Friday, October 20, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - বাবার সাথে একা (প্রথম পর্ব)



দরজাটার দিকে জুল জুল করে তাকিয়েছিলাম।  ধপাস করে দরজা বন্ধ করে পড়িমরি করে মা দৌড়ে পালালো।  অ্যাকশনটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।  একসাথে ইগ্নরেন্স এন্ড ইনসালট। আমি কি বেতাল নাকি, যে ঘাড়ে চেপে বসবো।  বাবার কাছে ছেড়ে রেখে দিয়ে মস্তি মারতে চলে গেলো।  আমি মাথা ঘুড়িয়ে দেখলাম , বাবা চকচকে দাঁত বার করে পেছনের পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াচ্ছে। আমি ছাগলছানার মতো ছটফট করতে লাগলাম।  এবার আমায় ধরবে।  ছুঁড়ে ছুঁড়ে নিয়ে খেলবে , ফেলবে , চটকাবে।  উফ , সে দৃশ্যগুলো কি নৃশংস।  ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।  বাট ওয়ান মিনিট। আমি কেন ভয় পাচ্ছি।  লোকে আমায় টেরোরিস্ট বলে , আর আমি ভয় পাবো ওই তুচ্ছ নিরীহ বাবাকে, যে মায়ের সামনে ম্যা - ম্যা করে।  নাঃ উঠে দাঁড়ালাম।  হাত দুটো বাড়িয়ে দিলাম , সোজা কোলে।  বাবা বাহন , আর এই দিয়েই শুরু হোক আমার আর বাবার সাতকাহন। 

ব্যাপারটা একদিনের নয়।  সাত সাত দিন মা আমাকে বাবার কাছে রোজ সকালে একা ছেড়ে চলে গেছিলো। বাবা ব্যাপারটা খুব একটা জটিল কিছু নয়। মা বেশ জটিল।  বুঝতেই পারিনা কি করবো , আর মা উল্টে কি করবে।  বাবা ব্যাপারটা জলের মতো সোজা, শুধু খেলবে।  কিন্তু এই সাত দিনে হিসাবটা পুরো পাল্টে দিলো বাবা।  ফ্রম নো টাইমার টু হোল টাইমার। 

ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল গোটা উইকেন্ড প্রচন্ড শরীর খারাপের পর।  সমস্যাটা সিম্পল, আমি হাগছিলাম।  বার বার, বহুবার , সাথে ছিল জ্বর আর ডাইপার রাশ।  সব মিলিয়ে আমি উল্টে পরে শুধুই ঘ্যান ঘ্যান করছিলাম।  এই অবস্থায়  ডে কেয়ারে ফেলে রেখে আসতে মা বাবার দুজনার মন মানছিল না।  হাও কিউট।  কিন্তু আবার বাবার কাছে সারা দিনের জন্যেও ছেড়ে যেতে মায়ের মন মানছিল না।  আবার বাবার আমার সাথে একা থাকতে মন মানছিল না।  সব মিলিয়ে মন কষাকষির একটা সিকোয়েন্স চলছিল যা শেষ হলো মায়ের প্রথম দিনের ইনসালটিং এস্কেপ এ। 

এক অজানা আশংকা আমার মনেও তখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিলো , আমার খাবারের কি হবে।  শুধু কি খাবার? মা তো আমার নার্স।  খাওয়া থেকে শুরু করে , ডাইপার চেঞ্জ , ন্যাপ টু স্লিপ , স্নান , ওষুধ, প্রপার এন্টারটেনমেন্ট  আরো কত কি।  সব তো মা ই করে।  বাবা তো ম্যাসকট।  শুধু খেলার সময় সামনে নাচানাচি করে।  সে কি আর পারবে আমার ফাই ফরমাশ খাটতে।  সবথেকে বড় সমস্যা ভোকাবুলারির।  ব্যাটা কিছুই বোঝে না আমার কথা।  সারাদিন আমার কি যে যাবে সেই নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেছিলাম। 

