Friday, January 19, 2018

প্রবন্ধ ২৪ - অনেক বই একসাথে পড়া



বেশ কয়েক বছর আগে আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছিলো, এক সাথে অনেক বই কি ভাবে পড়া যায়।  প্রশ্নটা হঠাৎ আসেনি।  এসেছিলো, তার কারণ তখন সদ্য সদ্য কাগজের বই থেকে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বই পড়ার চেষ্টা শুরু করেছি। আগে বই কিনতাম , বা ধার করতাম বা লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে আসতাম।  লাইব্রেরি থেকে বই আনার একটাই সমস্যা ছিল বই ফেরত দেওয়ার সময়সীমা।  পাঠ্য বই বা ভোকেশনাল স্টাডি বুক পড়া এক জিনিস, আর কাজের বাইরে হবি হিসেবে কিছু  বই পড়া আরেক। একটা বাধ্যতা , আরেকটা আনন্দ। আমাদের জীবনে কাজের জন্য পড়াতেই বেশির ভাগ সময় চলে যায়।  এছাড়া দৈনন্দিন কাজের চাপে নিজের পছন্দের বই পড়ার সময় বার করা বেশ সমস্যা। তার ওপর আছে ছন্দপতন।  জীবনের যে সময় চাকরির জন্য দৌড়েই চলে যায় সে সময় বড় উপন্যাস ধরলে সে কয়েকদিনের মধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলে পড়া বন্ধ হয়ে যায়।  আমার ঠিক সেইরকমই চলছিল। হঠাৎ করে পেয়ে যাওয়া এক লাইব্রেরি সমান ইবুক পেয়ে গিয়ে আমি তখন খুশিতে আত্মহারা।  অথচ বছরখানেক পরে দেখি আমি কিছুই পরে উঠতে পারিনি।  যেহেতু ফ্রি ডাউনলোড তাই প্রচুর ডাউনলোড করে প্রচুর খাবলেছি।  অথচ শেষ কিছুই করিনি।  বই পড়া আমার ছোটবেলার নেশা।  কিন্তু অফিসের প্রচন্ড চাপের মাঝে বেশির ভাগ সময় পড়া হয়ে ওঠেনা।  তাই আমার জীবন বৃথা বলে ভবিতব্যকেও গালাগাল করেছি।  কিন্তু যখন বুঝলাম এসব গালাগাল করে লাভ নেই , এর একটা সমাধান বার করতে হবে, তখন খুঁজতে লাগলাম কি ভাবে একাধিক বই পড়া যায় এবং শেষ করা যায়।  কিছু মনস্তাত্বিক আর্টিকেল পড়ে নিজের ওপর এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলাম।  

 দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টার পর এখন আমি এক সাথে অন্তত সাতটা বই পড়ি।  না না একদিনে নয় , বা এক সময়ে নয়। আমি এক সাথে সাতটা বই শুরু করি ও শেষ করি।  সকলের ক্ষেত্রে এই ধরণের পাঠপদ্ধতি হয়তো সম্ভব হবে না কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে তার কিছু কারণ আছে।  প্রথম কথা আমার পাঠ বৈচিত্র বিস্তার প্রচুর। আমি একাধারে গল্প উপন্যাসের সাথে প্রচুর নন-ফিকশন পড়ি।  আমি বাংলা ইংলিশ দুই ভাষাতেই পড়ি।  অনুবাদ সাহিত্যে নাক কুঁচকোই না। মোপাসাঁর ফ্রেঞ্চ স্টোরি আমি ইংলিশের বদলে বাংলায় অনুবাদ পছন্দ করি।  শুধুমাত্র ইংলিশ রাইটার এর লেখা ইংলিশ বই ইংলিশে পড়ি।  বাকি সবটাই বাংলায়।  আমি বছরে কটা বই পড়বো সেটা বছরের  শুরুতে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করি।  আর সারা বছর আমার প্রোগ্রেস ট্র্যাক করি।  

এই একসাথে অনেক বই পড়ার জন্য প্রথম কাজ হলো বই সিলেকশন, যেটা সবথেকে ইম্পরট্যান্ট।  আর এটা নিতান্ত ব্যক্তিগত।  আমারটা আমি এখানে বলছি।  আমি  যে যে বই এই মুহূর্তে পড়ছি সেটা দিয়ে শুরু করি।  




