সর্দি জিনিসটা বেশ ভোগাচ্ছে। মাঝে মাঝেই কথা নেই বার্তা নেই এসে হাজির। জিনিসটা কি জিনিস আগে বুঝতাম না। এখন খেয়ে দেখে বুঝেছি মা যে নুনজল ভেতরে ঢোকায় সেটাই
সর্দি হয়ে বেরিয়ে আসে নাক দিয়ে। কিন্তু
বেরোলে বেশ লাগে। বেশ মাথা
হালকা হয়ে যায়। কিন্তু
যখন বেরোয় না তখন আমার প্রাণ অষ্টাগত। কে যে বার
করেছে এই রোগটা কে জানে। আমি অনেক
বার ভুগে এইটুকু বার করেছি যে কিছুতেই একে আটকানো যাবে না। এ আসবেই। যেকোনো
কারণে সে আসবে।
আগে যখন এক নাগাড়ে সর্দি হতো তখন মা বাবার মধ্যে ঝগড়া
হতো। বাবা তো ডিয়ার ফ্রেন্ড তাই মাঝে মাঝেই তুলে নিয়ে বলতো
চল তোকে বাইরে ঘুরিয়ে আনি। বাইরে
গেলেই কত জায়গা। পার্কিং
লটে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ি যায়
, গাড়ি আসে। কত রং তাদের আর তাদের চাকা গুলোর গন্ধ কি সুন্দর। যে গাড়ি এসে দাঁড়ায় সে গাড়ির চাকায় দাঁত বসাতে খুব
ইচ্ছা করে। কিন্তু বাবা পার্কিং লটে কিছুতেই চোখহারা করে না।
ইচ্ছা করে ছুটে যাই লুটে নিয়ে চলে আসি। কিন্তু
ছুটে যাই বটে , ধরিও বটে। কিন্তু
হাতে আসে শুধু ধুলো। তাইই একটু
চেটে নিই। বাবা আমাদের গাড়ি থেকে জলের বোতল বার করে হাত ধুইয়ে
দেয় , বেশির ভাগ সময় হাত ধোয়ানোর চক্করে জামাও যায় ভিজে আর মা পেয়ে যায় কারণ।
মায়ের ধারণা আমাকে টেডি করে রাখলে নাকি আমার সর্দি
লাগবে না। করেও রাখতো কিন্তু আমি তো বলী, দুর্বলের যেমন ঘুম হয়
আমার তেমন ঘাম। ঘেমে নেয়ে
কাপড় ভিজে যায়। তখন বাবা
খুঁজে পায় সর্দি লাগার কারণ।
ডে কেয়ারে আমাদের মাঝে মাঝেই ওয়াটার গেম হয়। সবাইকে নিয়ে গিয়ে একটা জলের ফোয়ারার সামনে ছেড়ে আসে। আর আমরা জল নিয়ে খেলতে থাকি। কি মজা যে হয়, কি আর বলবো। সবাই মিলে এ ওর গায়ে জল ছুঁড়ে মারি আর গা ভেজাই। আমি আবার সবকিছুতেই একটু বেশি এক্সপেরিমেন্টাল। আমার এক্সপেরিমেন্টের সাবজেক্টের অভাবের জন্য নিজেই
নিজের গিনিপিগ। আমি নিজেই
নিজেকে ভেজাই। মা সবসময় আগে থেকে এই ওয়াটার স্পোর্টস এর খবর জানতে
পারেনা, ধরতে পারে যখন ভেজা জুতো নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরি। সপসপে জুতো খুলিয়ে মা বাবা দুজনেই কারণ খুঁজে পায়
সর্দি লাগার।
বাবার লাগে গরম আর মায়ের লাগে ঠান্ডা। বাবা ঠান্ডাতেও ফ্যান চালিয়ে শোবে আর মা আমাকে গরমের
মধ্যেও লেপচাপা দেবে। হিটার
চালিয়ে ঘর আগুন করে রাখে মা। আর বাবাও
ফ্যান চালিয়ে কাঁপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মাঝখান
থেকে আমি কাটা পড়ি। আমি তো
হট। তাই আমি ঘামি খুব। কিন্তু মা
চায় আমি লেপের তলায় থাকি। কিছুক্ষন থাকি , ভিজে চুপচুপ হয়ে হাপুচুপু খেয়ে লেপ থেকে
বেরিয়ে এসে ঠান্ডা ফ্যানের হাওয়ায় ভিজে গা এলিয়ে কনকনে ঠান্ডা হয়ে যাই কিছুক্ষনের
মধ্যে। ব্যাস পরের দিন আমার সর্দি আর বাড়ি কুরুক্ষেত্র।
এরকম হাজার হাজার কারণ আছে আমার ঠান্ডা লাগার। মাঝে মাঝে দুজনেই বলে ওঠে , “শেষমেশ ডাস্ট এলার্জি
হলো নাকি .” এই ডাস্ট এলার্জির চক্করে মা কার্পেট ঘষে ঘষে সুতো
তুলে দিচ্ছে। কিন্তু আমার সর্দি আর সারছে না। কিছুদিন অন্তর অন্তরই
ডাক্তারের কাছে ছুটছি আর ডাক্তার বলছে , “নো মোর মাঙ্কি জাম্পিং অন দা বেড. ” আই