মা দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর খেয়াল পড়লো , আমার তো ব্রেকফাস্টই খাওয়া হয়নি।  আমার ব্রেকফাস্ট সিম্পল, ওট আর য়োগার্ট।  দেখলাম বাবা গুটি গুটি মেরে বাটিটা নিয়ে বসেছে টিভির সামনে।  ট্রাইং টু মক মায়ের বিহেভিয়ার।  টিভিটা চালিয়ে দিতেই আমি অন্য জগতে চলে যাই।  কোনো সেন্স থাকে না।  এই ট্রাঙ্কুলাইজারটা পেরেন্ট দের জন্য বেশ এফেকটিভ।  যদিও বাবার মতে এটা ব্যাড হ্যাবিট।  কিন্তু আজকে দেখলাম সুর সুর করে টিভি চালিয়ে আমার দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে।  সেম জেন্ডার বলে একটু করুণা হলো।  আমিও টুক টুক করে গিয়ে আমার ইসি চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম, চোখ রাখলাম টিভির দিকে।  ভেসে উঠলো , 'ইফ ইউ আর হ্যাপি - হ্যাপি -হ্যাপি ক্ল্যাপ ইওর হ্যান্ড।'

বেশ মশগুল হয়ে দেখছিলাম আর মুখে বাবা খাবার ঠুসে দিচ্ছিলো।  বিশেষ খেয়াল দিচ্ছিলাম না টেকনিকের ওপর।  কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো দেখি বমি উঠে আসছে।  য়োগার্টের ভেতরে থাকা একটা ব্লুবেরি গলায় আটকে গেছে।  এই শুরু হলো।  মেকানিক  হাত দিয়ে কি আর কাঁথা বোনা যায়।  কোনো রকমে ম্যানেজ করে শুধু ব্লুবেরিটা বার করে দিলাম।  কিন্তু গাধা বাবা বুঝলো না প্রব্লেমটা।  আবার একটা ব্লুবেরি ভরা চামচ দিলো ঢুকিয়ে।  আবার সেই এক জিনিস।  আমি যে বাবাকে নভিসনেস এর জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি সেটা বোঝার ক্ষমতা বাবার নেই।  বাবা ভাবছে আমি চামচের বাকি ওট - দই চুষে শুধু ব্লুবেরিটা ফেলে দিচ্ছি।  তৃতীয় বার যখন সেম ভুল করলো, আমি বললাম 'না' , ব্যাপারটা চেক করতে হবে।  দিলাম সব উল্টে বার করে।  সারা কার্পেট সাদা।  বাবার মুখ শুকনো। 

কিন্তু ব্যাটা নেহাত নাছোরবান্দা।  আমি ভেবেছিলাম কাঁচুমাঁচু হয়ে ব্রেকফাস্টটা ছেড়ে দেবে।  কিন্ত না, আমার বমি লাগা জামা কাপড় ছাড়িয়ে, আরেক বাটি ওট দই মেখে আবার নিয়ে বসলো।  উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখে নিলাম যে আবার আবার সেই ফলওয়ালা দই মেখেছে কিনা।  না এবার ঠিক আছে।  দই যদিও একই কিন্তু এবার ফল গুলো ফেলে এসেছে।  দেখলে তো, দরকারে মানুষ ঠিক শিখে যায়, শুধু একটা রাম ঠ্যালা ঠেলতে হয়। ব্যাপারটা যখন সেটেল হয়ে গেছে তখন আমিও টুক টুক করে পুরো খাবারটা খেয়ে নিলাম। 

বাবার একটা বড্ড বাজে অভ্যাস হলো গানের ঠিক মাঝখানে টিভিটা বন্ধ করে দেওয়া।  যেই শেষ চামচটা মুখে ঢুকেছে ধপ করে টিভিটা দেয় বন্ধ করে।  এ কেমন ধারা অসভ্যতা।  আমি যদি হঠাৎ করে খাওয়া বন্ধ করে দি তখন কেমন লাগবে।  মানছি আমার বয়সে টিভি দেখা খারাপ।  কিন্তু শুধু এই টিভির জন্যেই তো তোমরা বিনা নাচন কোদনে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছ।  একবার গিয়ে দেখে এসো যাদের বাড়িতে টিভি নেই।  বাবা মা দের কুচিপুড়ি পর্যন্ত শিখতে হয় খাওয়ানোর জন্য।  একটু তো লজ্জা কর। 

টিভি বন্ধ হতেই আমার নেক্সট কাজ হচ্ছে কিছুক্ষন খেলা।  আমার যাবতীয় জিনিস নিয়ে বাবাকে ডিসটার্ব না করে আপনমনে খেলতে থাকলাম, যতক্ষণ না সাড়ে বারোটা বাজে।  এর মধ্যে শুধু একবার ডাইপার পাল্টে দিয়েছে বাবা।  ডাইপার পাল্টানোটা বাবার কাছে নতুন কিছু নয়।  তাই প্রফিসিয়েন্সি বেশ ভালোই।  কিন্তু অন্য সময় মা সব কিছু হাতের কাছে দিয়ে যায়।  আর বাবা রাজার মতো বসে বসে অপারেশন করে।  সেই সপ্তাহেই আরেকটা দিনে এই ডাইপার পাল্টাতেও বাবা দিলো ছড়িয়ে। 

