ওই আসছে। আসছে , আসছে , আসছে। হ্যাঁচ্চো
আবার হ্যাঁচ্চো। উফ বাঁচলাম। কিন্তু না একটু পরে আর বাঁচবো না। আচ্ছা আমি শিশু বলে কি বড়ো হইনি? আমার কি অসুখ হলে
ওষুধ খাবার রাইট নেই। সর্দি কাশি কি আমি ইচ্ছা
করে করেছি। টেম্পোরারিলি তোমাদের ওপর আমার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি। হোটেলে যেমন সব কিছু হোটেলের দায়িত্ব , এখানেও তোমাদের।
তোমরা টেম্পারেচার মেইনটেইন করতে পারছো না।
আর আমি একের পর এক সর্দি কাশিতে ভুগছি।
বাবা মা এফ এম সি জি হলে আগে কনসিউমার কোর্টে কেস ঠুকে দিতাম। চূড়ান্ত গাফিলতি। আরে বাইরে বরফ পড়ছে , আমার কিউরিওসিটি তো জাগবেই। হাজার হোক নতুন পৃথিবী , এক্সপ্লোর তো করতে হবে। ডেঞ্জার সাইন কি আমার বাবা দেবে। থুড়ি ,
বাবাকেই তো দিতে হবে। সে ব্যাটা এখনো হাজার
মাইল দূরে। ঠিক আছে , নার্সটা তো দেবে। আমি দিব্যি গিয়ে ঠান্ডা দরজায় হাত লাগালাম , আর
যায় কোথায় , হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো স্টার্ট।
একটু বেশিই কনফিউসড হয়ে গেছিলাম। দিলাম
হাত , আর সুড়সুড়ি এলো নাকে। পরের বার সোজা
গিয়ে নাক ঠুকে দিলাম। তাতে হাঁচি তো হলোই
, নাকের ওপর আবার লাল দাগ। ডিফিকাল্ট , সিরিয়াসলি
, পৃথিবীটা বেশ জটিল। এই যে আমার মহান মাতৃদেবী
যেটাকে ঘর বলে , সেটা একটা অবাক জায়গা। জানলায় হাত দিলে ঠান্ডা আর ঘরের মাঝখানে বসে থাকলে ঘাম ছাড়ে। মাঝে মাঝেই দেওয়ালে একটা বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে
, একবার সত্তর একবার বাহাত্তর কি সব মন্ত্র বলতে থাকে আর নব ঘোরাতে থাকে।
মাঝখানে আমি মোটামুটি নিয়ম করে ফেলেছিলাম। শুক্রবারে শরীর খারাপ করতাম। শুক্র শনি রবি ঘ্যান
ঘ্যান করে মায়ের বারোটা বাজিয়ে আবার সোমবারে ঠিক হয়ে যেতাম। আচ্ছা এই ফাঁকে আমার ঘ্যান ঘ্যানের ডিটেলস দি। সর্দি কাশি হলে আমি কেন গুষ্টির সবাই ঘ্যান ঘ্যান
করে। কিন্তু আমি করলেই তাকে ঘ্যান ঘ্যান বলা হয়। যেহেতু আমার এনার্জি বেশি , তাই আমি বাকিদের মতো
ঝিমিয়ে পড়িনা। চিৎকার টাকে কমিয়ে দি। সেটাকে
এই বিদ্যার ডোবাগুলো ঘ্যান ঘ্যান নাম দিয়েছে।
একদিন ইচ্ছা করে নেতিয়ে পড়েছিলাম। ও
বাবা তুলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে গেলো। মা
মোটামুটি আরেকটু হলে কোলাপ্স করে যেত। থাকে
বাবা একটাই নার্স। এখানে আবার কাজের লোক পাওয়া যায় না। তাই মেনে নিলাম এই নোংরা ওয়ার্ড।
আর এই শরীর খারাপের কারণ আর কিছু না। ওই ডে কেয়ার।
এমনিতে জায়গাটা আমার বিশাল পছন্দ। সব
আমার মতো গুরুজন পীড়িত লোকজন থাকে। বেশ পছন্দ
ছিল জায়গাটা। ওর ডিটেলস অন্যদিন লিখবো। যাইহোক , কিন্তু ওর মধ্যে একজন দুজন ছিল যারা এই
সর্দি কাশি বাড়ি থেকে নিয়ে আসতো। একটা মেয়ে
আবার আমায় শিখিয়েছিলো জিভ দিয়ে নাকের ঠোঁটের ওপর চাটতে। বেশ নোনতা নোনতা লাগে। শিকনি পুঁছে দিলেও নোনতা
স্বাদটা যায়না। ওর সাথে খেলা করতে করতে মাঝে
মাঝে আবার শিকনি আদান প্রদান করতাম। হয়তো সেইসব কারণেই আমার এই সর্দি কাশি সারতো না।
