Sunday, July 30, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - মাছ দেখা





দু তিন ধরে শুনছি মাছ দেখতে যাবো। এতোদিন শুনছিলাম বাঙালির ছেলে হয়ে জন্মেছিস , তো মাছ খেতেই হবে।  এখন অন্য কথা শুনছি।  মাছ দেখতে যেতে হবে।  এই বড় বড় লোকগুলো না বেশ কনফিউসিং।  কখন কি ট্রুথ হঠাৎ করে চেঞ্জ করে দেবে বোঝাই যায়না।  আমার যদিও এনালিটিক্যাল ব্রেন উইথ শার্পনেলস , তবু পুরোপুরি ব্যাপারটা প্রেডিক্ট করতে পারলাম না।  মাছ সবসময় কিনে নিয়ে এসে তারপর সেটাকে কেটে ধুয়ে , আমার খিচুড়ির মধ্যে মেখে আমাকে খাওয়ানো হয়।  আর অনেক ধরণের মাছ হয় আর সব কটার বিকট বিকট নাম।  তাই বেছে বেছে ভালো মাছ নিয়ে আসতে হয়।  ঠিক তেমনি আমরা আজকে যাবো মাছ দেখতে। যদি ভালো লাগে তাহলে আমরা কিনে এনে কেটে খেয়ে ফেলবো।  এটাই ডিল। 

কিন্তু মাছ তো সব জায়গাতেই পাওয়া যায়।  তার জন্য দু ঘন্টা ড্রাইভ করতে হবে কেন।  আমার যদিও ভালোই লাগে গাড়িতে করে ঘুরতে।  লম্বা লম্বা ড্রাইভ করতে, ব্র্যাকেটে এস এ প্যাসেঞ্জার।  আমার এখনও পেছন দিকে মুখ করা কার সিট্।  আমি লম্বা হয়ে গেছি, পা টা পুরো ধরে না।  কিন্তু তাও বাবা নতুন ফ্রন্ট ফেসিং কার সিট্ লাগাবে না।  কি না রুল নেই।  আরে বাবা রুল তো ওপেনলি ঢেকুর তোলারও নেই।  ইট কনসিডার এস ব্যাড ম্যানার্স।  কিন্তু কমফোর্টের জন্য তো ঢেকুর তুলতেই হবে।  আমার যে এই পা আটকে যাচ্ছে , আর সেটা চূড়ান্ত ডিসকমফোর্টের সৃষ্টি করছে সেটা কি কেউ বুঝছে।  নাকি মাইনরে কমফোর্টের কোনো অধিকার নেই। 

এই নিয়ে চর্চা অন্য একদিন হবে।  আপাতত যেমন ভাবেই বসি না কেন গাড়ি চললে যে দুলুনি লাগে সেটা প্রাইসলেস।  আমি পেছনের দিকে মুখ করে বসে থাকি আর কাছের মধ্যে দিয়ে কত গাছ হেটে চলে বেরিয়ে যায়।  আমার সাথে কথা বলার মতো সময় তাদের খুব কম।  একমাত্র যখন গাড়ি দাঁড়িয়ে যায় তখন তারা আমার সাথে কথা বলে।  যদিও বেশির ভাগ সময় একটা তিনচোখ জন্তু আমার দিকে তাকিয়ে দুলতে থাকে।  তিনটে চোখ তিন রঙের।  সবুজ, লাল আর হলুদ।  সব চোখ এক সাথে জ্বলে না।  যে সবুজ চোখ খোলে তখন দেখি গারো চলতে আরম্ভ করেছে আর সব গাছ গুলো ছুটছে। 