১) অসুরা - আনন্দ নীলাকান্তন রাবনের ওপর বই।  রাবনের মুখ দিয়ে বলা তার নিজস্ব আত্মকাহিনী।  সত্য ও শিল্প নিয়ে এক অদ্ভুত জীবনী।  
২) আইসিস - মাইকেল উইস ও হাসান হাসান 
কুখ্যাত আইসিস এর ওপর লেখা এক এনালাইসিস 
৩) এন এরা অফ ডার্কনেস - শশী থারুর 
ইংরেজরা কি ভাবে দেশকে লুট করেছিল তা নিয়ে এক চূড়ান্ত তথ্যমূলক ইতিহাস ভিত্তিক বই।  
৪) শীর্ষেন্দু সেরা ১০১ গল্প 
শীর্ষেন্দুর বাছাই করা ১০১টি গল্প 
৫) ঘুনপোকা - (উপন্যাস সমগ্র ) শীর্ষেন্দু 
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বাছাই করা উপন্যাসের বই এর প্রথম উপন্যাস। 
৬) দা মুঘল সিরিজ - ব্রাদার্স এট ওয়ার - আলেক্স রাদারফোর্ড (  অনুবাদ সাদেকুল আহসান কল্লোল) 
মুঘল সাম্রাজ্যের ওপর লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস 
৭) স্বামী বিবেকানন্দর সম্পূর্ণ বাণী ও রচনা।  

তাহলে বুঝতে পারছেন , আমার বই এর লিস্টে আছে নন ফিকশন , ইতিহাস , গল্প সমগ্র , সামাজিক উপন্যাস , ঐতিহাসিক উপন্যাস ও ধর্মীয় গ্রন্থ।  যেগুলো হয়তো এক আলমারিতে রাখাও যাবে না।  ব্রিটিশদের গালাগালি দেওয়া বই এর পরেই ব্রিটিশের লেখা ভারতীয় ইতিহাসের ঐতিহাসিক উপন্যাস তুলে নেওয়া , বা রাবনের জয়গান গাওয়ার সাথে সাথে ধর্মের সাত্বিক ধারা পড়া , সব কিরকম আজগুবি।  কিন্তু ভালো করে দেখলে একটা ছন্দ পাওয়া যাবে।  

আমরা যখন বই পড়ি তখন আমরা লেখকের চিন্তাভাবনার কবলে চলে আসি।  তাই পরস্পর বিরোধী লেখা পড়লে একটু কষ্ট হয় বটে কিন্ত যুক্তিবাদ বেঁচে থাকে ও চিন্তায় স্বতন্ত্র আসে।  

আমাদের আসে পাশে যা ঘটছে তা যখন বইয়ের পাতায় চলে আসে তখন তা পড়তে বা মনে রাখতে সুবিধে হয়।  আইসিস নিয়ে প্রত্যেক দিন ঘটনা যখন খবরের কাগজে চলতে থাকে তখন এর আভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী পড়লে বুঝা যায় কি হচ্ছে।  আর পড়তেও সহজ হয়।  কিন্তু অবশ্যই ঘুম থেকে উঠে এই বই পড়া যায় না।  কি যায় , সেটা হল ইতিহাসভিত্তিক বা ধর্মীয়।  কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন অপেক্ষা করছেন নেক্সট ট্রান্সপোর্টের জন্যে।  একটা ছোট গল্প টুক করে পরে নিতে পারেন।  

আমি প্রতি বছর একজন লেখককে ধরে পড়া শুরু করি।  একই লেখক ভিন্ন গল্প ভিন্ন ধারায় লিখতে পারেন।  কিন্তু ভাষা পরিবর্তন কম হয়।  তাই যদি একই লেখকের বই এক নাগাড়ে পড়তে থাকেন তাহলে গতি বৃদ্ধি হয়।  কারণ আপনি পরের শব্দ পড়ার থেকে উপলব্ধি করতে পারেন অনেক তাড়াতাড়ি।  শীর্ষেন্দুর অনেক টুক টাক লেখা পড়েছি বটে।  কিন্তু এই বছর ডেডিকেট করেছি তার জন্য।  অন্য লেখক পড়লেও বেশিরভাগ শীর্ষেন্দুরই পড়বো।  দুটো উপন্যাস যদি একই ধারার হয় তাহলে এক সাথে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না।  তাই একটা সামাজিক উপন্যাস ও একটা ঐতিহাসিক উপন্যাস এক সাথে শুরু করেছি।  