কিন্তু সব কথার শেষ কথা , বড় তো হতে
হবে। আমার বাবা মার্ মতো তুতুপুতু গদাই গণেশ
আমি কিছুতেই হবো না। সলিড , রোবাস্ট এন্ড ম্যাচো। আর তারজন্যে লাগে ইমিউনিটি। আর তার জন্য হোয়াইট ব্লাড কোর্পাসল এর মাসল স্ট্রং
করতে হবে। আর তার জন্য তাদের লড়াই এর জায়গায়
নিয়ে যেতে হবে। তারপর তো হারতে হারতে শিখবে। এইটুকু নলেজ নেই আর বড়ো বড়ো ফুটানি। মাঝে মাঝে মনে হয় বড় হয়ে এদের স্কুলে পাঠাতে হবে। আমার কাছে এরা নেহাতই শিশু। এদের সাথে থেকে থেকে আমার ধার কমে যাচ্ছে। যেদিন কথা বলতে শিখবো , সব ভোঁতা হয়ে যাবে। তারপর স্কুলে দেবে এদের বোকা বোকা পড়াশুনা করতে। উফফ কি জ্বালা।
সে থাক , সবাই নিজের নিজের ভাগ্য নিয়ে
জন্মেছে। সেদিন ক্যাথরিন বলছিলো ওর মা নাক
পরিষ্কার করার টিস্যু ফেলে না। ওটা শুকিয়ে
গেলে আবার সেটা দিয়েই নাক পরিষ্কার করে দেয়।
তার থেকে আমার মা অনেক বেটার। কিন্তু
টেম্পারেচার কন্ট্রোলে আহাম্মক। আস্ত গর্ধব। ল্যাজ শুধু খসে গেছে। শুধু কিছু হলেই বাবার ওপর চ্যাঁচায় আর আমার নাকে
নুন জল দেয়।
এই সেই অত্যাচার , যার বিরুদ্ধে আমাদের
জেনারেশন সোচ্চার। সেই যবে থেকে জন্মেছি। তবে
থেকে পাঁচবার এই সর্দি কাশির জন্য হাজির হয়েছি ডাক্তারের কাছে। আর ডাক্তার অনেক ঢং দেখিয়ে। এপিঠ ওপিঠ , উল্টে পাল্টে , ঝুলিয়ে দেখে একই কথা
বলে গেছে, "এক বছরের আগে কোনো সর্দি কাশির মেডিসিন নেই। শুধু নাক দিয়ে নুনজল ঢালো।" এই যে সব বড়ো বড়ো
হোতারা চার চোখ দিয়ে আমার ডায়েরি গিলছো তোমাদের যদি নাক দিয়ে জল ঢোকানো হতো তবে কেমন
লাগতো। বিপ্লবীদের নাক দিয়ে দুধ ঢোকানোর সিন
বলতে বলতে তো চোখ দিয়ে জল পরে। আর আমার আমার
বেলায় নিজেই ইংরেজ। লজ্জাও করেনা। এক কাকু এসে আবার বললো , "যত বেশি সর্দি তত
বেশি নুনজল।" আমিও বললাম , "যত বড়ো মাথা তত বেশি গোবর।" আওয়াজ বেরোলো
, "আয়্যাক।" কাকু বললো , "দেখলি আমায় সমর্থন করলো।" আমি মাথা চাপড়ে
চুপ করে গেলাম।
সত্যি এই নৃশংস প্রথা বন্ধ করতে হবে। নয় ইকুয়াল রাইটস নিয়ে আসতে হবে। ছোটদের নাকে যত কলসি , বোর্ডের নাকে তত পিপে। শুধু কষ্টই হয় না , সাথে জিভের স্বাদও চলে যায়। যেটা খুব এম্বাররাসিং। দেখতে পাচ্ছি আপেল স্বাদ আসছে খিচুড়ির। দ্যাটস নট ফেয়ার।
যাইহোক শেষমেশ দাদু এসে রক্ষা করলো।
এখন আমি আর দাদু সকাল সন্ধ্যে বাথরুমে ঢুকে গরম জল চালিয়ে স্টিম নি। প্রথম দিন বোমকে গেছিলাম। ধোঁয়ায় ভরা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। কিন্ত এখন বেশ ভালো লাগে। আস্তে আস্তে ঘাম বেরোতে
থাকে। সমস্ত স্পোর গুলো খুলে যায়। মাথাটা খালি
হয়ে যায়। টোটাল ডিটোক্সিফিকেশন। এতো আরাম হয় যে বুঁদ হয়ে যাই। কিন্তু বেরিয়ে মায়ের কথা শুনে আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে
যায়। একটা ভয়ঙ্কর অঙ্গভঙ্গি করে বিচ্ছিরি ন্যাকা
ন্যাকা টোনে বলে ওঠে , " ওরে আমার লাল বাঁদর এলো রে।" আমি জাস্ট মাফ করে
দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ইগনোর মারি। অসহ্য।
.......
No comments:
Post a Comment