সেদিন সকালবেলা থেকে আবার বেশ কিছুবার পটি হয়েছে। বার বার ডাইপার ছাড়াতে ছাড়াতে বাবা বেশ নাজেহাল।  আর যেহেতু বাবা ওয়ার্ক ফর্ম হোম করছে।  তাই আমাকে সরিয়ে সরিয়ে কাজ করাতে বাবার অবস্থা বেশ খারাপ। সে গল্প আলাদা করে বলবো।  সেদিন বাবা ফোন করছিলো, মনে হয় ঠাম্মার সাথে কথা বলছিলো।  হঠাৎ বুঝতে পারলো আমি আবার পটি করেছি।  আমার আবার পটিওয়ালা ডাইপার বেশিক্ষন আমার চামড়া নিতে পারেনা।  লাল হয়ে যায়।  তাই কানে ফোন গুঁজেই আমাকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেলো, ডাইপার চেঞ্জ করতে।  ঝড়ের বেগে ডাইপার খুলে দিয়েই বাবার মাথায় এলো পুঁছিয়ে দেওয়ার কাগজ তো শেষ।  আগের বারেই তো শেষ কাগজটা ইউস করে নিয়েছে। আমার পা তখন ওপরে বাবার দু হাতের মধ্যে ঝুলছে।  পটি তখনও লেগে আছে।  ষ্টকে থাকা কাগজগুলো বেশ কিছুটা দূরে।  আমি ব্যাপারটাকে আরো জটিল করে তুললাম পা ছুঁড়ে।  ওরকম ভাবে পা তুলে শুয়ে থাকতে কার ভালো লাগে।  শেষে বাবা সবসুদ্ধ আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বেসিনে।  একটু হলেই চাদরে নাহলে পটি লেগে যেত।  সেদিনের পর থেকে বাবা এখন অনেক বেশি গুছোনো।  আমার ডায়পার ছাড়ানোর জায়গার পাশে আগে সব কিছু গুছিয়ে তারপর যজ্ঞের আগুন জ্বালায়। 

তা সেদিন যখন ব্রেকফাস্ট করে , ডাইপার পাল্টাতে পাল্টাতে সোয়া বারোটা বেজে গেলো তখন আমার মিড ডে ন্যাপের সময় হয়ে গেছে।  এই সময়টা আমার কিছুই ভালো লাগে না।  দুধোলীন দুধোলীন মন করে।  দুধোলীন কি? এমা , এতদিন ডায়েরি লিখছি দুধোলীন কি সেটা তো বলা হয়নি।  গাড়ি যেরকম গ্যাসোলিনে চলে, আমি সেরকম দুধোলীনে চলি।  এই নামটা মা দিয়েছে।  বেশ শুনতে লাগছিলো তাই এডপ্ট করে নিয়েছি।  ঘুমের আগে একটু দুধ না খেলে আমার চলে না।  সেদিন কিন্তু বাবা একটা কান্ড করলো।  বোতলটা আমি চিনি।  দুধের খিদেতে তখন খিটখিটে হয়ে আছি।  দুধের বোতল বাড়িয়ে দিতে এমন টান দিয়েছি যে নাকে মুখে চোখে ঢুকে গেলো।  কিন্তু ব্যাপারটা কি ? এতো দুধ নয়।  বোতলটা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম।  দুধের মতোই তো সাদা।  নিশ্চই খারাপ দুধ।  আবার বাবা ছড়িয়েছে।  আমি থুহ করে কিছু সরিয়ে দিলে আমি দেখেছি মা বা বাবা প্রথমে সেটা খেয়ে দেখে।  আর তারপরেই খাবার পাল্টে যায়।  এবারও বাবা খেয়ে দেখলো।  কিন্তু কিছু পরিবর্তন না করেই, আবার ঠেসে ধরলো। আর বলতে লাগলো , 'খেয়ে না , লস্যি তো।'

