নম্বরের
কচকচানিতে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। আমার
নামের বদলে একটা নাম্বার দিয়ে দিলে কাজে দিত। আজকে
একবার পটি করেছে , দুটো কাঁচের গ্লাস ভেঙেছে , তিনবার খাট থেকে পরে গেছে, চারবার
ঠোকা খেয়েছে, পাঁচবার কমোটের জলে হাত চুবিয়েছে , ছবার ডাইপার চেঞ্জ করে দিয়েছে ,
সাতটা দাঁত বেরিয়েছে , আহ্লাদে আটখানা হয়েছে , ন চামচ খাবার খেয়েছে আর বাবা মার দশ
হাল করে ছেড়ে দিয়েছে।
এ আবার
কি। সব কিছু কি কোয়ান্টিটেটিভ নাকি। সব
কিছু কি গুনে গুনে করা যায় নাকি। কিন্তু
করছে। বাবা আর মা সেটাই করছে যা করা উচিত
নয়। এখন আমি মাঝে মাঝেই বাবা আর মা কে
খাইয়ে দি। এক বাটি
সবুজ মটর নিয়ে বসেছে। আমি
গেলাম খাইযে দিতে। থাবা
মারতে বেশ কয়েকটা হাতে এসে উঠলো, কিন্তু যেই বাড়িয়ে দিয়েছি মুখের দিকে। বাবা বললো , ‘একটা একটা করে দাও ’ একটা ড্রাম কিনে এনে দিয়েছে। সেটাতে দুটো কাঠি ছিল বাজানোর জন্যে। একটা কাঠি দিয়েছি হারিয়ে। এখন একটা কাঠি আর একটি চামচ। মা সারাক্ষন কানের কাছে বলে চলেছে ,
‘দ্বিতীয় কাঠিটা কৈ ’
চু চু
টিভিও কম যায়না। লেট
আস লার্ন দা নম্বর সারাদিন গেয়ে চলেছে। বসে
আছি , বাবা খপাৎ করে হাতটা ধরেই বলে ওঠে , ‘ড্যাডি ফিঙ্গার ড্যাডি ফিঙ্গার হোয়ার
আর ইউ ’ তার পরেই একটা করে আঙ্গুল ধরে আর নম্বর বলতে থাকে। আর হয়েছে আমার জামা কাপড় জুতো মোজার
সাইজ। রোজ তর্ক চলছে কোন সাইজ কতদিনে ঠিক
হবে। ২টি না ৩টি। আমি অন্যদের থেকে আবার একটু সাইসে বড়
কিনা , তাই গ্রোথ অনেক বেশি। তাই
আমি জামাকাপড়েও এঁচোড়ে পাকা। এই
নেগেটিভ টার্মটা কিন্ত বাবার বার করা , আমি নেই এসবে।
সবথেকে
বড় সমস্যা চোখ লাল লাল ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন নিয়ে। আমি ঠিক বুঝতে পারিনা , আমি কুকুরছানা
না মানুষ। সবাই তো
সবসময় বলতে থাকে , সব মানুষ আলাদা। তাহলে
মাইলস্টোন আবার কি। আমি
কবে কথা বলতে শিখবো সেটা নিয়ে রোজ সকালে বাবা মা চুল ছেঁড়াছেঁড়ি করে। বলবো রে বাবা , এতো তাড়া কিসের। আমি প্রিপেয়ার করছি। তোমাদের মতো বিনা প্রিপারেশনে ভুল ভাল
লিটারারি ননসেন্স ক্রিয়েট করছি না তো। প্রথমত
ল্যাঙ্গুয়েজে ব্যারিয়ার। বাবা
মা যে ভাষায় কথা বলে ডে কেয়ারে অন্য ভাষা। বাবা
মাও বাংলায় পুরো কথা বলে না। গিভ মি দা আলু। এ
আবার কি কথা। তার ওপর
আবার সেই , ওয়ান পটেটো টু পটেটো থ্রি পটেটো গান চলতেই থাকে। আমিও এই বেংলিশের চক্করে গুবলেট
পাকিয়ে যাই। এই
কনফিউশানের চক্করে আমার আর কথা বলা হয় না।
যা করছি
না তার দিকে বেশি নজর। কিন্তু
যা করছি সেটাকে লক্ষ্য করছেই না।
অন্যদের থেকে আগে আমি ঘরের লক খুলে বেরিয়ে গেছি। কেউ পেরেছে। একদিকে ডিশওয়াসার খুলে
আরেক দিকে ওভেন খুলে একটার থেকে আরেকটাতে ঝাঁপিয়েছি। কেউ পেরেছে। ছুটে ছুটে সবাইকে ক্লান্ত করে মেরেছি।
নিজেই সোপ বাবল বানানোর চেষ্টা করে
চলেছি। সেলোটেপ দিয়ে আটকে রাখা সুইচ গুলো
সেলোটেপ খুলে জ্বালিয়েছি আর নিভিয়েছি। এখন
তো বোতলের ছিপি পর্যন্ত খুলতে শিখে ফেলেছি। কি
এগুলো তো কোনো ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন গণ্য হয় না। আমি এতো কিছু পারি, তাহলে যা পারিনা ,
তাতে তো ডিসকাউন্ট পাওয়া উচিত। শুধু
নেগেটিভিটি।
শুধু তাই
নয় , যা করছি সেটাতেও শুধু বারণ। ‘বাবা
তোর বয়স হয়নি এখনো।’ এই একটা কথায় আমার হাড় পিত্তি জ্বলে যায়। বয়স আবার কি। এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটার্স। লোকেদের বলে আসছে , ছেলে আমার বয়সের
তুলনায় লম্বা হয়ে যা সব কিত্তি দেখায় , অথচ কথা বলতে বা বুঝতে না পাড়ার জন্য আমরা
ওকে আটকাতে বা শেখাতে পারিনা। এটা
পুরো ফাঁকিবাজি কথা। নিজেরা
বসে বসে সিনেমা দেখবে। আর
আমি যদি গিয়ে টিভিতে চুমু খাই তাতেই সবার সমস্যা। নিজেরা ঘাড় ধরে বড় করার চেষ্টা করে
চলেছে। আমায় স্নান করানোর সময় ওপর থেকে
ফোয়ারা ছেড়ে দেয়। আমার
তো হাপুচুপু অবস্থা। অথচ
আমি যখন গিয়ে কল বন্ধ করার চেষ্টা করি তখন বলে বয়স হয়নি।
যাইহোক
এই রোজকার রোজকার কথা আর ভালো লাগছে না। বুঝতে
পারছি বড় না হলে কেউ আমাকে বিশেষ সিরিয়াসলি নেবে না। শুধু যোগ বিয়োগ গুন্ ভাগ না করলে এদের
কোনো শান্তি নেই। ফাইনালি
আমি আজকে প্রো টডলার। আজকে
আমার দেড় বছর কমপ্লিট হলো। তোমরা
সবাই আমার জন্মদিনের আশীর্বাদ নিয়ো। এক
থেকে দেড়ের মধ্যে অনেক খেলা দেখিয়েছি। আরো
খেলা বাকি আছে। অপেক্ষায়
থাকো আর চোখ রাখো। ততদিন
টাটা।
No comments:
Post a Comment