জোর যার
মুলুক তার - বাবার কাজকর্ম অনেকটা এরকমই। যা
নিজে ঠিক মনে করবে বাবা ঠিক তাই করার চেষ্টা করে , গায়ের জোরে। কিন্তু মা টেকনিক্যালি উইনার অলওয়েজ। ঠিক কায়দা করে , বুদ্ধির জোরে মা যা
চায় তাই করিয়ে নেয় বাবাকে দিয়ে , আর আমি ইন্সপায়ার্ড হই।
লেপ আর
খাটের শেয়ার নিয়ে মা বাবার ঝগড়া চিরন্তন। আগে নিজেই চিল্লাতো। এখন ট্রান্সফার করে দিয়েছে আমার আর
বাবার মধ্যে। বাবার
নাকি ঘুম কম। ঘুমোতেই
পারে না। অথচ
খাটের সিংহভাগ বাবার চাই। মানছি
বাপু , তোমার বিশাল বপু। কিন্ত
আই অলসো নিড মাই প্লে গ্রাউন্ড। হ্যাঁ আমি খেলি। রাতে ঘুমানোর সময়ও খেলি। আমার সাইজ ছোট কিন্তু আমার প্লে এরিয়া
বড় চাই। এটাই স্বাভাবিক নয় কি ? তোমাদের জন্য
মাঠ আছে , অফিস আছে , দোকান আছে । আমি
গরমে বেরোলে বলো রোদে পুড়ে যাবো , শীতে বেরোলে বলো ঠান্ডায় জমে যাবো আর স্প্রিঙে
বেরোলে বলো পোলেন ধরবে। আমি
যাই কোথায়? তাই খাটই
আমার প্লে গ্রাউন্ড আর তার দখল আমি কিছুতেই ছাড়বো না।
প্রথমে
খাটের সিস্টেমটা বলে নি , তাতে বুঝতে সুবিধা হবে। বাবা শোয় দেয়ালে পিঠ দিয়ে, তারপর মা ,
তারপর আমি খাটের ধারে। এটা
মা শুরু করেনি। বাবাই
করে দিয়ে গেছিলো যখন আমি দু মাসের। বাবার
লজিক ছিল পুরুষের বাঁদিকে মেয়েরা থাকবে। কারণ
নাকি বাঁ হাতে মা কে ধরে বাবা ডান হাত দিয়ে যুদ্ধ করবে। যে কেউ আমার থলথলে বাবাকে দেখে আর
বাবার এই রণহুঙ্কার শুনে হেসে কুটিপাটি যাবে। কিন্তু
মা যেহেতু মা , তাই কোনো রকম প্রশ্ন তোলেনি।
আমার
ধারে শোয়া নিয়ে বেশ সমস্যা ছিল চিরকাল। খেলতে
খেলতে মাঝে মাঝেই আমি বাউন্ডারির বাইরে চলে যেতাম , হুইচ ইস টেকনিক্যালি
এক্সেপ্টেবল ইন গেম। কিন্তু
যেহেতু মাঠের বাইরে গর্ত , তাই আমি ধপাস ধপাস পরে যেতাম। মা ব্যাপারটা ম্যানেজ
করেছিল সেই গর্ত বুঝিয়ে। আমি
এখন পড়লে খাটের পাশে রাখা আরেক ম্যাট্ট্রেস এর ওপর পড়ি। মা ইস ফ্যাবুলাস।
বাবা যখন
দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ফিরে এলো, প্রথমেই সব কিছুর দখল নেওয়ার চেষ্টা করলো। আর প্রোমোটারের মতো আমার খেলার মাঠ
তার প্রথম টার্গেট। মাঝে
মাঝেই দেখতাম রাতে মা কে টপকে , আমাকে টপকে বাবা এসে গেছে ধারে। আমি মাঝখানে। আমার লেপ নেওয়ার অভ্যেস নেই। আমি একটু
বেশিই হট। কিন্ত
যেহেতু মা ওদিকে আর বাবা এদিকে আর লেপ একটাই তাই আমাকে বাধ্য হয়ে তাঁবুর মধ্যে
ঢুকতে হতো। কিন্ত ইট
ইস রিয়েলি হট। দু
চারদিন গলদঘর্ম হয়ে যখন রাতে ঘুম ভেঙে গেলো। তখন
আমি এর প্রতিকার করতে , মা কে টপকে দেওয়ালের দিকে চলে যেতে লাগলাম।
কিন্তু
দেওয়ালের দিকে কি আর ঘুম হয় নাকি। আমার
তো একটা ডেসিগনেটেড জায়গা আছে। তার
ওপর দেওয়ালটা বেশিই ঠান্ডা হয়ে যায়। ছুঁলেই
কনকন করে ওঠে সারা শরীর। সারা
রাত ছটফট ছটফট করতে থাকি। মা
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রেগেমেগে একদিন বলেই ফেলতে বাবাও ফায়ার , “মানুষের আবার
জায়গা কি ? ট্রান্সফারেবল জবে এসব ন্যাকামো বরদাস্ত করবে না . এসবে লাই দিয়ো না . ” বাবার কথা ভুল
নয়। কিন্তু ট্রান্সফার হলেও খাট তো আর
বদলে যাচ্ছে না রে বাবা। মা
চুপ করে গেলেও আমি যুক্তিটা মোটেও মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু বাবা যখন কিছুতেই নিজের কথা
থেকে নড়বে না। তখন আমিও
আমার নতুন টেকনিক এপ্লাই করলাম। বাবা
যেই এদিকে হাজির , আমিও মা কে টপকে ওদিকে। তারপর
ডাইপার একটু ফাঁক করে দিতাম খাটে মুতে। মা
