Tuesday, July 25, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - বাবা এলো শেষমেষ


সকালটা একটু অন্য ধরণের ছিল।  সকাল বেলা ইউসুআলি আড়মুড়ি খেতে খেতে মায়ের চটকানি খাই।  কিন্তু আজ যখন ঘুম ভাঙলো, দেখি মা নেই পাশে।  দাদু শুয়ে শুয়ে নাক ডাকছে।  এই নাক ডাকা নাকি শুধু অন্যদের দেখা যায়, নিজেরটা বোঝা যায় না কিছুতেই।  মা একবার আমার ভিডিও তুলে বাবাকে পাঠিয়েছিল।  আর দুজনেই হ্যা হ্যা করে হায়েনার মতো হাসি হাসছিলো।  এটা তো সবাই করে , তাতে হাসির কি হলো শুনি।  আমি মায়ের নাক ডাকা শুনেছি, দাদুর নাক ডাকা শুনেছি , বাবার নাক ডাকা এখনো শোনা হয়নি।  বাবা তো আমার কাছে ছিলই না।  এই গোটা এক বছর একা একাই কাউকে কিছু না দেখিয়ে চুপি চুপি নাক ডেকেছে।  আর কেউ হাসেনি বাবার ওপর। 

আমি দাদুকে ঠ্যালা দিয়ে উঠিয়ে দিতে, দাদু ধড়মড়িয়ে উঠে বসে পড়লো।  দাদুর প্রচুর কর্তব্য কর্মের ওপর নজর।  আমার জন্য ভালোই।  আমার সাথেই সারা দিন থাকে।  দাদু না থাকলে তো আই আম দা অনলি মেল পার্সন ইন দা হাউস।  সেই কর্তব্যকর্ম থেকে দাদু আমায় বিরতি দিয়েছে।  দাদুর সব ভালো লাগে, কিন্তু ডাইপার চেঞ্জ করার সময় এতো জোরে পা টা তুলে দেয়  নাইন্টি ডিগ্রিতে , সেটা প্রায় অসহ্যর লেভেলে। বাকি সবই ঠিক আছে। 

সকালে আমার সমস্ত কাজ এক এক করে সেরে আমি তখন খেলছি।  সব কাজ বলতে , ডাইপার চেঞ্জ করা আর খাওয়া।  রাতের আঁধারে আমার ডাইপার থলেতে রূপান্তরিত হয়।  আমার ডিসপেন্সেবল এন্ড নন কনভিনিয়েন্ট পোর্টেবল টয়লেট।  হ্যা , নন কনভিনিয়েন্ট।  আগেও লিখেছি , আবারো বলছি আর ভবিষ্যতে আবার এই ডাইপারের ঝামেলা নিয়ে লিখবো।  ইট ইস জাস্ট আনাদার ইউসলেস ইনভেনশন।  কিন্তু যেহেতু আমার হাতে শক্তি আর মুখে বুলি দুটোই নেই তাই 'যথা আজ্ঞা' বলে সব কিছু মাথা পেতে নিয়েছি।  আর আমার ঠ্যাং তুলে সবাই মিলে অত্যাচার কন্টিনিউইং।

যাই হোক , আমার সব কিছু হয়ে গেলে আমি বসে বসে হালুমের সেকেন্ড ঠ্যাংটা বানানোর চেষ্টা করছিলাম। কয়েকদিন আগেই ভেঙে দিয়েছি , আজ ভাবলাম জোড়ার চেষ্টা করি।  হঠাৎ দেখি দরজা খুলে গেলো।  আর একটা বিশাল লোক ঢুকলো ঘরে।  আর পেছনে পেছনে মা , হাতে মোবাইল আমার দিকে তাক করা ।  বেশ ঝকঝকে দেখতে লোকটা।  সুন্দর জামা কাপড় পরে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে এগিয়ে এলো।  একদম বাবার মতো দেখতে।  কিন্তু বাবা তো মোবাইলের মধ্যে থাকে।  আমার থেকেও ছোটো।  আমার সাথে কথা বললে মুখ গোল করে একটা অদ্ভুত আওয়াজ বার করে।  আর তাতে আমার বেজায় হাসি পেয়ে যায়।  বেশ মজাদার শব্দটা।  কিন্তু এটা কে।  বাবার নকল? এখানে অনেকেই আসে।  সাগ্নিক কাকু আসে , অর্ণব কাকু , ভাস্কর কাকু , সবাই অনেক বড় বড়।  বাবার মতো বেশ ছোট্ট খাটো হাতে ধরা যায় এরকম নয়।  কিন্তু সবাই আসে কাকিমার সাথে।  কিন্তু এ আবার কে , যে মা সঙ্গে করে নিয়ে এলো। 

