Wednesday, April 25, 2018

৪৯) আধ্যানের ডায়েরী - দেশে বিদেশে ( পর্ব - ৪)

এই পায়ে জল দেওয়ার কোথায় মনে পরে গেলো , আই ডোন্ট লাইক বাথরুম হিয়ার। আরে বাথরুম মানেই সবসময় জলে জলাকার।  কেন বাবা?  জলের জন্য জলের জায়গা আছে।  আমাকে ক্লিন করানোর জন্য বেসিন আছে, স্নান করানোর জন্য বাথটব আছে, রান্নার সিংক আছে, সবই তো এখানেও সেম।  তাহলে বাথরুমে এতো জল থৈ থৈ করছে কেন।  মানছি এখানে বাথটাব নেই।  কিন্তু তা বলে বাথরুমের পুরোটাতেই জল থাকবে সে আবার কি ধরণের কথা। সবসময় মনে হয় পরে যাবো। ধুপ করে পরে যাবো।  আর বাথরুমের ভেতর এতো বালতি কেন ? আর সব বালতি সব সময় ভরা থাকে কেন ? এতো জল দরকার কেন? আর জল শুকোয় না কেন ? আমি তো কতবার আমার বাথরুমে জল ফেলে দি। মা এসে কাগজ দিয়ে পুঁছে দেয়।  এখানে দিচ্ছে না কেন? ভিজে জায়গায় আবার জল ফেলে ভিজিয়ে দেয়। এই একটা জিনিসে আমার সত্যি আপত্তি।  ভালো লাগে না।  তাই স্নান করার সময় সেই খেলা করাও আর হয় না।  কোনো রকমে স্নান করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে পারলে বাঁচি।  তার ওপর এখানে বলছে পায়ে জল দাও।  

এখানে পায়ে জল দিলে কিন্তু পা ধোয়া হয় না।  কারণ ধুলো লেগেই থাকে।  আমার পা ধুয়ে দিয়ে যখন গিয়ে মায়ের শাড়িতে পা পুঁছলাম , দেখি মায়ের শাড়ি কালো। ও হ্যাঁ , মা এখানে সারি পড়েছে। কি সুন্দর লাগে মা কে শাড়ি পরে।  যতটা না সুন্দর মা কে দেখায় , তার থেকে ভালো লাগে শাড়ি নিয়ে খেলতে।  এখানে সবাই শাড়ি পরে থাকে।  সব্বাই।  কেউ প্যান্ট শার্ট পরে না।  আমিও বড় হয়ে শাড়ি পড়ব।

যাইহোক ওরা পুতুলটা নিয়ে খেলছিল , আর আমি বোর হচ্ছিলাম।  কিছুক্ষন পর ঘুম পেয়ে গেলো।  ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আবার আগের বাড়িতে ফিরে এসেছি।  খুব খিদে পেয়ে গেছিলো।  কিন্তু মা কে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। বাবার কাছেই ঘ্যান ঘ্যান করতে আরম্ভ করলাম।  কিছুক্ষন পর দেখি মা আবার খিচুড়ি নিয়ে চলে এসেছে।  তখন খিদের মাথায় , ওই খিচুড়িই আমার কাছে অমৃত লাগার কথা।  কিন্তু মুখে দিতেই আমার ব্রম্ভান্ড জলে গেলো।  পাশ থেকে কে যেন বললো , ‘ভোগের খিচুড়ি ভালোই লাগবে।’ সে আবার কি জিনিস।  ভোগের খিচুড়ি।  কি ভয়ঙ্কর খেতে।  সাংঘাতিক ঝাঁঝালো।  মুখে নিতেই পারছিলাম না।  একদম ভালো লাগছিলো না।  মা কয়েকবার মিষ্টি করে চেষ্টা করে বাবাকে ধরিয়ে দিলো।  বাবাও চেষ্টা করে বুঝতে পারলো যে ওটা আমার ভালো লাগছে না।  ভালো খারাপের ব্যাপার নেই।  আমি খেতেই পারছিলাম না।  কোথায় মা সুন্দর করে আমার জন্য স্পেশাল খিচুড়ি বানিয়ে দেয় , আর কোথায় এই ভোগের খিচুড়ি।  খুব বাজে , খুব বাজে।  যাইহোক মা শেষমেশ ওট মেখে এনে আমার প্রাণ বাঁচালো।  একে খিদেতে পেট জ্বলছে , তারওপর ওই ভয়ঙ্কর পেট জ্বলা খিচুড়ি।  এক পেট খেয়ে তখন দেখি এনার্জি তুঙ্গে।  


