সেদিন খুব রাগ হয়ে গেছিলো। যদি গ্রোথ মাইলস্টোনই হয় তাহলে এতো
বারণ করা , এতো রাগ ঝাল , এতো তেল দেখানো কেন বাপু। নিচের তলার উইচদের থেকে কমপ্লেন আসার
পর থেকে বাবা মা যেন ক্ষেপে উঠেছে। আমি একটু জাম্প করলেই বাবা লায়ন এর মতো
রোর করছে, আর মা মাঙ্কির মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে তেড়ে আসছে। অথচ টিভিতে
বেজে চলেছে টেন লিটিল মাঙ্কি জাম্পিং অন দা বেড। যতবার দেখবো , ততবার করবো তবেই না ভীত
মজবুত হবে। তবেই না আমি বড় হবো। তবে কেন এতো সমস্যা।
সেদিন সারাদিন জাম্প করিনি রাগ করে। খুব রেগে
গেছিলাম, কারণ আমি একবার জাম্প করার পরেই বাবা ধরে নিয়ে বসিয়ে চোখ দেখিয়ে চিৎকার
করেছিল। যদিও আমি এখনো
ঠিক ঠাক এক্সপ্রেশন গুলো আলাদা করতে পারিনা। কিন্ত সেদিন কেন জানিনা বুঝতে
পেরেছিলাম সেটা মজার এক্সপ্রেশান নয়। তার ওপর আমার আবার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে
দিয়েছিলো। সে ঝাঁকুনিতে বুঝতে পেরেছিলাম হাওয়া ভালো নয়। অগত্যা , গোঁজ
মেরে বসে থাকা।
আমি যখন খেলি তখন বাবা মা এর হাজার ঝামেলা। আমাকে সরিয়ে
দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। আর আমি যদি কিছু না করি, তাহলে অন্য সমস্যা , তখন সবকিছু ছেড়ে আমাকে
টানতে থাকে। সেদিন কেসটাও তাই হয়েছিল। চুপচাপ নিজের মতো খেলছিলাম। হঠাৎ করে
দেখি, তুলে টুলে নিয়ে গিয়ে জামা টামা পরিয়ে টরিয়ে আমাকে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুলল। আমি নীরব। সারা রাস্তা
বাবার গিলটি ফিলিংস বেরিয়ে আসছিলো এ - বি - সি -ডি গান হয়ে। আমি পাত্তা না
দিয়ে চুপ করে বসে ছিলাম।
আমিও তো জানি , এর পর কি হতে চলেছে। সেই নিয়ে যাবে
কোনো একটা গ্রসারি স্টোরে। একটা কিছু খেলনা হাতে ধরিয়ে দেবে। কার্টে বসে
বসে আমি খেলতে থাকবো সেটা নিয়ে। তারপর বেরোনোর সময় সেটা কাউন্টারের লোকটাকে দিয়ে বলবে , "আই
ডোন্ট নিড দিস।" ওরে বাবা, তোমার চাইনা বলে কি আমারও দরকার নেই ওগুলো। মানছি আমি ডে
কেয়ারে যাই, মানছি আমার জন্য মিলিয়ন্স অফ ডলার খরচ হয় কিন্তু এটা মানতে পারছি না
যে , আই হ্যাভ এনাফ। যত খেলবো তত তো শিখবো। আর শিখতে গেলে কি করতে হবে , প্রথমে
খেলনা গুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে, তারপর একটু চেটে টেটে দেখতে হবে , তারপর
একটু ছুঁড়ে দিয়ে দেখতে হবে। তবেই না গিয়ে শিখবো। কিন্ত না , কার্টে বসে যা নিয়ে খেলতে
শুরু করি তাই উধাও হয়ে যায়। আর কয়েকদিন পর যখন ঘুরে আসি , তখন দেখি দোকান থেকেও সেটা
গায়েব হয়ে গেছে। তার
থেকে নাই বা নিয়ে যেতে পারো আমাকে। কিন্তু না , ট্যাঁকে গুঁজে সবসময় এখান
থেকে ওখান আর ওখান থেকে সেখান।
গাড়িটা থেমে গেলো একদম অন্য ধরণের এক ফাঁকা জায়গায়। কি জ্বালাতন,
এই নতুন নতুন জায়গায় বাজার করা মায়ের এক বিচ্ছিরি হ্যাবিট। দোকানগুলোরও সমস্যা আছে
, সবার কার্ট এর সাইজ আলাদা। আর আমার বসার কমফোর্ট লেভেল আলাদা। কোনটা স্মুদ চলে কোনটা খটখটে। আমি অনেক কষ্ট
করে কিছু কার্ট মনের কমফোর্ট জোনে ঢুকিয়ে রেখেছি। আবার মনে হয় এটাকেও ঢোকাতে হবে।