আলেক্স রাদারফোর্ডের সাত খন্ডে বিশাল এই ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রথমটা পড়ার পর যেহেতু ভাষা সড়গড় হয়ে গেছে আর লেখক কোন জিনিসে ফোকাস করবে সেটা বোঝা হয়ে গেছে তাতে গড় গড় করে পরের উপন্যাস এগিয়ে  চলেছে।  যদিও তিনি ইংলিশ এ লিখেচেন।  কিন্তু আমি এই বইটা অনুবাদ পড়তে বেশি পছন্দ করলাম কারণ ইংলিশটা বেশ কিছু জায়গায় অতি জটিল করে ফেলেছে । আর নিজের ভাষায় পড়লে মনেও থাকে বেশি।  

শশী থারুরের লেখা পড়তে গেলে মাঝে মাঝেই ডিকশনারি লাগে বটে, কিন্তু ওই বইটা আমি তখন পড়ি যখন আমার মাথা ঠান্ডা আর হাতে সময় থাকে।  এক সাথে অন্তত কুড়ি পাতা না পরে উঠিনা।  

যেমন একই সময় খাবার দিলে কুকুরের ঠিক একই সময় নাল ঝরতে আরম্ভ করে।  আমাদের ব্রেনও তাই।  একই সময়ে একই ধরণের খাবার দিলে ব্রেন ঠিক একই সময়ে একই জিনিস চায় ও মনেও রাখে।  হঠাৎ করে রুটিন পরিবর্তন না করলে আর ডিসিপ্লিন মেন্টেন করলে এই ভাবে বই পড়া সম্ভব হয়।  

এবার আরেকটা আঙ্গিক বলি।  গুডরিডস বলে একটা ওয়েবসাইট / এপপ আছে যেটা বই পড়ুয়াদের ফেসবুক। ওখানে বছরের প্রথমে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়, যে কটা বই পরবেন সারা বছরে।  আমি যেমন পঁচিশ টার্গেট রাখি।  মাসে দুটো বই।  বেশির ভাগ সময় হয়ে ওঠে না।  কিন্তু লক্ষ্য একটা স্থির করলে  ক্ষতি কি।  আর পড়ুয়াদের একটা গ্রূপ সবসময় লাগে।  নাহলে এই অসাধারণ অভ্যাস দুদিনে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।  এই ওয়েবসাইটে অনেক লোক আছে যারা রেগুলার পড়েন ও ছোট ছোট রিভিউ লেখেন।  ভালো লাগবে একাত্ব হতে। নিজে দু লাইন রিভিউ লিখলে আরো বেশি একাত্ব হওয়া যায়।  

মোটামুটি এই ভাবেই এখন কাজের বইয়ের বাইরে প্রচুর বই পড়া সম্ভব করে ফেলেছি দীর্ঘদিনের প্র্যাক্টিসে।  ডিসিপ্লিন ইস দা কি।  পড়ার বই যেমন নিয়ম করে পড়া উচিত , পড়ার বাইরে পড়াতেও একটা নিয়ম আনলে মন আর বুদ্ধি দুটোই খুশি থাকে।  তাহলে আর কি নিজের নিয়ম নিজে বানান আর শুরু করে দিন।    
   