আর তখন বাড়িতে প্রচুর লোক আসছে।  সবাই আসছে আর আমাদের বাগানে রাখা টেবিলে বসে পড়ছে।  টেবিল গুলো বেশ মজাদার।  আমি ধাক্কা দিলেই পড়ে যাচ্ছে।  কিন্তু তাতেই বসে লোকেরা খাচ্ছে।  যত লোক আসছে , তত লোক আমাকে চটকাচ্ছে।  আর আমাকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।  প্রথম প্রথম আমি জেন্টেলম্যানের মতো সবার কোলে যাচ্ছিলাম।  কিন্তু কিছুক্ষন পরে আর পেরে উঠলাম না।  তারপর আমি দৌড়াতে শুরু করলাম যতক্ষণ না  হাঁফিয়ে উঠি। 

বিকেলে যখন বাড়ি ফাঁকা।  তখনও আমি ক্লান্ত হইনি।  কিন্তু সবাই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছে।  আমি দেখলাম আমি তো না খেললে বোর হয়ে যাবো।  সবাই এদিক ওদিক বসে আছে। কেউ খাটে কেউ চেয়ারে , আবার কেউ কেউ দাঁড়িয়ে আছে । আমার কাউন্টিং খেলা শুরু করলাম।  ঠাম্মা নিচে বসে ছিল, আমি হাত ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে খাটে বসলাম আর বললাম , “ওয়ান” . নেক্সট হলো আমার জেম্মা ঠাম্মা মানে আমার বাবার বম্মা।  তাকেও চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ঠাম্মার পাশে বসলাম আর বললাম , “তু” , এরপর ছিল জেঠু।  বসেই ছিল তাই নাম দিলাম , “থি” এরপর মা কে বসাতে গেলাম কিন্তু মা বসলো না।  আর বাবা আমার দিকে ফোন তাক করে ছিল।  তাই বেশি পাত্তা দিলাম না। মা যেহেতু বসলো না।  তাহলে সবাইকে আবার দাঁড় করিয়ে দি।  সবাই কে আবার এক এক করে হাত ধরে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলাম।  এবার পালা আমার সাথে “ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ” খেলা।  ওই যেরকম ফাইভ লিটিল ডাক্স গুলো করে , ওরকম ভাবে হাত দুটোকে ঝাপটাতে হবে , আর মুখ দিয়ে দিয়ে বলতে হবে , ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘ । এটা দেখেছি অনেকেই বেশ ভালো খেলে।  কিন্তু সবাই একসাথে যে করবে সেটা ভাবিনি।  আমি যেই বললাম ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘ সবাই দেখি উত্তরে করলো ‘ ইয়া ইয়া ইয়া ইয়া ‘।এই তো।  ফোর বিগ ডাক্স আর আমি  ফাইভ।  বেশ কিছুক্ষন করার পর সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়লো।  তখন আর আমি ওদের ছেড়ে দাদার সাথে খেলতে লাগলাম।  