আমি কিন্তু কখনো গাছেদের ছুটতে দেখিনি - গাড়ির ভেতর থেকে ছাড়া।  আমার ঘরের জানলা থেকে একটা গাছ দেখা যায়।  আমি যখন ছোট ছিলাম। তখন দেখেছি গাছের পাতা গুলো ওই তিনচোখ জন্তুটার মতো রং পাল্টায়।  আর একবার দেখেছিলাম সব পাতা নিচে  পরে গেছিলো।  সে অনেকদিন পর আবার পাতা এসেছিলো গাছে।  এখন সবুজ তকতকে পাতা।  গাড়ি থেকে নেমে অনেকবার বাড়ি গিয়ে ওই গাছটাকে বলেছি একটু ঘুরে আসতে।  কিন্তু ওটা একটা বুদ্ধু গাছ।  মনে হয় বুড়ো হয়ে গেছে।  নড়তে চড়তে পারে না।  কিন্তু মিনিমাম কার্টেসি পর্যন্ত নেই যে আমার কথার উত্তর দেবে।  কথাও বলে না।  হাঁদার মতো হাত পা তুলে বসে থাকে। 

উফফ এই অভ্যেস আমার দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।  টু দি পয়েন্ট , কারেক্ট এন্ড এফেকটিভ স্টেটমেন্ট লিখে যৎকিঞ্চিৎ শ্রমের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট লেখার থেকে আমি শুধু ডাইভার্টেড হয়ে এক্সপ্লেনের পর এক্সপ্লেন করে চলেছি।  হচ্ছিলো কথা মাছের আর চলে গেলাম গাছে। গাছ আর মাছ যদিও বেশ মিল আছে কিন্তু তা বলে কি মাছ গাছে থাকে ? তাই তো ? মাছ কোথায় থাকে সেটাই তো জানিনা।  গাছে তো পাখি থাকে দেখেছি।  উড়ে এসে জুড়ে বসে।  কিন্ত মাছ? ইনকিউসিটিভ চোখ নিয়ে মা কে প্রশ্ন করলাম আর মা বোকার মতো তাকিয়ে হাসলো।  এখনো আমার আর মায়ের মধ্যে সেই পেনফুল ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ। 

মাছ যেখানেই থাকুক আমার জার্নিটা বেশ মজাদার হলো।  একবার মা , একবার দাদু আমার পাশে বসে আমার সাথে সারা রাস্তাটা গেলো।  আমি যদিও মাঝে বেশ কিছুটা সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।  ওই দোল দোল দুলুনিতে কি আর কেউ জেগে থাকতে পারে।  ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন দেখি আমার চার পাশে বিশাল বড় বড় বাড়ির মতো কিছু একটা।  না গাড়ি না বাড়ি।  সামনেরটা তিন কোনার মতো।  বিশাল বিশাল আকার।  বাবা দেখি আবার আমার হাত ধরে টানতে টানতে সেগুলোর মধ্যেই একটাতে নিয়ে যাচ্ছে। সেটা আবার জলে ভাসছে।  বাবা আমায় কোলে তুলে নিতে দেখি সামনে অনেক জল।  তাতে এইরকম অনেকগুলো ভাসছে।  আমরা ওটার মধ্যেই উঠে গেলাম।

ওটার ভেতরে আবার ঘরের মতো।  আমার ঘরে যেরকম টেবিল আছে , সেরকম অনেক টেবিল পাতা।  আমরা একটা বড় একটা টেবিল জুড়ে বসে পড়লাম।  আর মা শুরু করে দিলো অত্যাচার।  ঘুম থেকে উঠলেই নাক টিপে খাওয়ানোটা মায়ের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।  এখানে এতো লোকের মাঝে সেই গেলানোর চেষ্টা চলতে লাগলো।  কোথায় আমি চারপাশ দেখবো, ফীল করবো তা নয়, আমাকে খিচুড়ি খেতে হবে।  মা ও নাছোড়বান্দা। দেখলাম বেগতিক , মা ছাড়বে না।  আমি মোটামুটি আধ বাতি খেয়ে নিলে তবে মা ঠান্ডা। 

