Sunday, July 30, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - মাছ দেখা





দু তিন ধরে শুনছি মাছ দেখতে যাবো। এতোদিন শুনছিলাম বাঙালির ছেলে হয়ে জন্মেছিস , তো মাছ খেতেই হবে।  এখন অন্য কথা শুনছি।  মাছ দেখতে যেতে হবে।  এই বড় বড় লোকগুলো না বেশ কনফিউসিং।  কখন কি ট্রুথ হঠাৎ করে চেঞ্জ করে দেবে বোঝাই যায়না।  আমার যদিও এনালিটিক্যাল ব্রেন উইথ শার্পনেলস , তবু পুরোপুরি ব্যাপারটা প্রেডিক্ট করতে পারলাম না।  মাছ সবসময় কিনে নিয়ে এসে তারপর সেটাকে কেটে ধুয়ে , আমার খিচুড়ির মধ্যে মেখে আমাকে খাওয়ানো হয়।  আর অনেক ধরণের মাছ হয় আর সব কটার বিকট বিকট নাম।  তাই বেছে বেছে ভালো মাছ নিয়ে আসতে হয়।  ঠিক তেমনি আমরা আজকে যাবো মাছ দেখতে। যদি ভালো লাগে তাহলে আমরা কিনে এনে কেটে খেয়ে ফেলবো।  এটাই ডিল। 

কিন্তু মাছ তো সব জায়গাতেই পাওয়া যায়।  তার জন্য দু ঘন্টা ড্রাইভ করতে হবে কেন।  আমার যদিও ভালোই লাগে গাড়িতে করে ঘুরতে।  লম্বা লম্বা ড্রাইভ করতে, ব্র্যাকেটে এস এ প্যাসেঞ্জার।  আমার এখনও পেছন দিকে মুখ করা কার সিট্।  আমি লম্বা হয়ে গেছি, পা টা পুরো ধরে না।  কিন্তু তাও বাবা নতুন ফ্রন্ট ফেসিং কার সিট্ লাগাবে না।  কি না রুল নেই।  আরে বাবা রুল তো ওপেনলি ঢেকুর তোলারও নেই।  ইট কনসিডার এস ব্যাড ম্যানার্স।  কিন্তু কমফোর্টের জন্য তো ঢেকুর তুলতেই হবে।  আমার যে এই পা আটকে যাচ্ছে , আর সেটা চূড়ান্ত ডিসকমফোর্টের সৃষ্টি করছে সেটা কি কেউ বুঝছে।  নাকি মাইনরে কমফোর্টের কোনো অধিকার নেই। 

এই নিয়ে চর্চা অন্য একদিন হবে।  আপাতত যেমন ভাবেই বসি না কেন গাড়ি চললে যে দুলুনি লাগে সেটা প্রাইসলেস।  আমি পেছনের দিকে মুখ করে বসে থাকি আর কাছের মধ্যে দিয়ে কত গাছ হেটে চলে বেরিয়ে যায়।  আমার সাথে কথা বলার মতো সময় তাদের খুব কম।  একমাত্র যখন গাড়ি দাঁড়িয়ে যায় তখন তারা আমার সাথে কথা বলে।  যদিও বেশির ভাগ সময় একটা তিনচোখ জন্তু আমার দিকে তাকিয়ে দুলতে থাকে।  তিনটে চোখ তিন রঙের।  সবুজ, লাল আর হলুদ।  সব চোখ এক সাথে জ্বলে না।  যে সবুজ চোখ খোলে তখন দেখি গারো চলতে আরম্ভ করেছে আর সব গাছ গুলো ছুটছে। 

আমি কিন্তু কখনো গাছেদের ছুটতে দেখিনি - গাড়ির ভেতর থেকে ছাড়া।  আমার ঘরের জানলা থেকে একটা গাছ দেখা যায়।  আমি যখন ছোট ছিলাম। তখন দেখেছি গাছের পাতা গুলো ওই তিনচোখ জন্তুটার মতো রং পাল্টায়।  আর একবার দেখেছিলাম সব পাতা নিচে  পরে গেছিলো।  সে অনেকদিন পর আবার পাতা এসেছিলো গাছে।  এখন সবুজ তকতকে পাতা।  গাড়ি থেকে নেমে অনেকবার বাড়ি গিয়ে ওই গাছটাকে বলেছি একটু ঘুরে আসতে।  কিন্তু ওটা একটা বুদ্ধু গাছ।  মনে হয় বুড়ো হয়ে গেছে।  নড়তে চড়তে পারে না।  কিন্তু মিনিমাম কার্টেসি পর্যন্ত নেই যে আমার কথার উত্তর দেবে।  কথাও বলে না।  হাঁদার মতো হাত পা তুলে বসে থাকে। 

