Thursday, September 29, 2016

চার মাস

চার মাস হয়ে গেলো। চা - আ - র মাস।  একশো কুড়ি দিন।  কত ঘন্টা কত মিনিট সেটাও শুনতে চাইলে অপেক্ষা কর অপেক্ষা করতে হবে।  বাবা বলেছে তাড়াতাড়ি না বড় হতে। আমি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি।  কচ্ছপের মতো।  অনেক দিন টিকতে হবে তো।  খরগোশের মতো হাপিয়ে পড়লে চলবে। তাই আপাতত আমি হা করে গিলছি আমার চারপাশে যা হচ্ছে সেইসব। অর্ধেক বুঝতে পারছি না, কিন্তু গিলছি। অনেক কিছু নাকি অভ্যেস  করতে হবে।  আপাতত তাই আমি কন্সান্ট্রেট করছি আমার পায়ের আঙ্গুলগুলোর ওপর। পা দুটো ধরে সামনের দিকে টেনে হাতের মতো আঙ্গুল গুলো ধরলেই কিরকম একটা সুড়সুড়ি লাগে। বেশ মজা লাগে। ও হ্যা আমার এই এক নতুন ব্যামো আরম্ভ হয়েছে। সুড়সুড়ি আর কাতুকুতু। কি জানি জামাটা টেনে যেই মা খুলে দেয় সারা শরীর হ্যা হ্যা হি হি হো হো করে ওঠে।  আমি মুখ দিয়ে তারই প্রকাশ করলেই বাকি সবাই হেসে ওঠে।  আর লাফিয়ে পড়ে কাতুকুতু দেওয়ার জন্য।  কেন বাপু , নিজেকে দাও না।  নিজেকে কাতুকুতু দেওয়া যায়না কিন্তু সুড়সুড়ি তো দেওয়া যায়।  কিন্তু না।  আমাকেই দিতে হবে।  ভালো গিনিপিগ পেয়েছে একটা।  বি টি ডাবলু গিনিপিগ ঠিক কিরকম দেখতে জানিনা।  ওই শুনি , তাই উগলে দিই।  বুঝতে পারি ট্রান্সলেশন ঠিক ঠাক করতে পারিনা।  শুধু চিৎকারটা বেরোয়।  ডিকশনারি যে কবে বেরোবে।  জানিনা।  এই যত বড়ো বড়ো গর্ধব গুলো কাজের বদলে শুধু একরাশ ছাইপাশ লেখালেখি করে।  একটা ডিকশনারি লেখ, বেবি ডিক্সনারি।  আমার বাবাটাও একই জাতের।  বসে বসে লেখে।  মাঝে মাঝে আমার কথা লেখে বটে কিন্তু তাও ফ্রেঞ্চ ট্রান্সলেশন হিব্রুতে করে।  খুব একটা কাজের নয়।  আমি শুনি, মা শোনায় , আমিও একটা ফোকলা দাঁতে হাসি দিই।  ব্যাস আমার কাজ কমপ্লিট।  ও হ্যা, আমার মনে হয় দাঁত বেরোচ্ছে। বাবার উক্তি তাই নাকি নাল পড়ছে।  এই নালটা বেশ ইরিটেটিং।  একটু সামনের দিকে ঝুঁকলেই টপ করে পরে যাচ্ছে।  এইতো কালকেই মায়ের ল্যাপটপের ওপর টপ করে ফেলে দিয়েছি নাল।  ব্যাস মা কোথা থেকে বাদুড়ের মতো উড়ে এসে চাইনিসে কি সব বলে উঠলো। বুঝলাম বকছে।  পান খাইনা , গুটখা খাইনা তাহলে এতো যে কেন নাল বেরোচ্ছে জানিনা।  না খেয়েই যখন থুতু ফেলার বদনাম তাহলে এবার থেকে ভাবছি ওসব খাওয়াই শুরু করবো।  তাহলে এটলিস্ট লাল বা অন্য রঙের থুতু বেরোবে।  এই ট্রান্সপারেন্ট নাল টা কিরকম এক ঘেঁয়ে।  বাবা হয়তো হয়তো ঠিকই বলছে।  দাঁত মনে হয় সত্যি বেরোচ্ছে। নাহলে মাড়িগুলো এতো সুরসুর করে কেন।  সব সময় কিছু একটা চিবোনোর জন্য মন আকুলি বিকুলি করছে।  আর মোটে দু মাস।  তারপরেই সলিড খাবার।  আর এই ভেজাল দুধ খেতে হবে না।  উফ ভাবলেই শিহরণ।  আর শিহরণ মানেই কাতুকুতু , আর কাতুকুতু মানেই আমি জোকার আর গিনিপিগ। থাক , আর ভাবব না।  আর না ভেবেই বা যাই কোথায়।  কত কিছু ভাবনা আমার ।  বাবাকে কি করে যে মায়ের মোবাইল থেকে বার করবো কিছুতেই তার কুলকিনারা পাচ্ছি না।  এই মেয়েজাতটাই এরকম।  কিছু হলেই বাবাদের মোবাইলে ঢুকিয়ে বন্দি করে দেয়।  বাবার জেলখানাটা সবুজ তাতে সাদা আলো পরে পুরো গ্রিন রেভোলুশন হয়ে যায়।  ওই সবুজ আলোয় বাবাকে হাল্ক এর মতো দেখতে লাগে। তাই হা করে দেখতে থাকি।  মা মোবাইল লুকোনোর জন্যে প্রচুর চেষ্টা করে বটে কিন্তু আমিও আমি, ওসব খেলো চালাকি আমার মতো মর্ডার্ন মানুষের কাছে চলবে না।  আমার রাডার এ সব ধরা পরে যায়।   দেখাটা  আমার ফেবরেট টাইমপাস্।  আগে শুধু শুয়ে শুয়ে দেখতাম।  যে আমার ওপর ঝুঁকে পড়তো তাকেই দেখতাম।  এখন অনেক বেটার।  সোজা দাঁড়িয়ে পড়ি।  আমার হরাইজন একটু বেড়ে যায়।  অনেক কিছু ভুলভাল জিনিস দেখতে থাকি।  দাড়াও দাড়াও একটু বেশি ভেবে ফেলনা যেন।  দাঁড়াচ্ছি মানে দুদিন বাদে হাঁটবো তা নয়।  অতো সহজে হামা দেওয়ার গ্ল্যামারটা ছাড়তে পারছি না।  আর অতো তাড়াতাড়ি বড়ও হচ্ছি না।  এই একটু নাকের সামনে গাজর দোলাচ্ছি আর কি।  সেই নিয়ে আবার মায়ের চিন্তা।  আমি নাকি ওল্টাচ্ছিনা।  এর পুরো দোষ বাবার।  কেন ওল্টাবো।  বাবাই তো বলেছে , আস্তে বড়ো হ , আমিও কচ্ছপকে ফলো করছি।  আস্তে আস্তে ওল্টাবো।  সেই তো দুদিন বাদে লোকে বলবে , পড়তে বস।  তার থেকে একটু দেরি করে না হয় বসি।  যাইহোক অনেক ভাট মেরেছি।  মোদ্দা কথা হলো।  চার মাস ডান।  পাঁচ মাসের কাজ শুরু।  আপাতত এটুকু থাক।  

