বাড়িতে
একটা সাজো সাজো রব। আমাদের
যে একটা গেস্ট বেডরুম আছে যেটা আমার নার্সারি ছিল, সেটাতে হঠাৎই আমার ঢোকা বারণ হয়ে গেছে। কেসটা কি ? বেশ কিছুদিন ধরে উঁকি
ঝুঁকি মেরে একবার দেখলাম যে আমাদের খাটের ওপর পেল্লাই চারটে সুটকেস চাপানো, ডালা
গুলো খোলা। মা মাঝে মাঝেই গিয়ে কিছু না কিছু ঢেলে দিচ্ছে। নানা জামা কাপড় বের
হচ্ছে নানা জায়গা থেকে। মা
বাবা দুজনেই খুশি খুশি। ওদিক
থেকে ঠাম্মা আর দিদার মুখ দিন কে দিন খুশি খুশি থেকে আরো খুশি খুশি হয়ে যাচ্ছে। এই খুশির কারণটা কি ?
রহস্যোদ্ঘাটন
হলো যখন এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে একদিন আমাকে নিয়ে গেলো একটা ওপেন মলে , যেখানে
আমার দোকান আছে। আমি
তো স্পেশাল তাই আমার দোকান আলাদা। সেখানে গিয়ে অনেক অনেক অনেক অনেক জামা কাপড় কেনা
হলো আমার জন্য। নতুন
নতুন। আর জানতে পারলাম এবার বাবার দেশে
যাবো। দেশটা যে কি সেটা আমি বিশেষ বুঝতে
পারলাম না। কিন্তু
এটা বুঝলাম বাবা যখন আমার মতো ছিল তখন ডাইপার পড়তো না , মাও না। যেটা পড়তো সেটা
ন্যাপি। আর সেই ন্যাপি নিয়েই ডিসকাশন হচ্ছিলো।
বাবার
কথায় এই তিন সপ্তাহের জন্য তো যাচ্ছি , তাতে ব্যাগে করে অতো ডাইপার কেন নিয়ে যেতে
হবে, ওখানে তো ন্যাপি পরেই থাকা যায়, ওখানে তো আর কার্পেট নেই। কিন্তু মা বলল সাবধানের মার নেই। যদি
দরকার লাগে। সেখান
থেকেই আমি বুঝতে পারলাম আমি মামার বাড়ি আর আমার বাড়ি যাচ্ছি। অনেক দূর। আমি যেরকম ট্র্যাক্টর আর কার চালাই
সেরকমই আরেকটা জিনিস করে উড়ে নাকি চলে যাবো ঠাম্মা দিদার কাছে।
ঠাম্মা
তো সেই ছোট্টবেলায় চলে গেছিলো,
দিদা কদিন পরে গেছিলো বটে, কিন্তু তাও তো অনেকদিন। চিনতে পারবে তো। যদি না চেনে তাহলে কি করবো। কিন্তু
রোজই তো দেখি ফোনের ভেতরে। যেমন
করে বাবা চলে যাওয়ার পর দেখতো। তবে
কি বাবার বাড়ি ফোনে। সবাই
ওই ছোট্ট জায়গায় থাকে ? কি জ্বালাতন। আমাকেও
ওই ছোট্ট জায়গায় ঢুকিয়ে দেবে। কিন্তু
এখানে তো আমি আছি ফোন দিয়ে ওদের দেখবো বলে। এখন
আমায় দেখবে কে ? আমার সাথে কি আমার বইগুলো যাবে ? নাহলে সারা দিন করবো কি ? সদ্য
সদ্য পড়তে শিখেছি, এখনই কেন আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পড়ায় ব্যাঘাত দেওয়া। কি জানি বাবা, এই বড়দের ওপর কোনো ভরসা
নেই।
মা তো
নাচছে। সারাদিন নানা রকমের খাবারের নাম বলে ,
আর বাবা বলে ওখানে গিয়ে খেয়ো। কিন্তু
আমার খাবার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। বাবা বলতে গেলে মা বলে , ‘ বিসনেস এস