সাথে আবার মা মোবাইল ধরে আছে যে ভাবে তাতে ব্যাপারটা বোঝাই যাচ্ছে যে ক্যাপচারিং দা মোমেন্ট।  কি এমন গুড় আছে এই কালো লোকটার গায়ে।  বাবার মতো দেখতে বটে , কিন্তু বাবা তো অনেক ফর্সা।  এ তো দেখছি কালো।  আর এ তো পাহাড়ের মতো বড়।  লম্বা চওড়া ওই টিভিটার মতো।  আমি তো এক হাত দিয়ে ধরতেই পারবো না।  আমি একেবারে থতমত খেয়ে গেলাম।  একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছি , একবার মায়ের দিকে।  একটাই শান্তি , মায়ের মুখে একটা বিশাল শান্তির হাসি।  কি সুন্দর লাগছে মা কে।  তাহলে এই লোকটা কি সত্যি সত্যি আমার বাবা?

যদি বাবা হয় তাহলে আমার এখন ঠিক কি করণীয়।  হাসবো , আনন্দে লাফাবো না অভিমান করে দুঃখে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদবো।  যদি বাবা হয় তাহলে তার ওপর রাগ করাটা আমার কাছে স্বাভাবিক।  সবার বাবা সবার সাথে থাকে আর আমি শুধু একা , একা পরে আছি এখানে।  তার ওপর আমার জন্মদিনে, আমার ফার্স্ট জন্মদিনেও এলো না।  আমি বাবার ওপর রাগ করে আমার ডাইরি লেখা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলাম।  আই হ্যাভ টু শো দা ওশেন অফ অ্যাংরি সরো টু হিম।  কিন্তু যদি এটা বাবা না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে তো নাম ডুবে যাবে।  ঘ্যান ঘ্যানে ছেলে হিসেবে মার্কেটে প্রজেক্টেড হবে।  আর যদি মা এই লোকটাকে বাবার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নিয়ে আসে , হুইচ আই সাপোর্ট সিইং হিস্ ডিডস, তাহলে তো পুরো কেলো।  ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইস লাস্ট ইম্প্রেশন। 

ভাবতে ভাবতে মুখ থেকে একটা ক্যাবলা ক্যাবলা হাসি বেরোতে না বেরোতে লোকটা আমায় কোলে তুলে নিলো।  কি অদ্ভুত এক সুন্দর অনুভূতি।  কি ভালো লাগলো।  আগেও অনেকে আমায় কোলে নিয়েছে।  কত কাকু আমার সাথে কত খেলা করেছে।  কিন্তু এ যেন একদম অন্য রকম।  এই লোকটার থেকেও অনেক শক্তিশালী লোক আমায় কোলে তুলেছে।  কিন্তু এর মতো শান্তি শালী কেউ না।  সবাই কেমন যেন ভয়ে ভয়ে আমায় কোলে নেয়।  এর যেন কোনো ভয় নেই।  যেন আমি লোকটার নিজের শরীরের একটা পার্ট।  আমার এই হাতটার মতো , যেমন আমি যখন ইচ্ছা তুলি আর নামাই, লোকটা যেন ঠিক সেই ভাবে আমায় নিয়ে খেলা করতে লাগলো।   

আমার তখন খুবই কনফিউসিং অবস্থা।  কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।  শেষমেশ আমার সেফ কর্নার মায়ের দিকেই হাত বাড়ালাম।  মা তখন আমায় কোলে নিয়ে নিলো।  মা কোলে নিতেই বুঝতে পারলাম মা কি খুশি।  মায়ের সারা শরীর তখন কাঁপছে আনন্দে, আর মায়ের হাসি একদম অন্য।  তাহলে কি মা চাইছে যে আমি ওই লোকটার সাথেই খেলা করি।  এই লোকটা মায়ের যতটা কাছে আসছে ততটা কিন্তু কাউকে আসতে দেখিনি।  এমনকি দাদুকেও না।  মায়ের কোলে থাকতে থাকতে দেখি লোকটা আবার হাত বাড়াচ্ছে আমার দিকে।  তখন মা বলে উঠল , "যা , বাবা তো। "