লস্যি ? লস্যি আবার কি ? কিন্তু পালানোর উপায় নেই।  বাবা জোর করে ঠেসে ধরেছে মুখে।  কিছুক্ষন খারাপ লাগলেও ব্যাপারটা বেশ অন্য ধরণের।  বেশ টক মিষ্টি একটা স্বাদ।  মা নেই বলে বাবা দুধের বদলে এসব কি আমায় খাওয়াতে শুরু করলো জানিনা বাবা।  যেহেতু খেতে ভালো সেহেতু খেয়ে নিলাম।  কিন্তু পরের দিনগুলোতেও এটা কন্টিনিউ হতে থাকলো।  পরে বুঝলাম  আমার পেট ঠিক করার জন্য এই দই গোলা  খাওয়াচ্ছে।  কোথায় ওষুধ দেবে তা নয় , যত সব উটকো টোটকা। 

যাহোক, ঘুমটা বেশ ভালোই হলো।  ঘুম থেকে উঠে আবার এক প্রস্থ ডাইপার চেঞ্জ করে আমার তখন খেলার সময়।  মা যখন ঘরে আমায় একলা নিয়ে থাকে তখন ঘরের দরজা জানলা সব কিছু বন্ধ থাকে।  না যেতে পারি বেডরুমে , না যেতে পারি আমার ডাইপার চেঞ্জের ঘরটাতে।  এমনকি কিচেনের সামনেও কিছু একটা বসিয়ে দিয়ে আমাকে মা এমন ভাবে হলঘরে বসিয়ে রাখে যে নিজেকে নিজের ঘরেই বন্দি বলে মনে হয়।  কিন্তু থাঙ্কস টু বাবা , বাবার ওসব কিছু ঝামেলা নেই।  চিচিং ফাঁকের মতো সমস্ত ঘর আমার জন্যে খুলে রেখে দিয়েছে।  তাই আমার খেলার ক্ষেত্র প্রচুর। 

আমার উৎসাহে এবার দেখি বাবাও উৎসাহিত।  যদিও সেটাও আমি জোর করেই আদায় করেছি।  বাবা ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিল।  বাবার কিবোর্ডে আবার আলো জ্বলে।  আমার কেন জানিনা মনে হয় , যত জোরে থাবড়া মারবো , তত উজ্বল আলো  জ্বলবে।  দিলাম এক থাবড়া , বাবা ল্যাপটপ বন্ধ করে আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো।  আমি তখন আমার খেলা শুরু করলাম।  হাতের কাছে জলের বোতলটা ছিল।  এটার নাম আবার সিপি কাপ।  চুষতে হয়নাচেবাতে হয়। তাহলে জল এসে মুখে ঢোকে।  কিন্তু ওটাকেই যদি আবার কারো ওপরে চেপে ধরা হয় তাহলে আবার জল পরে। 

আমার বেশ ভালো লাগে যখন রিমোটের ওপর , বা মোবাইলের ওপর বা ল্যাপটপের ওপর ওই জলের বিন্দু বিন্দু পড়তে থাকে।  আমি সেটা দিয়েই খেলা শুরু করলাম।  রিমোটের ওপর করতে গিয়েছি বাবা সোফা থেকে হালুম বলে আমার ওপর লাফিয়ে পড়লো।  আমি ওটা রেখে সোজা বেডরুমে ঠাকুরের কাছে।  ওখানে আমার বেশ প্রিয় খেলা হলো ঠাকুরগুলোকে শুইয়ে দেওয়া।  প্রথমে শুইয়ে দিলাম।  দেখি বাবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।  মা থাকলে ঘ্যাউ করে তেড়ে আসতো।  বাবা দেখলাম যখন বাধা দিলো না , তখন ঠাকুরের সামনে রাখা ফুলগুলোকে এক এক করে জড়ো করলাম।  তারপর ওই যে একটা জিনিস পোড়ায় , যেটা থেকে কালো কালো গুঁড়ো গুঁড়ো পড়তে থাকে, খুব সুন্দর গন্ধ, হাতে লেগে যায়।  সেটাই একটু চেটে দেখতে গেলাম।  দেখি বাবা তুলে নিয়ে সোজা বেসিনে।  এক হাত যখন ধোয়াচ্ছে তখন আমার আরেক হাত খালি।  সেটা দিয়েই নানা ক্রিম ট্রিম সব ছুঁড়ে ছুড়ে ডাস্টবিনে ফেলতে লাগলাম।  চিরুনিটা ছুঁড়তেই সোজা কমোটের জলে।  বাবার বিশেষ দোলচাল নেই।  আমি এটা মায়ের সাথেও করেছি।  মা যদি আমার ক্যাচ ধরতে না পারে , তাহলে একটা চিমটে দিয়ে সেটা কমোটের জল থেকে তুলে রাখে।  বাবা ওসব চিমটে টিমটের  ধার ধারে না।  হাত ডুবিয়ে , চিরুনিটা না ধুয়ে রেখে দিলো। 

