এ বি সি
ডি ই এফ জি , এইচ আই যে কে এলোমেলো পি। নিজের
মনে বলছিলাম , আর মা হেঁসে গড়িয়ে পড়ছিলো। কেন
বাপু, মানুষটাকে চেষ্টা পর্যন্ত করতে দেবে না। দিন রাত কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে
যাচ্ছিলে যে ছেলে
নাকি কথা বলে না। ধরে
আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলে। এখন
আমি এ থেকে যি পর্যন্ত বলছি তাতে খ্যাক খ্যাক করে হাসি। ঠাম্মা আবার ওখান থেকে বলে চলে , ওটা
যি নয় জেড । একে তোমরা সাহায্য তো করো না
, তার ওপর খিল্লি করো। কনফিডেন্স
এ গোলমাল হয়ে যায়। তার
ওপর বাবা তো বসেই আছে কনফিউসড করে দেওয়ার জন্য। চু চু টিভি তে বলছে এ ফর এপেল বি ফর
বল , এদিকে বাবা বলে চলেছে এ ফর আধ্যান, বি ফর বাবা। এতো ভেরিয়েশনে , আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। আমার শেখার একটা ধরণ আছে। আমি প্রথমে শুনি , তারপর দেখি , তারপর
বলি , না বুঝেই বলি। কিন্তু
বলতে বলতে বুঝি। আর
বোঝাটা নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের
রিয়াকশনের ওপর। এখন
যদি তোমরা ঠিক ঠাক রিএকশন না দাও তাহলে আমি কোথায় যাই বলতো।
সব থেকে
জটিল হলো বাবার ভাষায় , “সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য নির্ণয় কর
.” সিক্স, সিক , সক্স, সিপ্ , সিট্, শিপ সবই তো একই রকম শোনায়। কোনটা কখন বলবো। সান , সন , সিন্, শোন , শান সব একরকম।
বাবা মা তো দুটো তিনটে ভাষায় কথা বলে। আমার
ঘেঁটে ঘ। আমি এতো
কনফিউসড বলেই তো বাবাকে বাবা , মা কে মা বলতে পারিনা। বাবা খুব চেষ্টা করে। আমার হাতটা নিয়ে একবার আমার বুকে দিয়ে
বলে “এটা আধ্যান” তারপর আবার নিজের বুকে রেখে বলে , “এটা বাবা ”। আমি কষ্টটা বুঝতে
পারি , কিন্তু বলতে গেলেই ভাবি এটা কোন বাবা? এই বাবাকে তো ব্ল্যাক শিপের মতো
দেখতে নয়। এতদিন বাবা ব্ল্যাক শিপ চলছিল, হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে গেলো , “জনি জনি ইয়েস পাপা।
” আগে ব্ল্যাক শিপের সাথে আর এখন পাপার সাথে। এ
কেমন ধারা খেলা। দেখো
আমি বুঝি বাবা আর মা ইস মোর ইম্পরট্যান্ট দ্যান এনিথিং। কিন্তু যতদিন না কন্ফার্ম হচ্ছি কোন
ওয়ার্ড কোথায় লাগাবো। ততদিন
আমি বাবা মা বলবো না।
আমি
এখন কন্ফার্ম যে কোনটা হেড , কোনটা সোল্ডার , কোনটা নি আর কোনটা টো। নিজে শিখেছি , তাই সবাই কে শেখাচ্ছি। যেখানে পারছি , যাকে পারছি ,তাকেই ধরে
শেখাচ্ছি। এই তো
সেদিন ফুল দেখতে একটা পার্কে গেছিলাম। একটা
ছেলে হেড চুলকাচ্ছিল। আমি
ভাবলাম বাকিটা ও জানে না। তাই
সোজা চলে গেলাম গট গট করে। দেখিয়ে
, চেঁচিয়ে সব
বুঝিয়ে দিলাম। উত্তরে
পেলাম , “হোয়াট ইস হি ডুইং?” । ছাড়ো , লোকেদের ভালো করতে নেই।