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দাদা চারটে বালতি নিয়েছে।  আর তাতে জল ভরে কি একটা জিনিস গুলছে।  কি সুন্দর সব রং হয়ে যাচ্ছে বালতি গুলোতে।  আর একটা থালাতে , নানা ধরণের রঙের গুঁড়ো রাখা রয়েছে। কিন্ত মা কিছুতেই আমায় এগোতে দেবে না।  বাবা মাঝে মাঝে এগিয়ে আসছে ছো মেরে তুলে নিয়ে যাবার জন্য।  কিন্ত মা একেবারে অগ্নিমূর্তি ধরেছে।  তারপর সবাই আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিয়ে দেখলাম থালা থেকে ওই গুঁড়ো গুলো তুলছে আর একে অপরের মাথায় মাখাচ্ছে।  এ কি রকমের খেলা।  আমিও খেলবো।  কিন্ত কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই কিরকম ভয়ানক দেখতে হয়ে গেলো।  ওই গুঁড়োগুলো তো সুন্দর সুন্দর রঙের ছিল।  কি করে সবাই কালো হয়ে গেলো? কাউকে চেনা যাচ্ছে না।  বাবা আবার দাদারা পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে।  আর দাদা কেঁদে কেঁদে ফিরছে।  আমি রীতিমতো কনফিউসড হয়ে গেলাম এবার কি করবো ভেবে। মাও উশখুশ উশখুশ করছিলো , এবার জেম্মা গিয়ে মা কে ধরে ওই গুঁড়ো মাখিয়ে দিতে আমার গায়েও কিছুটা লেগে গেলো।  একটু টেস্ট করে দেখলাম সেটা মোটেও খাবার জিনিস না।  ততক্ষনে সবাই আমাকে এক এক আঙ্গুল করে লাগিয়ে দিয়েছে।  কেউ আমাকে বিশেষ মাখাইনি।  আর আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না এতে খুশির কি আছে।  তাই সবাই যখন ছবি তুলছিলো আমি বেশ গোমড়া গোমড়া মুখ করেই ছিলাম।  

রাতে আমরা আবার বাড়ি ফিরে এলাম সেই গাড়িটা করে।  রাস্তায় একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে বাবা কি একটা কিনে এনে সবার হাতে ঠোঙা করে করে ধরিয়ে দিলো।  চপ মুড়ি।  এটা নাকি পরম চরম উপাদেয় খাদ্য।  মানছি মুড়ি একটা সত্যি উপাদেয় খাদ্য।  আমি খুব ভালোবাসি, কিন্তু চপের গন্ধ আমার বিশেষ সুবিধার মনে হলো না। যাই হোক আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম তখন রাত হয়ে গেছে।  

এবার বাবার পার্টি।  বাবা হেব্বি এক্সাইটেড ছিল বাবার বন্ধুদের কাছে আমাকে দেখানোর জন্য।  আমার নাকি ওখানে অনেকগুলো দাদা আছে।  আমার থেকে সবাই বড়।  অনেক বড় কিন্ত আমার গলু দাদার মতো বড় নয়।  আমিও এক্সাইটেড ছিলাম সবার সাথে দেখা করার জন্য।  বিকেলে আমরা সাজুগুজু করে প্রথমে বাবার এক বন্ধুর বাড়ি যাবো।  সেখানে আমার দুজন ফ্রেন্ড আছে।  তাদের সঙ্গে খেলা করে আমরা যাবো আরেকটা বাড়িতে। সেখানে সবাই আসবে।  আমরা আবার টোটো চেপে প্রাণ হাতে করে অন্ধকার রাস্তা ধরে যখন গিয়ে হাজির হলাম তখন আমার শরীর হঠাৎ করে খারাপ লাগতে লাগলো।  কি জানি কি হলো , পেট ঘুলিয়ে পটি হয়ে গেলো।  আর পটি হতেই কি যন্তন্না। এতো কনফিডেন্স নিয়ে এতদিন ছিলাম।  কোনো কিচ্ছু হয়নি।  যেদিন হওয়ার কথা ছিল না সেদিনই শুরু হলো সেই ভয়ঙ্কর ডাইপার র্যাশ।  কি লজ্জা, কি লজ্জা। বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না।  সরি বাবা।  কিন্তু কাকুটা বললো , কোনো অসুবিধা নেই।  সবার সাথে দেখা করে তার পর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যাস।  সেদিন আবার আমার ওই ফ্রেন্ড দুজনেরও শরীর খারাপ।  তাই ওরাও নাকি যাচ্চে না।  আমি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।  