উফফ এই অভ্যেস আমার দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।  টু দি পয়েন্ট , কারেক্ট এন্ড এফেকটিভ স্টেটমেন্ট লিখে যৎকিঞ্চিৎ শ্রমের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট লেখার থেকে আমি শুধু ডাইভার্টেড হয়ে এক্সপ্লেনের পর এক্সপ্লেন করে চলেছি।  হচ্ছিলো কথা মাছের আর চলে গেলাম গাছে। গাছ আর মাছ যদিও বেশ মিল আছে কিন্তু তা বলে কি মাছ গাছে থাকে ? তাই তো ? মাছ কোথায় থাকে সেটাই তো জানিনা।  গাছে তো পাখি থাকে দেখেছি।  উড়ে এসে জুড়ে বসে।  কিন্ত মাছ? ইনকিউসিটিভ চোখ নিয়ে মা কে প্রশ্ন করলাম আর মা বোকার মতো তাকিয়ে হাসলো।  এখনো আমার আর মায়ের মধ্যে সেই পেনফুল ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ। 

মাছ যেখানেই থাকুক আমার জার্নিটা বেশ মজাদার হলো।  একবার মা , একবার দাদু আমার পাশে বসে আমার সাথে সারা রাস্তাটা গেলো।  আমি যদিও মাঝে বেশ কিছুটা সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।  ওই দোল দোল দুলুনিতে কি আর কেউ জেগে থাকতে পারে।  ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন দেখি আমার চার পাশে বিশাল বড় বড় বাড়ির মতো কিছু একটা।  না গাড়ি না বাড়ি।  সামনেরটা তিন কোনার মতো।  বিশাল বিশাল আকার।  বাবা দেখি আবার আমার হাত ধরে টানতে টানতে সেগুলোর মধ্যেই একটাতে নিয়ে যাচ্ছে। সেটা আবার জলে ভাসছে।  বাবা আমায় কোলে তুলে নিতে দেখি সামনে অনেক জল।  তাতে এইরকম অনেকগুলো ভাসছে।  আমরা ওটার মধ্যেই উঠে গেলাম।

ওটার ভেতরে আবার ঘরের মতো।  আমার ঘরে যেরকম টেবিল আছে , সেরকম অনেক টেবিল পাতা।  আমরা একটা বড় একটা টেবিল জুড়ে বসে পড়লাম।  আর মা শুরু করে দিলো অত্যাচার।  ঘুম থেকে উঠলেই নাক টিপে খাওয়ানোটা মায়ের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।  এখানে এতো লোকের মাঝে সেই গেলানোর চেষ্টা চলতে লাগলো।  কোথায় আমি চারপাশ দেখবো, ফীল করবো তা নয়, আমাকে খিচুড়ি খেতে হবে।  মা ও নাছোড়বান্দা। দেখলাম বেগতিক , মা ছাড়বে না।  আমি মোটামুটি আধ বাতি খেয়ে নিলে তবে মা ঠান্ডা। 

ততক্ষনে দেখি গাড়ির মতো এটাও চলতে আরম্ভ করেছে আর সবাই এটাকে বোট বলছে।  বোট চলছে জলের উপর দিয়ে।  সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা বোটের ভিতর ঘরে।  বাবার এই আনসোশাল বিহেভিয়ার পছন্দ হলো না।  আমাকে কোলে তুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।  কি সুন্দর হাওয়া বাইরে।  কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে টের পেলাম কি ঠান্ডা আর কি জোরে হাওয়া দিচ্ছে।  এই ভরা গরমে আমার দান্তে দাঁত লেগে যাওয়ার জোগাড়।  চোখ মেলে তাকাতে পারছি না হাওয়ার দিকে।  মা এসে কি একটা যেন পরিয়ে দিতে কানে ঠান্ডা লাগাটা অনেক কমে গেলো।  কি আরাম।  কিন্তু মোটেই ভালো লাগলো না যখন সবাই আমাকে ছোট্ট ব্লু হনুমান বলতে আরম্ভ করলো।