প্রবন্ধ


Thursday, January 18, 2018

রেসিগনেশানের ঠিক আগে


ডান , ডান ,ডান  এবার মেলটা সেন্ড করে দিলেই মুক্তি। শালা অনেক জ্বালিয়েছে।  সেই কবে থেকে প্রোমোশনের জন্যে পাগলের মতো খাটছি , অথচ কোথাও কোনো উচ্চবাচ্চা নেই।  আর আমার হাঁটুর বয়সী ওই মেয়েটার দু দুটো প্রমোশন হয়ে গেলো।  হবে না কেন।  লিপস্টিক লাগিয়ে ও যা পারে , আমি কি তা পারি।  হ্যাঁ মানছি ভালো কথা বলতে পারে সে ।  কিন্ত আমি যা কাজ করি তার তো তিলমাত্রও করতে পারে না।  কথা বলাটা যদিও একটা বিশাল স্কিল। আমিও চাইলেই ডেভেলপ করতেই পারি।  কিন্তু সবাই যদি কথা বলে, তাহলে কাজ কে করবে?  ম্যানেজারটা সময় অসময় খুব বাজে ভাবে অপমান করে।  আমি যখন চলে যাবো, তখন বুঝবে ঠেলা।  আদৌ কি বুঝবে?  নো ওয়ান ইস ইনডিসপেন্সেবল।  কিন্তু তাও, ঝটকা তো লাগবে।  লোকে বলে রিসাইন করার পর নাকি সব কিছু বদলে যায়।  অনেক কিছু নাকি অফার টফার করে।  ঐতো, চন্দ্রিলকে কত কিছু অফার করলো।  কিন্তু ও তাতেও মানলো না।  থুতু ফেলে চলে গেলো। আমাকেও কি অফার করবে ? যদি করে , তাহলে আমি কি করবো ? ছেড়ে দেব।  নাকি অফার একসেপ্ট করব।  বীর হয়ে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ার থেকে পিছিয়ে গিয়ে আবার এটাক করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি ? আমি কি একবার আবার ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নেবো ?  যদি  মেনে যায়।  অপমানের জন্য ছাড়ছি,  না টাকার জন্য ছাড়ছি?  মাইনে যদি বাড়িয়ে দেয় , তাহলে কি আমি থাকবো ? মাইনে বাড়ানো এই বড় কোম্পানিতে হয়তো হবে না।  তাহলে নিশ্চই কিছু ভালো কাজ অফার করবে, বা প্রমোশন দিয়ে দেবে।  প্রমোশন দিলে তো মাইনে বাড়বেই।  বলে দেখতে ক্ষতি কি কালকে?  সবাই তো জানে আমি ডিপ্রেসড।  যখন বলবো আমি অন্য চাকরি পেয়ে গেছি তখন হয়তো নড়ে বসবে।  যদি নড়ে বসে নোটিস পিরিয়ডের মধ্যে  সব কিছু আমার রিপ্লেসমেন্টকে  শিখিয়ে নেওয়ার ধান্দা করে তাহলে তো বিজনেস এস ইউসুযাল। কোনো ঝামেলাই হবে না।    পাত্তাও দেবে না। ধুর ,কাজ হয়তো ট্রান্সফার করা যায়, কিন্তু এক্সপিরিয়েন্স কী করে নিংড়ে নেবে? আসল ক্রাইসিস টাইমে তো অভিজ্ঞতাই ডিসিশান মেকিং এর কাজে লাগে।  ভুগবে শালারা।   ওদের ভুগিয়ে আমার কি কোনো লাভ আছে।  নেভার বার্ন এ ব্রিজ।  যদি খাপ্পা হয়ে গিয়ে কোম্পানি থেকে ব্লাকলিস্টেড করে দেয়? তাহলে।  এতো বড় কোম্পানি যদি ব্ল্যাক লিস্ট করে, তাহলে অন্যরাও আর নেবে না। নানা , লেটারের ভাষাটা পাল্টে দিতে হবে।  কিন্তু এতো সহ্য করেও বুঝিয়ে যাবো না  এদের ডুয়াল ক্যারেক্টার।  যে কোম্পানি এমপ্লয়ি স্যাটিসফ্যাকশান নিয়ে  এতো বড় বড় কথা বলে সেই কোম্পানিরই লোক ছেড়ে চলে যাচ্ছে শুধু ডিস স্যাটিসফাই  বলে।  