আবার চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে আমাকে ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন আর বাবা নিচের
ম্যাট্ট্রেসে।
বাবা হার
স্বীকার করে নিয়েছিল। ওদিকেই শুচ্ছিলো। কিন্তু রোজই শোয়া
নিয়ে নানা রকম ঝগড়া চালু ছিল। যেহেতু
আমাকে দোষ দিতে পারবে না , তাই মায়ের জিম না করা নিয়ে রোজ রাতে ঝামেলা হচ্ছিলো। একদিন দুধ খাওয়া শেষ হতে , মা যখন এসে
হাজির হলো বাবা বললো , ‘আজকে থেকে আমি মাঝখানে শোবো .’ মা এস ইউসুয়াল “ও কে ” বলে
ধারে শুয়ে পড়লো। আর
আমি পড়লাম ফাঁপরে। লোকেশন
অফ মা ইস মোর ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর দ্যান শেয়ার পোরশন অফ খাট। বাবার বোঁটকা গন্ধওয়ালা গায়ে মোটেও
শুতে ভালো লাগে না। মা
তো ঘুম পরী। প্লাস
বাবার যেরকম বৌ লাগে , আই অলসো নিড আ ওম্যান। আমার
মা লাগবেই। আমিও
সারা রাত ঘুম ত্যাগ করে দিলাম। কখনো
ভল্ট কখনো সমারসল্ট। উদ্যেশ্য একটাই , বাবাকে টপকে মায়ের কাছে যাওয়া।
আল্টিমেটলি
কি হতে লাগলো , খাটের অর্ধেক , অর্ধেক সময় খালি থেকে যেতে লাগলো। আর দেওয়ালের দিকে শুরু হলো
গোঁতাগুঁতি। বাবা
রাতে পাথরে মতো ঘুমায়। আর
মা দেওয়ালে ঠেসে যায়। আমি
মাঝখানে হাঁসফাঁস করতে থাকি। খুব
কষ্ট হচ্ছিলো, কিন্তু নিজের গ্রাউন্ড আমি ছাড়বো না। একবার পিছু হটলেই আমাকে নিয়ে এরা যা
নয় তা করবে। আমি শুরু
করলাম , প্রথমে হরাইজন্টাল সমারসল্ট - বাবাকে টপকে গেলাম , আর তারপর ভার্টিকাল
ভল্ট দিয়ে মা বাবার পায়ের কাছে গড়াগড়ি। এই
ভাবে আমি লেপকে ডজ করতে থাকলাম। একদিন
মা আঁতকে উঠে রাতে রীতিমতো বাবার ওপর চ্যাঁচালো। আর বাবা আবার সুরসুর করে দেয়ালের
দিকে চলে যেতে লাগলো।
বালিশ
নিয়েও বাবার সমস্যা। আমার
বালিশ বাবার মতোই বড় কিন্তু পাতলা আর নরম। ঠিক
আমার জন্যই বানানো। কিন্তু
রোজ রাতে বাবা এসে সেটা নিয়ে শুয়ে পরে। আর
মা প্রত্যেক দিন বালিশ পাল্টায়। সেই একই তর্কবিতর্ক , বাবার যুক্তি বালিশ কখনো
পার্সোনাল হয় না। পাশবালিশ
হয়। কিন্তু মা কিছুতেই মেনে নেবে না। ঠাম্মা একটা সর্ষের বালিশ করে দিয়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু সে তো ইতিহাস। এখন আমি বড় আর আমার বড় নরম বালিশ
লাগবে। বাবা যেদিন আবিষ্কার করলো আমার
বালিশের ভেতর মা ঠাকুরের ফুল রেখে দেয় , তখন বাবা চুপ করলো। মায়ের পুজো আর ঠাকুর নিয়ে বাবা বিশেষ
কিছু বলে না। বাবার
যুক্তি মায়ের বিশ্বাসের কাছে ফেল মেরে যায়।
কিন্তু
হঠাৎ একদিন রাতে ধুন্দুমার কান্ড। বাবা
একটা ফিতে নিয়ে আর ক্রেয়ন নিয়ে খাটটা মেপে তিন সমান ভাবে ভাগ করে দাগ দিচ্ছে। বাবার নিজের বাউন্ডারি , আর মা ও আমার
বাকিটা। মুখে বিড়বিড় করছে , “ ওই চারানা কেউ
একটাকা ধরেছি। আমার
জায়গায় ঢুকবে না।” হোয়াট
ইস চারানা। ওহো কোয়ার্টার কে বলছে। কি
নিরীহ অসহায় লাগছিলো বাবাকে। আমার জিনিস যখন দেখতে পাই কিন্তু ধরতে পারিনা। তখন ঠিক যেরকম করি বাবার আস্ফালন ঠিক
সেরকম লাগছিলো। হেব্বি
মজাদার আর আমার থেকেও বেশি কিউট টেডি লাগছিলো বাবাকে।
বাবা
লাইন টানলো বটে। কিন্তু
লাইন কাদের থাকে জানোতো। আমি
সিংহ আমি ওসবে বিশেষ পাত্তা টাত্তা দিলাম না। মা
আমার সাথে। বাবার
লাইন বাবাই রোজ ক্রস করতে লাগলো।
আর মা রোজ সকালে সে রাতের উইনার ঘোষণা করতে লাগলো। আর আমি, হে হে , আবার ঝগড়াটা বাবা মার মধ্যে বাইপাস
করে , পুরো মাঠের দখল নিয়ে , বিন্দাস ঘুমোতে লাগলাম।
No comments:
Post a Comment