নার্সিসিস্ট। এই ওয়ার্ডটা শুনে শুনে কান গেছে পচে। কার্টেসি বাবা। নতুন কোনো শব্দ শুনলেই গিনিপিগ আমি।
একে ইংলিশ বাংলা নিয়ে সমস্যা, তার ওপর যদি এধরণের দাঁত ভাঙা শব্দের মানে বার করতে
হয় তাহলেই হলো। কিন্তু
বার করলাম। যারা নিজেরা নিজের ছবির প্রেমে পরে। এটাকে আবার বলেছে ডিসঅর্ডার। কিন্তু আমার তো কোনো দিক থেকে মনে হয়
না ডিসর্ডার। হ্যাঁ, আমি আমার ফেভারিট বটে। তাতে
কার কিসে আপত্তি।
আমি আমার মায়ের বেস্ট ক্রিয়েশান। আমি জলি , নটি , শার্প , হ্যান্ডসাম
এন্ড কিউট। এই
উপমাগুলো আমার দেওয়া নয়। অল
ওয়ের শাওয়ার্ড অন মি। আর
সেটাই তো আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে যে আমি বেস্ট। বেস্ট
অফ দা বেস্ট। এখন যদি
আমি নিজেকে খারাপ মনে করি তাহলে চলবে কি করে। আমি
জানি আমি দারুন, হেব্বি। নিজেকে
নিজে দেখেছি অনেক পরে। লোকেদের
চোখ থেকে দেখে বলছি। আমি
যদি এডোরেবল বা আদরেবল না হতাম তাহলে তোমরা সবাই আমাকে চটকাতে চাইতে না। কেউ আমার ডায়েরী পড়তে না। যেহেতু আমি সবথেকে সুন্দর তাই এসব
ঘটছে। তাই নয় কি।
ব্যাপারটা আমি ফিল করতাম লোকেদের
অঙ্গভঙ্গিতে। কিন্তু
যেদিন নিজেকে দেখলাম - আয়নায় - আমি আমার সামনে , সেদিন সত্যি সত্যি , আমি আমার
প্রেমে পরে গেলাম। থাঙ্কস
মম টু মেক মি অসম। মাথার
চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আমি সময় নিয়ে দেখতে থাকলাম। একদম আইডিয়াল ক্রিয়েশন। চোখ চোখের জায়গায় , নাক নাকের জায়গায়
আর সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ সুন্দর স্পিসিস। চুলটা যখন কেটে দিলো তখন ব্যাপারটা আরো
বেশি সুন্দর হয়ে গেলো। আমার
মাথার সাইজ বুঝতে পারলাম। সেটাও
একদম পারফেক্ট - পুরো গোল। চামড়া
কাকুর মতো সাদা নয়। চোখ
বাবা মার মতো কুতকুতে নয়। গালে
দাড়ি নেই। কানে লোম
নেই। নাক জেঠুর মতো থ্যাবড়া নয়। নাকের ভেতর থেকে চুল বেরিয়ে আসছে না। গেঞ্জিটাও তুলে দেখলাম , নাঃ , বাবার
মতো বিশাল ভুঁড়ি নেই। যেদিন বাবা আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে তেল মাখাচ্ছিলো সেদিন
দেখলাম - ওমা এতো একটা জলজ্যান্ত চাবুক। মাইন্ডফুলি
ডিসাইনড এন্ড কেয়ারফুলি ক্রাফ্টেড। এই না হলে মানুষ।
মাঝে মাঝেই বাবা টিভিতে আমায় প্রজেক্ট
করে। আমার আয়না আরো বড় হয়ে যায়। পেছনটাও দেখতে পারি। পেছন থেকে দেখলেও আমি সুন্দর। দুটো হাত তুলে যখন আমি দাঁড়াই , মনে
হয় কে এক স্বর্গের দূত এসে দাঁড়িয়েছে। হোক
আমার ওয়ানসির নিচের বোতাম আটকানো। হোক
আমার ডাইপার থলের মতো। পাথরে
সিঁদুর লাগলেই সে ভগবান।
আমি যা যা করি , বাবা মাঝে মাঝে সেটা ফোনে তুলে রাখে। আর পরে দেখায়। আমি হাঁ করে দেখি আমার নিজের
কর্মকান্ড। আমি যখন কোনো কিছু করি তখন তো নিজের দিকে খেয়াল থাকে না। আমি নিজের তালে নিজেই নাচি। কিন্তু যখন আমায় আমার সামনে দেখি ,
আমি অবাক হয়ে যাই। নিজের
অজান্তে আমি কি করে এতো ভালো ভালো কাজ করতে পারি। বাবার গেঞ্জি পরে কি সুন্দর আমি দৌড়ে
যাচ্ছি। একবারের জন্যও উল্টে পড়িনি। টিভি দেখার সময় চোখের পলক একবারের
জন্যও না ফেলে আমি কি সুন্দর একটার পর একটা চামচ খেয়ে যাচ্ছি। আমিই আমার ইন্সপিরেশন। শুধু ইম্প্রোভাইসেশন দরকার , প্রত্যেক