ইচ্ছা করছে কিছু একটা বড়সর ড্যামেজ করে দিয়ে যাই। এতদিন একই জিনিসে কাজ করছি বলে নাট বোল্ট গুলো তো সব আমার জানা।  কোনোটা আলগা করে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই সব চুর চুর করে ভেঙে পড়বে।  যদিও তাতে আমার যতটা না আনন্দ হবে , তার থেকে সেই লোকটার বাঁশ হবে যে আমার জায়গায় এসে কাজ করবে ।  সে তো কোনো দোষ করেনি। ফালতু তার ক্ষতি করে আমার আনন্দ পাওয়ার কোনো তো মানে হয়না।  দুদিন ডাউনটাইম যাবে, তৃতীয় দিনের থেকে আবার সব ঠিক।  মাঝখান থেকে আমার রেপুটেশনে গ্যামাক্সিন।  পৃথিবী তো এইটুকু।  কি জানি কবে এই লোকগুলোরই আবার দরকার পরে।  মানুষ আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর।  আমি সবথেকে বড় ভুল ওটাই  করেছি।  না মানুষ ধরেছি , না টাকা।  শুধু ভালো কাজ করতে ও দেখাতে  গিয়ে সব বাঁশ হয়ে গেছে। শুনতে হয়েছে “আই ওয়ান্ট ইউ দেয়ার হোয়ার ইউ ফিট বেস্ট ” . উচিত হয়নি আমার।  কিন্তু মানুষই বা ধরবো কি করে। এক একটা সান্ধ্য মদ্যপানে আমার রেটিংয়ের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে কেউ না কেউ।  আমি মদ সিগারেট খাই না বলে , ম্যানেজারের সাথে খাপিটা ঠিকঠাক  হয়নি। ওই যে নতুন ছেলেটা , ও তো যায় বিড়ি খেতে।  সিগারেট না হয় খারাপ, বা খেতেও বাজে।  কিন্ত মদ খেলে কি দোষ হতো।  দাদা তো ট্রিকটা শিখিয়ে দিয়েছিলো।  এক পেগ নিয়ে যা হ্যাজানোর হেজিয়ে জাবি।  শেষে অর্ধেক পেগ রেখে চলে আসবি।  নেটওয়ার্কিং ইস মোর ইম্পরট্যান্ট দেন এনিথিং। ভুলটা আমার।  পরের অফিসে ম্যানেজার কেমন হবে সে আর কি করে জানবো। একটা মানুষকে জানতে তো অনেকদিন লাগে।  বুঝতে তারও বেশি।  আপাতত এই ম্যানেজারের কর্মপদ্ধতি তো জানি।  জানি কি করে একে ম্যানিপুলেট করা যায়।  যা ওর চাই , তা আমি দিতে পারিনা বলেই না আমার কিছু হচ্ছে না।  আর আমি দিতে পারিনা না তা নয় , দিই না।  কিন্তু নতুন কোম্পানি তে তো জানিই না কি দিতে হবে।  উফফফ, ধুনকি তে ইন্টারভিউটা দিয়ে দিয়েছিলাম , ভাবিনি যে হয়ে যাবে।  এখন কি করি।  কিন্তু নিজের কমফোর্ট জোন থেকে না বেরোলে , উন্নতি করা যায় না।  আমি যা করেছি ঠিক করেছি।  আমার তরফ থেকে চেষ্টা করেছি , প্রচন্ড চেষ্টা করেছি।  যখন পাথর নড়েনি , তখন পালানোর চেষ্টা করছি।  কি ভুল করেছি তাতে ? পালাচ্ছি।  মানে , আমি এস্কেপিস্ট।  সব অফিসই তো আবর্জনার স্তুপ।  এক্সপ্লয়টেশন সর্বত্র। এর মধ্যে থেকেই পথ করে নিতে হবে। এখানেই তো আসল চ্যালেঞ্জ।  আমি পিছিয়ে গিয়ে শক্তিসঞ্চয় করে আক্রমণ করার চেষ্টা তো আর করছি না।  আমি পালিয়ে যাচ্ছি।  ছিঃ ছিঃ , কাপুরুষ কোথাকার।  পুরুষই বা কোথায় আছি।  লাথি ঝাঁটা তো চলছেই।  