কিন্তু না। না - না - না। আমাকে বিশাল
অবাক করে দিয়ে একটা বিশাল জায়গায় নিয়ে গেলো যেখানে আমার মতোই কচিকাঁচারা খেলছে। আমি ওই বিশাল
জায়গায় ঢুকেই দেখতে পারলাম বিশাল প্লে এরিয়াটাকে। বল পিট্ , স্লাইড , ক্লাইম্বার ,
স্প্রিং রাইডার্স , মেরি গো রাউন্ড , স্পঞ্জ পিট্ কত কি আছে। মায়ের হাত
ছেড়ে দৌড়োতে যাবো, বাবা কোলে তুলে নিয়ে একটা কাউন্টারে গিয়ে একটা লোকের সাথে কত
কথা বলতে লাগলো। আমি হাত পা ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশেষ লাভ হলো না।
মা আমার শ্যু খুলিয়ে , একটা সবুজ সক্স পরিয়ে দিলো। মা ও পড়লো। আমি দৌড়ে প্লে
এরিয়া যাওয়ার আগে মা ধরে নিয়ে গেলো ওপরে আরেকটা জায়গায়। অনেকটা বড়
জায়গা। আর সবাই
লাফাচ্ছে। আমার ভেতর থেকে কি আনন্দই না হলো। আবার চোখে খুশির কান্না বেরিয়ে এলো। এই মা বাবাই
আমাকে সবসময় জাম্প করতে বারণ করে। আর এখানে নিয়ে এসেছে শুধু জাম্প জাম্প
করতে। থ্যাংক কিউ
মামি , থ্যাংক ইউ ড্যাডি।
জায়গাটা হেব্বি মজাদার। গোল গোল খাপ
করা আছে। যাও গিয়ে
লাফাও। ওই একটা
জায়গাতেই দেখলাম বড়রাও লাফায়। আর বড় শুধু না , মায়ের মতো বড়রাও। আমার মতো ছোটরাও ছিল কিন্তু তাদের
সংখ্যা কম। আমি প্রথমে তাদের সাথে জাম্প করতে গেলাম কিন্তু এস ইউসুয়াল আমাকে
কেউ পাত্তা দিলো না। আমিও তখন নিজেই জাম্প করতে লাগলাম মায়ের সাথে। মায়ের সাথে
জাম্প কি আর করতে পারি। মা এসে পড়তেই আমি ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম তখন মা আবার
তুলে দিচ্ছিলো। বাবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁদার মতো দেখছিলো।
এই জায়গাটাকে পরে জানলাম জাম্প পার্ক বলে। আর এই এক
একটাকে বলে ট্রাম্পোলিন। এই ট্রাম্পোলিনে জাম্প করতে কিন্তু অন্য জায়গার মতো কষ্ট করতে হয়
না। একটু জাম্প
করলেই আপনা থেকে জাম্প হতে থাকবে। থামানোই কঠিন। বেশ জাম্প জাম্প করতে
করতে হঠাৎ দেখি একটা ঘেরা জায়গায় সবাই বল খেলতে খেলতে জাম্প করছে। আমিও বল - বল
করতে করতে ছুটে গেলাম। কিন্তু দরজাতেই আমাকে আটকে দিলো। আমি নাকি খেলার জন্য অতো বড় হয়নি।
ওখানে সব বড়রা খেলছিল। আমি অনেক চেষ্টা করলাম ঢোকার কিন্তু কেও সুযোগ ছাড়লো না।
আমিও তখন পাশের স্পঞ্জ পিট্ এ গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। স্পঞ্জ পিট টা
হেব্বি। মাও আমার সাথে
সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো। পড়লে হবে কি। আমার মতো কি লাইটওয়েট। কিছুতেই উঠতে পারেনা। আর যত উঠতে
পারছে না আমিও ঝাঁপিয়ে পরে আরো মা কে নিচে চেপে ধরছি। হেব্বি
লাগছিলো। কিন্তু মা কে
উঠতেই হলো আর উঠতে উঠতে হঠাৎ করে সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। সব লাইট ,
যেখানে যা ছিল সব লাইট। তারপর চিক চিক করে কিছু আলো জ্বলে উঠলো কিন্তু সব নয়। দেখা যাচ্ছিলো
সবকিছু কিন্তু বেশি আলোও ছিল না। যারা সাদা জামা পরেছিল তাদের জামা দেখা যাচ্ছিলো আর সক্সগুলো। বাকি আর কিছুই
দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু মা মুখের মধ্যে কি পুড়েছিল জানিনা , মায়ের টিথ দেখা