মিন , আর জলে খেলা নয়। শুধু নাকে
জল দাও আর স্টিম খাওয়াও।
এই স্টিম খাওয়ানোটা এক অদ্ভুত ব্যাপার। প্রথম দিন বুঝতেই পারিনি ব্যাপারটা কি হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। আমার আবার বাথরুমটা বেশ খেলার জায়গা। আগেই বলেছি কমোটে জিনিস ফেলতে আমার বেশ লাগে। ফ্লাশ
করতে করতে তো আমার তুরীয় দশা চলে আসে। ঘোর লেগে
যায়। কিন্তু প্রথম যে দিন স্টিম খেলাম কেসটা একদম অন্যরকম
হলো। প্রথমেই মা বাথটবের শাওয়ারটা চালিয়ে
দিলো। আর পর্দা দিলো টেনে। ওদিকে
বাবা আমায় কোলে নিয়েই দরজা দিলো বন্ধ করে। আমি
গুবলেট পাকিয়ে গেলাম। শাওয়ার
চলছে অথচ স্নান করছি না। দরজা বন্ধ করে হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে আছি। একিরে বাবা। তার থেকে
ঘরে গিয়ে খেলা করি। না , দেখি
বাবা মা চুপ করে কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে
মা আবার বেসিনের কল দিলো চালিয়ে। গরম জল বেরোচ্ছে আর আমরা হাঁ করে দেখছি। কিছুক্ষনের মধ্যে দেখি বাথটাবের ওখান থেকে ভোগলে
ভোগলে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আর এদিকে
বেসিনের থেকেও তাই। আমি গেলাম
ঘাবড়ে। ধীরে ধীরে ধোঁয়ায় ঘর ভরে গেলো। আগে একবার এরকম হয়েছিল। মা রান্নাঘরে এরকম কিছু একটা করতে গিয়ে সারা ঘর
ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিয়েছিলো। আর আমি
অনেক্ষন ধরে কেসেছিলাম। মনে আছে
আমার নিঃস্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। এবারও
তেমন কিছু হতে চলেছে ভেবে বাবাকে বেশ কিছুক্ষন ধরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য
বোঝাচ্ছিলাম।
কিন্ত কিছুক্ষন পর দেখি কেসটা অন্য। যত ধোঁয়া ভরতে লাগলো তত আমার নাক খুলতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর দেখি দুটো নাক দিয়েই নিঃস্বাস নিতে
পারছি। আর যে সর্দিগুলো নাকে গুটলি মেরে ছিল সেটা নরম হয়ে
বেরিয়ে আসতে লাগলো। কিন্ত একি ? আয়নায় তো আর আমাকে দেখতে পারছি না। কেমন একটা ফ্যাকাসে মতো রং হয়ে গেছে আয়নার। ওদিকে আমি ঘেমে যেতে আরম্ভ করলাম। বাবা হঠাৎ হাত দিয়ে আয়নার ওপর হাত বোলাতেই আমার কাঁচুমাচু
মুখ আয়নার মধ্যে থেকে দেখা যেতে লাগলো। আমিও করবো , কিন্তু নিচেই গরম জল। বাবা এবার আমায় নিয়ে বাথটবের পর্দা খুলে শাওয়ার বন্ধ
করে ঢুকে পড়লো বাথটাবের মধ্যে। কি
স্বাগতিক গরম এই জায়গাটা। আমার
চামড়া লাল হয়ে গেলো। নাক থেকে
একটা ঘাম টপ করে মুখে এসে পড়লো। মায়ের
দিকে তাকিয়ে বললাম ছেড়ে দে মা এবার। কিন্তু
মাও তো “আমার লালু “ বলে গল্ টিপে দিলো। গা জ্বলে
গেলো আমার এই আদিখ্যেতা দেখে।
ধীরে ধীরে সব ঠান্ডা হয়ে গেলো। আমি তততক্ষনে লাল ঘেমো
বাঁদর। মাঝে মাঝেই হাই তুলছি। যে বাবা
এতক্ষন বলছিল হাঁ করে স্টিম খা। সেই বাবাও
ভিজে জবজবে। ঘাম এক্সচেঞ্জ করছি আমি আর বাবা। একটা তোয়ালে দিয়ে
মুড়িয়ে আমায় বাইরে নিয়ে আসা হলো। আমি সেদিন প্রমিস করেছিলাম আর যাবোনা কোনোদিনও। কিন্ত এই ঘটনা দিনের পর দিন ঘটতে থাকলো। আর আমি একই ভাবে সহ্য করে যেতে লাগলাম। কিন্ত আজও বুঝতে পারিনা কেন এই অত্যাচার।
No comments:
Post a Comment