পাল্টা জবাব  দেওয়ার ক্ষমতা তো নেই।  যদি দিতে পারতাম ,আজকে আমি ম্যানেজার হতাম।  এই তেল দেওয়াটাও একটা আর্ট।  দীর্ঘকালের প্র্যাক্টিস। ওই যে বলে না , গিভিং ড্রপস অফ অয়েল ইন রেকটাম অফ ম্যানেজার।  কথাটা ঠিক নয়। সব ম্যানেজার এক জায়গায় তেল খায়না।  অনেকে তো আবার তেল পছন্দই করে না।  ওদের কারো বাটার চাই, কারো  আবার কোলেস্টেরল ফ্রি সয়াবিন অয়েল।  কে কি চায় সেটা বোঝাই তো আসলো তেলি , থুড়ি , এমপ্লয়ির কাজ।  এই সাজানো গোছানো সংসার ছেড়ে চলে যেতে সত্যি মন চাইছে না।  এখানে অন্তত লোকে জানে যে একে কাজ দিলে কাজ হয়ে যাবে।  লেট করে এসে তাড়াতাড়ি চলে গেলে তাই কেউ কিছু বলে না।  এমনকি ছুটি চাইলেও বারণ করে না।  সবাই আসে নানান  সমস্যা নিয়ে।  বেশ একটা রাজারাজা ভাব।  পয়সাই  কি সব কিছু , সম্মানটা কিছুই না? এখানে ম্যানেজার রেস্পেক্ট না দিলেও বাকি সবাই তো পায়ে পড়ে থাকে।  সবার কাছে আমি বিপত্তারিণীর মেল ভার্সন। নতুন কোম্পানি তে ট্রাভেলটাও অনেকটা।  কখনো কি ভেবেছিলাম এই কোম্পানি ছাড়তে হবে ।  তাই তো খুঁজে পেতে বেশি দাম দিয়ে অফিসের  কাছে বাড়ি নিলাম । এখন ছাড়লে আমাকে দুটো বাস চেঞ্জ করে অফিস যেতে হবে।  কত সমস্যা।  আর ওই যে লাঞ্চ গ্রূপ।  কতদিন আমরা এক সাথে খাবার শেয়ার করি।  ধুর ধুর কিসব যে ভাবছি। এতবড়ো ডিসিশনে লাঞ্চ গ্রূপ কোনো ম্যাটারই করে না।  না , যে পথে হাঁটা শুরু করেছি , সে পথে ফেরার পথ বন্ধ।  ফিরলেই , আপোষ করতে হবে।  আপোষ করবো না বলেই তো বালাপোশ থেকে বেরোবো ঠিক করেছি , ফিরলেই আবার পাপোশ। ওরা মনে করে নেবে আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাই পরে আছি সবার জুতো পরিষ্কারের জন্য।  জীবন অনেক বড়।  যখন এখানে এসেছিলাম , তখন কি ভেবেছিলাম এখান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো।  ধীরে ধীরে সব কিছুই তো হলো।  পরের কোম্পানিতে গিয়েও নিজের জায়গা বানিয়ে নেবো।  অন্তত চেষ্টা তো করতে পারি।  ধরাবাঁধা জীবন থেকে তো বেরোবো রে বাবা।  না না আমি ভুল করিনি।  পরিবর্তনই  কনস্ট্যান্ট।  আর পরিবর্তন যারা করতে পারেনা তারা অ্যামিবা। সবাই খায় , হাগে , ওষুধ খায় , আবার খায়।  কেউ তোয়াক্কা করে না।  আমাকে বেরোতেই হবে।  নাঃ আর দোনামোনা নয়।  লেটারের ভাষাটা পরিবর্তন করে, মিষ্টি ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে যে ওরা আমার সাথে যা করেছে , ঠিক করেনি।  তাতে অন্তত অন্যের উপকার হবে।  আর সকলের তরে সকলে আমরা। অনেককেই জানি যারা আমার মতো মাথা গুঁজে পরে আছে সাহসের অভাবে।  আমার এই এস্কেপ , ওদের কাছে গ্রেট এস্কেপ হয়ে অনুপ্রেরণা যোগাবে।  চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।  মাভৈ।  সেন্ড।  

ঠিক আগে সিরিজ