ইউসুয়াল , সকালে ওট আর দই বাকিটা খিচুড়ি। ‘ সমস্যা নাকি প্লেনে। আমরা নাকি এক দিন পুরো প্লেনে থাকবো। আর আমার খাওয়া নিয়ে নাকি সেখানেই
সমস্যা হবে। আমি এটা
বুঝতে পারিনা , খেতেই হবে এরকম কোনো মাথার দিব্যি কেও কি দিয়েছে। রোজ রোজ ঠোসার থেকে একদিন হলেও তো
মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু
না। দেখলাম আমার ওটের বাক্সও ঢুকে গেছে
সুটকেসের মধ্যে।
আমার
একবার এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে , একবার টেনশান হচ্ছে। পুরানো চেনা জানা লোক আছে বটে কিন্তু
জায়গাটা তো নতুন। আমার জন্য ওখানে কি কি খেলা আছে। আমার এখানে নিজের স্কুল আছে , আমার
খেলনা আছে আর আছে টিভি। ওখানে
মা তো বলছে টিভি আছে। কিন্তু
আমার তো চু চু টিভি লাগবে , সেটা কি আছে ? কি জানি বাবা। না থাকলে যদিও বাবা ব্যবস্থা করে
রাখবে সেটা আমি জানি। বাবা
ওখানের অন্য সমস্যা বলছিলো। সবাই
নাকি আমার গাল টিপবে। আমি
জানি আমি এডোরেবল এবং আদরেবল কিন্তু আদর করার তো নিয়ম আছে। গাল কেন টিপবে বাপু। হাত টেপো , পা টেপো , সারাদিন খেলে
ওগুলোতে যন্তন্না করে। গাল
টিপবে কেন। আমি
কিন্তু হেব্বি প্রোটেস্ট করবো। তখন
আমাকে অসভ্য বাচ্চা বললে কিন্তু হবে না।
মা বলেছে
, ওখানে গিয়ে একদম ভালো বাচ্চা হয়ে থাকতে। কারণ
ওখানে সবাই আছে। এখানে
তো বাড়ির কেউ নেই , যে আছে সে অনেক দূরে থাকে। তাই দেখা হয় না। আমার যে অনেক অনেক অনেকে বন্ধু ভাই আর
আত্মীয় আছে সেটা নাকি আমি জানিও না। আমি
নাকি বাড়ির জুনিয়র মোস্ট এখনো পর্যন্ত। তাই
আমার প্রথম দায়িত্ব হলো আমার সিনিয়র মোস্ট মানে আমার বড় ঠাম্মির কাছে আগে যেতে
হবে। সেদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকতে থাকতে মা
লাফিয়ে উঠে কি বললো বাবাও দেখি তুড়ুক তুড়ুক নাচছে আর বলছে , ‘আমি বেশ ইমাজিন করতে
পারছি আধ্যান সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে দোল খেলছে .’ আমি ভাবলাম সে আবার কি , দোল
দোল দুলুনি টাইপ ? সে তো রোজই খেলি। তাতে পায়জামা পাঞ্জাবি পড়ার দরকার কি আছে ? মা
আবার গম্ভীর, না, কেমিক্যাল
দিয়ে রং বানায় সেসব লাগালে গায়ে ফোস্কা পড়ে যাবে। কিন্তু বাবা নাছোড়বান্দা। শেষে এই ঝামেলা মেটাতে গিয়ে হাজির
হলাম ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার
প্রথমেই ঘাড় নাড়িয়ে বলে দিলো মস্কিটো বাইট থেকে বাঁচাতে আর নো রং ইন হোলি। দোল ছিল
, হোলি হয়ে গেলো। কি
কনফিউসিং রে বাবা। বাবা
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো, ‘আর কি করতে হবে. ’ প্রশ্নের উদ্যেশ্য আর কি কি মেডিসিন
নিতে হবে। কিন্তু
না, ডাক্তার আর কিছুই বলল না। বললো