ততক্ষনে দেখি গাড়ির মতো এটাও চলতে আরম্ভ করেছে আর সবাই এটাকে বোট বলছে।  বোট চলছে জলের উপর দিয়ে।  সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা বোটের ভিতর ঘরে।  বাবার এই আনসোশাল বিহেভিয়ার পছন্দ হলো না।  আমাকে কোলে তুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।  কি সুন্দর হাওয়া বাইরে।  কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে টের পেলাম কি ঠান্ডা আর কি জোরে হাওয়া দিচ্ছে।  এই ভরা গরমে আমার দান্তে দাঁত লেগে যাওয়ার জোগাড়।  চোখ মেলে তাকাতে পারছি না হাওয়ার দিকে।  মা এসে কি একটা যেন পরিয়ে দিতে কানে ঠান্ডা লাগাটা অনেক কমে গেলো।  কি আরাম।  কিন্তু মোটেই ভালো লাগলো না যখন সবাই আমাকে ছোট্ট ব্লু হনুমান বলতে আরম্ভ করলো।

সে যা হোক।  অনেক্ষন আমি বাবা মা আর দাদু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।  ধীরে ধীরে সবাই একে  একে  ভেতরে চলে এলাম।  ভেতরে আসতে আমার সাংঘাতিক ঘুম পেয়ে গেলো।  এই বোট গাড়িটা বাবার গাড়ির থেকেও বেশি দোলে আর ঝিম আসে।  আমি ধীরে ধীরে ঘুমে ঢলে পড়লাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই বোটের এক দিক থেকে আরেক দিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।  আর আমি একা আমার স্ট্রলারে শুয়ে আছি।  গলা ছেড়ে কাঁদতে যাবো , দেখি বাবা সোজা কোলে তুলে নিয়ে বাইরে নিয়ে চলে এলো।  কি সাংঘাতিক রোদ বাইরে সাথে হু হু করে হাওয়া।  আমি অনেক ছোটবেলা সমুদ্রে গেছিলাম।  তখনও চোখ খুলতে পারিনি , এখনোও চোখ খুলতে পারছিলাম না।  নীল সমুদ্র , হু হু হাওয়া , আর বাবা জোর করে
আমায় কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আমি একবার মাথা ঘুরিয়ে দেখারও চেষ্টা করলাম।  আফটারঅল বাবা তো।  নিশ্চই কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে হুইচ মে বি ইন্টারেস্টিং।  কিন্তু যেদিকে তাকাই , শুধুই তো জল।  আর আমাদের বোটের মতো আরো কিছু কিছু বোট। 

আমার পেছন থেকে সামনে থেকে লোকে কেন যে এতো ঝাপাঝাপি করছে কেন তা বুঝতে পারছি না।  বোটটা এবার একেবারে শান্ত হয়ে গেলো।  সবাই চুপচাপ।  সবাই ক্যামেরা তাকে করে আছে জলের দিকে।  হঠাৎ করে , বিশাল শব্দ করে একটা কি একটা বিশাল মতো জিনিস জল থেকে  লাফিয়ে উঠে ঝপাস করে আবার জলের ভেতর ঢুকে গেলো। 

কি ওটা ? হোয়াট ইস দ্যাট? আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। ওটাও কি আমাদের বোটের মতো বোট।  জলের তলায় ঢুকে যায় ? কি জানি।  সবাই এতো আনন্দ করছে কেন।  সবাই বিশাল খুশি।  বাবাও দেখি সাংঘাতিক খুশি।  আবার সবাই ক্যামেরা তাকে করে বসে আছে জলের দিকে।  কিন্তু অনেকক্ষন কিছু হলো না।  শেষে একটা বেশ কিছু তোলপাড় হয়ে একটা কিছু জিনিস হালকা ভাবে জলের ওপর ওঠে নেমে গেলো।  আর সবাই চিৎকার করে উঠলো ওই তো ওই তো হোয়েল।  মানে তিমি মাছ। 