যাচ্ছিলো। কি অদ্ভুত দেখতে লাগছিলো জায়গাটা। কিন্তু হেব্বি মজা করেছি।
কিছুক্ষন পর আর দম পাচ্ছিলাম না কিন্তু ঘোর লেগে গেছিলো। থামতে ইচ্ছা
করছিলো না। লাফিয়েই চলছিলাম। আর বার বার চেষ্টা করছিলাম ওই জায়গাটায় ঢোকার যেখানে বড়রা বল নিয়ে
লাফাচ্ছিলো। কিন্তু বাবা ছ্যাঁচরাতে ছ্যাঁচরাতে নিয়ে আসছিলো। কি মানুষ রে
বাবা। কি আর বলবো। যদিও
কয়েকদিনের মধ্যেই আমি শোধ তুলে নিয়েছি, যখন বাবার সাথে এলাম।
--------
আগের দিন মায়ের সাথে জাম্প করছিলাম বাবা দেখছিলো। কিন্ত এবার
বাবার সাথে জাম্প করার পালা। এবার বাবা আর আমি দুজনেই সাদা গেঞ্জি পরে এসেছিলাম যাতে আমাদের
দুজনকেই অন্ধকারে দেখা যায়। আমার যত এরকম লাফালাফির খেলা আছে সবই বাবার সাথে। কিন্তু এই
খেলাটাতে দেখলাম বাবা একটা ঢ্যাঁড়স। লাফাতেই পারে না। আর লাফালে
সারা পৃথিবী কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষন আমার পেছন পেছন লাফিয়ে লাফিয়ে এলো। কিন্তু তারপর
থেকে লং মার্চ। লাফালোই না। শুধু বুলি দিয়ে গেলো মায়ের সামনে। মাঝে মাঝে আমার সাথে এসে লাফাতে গেলো
তাতে কি হলো আমি গিয়ে ছিটকে ছিটকে পড়তে লাগলাম আর ইন্টারেস্টটা চলে যেতে লাগলো ওই
বলপিটের দিকে। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই বাবা ছ্যাঁচরা - ছেঁচড়ি করছে। হেব্বি রাগ
হয়ে গেলো, শোধ নিতে নিয়ে গেলাম স্পঞ্জ পিটের কাছে।
এই স্পঞ্জ পিট্ টা একটু অন্য ধরণের। এক দিক থেকে
গড়িয়ে পড়তে হয় স্পঞ্জ এর মধ্যে তার পর বেশ কিছুটা স্পঞ্জ পেরিয়ে আর এক দিক
থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। আমি দেখলাম বাবা আসছে না। এদিকে আমি একবার গড়িয়ে পরে গেছি। ওই দিক থেকে
ওঠার নিয়ম নেই। আর যদি আমি অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে আসি তাহলে বাবা আর ব্যাপারটা সামাল
দিতে উঠবে না। তাই আমি উল্টো চাল চেলে আবার উল্টো দিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম। তাতে কি হলো ,
যারা ঝাঁপ দিতে এসেছিলো তারা পর পর আটকে গেলো। কেউ ঝাঁপাতে পারছে না, কারণ আমি তখন
স্লাইড বেয়ে উপরে উঠছি। এই সময় বাকি সমস্ত বাচ্চার সময় বাঁচাতে আমার পিতৃদেব আমাকে
নিয়ে দিলেন এক বিশাল ঝাঁপ স্পন্জপিটের মধ্যে। যেমন ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো। মা উঠতে
পারছিলো না বলে হেব্বি খিল্লি করছিলো এবার দ্যাখ কেমন লাগে। উঠতেই পারছিলো
না। অনেককখন চেস্ট
চরিত্র করে যখন অন্য দিকে গিয়ে হাজির হলো তখন একটা পায়ের সক্স হাতে। পুরো নাকানি
চোবানি খেয়ে বাবার অবস্থা দেখার মতো ছিল।
যাইহোক , এই ট্র্যাম্পলিনে ঘুরে এসে বাবা মা কে মাফ
করে দিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি উইচদের থেকে আমাকে বাঁচাতে আর আমার ডেভেলপমেন্টাল
মাইলস্টোন বজায় রাখতে বাবা মা ঐরকম বকে , এবং তারপর জাম্প জাম্প করতে নিয়ে যায়।
হাজার হোক তারাও তো জানে হাউ ফান ইট ইস টু জাম্প ইন জয়। সামনে ঠান্ডা
আসছে। বাড়ি থেকে
বেরোনোর উপায় নেই তাই জাম্প জাম্প -আবার জাম্প জাম্প - আবার জাম্প জাম্প।