লিখতে
বসেছিলাম আমার সব খেলা নিয়ে আর মনের জ্বালায় লিখে ফেললাম অন্য কিছু । আসলে মনের দুঃখ বলার জন্য এটা ছাড়া
আমার কাছে প্ল্যাটফর্ম নেই। এই
যে সবার সাথে আমি খেলি , তারও ভাগ আছে। সবার
সাথে সব খেলা খেলা যায়না, সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝি। ট্রায়াল আর এরর করে করে দেখি যে কোন
খেলা কার সাথে খেলা যায়। কিন্তু
সবথেকে বেশি খেলি বাবা আর মায়ের সাথে। কোনো
রকম বিরক্তি নেই এদের দুজনার মধ্যে। ধাক্কা
মারলে আমিই পরে যাই। আর
অন্যদের মতো এরা কমপ্লেন করে না, যদিও বাবা, মা কে, আর মা, বাবা কে অনেক কমপ্লেন
করে। বাট ইটস ওকে।
আমার
বাবা মা দুজনেই মোটা। টেকনিক্যালি
স্পিকিং মোটারা দৌড়াতে পারেনা। কিন্তু
মায়ের থেকে বাবার এনার্জি অনেক বেশি, তাই যেসব দৌড়ানোর খেলা আছে সেটা মেনলি বাবার
সাথেই খেলি। ঘরের
মধ্যে যে টুকি টুকি খেলা সেটার একটা টেকনিক আছে। আমার যে ঘরে ডাইপার পাল্টানো হয়। সেই ঘরে আমি ঢুকে গেলেই দেখি বাবা
হাওয়া। ফিরে এসে দেখি বাবা নেই নেই। শুধু কোথা থেকে একটা ‘আধ্যান টুকি ’
শব্দ ভেসে আসছে। আগেই বলেছি দিক এখনো বুঝতে পারিনা। কিন্তু আমার কাছে এটুকু ক্লিয়ার , অতো
বড় শরীরটা নিয়ে এইটুকু ঘরে সব জায়গায় লুকোতে পারবে না। তাই আমার লিস্ট করা জায়গা গুলো আগে
খুঁজে দেখি। এখনো
পর্যন্ত মোটামুটি খুঁজে পেয়ে গেছি প্রত্যেকবার। কিন্তু বাবা নতুন নতুন জায়গা বার করছে
লাস্ট দু চারদিন ধরে দেখছি। নতুন
জায়গা খুঁজে পাওয়ার এক্সাইটমেন্ট আলাদাই।
বাবার
সাথে আরেক খেলা সোপ বাবল। প্রথম দিন যেদিন দেখি সেদিন অবাক হয়ে গেছিলাম। একদম স্পেলবাউন্ড। ব্যাপারটা বুঝতেই
পারিনি কি করে হয়। এখনো
যদিও বুঝতে পারছিনা কেসটা কি। বাবা
হঠাৎ করে একদিন একটা লম্বা লাঠির মতো জিনিস নিয়ে এলো। বেশ মজাদার দেখতে। সেটার মাথা খুলে একটা কাঠির মতো কিছু
জিনিস বার করলো। তারপর
মুখের কাছে নিয়ে এসে কি একটা যেন করলো , আর অনেক গোল গোল বল চারপাশে ছড়িয়ে পড়লো। আমার তো অনেকগুলো বল আছে। আমি সেগুলো নিয়ে খেলি। বাবা আবার আমার সাথে ফুটবল খেলে।
বাবা
কিছুতেইে বলটা হাতে নেয়না। শুধু
পা দিয়ে লাথি মারে। আমিও
মারি লাথি। বেশ
কিছুটা দূর এগিয়ে যায়। কিন্তু
আমার কাছে ফেবারিট হলো হাতে করে তুলে নিয়ে বাবার পায়ের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া। ওটা বেশি ইন্টারেস্টিং কারণ বাবা বলটা
নিয়ে অনেক কিছু করতে পারে। কখনো
পা থেকে হাঁটুতে তুলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন ধরে নাচাতে থাকে তার পর সোজা দেওয়ালে
মারে। আমি পারিনা। কিন্তু পারবো। বলেছি না , এই কারণেই আমি বড়দের সাথে
বেশি খেলি। আগে যখন ফুটবল খেলতাম তখন বেশ ভয় লাগতো। তখন বল যে কি, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে
পারতাম না। বাবা যেই