আমার গেলো মাথা গরম হয়ে।  আমরা আবার ফিরে এলাম আমাদের গাড়ির কাছে।  অনেক্ষন পরে।  আমি ততক্ষনে এই বড় বড় আহাম্মকদের প্রচুর মুণ্ডুপাত করেছি।  এ কি পয়সা নষ্ট।  এই এতটা নিয়ে গিয়ে মাছ পর্যন্ত খেলাম না।  শুধু খিদে বাড়িয়ে নিয়ে চলে এলাম। ওই অতো বড় মাছটা শুধু দেখতে কেউ যায় ? আর তাও এতো দূরে , এতো কষ্ট করে।  বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার মধ্যে তো অনেক সময় চলে গেলো আর মাছ দেখলাম তো পাঁচমিনিট।  এই ঢঙের ঠিক কি মানে আছে বলতে পারো।  আর দেখা দিয়ে কি হয়।  দেখে কি আনন্দ।  সঙ্গে করে নিয়ে এলে আমি একটু খেলতে পারতাম।  কিন্তু না , বাবা হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখলো।  আর আমার চোখ ঝালাপালা করে দিলো।  একবারও চেষ্টা করলো না ওটাকে আমার জন্যে নিয়ে আসার।  যাকগে বয়স বাড়লে আপনিই বুঝতে পারবে কি ভুল আজকে করেছিল।  বাবাটা বড্ডো ইমম্যাচিউর। যাইহোক , শুধু লাস্টের চার লাইনের ফ্রাস্ট্রেশন লেখার জন্য আমিও অনেক ভনিতা করেছি বলে দুঃখিত।  কিন্তু আমি কেন একা ভুগবো , সবাইকে নিয়ে ডুববো। আজ আমার হোয়েল ওয়াচিং এর এখানেই ইতি।         

আধ্যানের ডায়েরি আগের পাতাগুলো 


Tuesday, July 25, 2017

আধ্যানের ডায়েরী - বাবা এলো শেষমেষ


সকালটা একটু অন্য ধরণের ছিল।  সকাল বেলা ইউসুআলি আড়মুড়ি খেতে খেতে মায়ের চটকানি খাই।  কিন্তু আজ যখন ঘুম ভাঙলো, দেখি মা নেই পাশে।  দাদু শুয়ে শুয়ে নাক ডাকছে।  এই নাক ডাকা নাকি শুধু অন্যদের দেখা যায়, নিজেরটা বোঝা যায় না কিছুতেই।  মা একবার আমার ভিডিও তুলে বাবাকে পাঠিয়েছিল।  আর দুজনেই হ্যা হ্যা করে হায়েনার মতো হাসি হাসছিলো।  এটা তো সবাই করে , তাতে হাসির কি হলো শুনি।  আমি মায়ের নাক ডাকা শুনেছি, দাদুর নাক ডাকা শুনেছি , বাবার নাক ডাকা এখনো শোনা হয়নি।  বাবা তো আমার কাছে ছিলই না।  এই গোটা এক বছর একা একাই কাউকে কিছু না দেখিয়ে চুপি চুপি নাক ডেকেছে।  আর কেউ হাসেনি বাবার ওপর। 

আমি দাদুকে ঠ্যালা দিয়ে উঠিয়ে দিতে, দাদু ধড়মড়িয়ে উঠে বসে পড়লো।  দাদুর প্রচুর কর্তব্য কর্মের ওপর নজর।  আমার জন্য ভালোই।  আমার সাথেই সারা দিন থাকে।  দাদু না থাকলে তো আই আম দা অনলি মেল পার্সন ইন দা হাউস।  সেই কর্তব্যকর্ম থেকে দাদু আমায় বিরতি দিয়েছে।  দাদুর সব ভালো লাগে, কিন্তু ডাইপার চেঞ্জ করার সময় এতো জোরে পা টা তুলে দেয়  নাইন্টি ডিগ্রিতে , সেটা প্রায় অসহ্যর লেভেলে। বাকি সবই ঠিক আছে। 