তবে ততক্ষনে আমায় ছেড়ে দিয়েছে  . আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে বেডরুম ক্রস করে সোজা রান্নাঘরে।  মা সমস্ত জিনিসপত্র আমার হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে রাখে। কিন্তু বুঝলাম বাবা নিজের জন্য ব্রেকফাস্ট  আর লাঞ্চ করার দৌলতে আমার জন্য রান্নাঘরটা বিশাল প্লেগ্রাউন্ড বানিয়ে দিয়েছে।  সমস্ত কাবার্ডগুলো যেগুলো তার জড়িয়ে বন্ধ থাকে, সে  সব খোলা।  কি মজা।  তখন আমি কি করবো আর কি না করবো এই ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম।  সব ড্রয়ার খুলে দিলাম , একটা কাবার্ডের মধ্যে থেকে হাতা খুন্তি কড়াই আর যা যা ছিল সব টেনে টেনে বার করতে লাগলাম। ঝনাৎ করে যখন কড়াইটা ফেলে দিলাম বাবা চমকে উঠে বুঝতে পারলো এবার বাবাকে গতর নড়াতে হবে।  এক এক করে সমস্ত কাবার্ড বন্ধ করতে লাগলো।  সে করুক।  বাবা এক দিক থেকে বন্ধ করে যাচ্ছে।  কিন্তু আমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে এখনো অনেক দেরি।  সেই ফাঁকে আমি ঢুকে গেছি আমাদের লন্ড্রি রুমে।  সেখানে আবার গারবেজ থাকে। 

নোংরাকে যে লোকে নোংরা কেন বলে সেটা বুঝিনা বাপু।  ওটাই তো স্বর্গ।  সব কিছুর ফ্লেভার পাওয়া যায়।  তাও আমার হাতে ধরার মতো।  সমস্ত ফলের , সবজির খোসা। গোটা ফল তো আর ধরা যায়না হাতে।  কিন্তু খোসা দিব্যি ছোঁড়া যায়।  গারবেজ ক্যানটা উল্টে দিতে বেশ কিছু জিনিস ছড়িয়ে গেলো লন্ড্রি রুমে।  বাবাকে দৌড়ে আসতে দেখে আমি ডাস্টবিন ছেড়ে এবার ড্রায়ারের দরজা ধরে এক টান মারলাম।  ওমা , এটাও তো খুলে গেলো আর আর তার মধ্যে আমার স্বর্গ।  মা জামা কাপড় শুকোতে দিয়ে চলে গেছে।  শুকনো কাপড় নিয়ে খেলতে আমার যে কি ভালো লাগে না।  দু হাতে করে ধরলাম আর ছুড়ঁলাম।  একবার পেছনে, একবার এপাশে , একবার ওপাশে।  বাবা লোপালুপি করতে করতে বেশ কিছু কাপড় বাঁচিয়ে নিলো বটে।  কিন্তু আমি বেশ কিছু ততক্ষনে ফেলে দিয়েছি উল্টানো ডাস্টবিনের মধ্যে। 

বাবা কাপড়গুলো যতক্ষণে ড্রয়ারে আবার ঢোকাচ্ছে আমি ব্যাক টু কিচেনে।  সেখানে দেখি বাবা একটা কাবার্ড তখনও বন্ধ করেনি তার দিয়ে।  ওর মধ্যে আবার মা আলু, আদা পিঁয়াজ রাখে।  পিয়াজ ইস হাইলি এট্রাক্টিভ।  শেপটা আর টেক্সচারটা অসাধারণ।  তুলে ছুঁড়ে দিলে অদ্ভুত ভাবে গড়াতে থাকে। আমায় তখন পায় কে।  সব পিঁয়াজ দিলাম এক সাথে ছড়িয়ে।  বাবা তুলে নিয়ে গিয়ে আমায় বসিয়ে দিলো আমার খাঁচার মধ্যে।  

-----বাকিটা পরের এপিসোডে ক্রমশ প্রকাশ্য  

আধ্যানের ডায়েরি

No comments:

Post a Comment