লাথি মারতো আর বলটা দূরে চলে যেত ভাবতাম ওটা আমার কাছে ফিরে এসে চিপে দেবে। বাবাকেই ঠেলতাম নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু পরে একদিন যখন মাঠে গেলাম
দেখলাম ব্যাটা নেহাতই নিরীহ। নিজে
থেকে ফেরত আসে না। লাথি
খাওয়ার জন্যই জন্ম। এখন আমি যেই ওটা হাতে করে নিয়ে আসতে যাই , বাবা বলে, “ইউস ইওর
ফিট”। কিন্তু মেরে দেখেছি , বাবার দিকে
কিছুতেই নিয়ে যেতে পারিনা। তাহলে
উপায়? সেই হাতেই ।
কিন্তু
বাবা যে বল গুলো বার করে, সেগুলো
নিয়ে কিছুতেই খেলতে পারিনা। ওই লাঠি থেকে বেরোয় আর গায়ে পড়লেই হাওয়া। প্রথমে অবাক হয়ে হাঁ হয়ে গেছিলাম বটে।
কিন্ত কোনো জিনিসেই বেশি দিন হাঁ করে থাকাটা
আমার অভ্যাস বিরুদ্ধ। অথচ
ওটার মজা নেবো কি করে? যেদিন
একটা ছোট বল এসে মুখের ওপর লেগে অদৃশ্য হয়ে গেলো তখন বুঝলাম যে ওটা ফেটে গেছে। আর সারা মুখ জল। কি মজা। এর পর থেকে আমি বল গুলো বেরোলেই
চেষ্টা করি যে সব বল গুলো মুখের ওপর নেওয়ার। অর্ধেক
হয় , অর্ধেক হয় না। কিন্তু
যেগুলো হয় সেগুলো যা তা রকমের মজাদার হয়। আমি নিজে অনেক চেষ্টা করেছি নিজে থেকে
করার। কিন্তু পরে বুঝলাম ওই লম্বা জিনিসের
মধ্যে জল আছে। আর লাঠি
দিয়ে জল তুলে বাবা কিছু একটা করে ওই বল বানায়। আমি একদিন বাবার কোলে চেপে ব্যাপারটা
বোঝার চেষ্টা করেছিলাম বটে। বাবাও
আমাকে শেখানোর জন্য চেষ্টা করছিলো। কিন্ত
আমি বুঝতে পারছিলাম না , বাবা কেন মুখ গোল করে আমার মুখে হাওয়া দিচ্ছে আর আমায়
বলছে ‘ফু দাও’ ‘ফু দাও’ . এই ফু জিনিসটা যে কি সেটা যতদিন না বার করবো হয়ত এর
সিক্রেট বার করতে পারবো না। ততদিন
বাবাই ভরসা।
কিন্তু
ব্যাটা মহা পাজি। সব
সময় করতে চায় না। আমি
লক্ষ্য করে দেখেছি বাবা সব সিচুয়েশনে ব্যাপারটা করতে চায় না। যেমন শুয়ে থাকলে , বা হাতে মোবাইল
নিয়ে থাকলে , বা নেহাত শুধু হাতে কিছুই থাকলে। এটুকু বুঝলাম দ্যাট স্টার্টস ফ্রম
হাত। যেকোনো হাত। তাই
যখন বাবা দঁড়িয়ে থাকে তখন বাবার হাতে ওটা ধরিয়ে দিয়ে দেখি বাবা করছে কিনা। যদি ডান হাত দিয়ে না করে তাহলে বাঁ
হাতে ধরানোর চেষ্টা করি। যদি
তাতেও না করে তাহলে আবার ডান হাতে ধরানোর চেষ্টা করি। মোদ্দা কথা শেষমেশ ওটা বাবাকেই করতে
হয়, কারণ মায়ের হাতে দিয়ে দেখেছি মা ঠিক কেপেবল নয় এসব ব্যাপারে।
কিন্তু
মা যেসব খেলায় কেপেবল সেটা বাবার দ্বারা সম্ভব নয়। যেমন মা আমাকে কোলে নিয়ে গোল গোল
ঘোরে। একবার নয় অনেকবার। আমি কোল থেকে দেখি
সারা ঘর ঘুরে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে। আমার
হেব্বি মজা লাগে। আমি
মায়ের কোলে ঘুরতে থাকি। হঠাৎ
করে মা আমাকে নিচে নামিয়ে দেয়। আর
দাঁড় করিয়ে দেয়। তখন
একটা অদ্ভুত ফিলিংস হয়। আমার
সামনের সব জিনিস তখনও ঘুরতে থাকে। কিন্তু
আমার সেই অবস্থাতেও দৌড়োতে ইচ্ছা করে। কিন্তু
ধপাস করে পরে যাই। মা