সকালে আমার সমস্ত কাজ এক এক করে সেরে আমি তখন খেলছি।  সব কাজ বলতে , ডাইপার চেঞ্জ করা আর খাওয়া।  রাতের আঁধারে আমার ডাইপার থলেতে রূপান্তরিত হয়।  আমার ডিসপেন্সেবল এন্ড নন কনভিনিয়েন্ট পোর্টেবল টয়লেট।  হ্যা , নন কনভিনিয়েন্ট।  আগেও লিখেছি , আবারো বলছি আর ভবিষ্যতে আবার এই ডাইপারের ঝামেলা নিয়ে লিখবো।  ইট ইস জাস্ট আনাদার ইউসলেস ইনভেনশন।  কিন্তু যেহেতু আমার হাতে শক্তি আর মুখে বুলি দুটোই নেই তাই 'যথা আজ্ঞা' বলে সব কিছু মাথা পেতে নিয়েছি।  আর আমার ঠ্যাং তুলে সবাই মিলে অত্যাচার কন্টিনিউইং।

যাই হোক , আমার সব কিছু হয়ে গেলে আমি বসে বসে হালুমের সেকেন্ড ঠ্যাংটা বানানোর চেষ্টা করছিলাম। কয়েকদিন আগেই ভেঙে দিয়েছি , আজ ভাবলাম জোড়ার চেষ্টা করি।  হঠাৎ দেখি দরজা খুলে গেলো।  আর একটা বিশাল লোক ঢুকলো ঘরে।  আর পেছনে পেছনে মা , হাতে মোবাইল আমার দিকে তাক করা ।  বেশ ঝকঝকে দেখতে লোকটা।  সুন্দর জামা কাপড় পরে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে এগিয়ে এলো।  একদম বাবার মতো দেখতে।  কিন্তু বাবা তো মোবাইলের মধ্যে থাকে।  আমার থেকেও ছোটো।  আমার সাথে কথা বললে মুখ গোল করে একটা অদ্ভুত আওয়াজ বার করে।  আর তাতে আমার বেজায় হাসি পেয়ে যায়।  বেশ মজাদার শব্দটা।  কিন্তু এটা কে।  বাবার নকল? এখানে অনেকেই আসে।  সাগ্নিক কাকু আসে , অর্ণব কাকু , ভাস্কর কাকু , সবাই অনেক বড় বড়।  বাবার মতো বেশ ছোট্ট খাটো হাতে ধরা যায় এরকম নয়।  কিন্তু সবাই আসে কাকিমার সাথে।  কিন্তু এ আবার কে , যে মা সঙ্গে করে নিয়ে এলো। 

সাথে আবার মা মোবাইল ধরে আছে যে ভাবে তাতে ব্যাপারটা বোঝাই যাচ্ছে যে ক্যাপচারিং দা মোমেন্ট।  কি এমন গুড় আছে এই কালো লোকটার গায়ে।  বাবার মতো দেখতে বটে , কিন্তু বাবা তো অনেক ফর্সা।  এ তো দেখছি কালো।  আর এ তো পাহাড়ের মতো বড়।  লম্বা চওড়া ওই টিভিটার মতো।  আমি তো এক হাত দিয়ে ধরতেই পারবো না।  আমি একেবারে থতমত খেয়ে গেলাম।  একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছি , একবার মায়ের দিকে।  একটাই শান্তি , মায়ের মুখে একটা বিশাল শান্তির হাসি।  কি সুন্দর লাগছে মা কে।  তাহলে এই লোকটা কি সত্যি সত্যি আমার বাবা?