আর কোনো সন্দেহ নেই।  এই লোকটাই বাবা।  মোবাইলের ছোট্ট ঘরে ছিল।  এখন বড় হয়ে গেছে।  মা কখনো মিথ্যে বলবে না আমায়।  এটাই বাবা।  এ-টা-ই সেই বাবা।  আমি সেই চোখ খুলে এটাকেই দেখেছিলাম। ঠিক তো।  তখন তো বাবা এতই বড় ছিল।  কি কষ্ট করে ওই মোবাইলের ছোট্ট ঘরে ঢুকে বসে ছিল।  এটাই তো।  আমার সব রাগ গলে জল হয়ে গেলো।  সবার মতো আমারও বাবা আছে।  এখানে , আমার কাছে।  আমার বাবা।  মাইন্ ওনলি। শুধু আমার।  আর কারো না।  কেউ চাইলেও দেব না।  এতদিন পাইনি।  আর ছাড়বো না।  এবার আমি আর বাবা, বাবা আর আমি।  শুধু আমরা দুজনে।  না , দুজনে না।  আমি , বাবা আর মা।  তিনজনে। 

বাবা দেখি আবার মোবাইল খুলছে।  নানা আর ওই ছোটো ঘরে যেতে হবে না।  আমাদের এখানে অনেক বড় বাড়ি। এখানেই থাকো।  এখানেই আমরা হালুম আপ্পু নিয়ে খেলবো।  তারপর গাড়ি করে ঘুরতে যাবো।  ও আচ্ছা।  মোবাইলে দেখি ঠাম্মার মুখ।  ঠাম্মা এখনো ওই ছোট্ট ঘরে থাকে।  তাহলে এটাই সেই বাবা। বাবা আমায় আর মা কে ধরে তিনজনকে দেখাতে লাগলো ঠাম্মা কে।  ওই তো দাদু।  শেষমেশ তাহলে বাবা আমার কাছে চলে এসেছে।  সবাই খুশি খুশি।  কি আনন্দ। 

আমার তখন ভীষণ মজা।  প্লাস , বাবা একটা অদ্ভুত জিনিস করলো।  আমাকে কাঁধে তুলে নিলো।  কি মজা।  বাবা আমার গাড়ি।  প্রথমে আমার বসতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো।  এরকম ভাবে তো কখনো কারোর ঘাড়ে চাপিনি।  আর ঘাড়ে চাপলে, কেমন ভাবে বসলে ঠিক হবে সেটাও জানিনা।  শুধু দেখেছিলাম অন্যদের, তাদের বাবাদের ঘাড়ে চাপতে। এখন আমারও বাবা আছে , আমিও চাপবো।  ব্যাপারটা অদ্ভুত তবে আমার কার সিটের থেকে ভালো।  ও মা , এ কি করতে আরম্ভ করলো বাবা।  একবার সামনে পরে যাবো , পরে যাবো ভাব।  আবার উঠে যাচ্ছি।  বেশ দুলুনি খাচ্ছি।  কিন্ত হেব্বি ভয় করছে।  আমি নেমে যাওয়ার চেষ্টা  করতে বাবা দেখি নামিয়েও দিলো।  বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা যে আমার ভয় লাগছে। 

এরপর তো সারাদিন শুধু মাঝে মাঝেই এসে আমায় চটকে যাচ্ছে।  আর মা কে বার বার বলছে , “একটু চেটে  নি এটাকে” . আর মা এক ধমক দিয়ে আটকে দিচ্ছে।  আমি কি ললিপপ নাকি। আমার দুপুরের ন্যাপের সময় রোজকারের মতো খালি খালি নয়।  আজ বাবা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়েছিল।  আমিও দিব্যি পোঁদ উল্টে ঘুমিয়ে নিলাম অনেকক্ষন।  বেশ আরাম। 


আমি ভেবেছিলাম আর আমার ডায়েরি লিখবো না।  বাবার ওপর প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল।  কিন্তু এখন যখন বাবা চলে এসেছে আমার কাছে, তখন তো জীবন সাংঘাতিক রঙিন।  সবার মতো তো আর বাবা ভীতু নয়।  এখন থেকে আমার লাইফ ইস ফুল অফ এডভেঞ্চার।  অনেক ঘটনা, অনেক খেলা অনেক কিছু আমার লাইফে এক এক করে ঘটতে থাকবে।  অনেক কিছু শিখতে থাকবো আর ভুল করলে বাবা আর মা সেই ভুল ঠিক করে দেবে।  এন্ড দ্যাটস নিড টু বি রিটেন এন্ড প্রিসার্ভ সামহোয়ার টু শো ইট টু দা নেক্সট জেনেরেশন। তাহলে আর কি, আমার ডায়েরির সিসন টু চালু হলো।   

             আধ্যানের ডায়েরি সিসন ওয়ানের পাতাগুলো 

1 comment:

  1. Kotodin por aadhyan likhlo.... BABA onekdin por kache paowa r onuvuti boddo alada..... vison valo laglo baba r chele r dekha Howar muhurte ta.... onek valobasa thako aadhyan baba ma r sathe..... 😍 😘

    ReplyDelete