Monday, February 5, 2018

44) আধ্যানের ডায়েরী - আবার ডে কেয়ার


বলেছিলাম লিখবো।  গল্প জমে গেলে।  তাই লিখছি সেই ডে কেয়ারের গল্প।  মা বাবা দুজনায় অফিস যায় দেখে দেখে হিংসা হচ্ছিলো।  কিন্তু দাদুকে একা ছেড়ে কি করে যাই।  তাই যেই না দাদু ফিরে গেলো আমি আর এক দিনও অপেক্ষা না করে সোজজা ডে কেয়ার।  সেই তবে থেকে আজ পর্যন্ত আমি রোজ ডে কেয়ারে যাই।  মাঝে মাঝেই কামাই মারি কিন্তু সেটা  বাবার সাথে খেলতে।  সেটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।  বাবাটা ফাঁকিবাজ , মাঝে মাঝেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  আর বাবাকে কোম্পানি দিতে আমিও প্লে ইন হোম।  কিন্তু মন পরে থাকে সেই প্যারট ক্লাসে।  

হ্যাঁ আমার ক্লাসের নাম প্যারট ক্লাস।  ওয়ান তু থি নয় , প্যারট।  এখানে আমরা সবাই বকি।  তোতাপাখির মতো।  জানিনা প্যারট কাকে বলে শুধু একদিন আমার টিচার শাশা যখন মাকে এক্সপ্লেন করেছিল সেটা শুনে ছেপে দিলাম। শাশা খুব ভালো।  দেখতে একেবারেই  মায়ের মতো নয়।  কিন্তু মায়ের মতোই আদর করে।  সোপ বাবল বানায়।  ডান্স করে।  গান শোনায়।  আর কোলে তুলে নিয়ে ঘোরে, যেটা আর কেউ করে না।  তাই আমি শাশাকেই সবথেকে পছন্দ করি।  কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের টিচার সব সময় পাল্টাতে থাকে।  আর সবাই ভালো হয় না হয় না।  মা তাই খুব রেগে যায় মাঝে মাঝে।  

এই ডে কেয়ার মায়ের অফিসের একদম কাছে।  আমাকে নামিয়ে টুক করে অফিসে ঢুকে পরে।  আমিও জানি মা বেশি  দূরে নেই।  চিৎকার করে কাঁদলেই চলে আসবে।  কিন্তু যখন কাঁদি , মা কিন্তু আসে না।  আসে আমার বন্ধুরা - জোয়ানা , জুলিয়ান , জেকব,  , জোনাথন , এপ্রিল আর কোকো।  আমরা সবাই খুব মজা করি এখানে। বাবা বলে দিয়েছে স্কুলে গিয়ে খেলা আর বাড়িতে এসে পড়া।  কিন্ত আমার এই ডে কেয়ার নামক স্কুলে পড়ানোও হয়।  এভরি উইক আমরা নতুন নতুন জিনিস শিখি , আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে , হিকরি ডিকরি ডক , আর নানান রাইম।  

মায়ের এক সমস্যা আছে।  আমাকে সকালে গান্ডে পিন্ডে না গেলালে ,মায়ের শান্তি নেই।  আর তাতেই হয়ে যায় দেরি।  আর তাতেই হয়ে যায় মেন্ জিনিস মিস।  সকালে আমাদের মিস ঘরের মাঝখানে বসে প্রচুর গল্প শোনায় আর আমরা গোল করে ঘিরে বসে তার কথা শুনি আর হাততালি দিই।  প্রত্যেক সপ্তাহে নতুন নতুন গল্প।  আর নতুন নতুন জিনিস।  নতুন নতুন নতুন খেলা।  আমার সবথেকে ভালো লাগে ভিলেজে থাকতে আর বল পিটে ঝাঁপাতে।  

ভিলেজটা খুব সুন্দর।  কিচেন আছে, প্লে গ্রাউন্ড আছে , বেডরুম আছে , হাইডিং প্লেস আছে আরো কত কি।  আমি মায়ের মতো কিচেনে থাকতেই ভালোবাসি।  স্পুন আর ফর্ক আমার সবথেকে  পছন্দের জিনিস। লাঞ্চের সময় যখন খাবার খেতে দেয় তখন খাওয়া তো আর আমার হয় না।  হয় শুধু স্পুন আর ফর্ক নিয়ে খোঁচানো।  আমাদের একটা টেবিলে পর পর বসিয়ে দেয় আর আমাদের সামনে খাবার দিয়ে দেয়।  আমার খেতে ভালো লাগে না।  মায়ের খিচুড়ির মতো কি আর ওরা খাবার দেয়।  খাবারে না থাকে মায়ের বানানো ঘিয়ের গন্ধ , না থাকে সামনে টিভি।  খাবো কেন।  আমি তাই বন্ধুদের খাওয়াই। ফর্ক এ করে তুলি আর খাইয়ে দি।  আর বাড়িতে এসে সেটাই ডেমোন্সট্রেট করি বাবা মা কে যখন ওরা খেতে বসে।  