যদি বাবা হয় তাহলে আমার এখন ঠিক কি করণীয়।  হাসবো , আনন্দে লাফাবো না অভিমান করে দুঃখে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদবো।  যদি বাবা হয় তাহলে তার ওপর রাগ করাটা আমার কাছে স্বাভাবিক।  সবার বাবা সবার সাথে থাকে আর আমি শুধু একা , একা পরে আছি এখানে।  তার ওপর আমার জন্মদিনে, আমার ফার্স্ট জন্মদিনেও এলো না।  আমি বাবার ওপর রাগ করে আমার ডাইরি লেখা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলাম।  আই হ্যাভ টু শো দা ওশেন অফ অ্যাংরি সরো টু হিম।  কিন্তু যদি এটা বাবা না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে তো নাম ডুবে যাবে।  ঘ্যান ঘ্যানে ছেলে হিসেবে মার্কেটে প্রজেক্টেড হবে।  আর যদি মা এই লোকটাকে বাবার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নিয়ে আসে , হুইচ আই সাপোর্ট সিইং হিস্ ডিডস, তাহলে তো পুরো কেলো।  ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইস লাস্ট ইম্প্রেশন। 

ভাবতে ভাবতে মুখ থেকে একটা ক্যাবলা ক্যাবলা হাসি বেরোতে না বেরোতে লোকটা আমায় কোলে তুলে নিলো।  কি অদ্ভুত এক সুন্দর অনুভূতি।  কি ভালো লাগলো।  আগেও অনেকে আমায় কোলে নিয়েছে।  কত কাকু আমার সাথে কত খেলা করেছে।  কিন্তু এ যেন একদম অন্য রকম।  এই লোকটার থেকেও অনেক শক্তিশালী লোক আমায় কোলে তুলেছে।  কিন্তু এর মতো শান্তি শালী কেউ না।  সবাই কেমন যেন ভয়ে ভয়ে আমায় কোলে নেয়।  এর যেন কোনো ভয় নেই।  যেন আমি লোকটার নিজের শরীরের একটা পার্ট।  আমার এই হাতটার মতো , যেমন আমি যখন ইচ্ছা তুলি আর নামাই, লোকটা যেন ঠিক সেই ভাবে আমায় নিয়ে খেলা করতে লাগলো।   

আমার তখন খুবই কনফিউসিং অবস্থা।  কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।  শেষমেশ আমার সেফ কর্নার মায়ের দিকেই হাত বাড়ালাম।  মা তখন আমায় কোলে নিয়ে নিলো।  মা কোলে নিতেই বুঝতে পারলাম মা কি খুশি।  মায়ের সারা শরীর তখন কাঁপছে আনন্দে, আর মায়ের হাসি একদম অন্য।  তাহলে কি মা চাইছে যে আমি ওই লোকটার সাথেই খেলা করি।  এই লোকটা মায়ের যতটা কাছে আসছে ততটা কিন্তু কাউকে আসতে দেখিনি।  এমনকি দাদুকেও না।  মায়ের কোলে থাকতে থাকতে দেখি লোকটা আবার হাত বাড়াচ্ছে আমার দিকে।  তখন মা বলে উঠল , "যা , বাবা তো। "

আর কোনো সন্দেহ নেই।  এই লোকটাই বাবা।  মোবাইলের ছোট্ট ঘরে ছিল।  এখন বড় হয়ে গেছে।  মা কখনো মিথ্যে বলবে না আমায়।  এটাই বাবা।  এ-টা-ই সেই বাবা।  আমি সেই চোখ খুলে এটাকেই দেখেছিলাম। ঠিক তো।  তখন তো বাবা এতই বড় ছিল।  কি কষ্ট করে ওই মোবাইলের ছোট্ট ঘরে ঢুকে বসে ছিল।  এটাই তো।  আমার সব রাগ গলে জল হয়ে গেলো।  সবার মতো আমারও বাবা আছে।  এখানে , আমার কাছে।  আমার বাবা।  মাইন্ ওনলি। শুধু আমার।  আর কারো না।  কেউ চাইলেও দেব না।  এতদিন পাইনি।  আর ছাড়বো না।  এবার আমি আর বাবা, বাবা আর আমি।  শুধু আমরা দুজনে।  না , দুজনে না।  আমি , বাবা আর মা।  তিনজনে। 