তিন সপ্তাহে কিছুই হবে না। নো
প্যাক প্যাক ইঞ্জেকশান , নো তেতো ওষুধ। শুধু
নাকি জল বাইরের খাওয়া চলবে না। এর
মানেটা কি? জল তো বাইরের ই। জানিনা
বাপু।
তবে
সবথেকে বেশি বাবা মার যা নিয়ে চিন্তা , সেটা হলো প্লেনে আমি কিরকম থাকবো। এমন এমন কথাবার্তা বলে চললো যেন আমি
সবসময় সবাইকে বিরক্তই করি। একটা
জিনিস খুব বাজে লাগলো , আমার নাকি সিট্ নেই। আমি কি এতটাই নেগলিজেবল যে আমার একটা
সিট পর্যন্ত দিতে নেই। কিন্তু কঠোর পৃথিবী আর বোকা বাবা মা , আমার তো এরকমই হওয়ার
ছিল। যাইহোক ওরা বুঝবে না কিন্ত আমি প্রমিস
করছি আমি একদম গুড বয় হয়ে থাকবো। কোনো
ঝামেলা করবো না। প্লেনটা
দেখতে হবে তো। নতুন
জিনিস দেখলেই আমি খুশি। এই
কমান সেন্স বাবা মার্ নেই , আর দিন রাত টেনশনে গা ভেজাচ্ছে।
যাই হোক
, আমি অনেক কিছু প্যাক করে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক
অনেক , নতুন জায়গা , নতুন মানুষ। হোক আমি ওভারসিস সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া , কিন্তু
প্রথমবার যাচ্ছি যখন তখন নিজের জিনিস গুছিয়ে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধির কাজ। আমার
টয়লেটারি আর ফুড মায়ের ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু
খেলনা গুলো তো আমার। তাই
আমাকেই গুছিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অনেক
অনেক কাজ।
এখন থেকে
আমরা প্রথমে গাড়ি করে নিউ ইয়র্ক যাবো। সেই
যেখানে বাবা আর দাদুর সাথে প্রথমবার ঘুরতে গেছিলাম। সেখান থেকে প্লেনে চড়ে দুবাই। সেখানে নাকি ছ ঘন্টা ধরে মা শপিং
করবে। আমি বুঝলাম না , মিল্ক , ওট মিল ,
ডাইপার সবই তো নিয়ে যাচ্ছি তাহলে আবার শপিং এর কি আছে। জানিনা বাপু , এই জন্যেই বাবা আর মা
দিন রাত ঝগড়া করে। বাবা
বলেছে মা শপিং করবে আর আমরা খেলবো। খেলবো
মানে আমি দৌড়ে বেড়াবো আর বাবা পেছন পেছন দৌড়াবে , কি মজা। দুবাই থেকে সোজা কলকাতা।
সেখানে আমাকে নিতে আসবে ঠাম্মা আর
দাদু। তারপর সেখান থেকে গাড়ি করে দাদুর
বাড়ি। সেখান থেকেই শুরু হবে মজা। অনেক
অনেক মজা। অনেক
গল্প। আমার ডায়েরি লেখার প্রচুর টপিক নাকি ওখানে পাওয়া যাবে। বাবা আবার বলেছে যারা আমার ডায়েরি পড়ে
তারা নাকি সবাই আসবে দেখা করতে। আর
আমি গুনতে থাকবো ওয়া, টু , থি করে। এখন
আমি বডি পার্টস ও বলতে শিখে গেছি , হেত , শোলা , নি, টো , মিথ , টিট আরো কত কিছু। কিন্তু হ্যাঁ , চিকে কিন্তু হাত নয়,
এই বলে রাখলাম। আমার
ফার্স্ট টুর , ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল , প্লিস মেক ইট ওয়ান্ডারফুল।
No comments:
Post a Comment