এই খাওয়া নিয়ে মায়ের বেশ টেনশন।  আমারো , আমার মোটেই ভালো লাগে না ওখানে খেতে।  তাই সারাদিন শুধু দুধ খেয়েই টেনে দি।  কিন্তু এই এতো বড় শরীর কি আর শুধু দুধে টানা যায়।  মায়ের আসতে দেরি হয়ে গেলে কি জানি কি হয় , প্রচুর ঢেকুর ওঠে আর ঠুস্ ঠাস হয়।  মা যখন নিতে আসে তখন গাড়িতে তুলেই প্রথমে এক বোতল দুধ খাওয়ায় তার পর গাড়ি স্টার্ট করে।  এখন যদিও আমি নিজে নিজেই খাই।  আর গাড়িতে আমার জন্য চিপস থাকে।  সেটা নোনতা নোনতা তাই ওটা দিয়েই আমি দুধ মেরে দিই।  

স্কুলে আমার কত খেলা। মানে কত খেলনা।  কখনো স্পেস শিপে চড়ছি , কখনো বল পিটে ঝাপাচ্ছি কখনো জল নিয়ে খেলছি।  ও হ্যাঁ , আমাদের আউটডোরেও নিয়ে যায়।  যখন সামার চলছিল তখন আমরা মাঝে মাঝেই বাইরে গিয়ে একে ওকে তাকে জল ছুঁড়ে মারতাম।  আমার টার্গেট ছিল অলিভিয়া।  কিন্ত একদিন এসে আমাকে কামড়ে দিলো।  কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা।  লাল গোল হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।  নেক্সট দিন যখন আমি কামড়ে দিলাম , ঠুকে দিলো আমার নামে কমপ্লেন মায়ের কাছে।  মা আবার বাবাকে বললো , ‘নাও তোমার ছেলের নাম কমপ্লেন এসেছে . ’  বাবা মাথায় হাত চেপে বসে পড়লো।  যেহেতু এখনো ল্যাঙ্গুয়েজে পোক্ত হয়নি তাই ডিফেন্ড করা সম্ভব নয়।  আমিও চুপ্চাপ চেপে গেলাম।  

কিন্ত আমার ঠেলায় ওখানেও সবাই রীতিমতো পাগল হয়ে মা কে কমপ্লেন করতে আরম্ভ করলো।  একদিন আমার টিচার আমাকে গ্রাউন্ডেড করে আমার ক্রিবে বন্দি করে রেখেছিলো।  সেটা প্রব্লেম নয় , প্রব্লেম হলো কমপ্লেন।  কেন বাপু , আমার নামে কমপ্লেন করা।  আমি তো মিষ্টি মানুষ।  সবার সাথে খেলতে চাই।  সবাই হেঁড়ে মুখো হলে আমি কি করবো।  আমি মোটামুটি এখন রুটিন বানিয়ে নিয়েছি। আমি যাই , কিছুক্ষন খেলি , তারপর পড়তে বসে যাই।  ওখানে অনেক বই আছে।  বাড়িতে তো মোটে চারটে বই।  

ওখানে রোজ আমাদের কিছু না কিছু করতে হয়।  কাজ না করলে তো আর থাকতে দেবে না।  আমাদের তাই রং দিয়ে দেয়।  আমরা রং করি।  আমি এখনো পর্যন্ত স্পেসশিপ , বিয়ার , সমুদ্র , আপেল রং করেছি। সবগুলো ওরা মা কে দিয়ে দিয়েছে আর মা ফ্রিজের গায়ে আটকে রেখেছে। কিচেন আমি ডিশ ওয়াশ করেছি , ওনিয়ন সুপ্ বানিয়েছি।  আর জাইলোফোন বাজিয়ে খুব গান করেছি।           

মা প্রথম দিকে যখন ছেড়ে যেত , তখন খুব কষ্ট হতো।  সবথেকে কষ্ট হতো যখন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম মা নেই , বাবা নেই।  যখন বাড়িতে একা একা পাওয়ার ন্যাপ নি তখন ঘুম থেকে উঠে কাঁদলেই মা বা বাবা এসে কোলে তুলে নেয়।  ঘুম থেকে উঠে কিরকম একা একা লাগে।  এখানে প্রথমে দু চারদিন কেঁদে দেখেছি কেউ আসেনা।  তখন থেকে আমিও কান্না ছেড়ে ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ বসে থাকি।  

আমার এই ডে কেয়ার আমার বাড়ির মতন বটে , কিন্তু বাড়ি নয়। পড়া , খেলা , মজা , টয়েস , বুক্স সব কিছুই আছে কিন্তু নেই যেটা সেটা মা।  যে সব কিছু ঠিক করতে পারে।  কিন্তু মা ই বা কি করতে পারে।  যখন বাড়ি ফিরি তখন মা প্রথমে আমাকে এক বোতল দুধ খাওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারপর এক একটা করে চিপস ধরিয়ে যায় আর আমরা গল্প করতে করতে যাই।  মাঝে মাঝে বাবাও কলে থাকে।  সব মিলিয়ে এই আমার ডেকেয়ারের গল্প। অবশ্যই এখন পর্যন্ত।  আমিও ডে কেয়ার বা ডায়েরি লেখা কোনো কিছুই ছাড়ছি না।  তাই আবার গল্প জমে গেলে আমার ডে কেয়ারের গল্প লিখবো।  



আধ্যানের ডায়েরি

No comments:

Post a Comment