুরতে যেতেই আমার হাত চেপে ধরলো ডাকিনি যোগিনীর একজন। লাঞ্চ টাইম শেষ। এবার উঠে পড়তে হবে। আমার তখন তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা। এতো কষ্ট করে স্টেজ তৈরী করে পা ভেঙে ফেললাম নাচার আগেই। গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করলো , কিন্তু আবার সেই প্রেস্টিজ আমার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো। আর ওই শশী , শিবা , ক্লারা , জনি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে খ্যা খ্যা করে হাঁসতে লাগলো।
এই নন প্রোডাকটিভ কাজে আমাকে জোর করে ঠেলে দেওয়ার কারণ ফাঁকিবাজি। কাজ করবো না, তাই এই মহান বাণী বেরোয় মা দের মুখ থেকে , "নিজে খেতে শেখো।" এইটুকু কাজ করতে এতো অনীহা। আর এই অনীহার জন্য আমাদের মতো ইন্টেলিজেনট শিশুদের এরকম বার বার ইন্সাল্ট হতে হয় সোসাইটির কাছে। ওরে গাছকেও ঠেকনা দিতে হয় দাঁড়ানোর জন্য। একটু না হয় বড় বয়স পর্যন্ত খাইয়ে দিলি। তাতে কি গায়ে জ্বর আসে। আর এই বাবা , এখনো তো মাঝে মাঝে আমার মা তোমাকে খাইয়ে দেয় তখন কি মা বলে "নিজে খেতে শেখো। " আমার সর্বসমক্ষে যা ইনসাল্ট হয়েছে সেটার জন্য তোমরা দায়ী। যাইহোক ল্যাজ তো আর সোজা হবে না তাই আপাতত রাখি, আমি আর জাস্ট নিতে পারছি না। শুধু একটাই রিকোয়েস্ট , কোনটা খাবো আর কোনটা নিয়ে খেলবো সেটা এটলিস্ট বলে দিয়ো।
No comments:
Post a Comment