কিন্ত ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাকুটা বললো সবাইকে ওর বাইকে চেপে পড়তে। এই বাইক জিনিসটা এখানে প্রচুর।  বাবার একটা সাইকেল আছে।  যখন বড় ঠাম্মার বাড়ি গেছিলাম তখন বাবার সাইকেলে চেপেছিলাম।  কি সাংঘাতিক।  আমার জন্য একটা ছোট্ট সিট ছিল সামনে। জেঠু বলেছিলো ওটা নাকি বাবা যখন ছোট ছিল তখন বাবার জন্য বানানো হয়েছিল।  আমি বেশ খুশি হয়ে ওর ওপর উঠতে গিয়ে দেখি এ তো টোটোর থেকেও খারাপ অবস্থা।  ভাগ্যিস চালিয়ে নিয়ে যায়নি।  নাহলে যেকোনো সময় আমি ধরাম করে পরে যেতাম। যদিও সাইকেল অনেক আস্তে চলে।  তবু পরে গেলে খুব লাগতো।  আর এই বাইক তো পুরো সাইকেল এর মতো , কিন্তু অনেক জোরে চলে।  আর তার মধ্যে চারজন ঢুকবো কি করে। 
  

প্রথমে ওই কাকু।  তারপর আমি তারপর মা , তারপর বাবা চেপে বসলাম।  আমার তো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি।  কাকুটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলাম।  এক হাতে কাকুকে ধরেছি, আর মা কে সমানে ঠেসে যাচ্ছি।  জানিনা বাবা কি ভাবে বসে ছিল। আর তিনজনেই মোটা মোটা।  কিছুতেই ফিট হচ্ছিলো না। আর তারপর যখন বাইক ছেড়ে দিলো তখন তো টলমল টলমল করছে পৃথিবী।  আমার প্রাণ যায় যায়।  কিন্তু বেশিক্ষন ওতে বসতে হলো না।  কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম।  আমার খুব ঘুম পেয়েগেছিলো।  ঘরে ঢুকে মায়ের কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।  ঘুম ভাঙলো , দেখি আমি আবার বাড়িতে চলে এসেছি।  ব্যাপারটা কি ? বাবা নেই।  বাবা নাকি এসে আমাদের রেখে চলে গেছে। আমার ফ্রেন্ড দের নাকি কেউ আসেনি শুধু এক জন ছাড়া।  কি আর করবো।  তার সাথেও দেখা হলো না।  কিন্তু ওই ডাইপার র্যাশটা বড্ডো জ্বালাচ্ছিলো।  সারা শরীর ছেড়ে দিয়েছিলো ক্লান্তিতে।  আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।  

ঘুম ভাঙলো প্রচন্ড পেটের যন্ত্রনায়।  সাংঘাতিক যন্ত্রনা।  সে যন্ত্রনা আর বলে বোঝাতে পারবো না।  দেখি মা , ঠাম্মা , দাদু আমাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।  হঠাৎ বাবা একটা কাকুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।  আমি নাকি ঘুমের মধ্যে ঘন্টাখানেক ধরে কাঁদছি।  সাংঘাতিক কাঁদছি।  জেগে যখন এতো কষ্ট হচ্ছে তখন নিশ্চই ঘুমের মধ্যে আরো কষ্ট হচ্ছিলো।  আমি তো আর বড়দের মতো বলে বোঝাতে পারবো না কোথায় কষ্ট হচ্ছে।  এই কাকুটা আমার জন্য একটা ওষুধ এনেছিল।  ওটা খাইয়ে দিতে ক্লান্ত শরীর আরো এলিয়ে পড়লো।  দেখলাম বাবা কাঁচুমাঁচু হয়ে একবার আমার দিকে , একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।  সরি বাবা।  এরকম করে তোমার পার্টি পন্ড করে দেওয়ার জন্য।  খাওয়াটা যদি আমার হাতে থাকতো তাহলে হয়তো ব্যাপারটা এরকম হতো না।  তোমরাই একরকম জোর করে গেলানোর চেষ্টা করো আর তাতেই আমার শরীর খারাপ হয়।  আমার কোনো দোষ নেই।  

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো 

No comments:

Post a Comment