দিন , প্রত্যেক সময়।
আমার আগের ভিডিও গুলো যখন আমি টলমল
করে চলতাম, তখনও গ্ল্যামার যেন ফেটে ফেটে বেরোতো। এখন হাঁটা আমার সাবলীল , আর দৌড় আমার
সুদৃশ্য। সেই
যেবার কমোটের জল নিয়ে খেলা করছিলাম তখনকার আমার
এনগ্রস্ড লুক যেকোনো মুনিঋষিকে হারিয়ে দেবে। আমার
নামও তো আধ্যান। তাই
যখন চুপ করে কার্পেট থেকে খুঁটে খাই তখন নামের প্রতিফলন দেখি আমার চোখে। কি সুন্দর ভাবে লাইটগুলোকে একবার অন ,
একবার অফ করতে থাকি। কখনো
আলো , কখনো অন্ধকার। কি
বৈচিত্র আমার মুভমেন্টে। কখনো
সামনে হাঁটছি , কখনো পেছনে, কখনো গোল হয়ে ঘুরছি , কখনো এমনি এমনি পরে যাচ্ছি, আবার
উঠছি। সেইযে এক সময় আমি নিজেই ধড়াম করে
উল্টে পরে মাথায় নিজেই লাগাতাম সে কি কারো মনে আছে। এই দেখতে দেখতে নিজেই গিয়ে নিজেকে
চুমু খেয়ে আসি - কখনো টিভি কখনো আয়নায়। আর
চুমু খেলেই চোখের গোল কালোতে আমি ফুটে উঠি। কি
ভালো লাগে না।
বাবার শুধু পন্ডিতের মতো কথা , ভূতের
মতো আচরণ। দুদিন
আগেই নিজেই মা কে বলছিলো , ‘যে নিজেকে ভালোবাসে না সে কাউকে ভালোবাসতে পারেনা .’
আর এখন আমি যখন কথাকে কাজে পরিণত করছি তখন আমি ডিসঅর্ডার। এখন আমি অনেক কিছু বলার
চেষ্টা করি। মানে তোমাদের ভাষা আর কি। ভাষা
তখনই সুন্দর হয়, যখন সুন্দর লোক সুন্দর ভাবে বলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি তাই তো বলতে
থাকি “এ - এ - এ ” , ‘ই - ই - ই , ‘ও - ও - ও ’ . যখন বলি তখন আমার ঠোঁট নাড়ানো দেখে
আমি নিজের পারফেকশন বিচার করি। প্র্যাক্টিস
মেকস পারফেক্ট। তাই
রোজ ঘুমোতে যাওয়ার আগে , বাথরুমের আয়নার সামনে থাকা চেয়ারের ওপর উঠে আমি আমার সাথে
কথা বলতে থাকি।
আমি নিজেই নিজের মোটিভেশান। আমার কারো মোটিভেশনের দরকার নেই। আমার সামনে সারা জীবন পরে আছে। তাই তো মাঝে মাঝেই জানলার কাঁচে নিজেকে
দেখে হাত তুলে কথা বলি। নিজের
সাথে নিজেই হাত মেলাই। দেখো
বাবা , এটুকু বুঝে গেছি যারা নানা ভাবে কথা বলে তাদেরই এই পৃথিবী। আমি ডেভ আর এভাকে দেখেছি , চু চু
টিভির চুচু , চাচা , চিকু , চিকা সবাইকে দেখেছি কিছু না কিছু একটা বলতে আর নানা
ধরণের অঙ্গভঙ্গি করতে। তাই
আমিও হাত তুলে সেটাই করার চেষ্টা করি। নিজেই
নিজেকে বড় হওয়ার জন্য মোটিভেট করি। বদলে
কি পাই , আমি নাকি নার্সিসিস্ট।
সমালোচনায় কান দিয়ে আমার লাভ নেই। যে যা বলছে বলুক , যদি বলে
নার্সিসিস্ট তো আমি নার্সিসিস্ট, তবে বেস্ট নার্সিসিস্ট । বেশ করেছি নার্সিসিস্ট হয়েছি। আমি তাদের মধ্যে একজন , যাদের গায়ে যে
শব্দই লাগুক না কেন শুনতে ভালো শোনায়। তাই
যা বলছো বলো। আমি জানি
আমি দি বেস্ট। এই বলে রাখলাম।
আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো
- 39) আধ্যানের ডায়েরী - শেষমেশ দেড়
- 38) আমি ও আইফোন
- 37) সবার সাথে খেলা (শেষ পর্ব)
- 36) আধ্যানের ডায়েরী - সবার সাথে খেলা ( দ্বিতীয় পর্ব )
- ৩৫) সবার সাথে খেলা ( প্রথম পর্ব )
- 34) বাবার সাথে একা (শেষ পর্ব)
- 33) বাবার সাথে একা (প্রথম পর্ব)
- 32) পুজো স্পেশাল
- 31) আমায় টেরোরিস্ট বলা??
- 30) আবার সমুদ্রে
- 29) নেরুদা
- 28) খেলবো না খাবো ?
- 27) মাছ দেখা
- 26) বাবা এলো শেষমেষ
- আধ্যানের ডায়েরি সিসন ওয়ান একত্রে
No comments:
Post a Comment