Sunday, September 25, 2016

অনিমেষ ও তৃনা

সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া সময়ের নির্নিমেষ গতির দিকে তাকিয়ে 
অনিমেষ হঠাত করে ভুলে গেছিল দিনগুলি পার হয়ে গেছে অগোছালো ভাবে। 
কৈশোর পর্যন্ত মনে আছে।
তার পর তারুণ্য আর যৌবন যেন কিছুতেই মনে পরছেনা তার। 
পেছন ফিরে দেখতে গেলে শুধু একটা রেস ট্র্যাক এ ঘাম ঝরানো দৌড় --
ভেসে উঠছে চোখের সামনে। 
আর ভেসে উঠছে তৃণার  মুখ।
মিষ্টি হেসে প্রথম বার কলেজ ফেস্ট এ যখন তৃনা বলেছিল -- 
"শুধু তোমাকে চাই"
তখন স্টেজের নিচে দাড়িয়ে ; 
এক রাশ রকবাজ বন্ধুর টিটকারীর  মাঝে মনে হয়েছিল , 
সেটা যেন তাকেই  সে বলছে।
তার সেই চাওয়া আজও শেষ হয়নি। 
হাজার স্মৃতির সাথে সে চেয়ে নিয়েছিল - 
তার  তারুণ্য , তার  যৌবন।
নিজের অস্তিত্ব কে অপরের চাহিদার প্রাপ্তি হিসেবে ভাবতে , 
সেই প্রথম শিখেছিল সে ।
নাম দিয়েছিল  প্রেম।
আজ যখন প্রেম পরিবর্তিত হলো সহাবস্থানে , 
তখন নিজের পানে তাকিয়ে দেখে অনিমেষ ...
শেষ হয়ে গেছে তার যৌবন, তার তারুন্য।
পরে আছে এক রেস ট্র্যাক এ দৌড়ানোর স্মৃতি।
যার পুরস্কার তার জন্য নয়। 
তার অস্তিত্ব তার জন্য নয়। 
সব সে ঢেলে দিয়েছে পাশে শুয়ে থাকা একরাশ স্মৃতির সান্নিধ্যে। 