বাবার
মোবাইলে একটা ফার্স্ট ওয়ার্ড আছে। সেটা
থেকে আমি শিখেছি সমস্ত শেপের গল্প। কোনটা
টায়াঙ্গল , কোনটা ওভাল , কোনটা রেকট্যাঙ্গুল , কোনটা সারকুল , কোনটা স্কোয়ার
কিন্তু ওই দুটো আমি কিছুতেই বলতে পাচ্ছি না - হিক্কাগাউন আর ওক্কাগুন। আর তাতেই সবাই হেসে ফেটে পড়ছে। আমি চেষ্টা করছি। খুব করছি। কিন্তু হচ্ছে না। আরেকটা আছে আলফাবেট এর মধ্যে। সেটা বলছি পরে, আগে এ থেকে জেড শুনিয়ে
দি।
এ
ফর আপুল , বি ফর বাল , সি ফর ক্যাট , ডি ফর ডাগ , ই ফর এইফা , এফ ফর ফিশ , জি ফর - কেন
জানিনা না সবসময় জিব্বা বেরিয়ে আসে। আবার
ঠিক করে নিয়ে বলি জিয়াফ। এইচ
ফর হেইচ যেই বলেছি বাবা কেন জানিনা তেড়ে এলো। আই
ফর আইক্কিম। যে ফর
এবার জিব্বা। না না
জনি , না না জাগুয়া। এইবার
ঠিক বলেছি। কে ফর কাইট , এল ফর লায়া । এম
ফর মাক্কি। এন ফর
নেস্ত । ও ফর ওয়েঞ্জ। পি ফর প্যাওট। কিউ ফর কুইন। আর ফর রাবিট। এস ফর ষ্টার। টি ফর টয়। ইউ ফর আমবাবা। ভি ফর ধুর আর ভালো লাগছে না।
আমার
সবসময় এই আলফাবেট কপ্চাতে ভালো লাগে না। তাই
আমি যখন ইচ্ছা তখন স্কিপ করি। আর
যখন ইচ্ছা বলি। আমার
পন্ডিত বাবা আবার আগে পিছে করে আমাকে জিজ্ঞেস করে। বেশ পর পর বলছিলাম , দিলো ঘুলিয়ে। বললো এক্স ফর। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে বললাম ইয়েস
পাপা , খুশি হয়ে গেলো। তার
পর থেকে এক্স ফর এখন থেকে ইয়েস পাপা হয়ে গেছে।
আমি এখন
ওয়া টু বাকা মাইশু ও বলি , থি ফো নাক দা দূর , ফাইভ সিক্স পিক আপ স্টিক্স , সেভেন
এইট লেয়া স্ত্রে , নাই টেন এ হেন্। সারাদিন
আমাকে দিয়ে বলাচ্ছে। আমিও
বলছি। কিন্তু যখন আমি উল্টো চার্জ করি তখনি
বলে আমরা তো জানিনা। নাইন
টেন এর পর আমি বলি ইয়াভেন তুয়াল , চুপ। থার্টি
ফোর্টি , চুপ। ফিফটিন
শিক্সকটি , কোনো কথা নেই। সেভেনতিন
এইটিন বলার পরও একই চুপ। যেই
বলি নাইনটিন টুটি। ব্যাস
শুরু হয়ে যায় টোয়েন্টি ওয়ান , টোয়েন্টি টু -
আমি পড়ি ফাঁপরে। এখনো অতটা শিখিনি , কিন্তু বাবা মা র
তো শুধু দেখানোই কাজ।
জিততে হবে। আমার
থেকে জিতে গেলে তবেই না ওরা বলতে পারবে ছেলেটা কিচ্ছু শিখছে না। তার পর এ ওকে দোষ দেবে , ও একে। আমি ফেড আপ হয়ে গেছি।
এর পর
শিখেছি ওয়াশ ওয়াশ ওয়াশ মাই তিথ , ওয়াশ ইট এভিডে। বাবা আমাকে ব্রাশ করার সময় “ই-ই-ই-ই-ই
” করতে শিখিয়েছে। কিন্তু ব্রাশ যে গান
গেয়ে গেয়ে করতে হয় সেটার মজা শেখায়নি। সেটা
মা। সেদিন আমি গান গেয়ে গেয়ে সুন্দর করে
ব্রাশ করে নিলাম। মা
আঙ্গুল ঢোকাতে কামড়েও দিলাম না। কিছুই
করলাম না। এইটা হলো
প্রপার লার্নিং। ঠিক
যেমন আগে রাতে যখন বাবার নাক ডাকার চোটে ঘুমোতে পারতাম না তখন টপকে আসতাম এখন আমি