বলে মাথা ঘুরে গেছে আমার। এটাকেই কি মাথা ঘোরা বলে। তাহলে মা কেন সেদিন বলল, খুব গ্যাস
হয়ে গেছে মাথা ঘুরছে। এই
বড়রা কোনো একটা কথায় স্টিক করে থাকতে পারে না। তবে এই ব্যাপারটা বেশ মজাদার। আমি বেশ এনজয় করি। বাবা দু চারবার চেষ্টা করে বলে বাবার
মাথা ঘুরছে। হে হে
বাবা , মা ইস মা।
এরকমই
আরেক খেলা হলো দোলনা। আমাদের
সামনের মাঠে একটা দোলনা আছে। আমি
আগে বাবার সাথে বেশ কিছুবার মাঠে খেলেছি কিন্তু দোলনার জায়গায় বাবা কিছুতেই যেতে
দিতো না। দোলনার
নিচটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেষ্টিং। কারণ প্রচুর উড চিপস ছড়ানো থাকে। আমার উড চিপস নিয়ে খেলতে বেশ ভালো
লাগে কিন্তু মা বা বাবা দুজনাই যেন ভূত দেখে ওই চিপস দেখে। কারণটা যদিও আমিই ক্রিয়েট করেছি। আমার ওগুলো দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে আর
বেশ কিছু ঢুকিয়ে
নিই মুখের ভেতর, আর যায় কোথায়, পরের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় পাতলা পায়খানা। কিন্তু সেদিন বাবার সাথে মাঠে
খেলছিলাম মা দেখি কখন চলে এসেছে আমার পাশে। আমাকে
কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে সোজা দোলনায় বসলো। তারপর
বাবাকে বললো ঠেলে দিতে। ওরে
না। যেমন ঘরের ভেতর সবকিছু ঘুরতো এখন দেখি
দূরের জিনিসের কাছে একবার যাচ্ছি , একবার আসছি। কি মজা। বাবা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। একবার বাবার কাছ পর্যন্ত যাচ্ছি ,
আবার চলে আসছি। আমি
আগেও এরকম খেলেছি। কিন্তু
এখন দেখছি আমায়
কোনো খাটনি খাটতে হয় না। নিজে থেকেই যাচ্ছি , আসছি। বাবা একবার আমাকে কোলে নিয়ে ট্রাই
করতে গেলো কিন্ত শেষমেশ দোলনায় বসতেই পারলো না। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই আমি আর মা গিয়ে
দোলনায় দোল খেয়ে চলে আসি।
মায়ের
বেশির ভাগ খেলা শিক্ষামূলক। সেগুলো
ঠিক খেলা বলা চলে না। কিন্তু
আজ পর্যন্ত সমস্ত খেলনা গুলো মা ই খেলতে শিখিয়েছে। কি করে ঠিক সাইজের গোল-চৌকো গুলো ঠিক
পকেটে ঢোকাতে হয় , কোনটা মোচড় দিতে হয় , আর কোনটাতে থাবড়া, কোনটা টানতে হয় আর
কোনটা ঠেলতে এই সবই মা শিখিয়েছে। বাবা
বিরক্ত হয়ে যায়। শুধু
কোলে নিয়ে চটকাতে পারলে আর কিছু চায় না। আরে
বাবা, আমার তো খেলাই শিক্ষা আর শিক্ষাই তো খেলা। এতো অধৈর্য হলে হবে। যত খেলনা আমার আছে সব মা কিনে দিয়েছে।
এইতো কদিন আগে একটা গাড়ি কিনে দিয়েছে।
বেশ মজাদার। একটা কিছু টিপে দিলে ওটা
একবার আগে যায় আবার ফিরে আসে। আমার
এখন ওটাই বেশিরভাগ সময় খেয়ে নেয়।
অনেক লিখলাম
, প্রাণ ভরে মিন পিপল দের সমালোচনা করলাম। রোজই
নতুন নতুন খেলা শিখছি। নতুন
ভাবে শিখছি তাই এই লেখার শেষ নেই। কয়েক
মাস পরে আরো নতুন নতুন খেলার গল্প নিয়ে আবার লিখবো। আপাতত এখানেই থাক।
ভীষণ নস্টালজিক। ভাল লাগল।
ReplyDelete