বাবা দেখি আবার মোবাইল খুলছে।  নানা আর ওই ছোটো ঘরে যেতে হবে না।  আমাদের এখানে অনেক বড় বাড়ি। এখানেই থাকো।  এখানেই আমরা হালুম আপ্পু নিয়ে খেলবো।  তারপর গাড়ি করে ঘুরতে যাবো।  ও আচ্ছা।  মোবাইলে দেখি ঠাম্মার মুখ।  ঠাম্মা এখনো ওই ছোট্ট ঘরে থাকে।  তাহলে এটাই সেই বাবা। বাবা আমায় আর মা কে ধরে তিনজনকে দেখাতে লাগলো ঠাম্মা কে।  ওই তো দাদু।  শেষমেশ তাহলে বাবা আমার কাছে চলে এসেছে।  সবাই খুশি খুশি।  কি আনন্দ। 

আমার তখন ভীষণ মজা।  প্লাস , বাবা একটা অদ্ভুত জিনিস করলো।  আমাকে কাঁধে তুলে নিলো।  কি মজা।  বাবা আমার গাড়ি।  প্রথমে আমার বসতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো।  এরকম ভাবে তো কখনো কারোর ঘাড়ে চাপিনি।  আর ঘাড়ে চাপলে, কেমন ভাবে বসলে ঠিক হবে সেটাও জানিনা।  শুধু দেখেছিলাম অন্যদের, তাদের বাবাদের ঘাড়ে চাপতে। এখন আমারও বাবা আছে , আমিও চাপবো।  ব্যাপারটা অদ্ভুত তবে আমার কার সিটের থেকে ভালো।  ও মা , এ কি করতে আরম্ভ করলো বাবা।  একবার সামনে পরে যাবো , পরে যাবো ভাব।  আবার উঠে যাচ্ছি।  বেশ দুলুনি খাচ্ছি।  কিন্ত হেব্বি ভয় করছে।  আমি নেমে যাওয়ার চেষ্টা  করতে বাবা দেখি নামিয়েও দিলো।  বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা যে আমার ভয় লাগছে। 

এরপর তো সারাদিন শুধু মাঝে মাঝেই এসে আমায় চটকে যাচ্ছে।  আর মা কে বার বার বলছে , “একটু চেটে  নি এটাকে” . আর মা এক ধমক দিয়ে আটকে দিচ্ছে।  আমি কি ললিপপ নাকি। আমার দুপুরের ন্যাপের সময় রোজকারের মতো খালি খালি নয়।  আজ বাবা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়েছিল।  আমিও দিব্যি পোঁদ উল্টে ঘুমিয়ে নিলাম অনেকক্ষন।  বেশ আরাম। 


আমি ভেবেছিলাম আর আমার ডায়েরি লিখবো না।  বাবার ওপর প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল।  কিন্তু এখন যখন বাবা চলে এসেছে আমার কাছে, তখন তো জীবন সাংঘাতিক রঙিন।  সবার মতো তো আর বাবা ভীতু নয়।  এখন থেকে আমার লাইফ ইস ফুল অফ এডভেঞ্চার।  অনেক ঘটনা, অনেক খেলা অনেক কিছু আমার লাইফে এক এক করে ঘটতে থাকবে।  অনেক কিছু শিখতে থাকবো আর ভুল করলে বাবা আর মা সেই ভুল ঠিক করে দেবে।  এন্ড দ্যাটস নিড টু বি রিটেন এন্ড প্রিসার্ভ সামহোয়ার টু শো ইট টু দা নেক্সট জেনেরেশন। তাহলে আর কি, আমার ডায়েরির সিসন টু চালু হলো।   

             আধ্যানের ডায়েরি সিসন ওয়ানের পাতাগুলো