থাপ্পড় মেরে মেরে বলতে থাকি , লোল ওভা , লোল ওভা।
যাই বলো
, তোমাদের ভাষা কিন্তু বেশ জটিল। আমার
শিখতে শিখতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। আমার
স্কুলে আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখানো হয়। কিন্তু
সেটা আরো জটিল। মুখে
কথা না বলে দেখিয়ে দেওয়া কি করছি। কিন্তু
বলতে তো হবে। কারণ আমি জানলেও বাবা মা তো আর জানে না। স্কুল থেকে বেশ কিছুবার মায়ের ওপর
চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু
মা হাঁদার মতো তাকিয়ে থাকতে থাকতে তারপর এসে চটকে দিলো। যেমন আমি ছোটবেলায় সব জিনিসের একটাই
এক্সপ্রেশন দিতাম , ভ্যাঁ করে কান্না, এখন
মা তাই করে। সব জিনিসেই এসে চটকে দেয়।
যেমন
নিজের কাছে নিজে প্রমিস করেছিলাম — নিউ ইয়ার রিসোলিউশন ইস ইন ফুল ব্লো। প্রচুর পড়াশোনা করছি। যা দেখছি তাই বলছি। নতুন ভাবে বলছি , নতুন ডিকশনারি
বানাচ্ছি , নতুন এক ভাষার সৃষ্টি করছি যা না তোমার , না আমার। ঠাম্মা বলেছে এখন থেকে বাবা আর মা
পেছনে ট্রান্সলেটর এর কাজ করবে। কারণ
“ফিঙ্গার” এর নতুন নাম “দো ইউ” ।
সে যাই
হোক , আমার পড়াশুনা চলছে চলবে। কিন্তু
কোনো কিছু শেখা আর শিখে সেটা মনে রাখার জন্য বার বার সেটাকে অভ্যেস করার নামই হলো
পড়াশুনা। আমি দিন
শুরু করি আমার ছোট্ট ভোকাবুলারি একবার আউড়ে নিয়ে। রোজ রাতে মা যখন শুতে দেরি করি তখন
বাবা মা কে একটাই ডায়লগ দেয় , “যা করবে করো , পরীক্ষার দিন পরীক্ষার সময় কিন্তু
পরীক্ষা শুরু হবে। সে
উঠবে, আর শুরু করবে ওয়া তু থি। ” হ্যাঁ কথাটা আমাকে নিয়েই হয়। আমি আর্লি রাইসার। সকালে উঠি, আমার জানা সমস্ত শব্দ আর
নাম্বার বলি, তারপর দিন শুরু করি। কিন্তু
সমস্যা একটা , সকালে উঠে সব কিছু গুবলেট পাকিয়ে যায়। একদিন বাবা আগে থেকে ঘুম থেকে উঠে
আমার ভিডিও করে রেখেছিলো সেটাকেই বার বার চালিয়ে দিয়ে আমার অক্ষমতা আঙ্গুল দিয়ে
দেখিয়ে দিতে থাকে। আমি
ভিডিওটাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর বলে যাচ্ছি ,
‘ ওয়া টু
থি , নক এট দা ডোর , ইয়েস পাপা , এ ফর মাক্কি , এলোমেলো পি , জি ফর জিব্বা, ফাইভ
সিক্স , ইটিং সুগার , রোল
ওভা , রোল ওভা , এস ষ্টার , ইভা ইভা , ওয়াশ ওয়াশ ওয়াশ ইওর তিথ , ও - ও - ভাল , আই
এম স্লীপি , জানি জানি , নো পাপা , আই ক্কিম , ………” নাঃ আর
সবটা লিখলাম না। বড্ডো
সম্মানে লাগছে। বাবাও
তো একদিন এসব করতো। আমি
নাহয় মডার্ন যুগের ছেলে , আমার জেনারেশনে ক্যামেরা আছে। আর তার এই মিসইউস। থাকতো বাবার সময় ক্যামেরা , বেরোতো তার অপকীর্তির কাহিনী। তখন কম্পেয়ার করে দেখতাম, কে বেশি ভুল
করে।
No comments:
Post a Comment