কানাঘুঁষোতে শুনলাম আমাকে সলিড ফুড দেওয়ার কথা চলছে। যাক বাবা লোকে অন্তত বুঝেছে যে বড়
হচ্ছি। ওই ট্যালটেলে দুধ খাওয়ার বয়স শেষ। মনে কি চরম আনন্দ হলো সে আর বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষা করে গেলাম - দুধ দুধ আর দুধ। দুধ কে আদর করে দুদু বললে তো আর টেস্ট বাড়ে না। কিন্তু মা চেষ্টা করে যাচ্ছে। সকাল সন্ধ্যে। আমি ঘুমিয়ে পড়লে চেষ্টা করছে বেশি। কারণ আমি ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারছি আমার পেট ভর্তি। কিন্ত এরকম করলে তো আর চলবে না। পরিবর্তন চাই। চেঞ্জ ইস দা অনলি কনস্ট্যান্ট।
ফোনের ওপার থেকে , সাত সমুদ্র তেরো নদীর পর থেকে আবার নিয়ন্ত্রকরা নিয়ম বলছে। কি না অন্নপ্রাশন না হলে নাকি ভাত দিতে নেই। আমার বলতে ইচ্ছা করে , “আর ইউ গাইস ম্যাড?” বলেওছিলাম কিন্তু লোকে ট্রান্সলেট না করতে পেরে মুখে দুধের বোতল ঠোসার চেষ্টা করছিলো। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি। বেবি ফুড খাওয়াতে অসুবিধা নেই, এমনকি প্যাকেটে আসা রাইস সিরিয়াল খাওয়াতে অসুবিধা নেই অথচ ভাত খাওয়াতে আগে লোক খাওয়াতে হবে ? হাউ ননসেন্স। ঠিক সেরকম যেমন সবাই বলে রাইস unhealthy কিন্তু ইডলি খুব হেলদি।
এর মধ্যে দু চারটে ফলটল খাওয়ানো হয়ে গেছে। যদিও সেগুলো ফল না বলে ঘ্যাঁট বা পাঁক বললেও চলে। কিন্তু তাও সবই দুধের থেকে খেতে ভালো। ডাক্তার আবার বলেছিলো এক বছর নুন চিনি বাদ। খেলে নাকি ব্রেনের গ্রোথ হয় না। থাক বাবা খাবো না ওসব। খেলে এই সব আহাম্মক গুলোর মতোই তৈরী হবো। মায়ের ওপর যদিও ভরসা আছে , তবু ভরসা পুরো করা ভালো নয়।
তাও মা চেষ্টা করলো অন্নপ্রাশনের। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো একটা মন্দিরে পুজো টুজো করে অন্নপ্রাশন দেওয়া হয়। এই মন্দিরটা সেই মন্দির যেখানে আমার ২১ দিন বয়সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিয়ে গিয়ে ঠাকুরের পায়ের কাছে শুইয়ে দিয়েছিলো। কি ইনসাল্টিং। সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর আমি শুয়ে তাও মাটিতে। সবাই ওই জায়গায় হেঁটে চলে বেড়ায় , তাও আবার খালি পায়ে। ঠাকুরের পায়ের ধুলো তো পেলামই না , মাঝখান থেকে কার না কার পায়ের ডেড সেল গায়ে লাগিয়ে নিয়ে চলে এলাম। নাঃ ওখানে নিয়ে গেলে আমি অন্ন কেন কোন্নো খাবার খাবো না। .. আনলিমিটেড ফ্রি অনশন।