সে যা হোক।  অনেক্ষন আমি বাবা মা আর দাদু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।  ধীরে ধীরে সবাই একে  একে  ভেতরে চলে এলাম।  ভেতরে আসতে আমার সাংঘাতিক ঘুম পেয়ে গেলো।  এই বোট গাড়িটা বাবার গাড়ির থেকেও বেশি দোলে আর ঝিম আসে।  আমি ধীরে ধীরে ঘুমে ঢলে পড়লাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই বোটের এক দিক থেকে আরেক দিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।  আর আমি একা আমার স্ট্রলারে শুয়ে আছি।  গলা ছেড়ে কাঁদতে যাবো , দেখি বাবা সোজা কোলে তুলে নিয়ে বাইরে নিয়ে চলে এলো।  কি সাংঘাতিক রোদ বাইরে সাথে হু হু করে হাওয়া।  আমি অনেক ছোটবেলা সমুদ্রে গেছিলাম।  তখনও চোখ খুলতে পারিনি , এখনোও চোখ খুলতে পারছিলাম না।  নীল সমুদ্র , হু হু হাওয়া , আর বাবা জোর করে
আমায় কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আমি একবার মাথা ঘুরিয়ে দেখারও চেষ্টা করলাম।  আফটারঅল বাবা তো।  নিশ্চই কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে হুইচ মে বি ইন্টারেস্টিং।  কিন্তু যেদিকে তাকাই , শুধুই তো জল।  আর আমাদের বোটের মতো আরো কিছু কিছু বোট। 

আমার পেছন থেকে সামনে থেকে লোকে কেন যে এতো ঝাপাঝাপি করছে কেন তা বুঝতে পারছি না।  বোটটা এবার একেবারে শান্ত হয়ে গেলো।  সবাই চুপচাপ।  সবাই ক্যামেরা তাকে করে আছে জলের দিকে।  হঠাৎ করে , বিশাল শব্দ করে একটা কি একটা বিশাল মতো জিনিস জল থেকে  লাফিয়ে উঠে ঝপাস করে আবার জলের ভেতর ঢুকে গেলো। 

কি ওটা ? হোয়াট ইস দ্যাট? আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। ওটাও কি আমাদের বোটের মতো বোট।  জলের তলায় ঢুকে যায় ? কি জানি।  সবাই এতো আনন্দ করছে কেন।  সবাই বিশাল খুশি।  বাবাও দেখি সাংঘাতিক খুশি।  আবার সবাই ক্যামেরা তাকে করে বসে আছে জলের দিকে।  কিন্তু অনেকক্ষন কিছু হলো না।  শেষে একটা বেশ কিছু তোলপাড় হয়ে একটা কিছু জিনিস হালকা ভাবে জলের ওপর ওঠে নেমে গেলো।  আর সবাই চিৎকার করে উঠলো ওই তো ওই তো হোয়েল।  মানে তিমি মাছ। 


আমার গেলো মাথা গরম হয়ে।  আমরা আবার ফিরে এলাম আমাদের গাড়ির কাছে।  অনেক্ষন পরে।  আমি ততক্ষনে এই বড় বড় আহাম্মকদের প্রচুর মুণ্ডুপাত করেছি।  এ কি পয়সা নষ্ট।  এই এতটা নিয়ে গিয়ে মাছ পর্যন্ত খেলাম না।  শুধু খিদে বাড়িয়ে নিয়ে চলে এলাম। ওই অতো বড় মাছটা শুধু দেখতে কেউ যায় ? আর তাও এতো দূরে , এতো কষ্ট করে।  বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার মধ্যে তো অনেক সময় চলে গেলো আর মাছ দেখলাম তো পাঁচমিনিট।  এই ঢঙের ঠিক কি মানে আছে বলতে পারো।  আর দেখা দিয়ে কি হয়।  দেখে কি আনন্দ।  সঙ্গে করে নিয়ে এলে আমি একটু খেলতে পারতাম।  কিন্তু না , বাবা হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখলো।  আর আমার চোখ ঝালাপালা করে দিলো।  একবারও চেষ্টা করলো না ওটাকে আমার জন্যে নিয়ে আসার।  যাকগে বয়স বাড়লে আপনিই বুঝতে পারবে কি ভুল আজকে করেছিল।  বাবাটা বড্ডো ইমম্যাচিউর। যাইহোক , শুধু লাস্টের চার লাইনের ফ্রাস্ট্রেশন লেখার জন্য আমিও অনেক ভনিতা করেছি বলে দুঃখিত।  কিন্তু আমি কেন একা ভুগবো , সবাইকে নিয়ে ডুববো। আজ আমার হোয়েল ওয়াচিং এর এখানেই ইতি।         

আধ্যানের ডায়েরি আগের পাতাগুলো 


No comments:

Post a Comment