থ্যাংক টু দ্যাট আননোন গড। বলে নাকি ভগবান না ডাকলে সেখানে যাওয়া হয় না। তা সেই ভগবান আমাকে ডাকে নি আর আমার অন্নপ্রাশন খারিজ হয়ে গেছে। মায়ের পক্ষে একা অতদূর আমাকে নিয়ে যাওয়া বেশ চাপের। আমি একটাতে খুশি হলেও এই দুধের কেস এ একেবারে ব্যথিত। যখন আর পারছি না দুধের জ্বালা সামলাতে তখন আমার ইনার ইন্স্টিক্ট জাগিয়ে মেটাবলিসম হাই করে গ্রোথ বা absorption কমিয়ে দিলাম। শুধু যোগী মহাপুরুষরাই পারে না , আমিও পারি এসব কঠিন কঠিন জিনিস করতে। ব্যাস ছ মাসের ডাক্তার ভিসিটে, কেল্লা ফতে। ওজন বাড়েনি , লম্বা হইনি , টোটাল কেয়স।
বাড়ি গিয়ে বাবাকে ফোনে মোটামুটি আছাড় মেরে, তুলোধনা করে তারপর মা শান্ত হয়ে ঘোষণা করলো। “আর নয় , সময় এসে গেছে আধ্যানের শক্ত খাবার খাওয়ার।” আমি হেসে খুশিতে গড়িয়ে লাফিয়ে , গান টান গেয়ে বুঝিয়ে দিলাম তোমাদের মতি ফেরার জন্য ধন্যবাদ।
শেষে সেই দিন এসে গেলো যেদিন দুর থেকে লক্ষ্য করলাম মা একে একে একটু চাল, একটু মুগের দল , এক টুকরো গাজর, একটু বিন্স আর একটু আদা একটা ছোট্ট প্রেসার কুকারে ঢেলে সিটি মারতে লাগলো। একটা করে সিটি পরে আর আমি এক পা এক পা করে এগোই বড় হওয়ার দিকে। এবার আর চুষে নয় চামচে করে খাবো। ইনজেকশন এর সিরিঞ্জের মতো একটা কিছু দিয়ে আমায় ওষুধ খাওয়ায় , এর থেকে বড় অপমান আর কি আছে। আর নয় আমার সাধের চামচ আসছে।
প্রেসার কুকার খুলে গেছে। সারা ঘরে গন্ধে মো মো করছে। ঠিক যেমন বৃষ্টি পড়লে রান্না ঘর থেকে যেরকম গন্ধ আসে তেমন। মুগের ডালের খিচুড়ি। উফফ। মা একটা বাটিতে ঢেলে চটকাতে লাগলো। আমি আহা আহা করে চোখ বুজে ফেললাম শান্তিতে।
চোখ খুলল ঠোঁটের ওপর চামচের ছোঁয়ায়। কি সুন্দর গন্ধ কিন্তু এ কি ? সলিড ফুড কৈ ? এ তো সেই ট্যালটালে। বাবা তখন ফোনের থেকে উঁকি মারছে। বাবাকে মা বললো জলটা বেশি হয়ে গেছে। সলিডের জায়গায় স্যুপ। বাবা আবার বলে কিছুটা বেবি সিরিয়েল মিশিয়ে ঘন করতে। না-না, প্লিস না। সব মাঠে মারা যাবে। এই ফিউসনের কারণে বীভৎস রকম বাজে খাবার দাবার মানুষ খাচ্ছে। আমি অথেন্টিক আর গরমেট এ বিশ্বাস করি। প্লিস কোনো ভেজাল নয়। দাও সুপ্ ই খাই। মা উঠে যাচ্ছিলো ঘন করে আনার জন্যে। আমি হাত বাড়িয়ে চামচ ধরে টানতে লাগলাম। ব্যাস বাবা বুঝে গেলো আমার এটাই চাই। মা বসে পড়লো। আর আমার সলিড না হলেও সেমী সলিড বা সান্ধ্র খাবারের সূত্রপাত হলো। এই দাঁত যতক্ষণ না বেরোচ্ছে ততক্ষন এইসব ভুলের মাসুল আমায় দিয়ে যেতে হবে। .. তবু দুদু খাবে , দুদু খাবে , দুদু খাও। … ন্যাকামির থেকে তো বাঁচবো। …
No comments:
Post a Comment