   

Monday, September 12, 2016

অর্ণব ও অদিতি

এয়ারপোর্ট এ বসে আছে অর্ণব।
অদিতির লেট প্লেন এর অপেক্ষায়।
সকালের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে,
কফির কাপে সিপ দিতে দিতে,
এক মনে সে দেখে চলেছে যাত্রীদের।
নানা রং, নানা ভাষা, নানা পরিচ্ছদ।
কেউ সুন্দর, কেউ অতি সুন্দর।
বিচ্ছেদ, মিলনের এক রাগ বেজে চলেছে ,
সারা এয়ারপোর্ট ধরে।
যেদিন অদিতি গেছিল চলে তাকে ছেড়ে,
এই এয়ারপোর্ট এই তখন কি বিষাদের রাগ বেজেছিল,
মনে পরছে না অর্ণবের।
সামনের মহিলাটি তার পুরুষকে,
আলিঙ্গনচ্যুত করছে না অনেকক্ষণ।
অদিতির আলিঙ্গন পরছে না মনে অর্ণবের।
ব্লাক কফির তিক্ততা, জড়িয়ে ধরছে তাকে,
সে কি আনন্দ করবে, নাকি দেরী হচ্ছে হোক।
দুরত্ব যেন আরো দূর করে দেয় ইচ্ছাগুলোকে।
দায়িত্ব বয়ে নিয়ে যায় জীবন কে।
অদিতি ফিরে তাকায়নি চেক-ইন এ ঢোকার আগে।
অর্ণব কি তাকিয়ে থাকবে তার আসার পথের দিকে?
যে যায় তার সম্মুখ পানে গতি,
যে রয় পরে, তার সাথে শুধু স্মৃতি।
আর সে স্মৃতি যদি তিক্ত হয়।
অর্ণব শুধু তাকিয়ে থাকে লাল নিল সবুজের দিকে,
ভুলে যাওয়া হাসির , মিলিয়ে যাওয়ার দিকে,
নানা ভঙ্গিমার অভিব্যক্তি আর অব্যক্ত যন্ত্রণার দিকে।
এই সব, সময়ে সময়ে দিয়েছে অদিতি তাকে।
অর্ণব বসে থাকে, তাকিয়ে অদিতির রাস্তার দিকে। 

Friday, September 9, 2016

আধ্যানের ডায়েরী (4) - শোনো বাবা ও মা !!



"আমি নারী , তোমাদের অস্তিত্ব এক নিমিষে ধসিয়ে দিতে পারি" উগ্রচন্ডি মায়ের বক্ত্যব্যের উত্তরে বাবা বললো , "উঃ কবিতা আওড়াচ্ছ যে। ওই ছিপকলিটা দেখলে পরে তো ফ্লাট।" মোক্ষম জবাব। নিজ লিঙ্গ কি মাঝে মাঝে সাপোর্ট করে দিতে হয়।  কিন্তু মা তো মা,   "তোমাদের ওই মাসল কাজে কখন লাগবে? যত্তসব অশিক্ষিত মজুর শ্রেণী।"  বাবা আমার দিকে ঝুঁকে বললো, "কমরেড পিছু হোটো না।  এই নারী জাতি , নরকের দ্বার , স্বয়ং অর্জুন না ভীষ্ম বলে গেছে। " "উঃ কে বলেছে সেটাই জানে না আবার ফুটানি। খবরদার কিছু শুনবি না খোকন।  তুই আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হবি।  এই মাতাল দুশ্চরিত্র থেকে কিছু শিখবি না।" "আমি মাতাল হইনা, মদ্যপ মানেই মাতাল নয়।  আর তুমি যে বেতালের মতো আমার ঘাড়ে এতো বছর বসে আছো , তার থেকেই প্রফ হয় , সত্যে রাম আর কলিতে আমি।" "ওরে আমার রামচন্দ্র এলো রে। বলো এবার গ্যাস জ্বালিয়ে ওর মধ্যে ঢুকে যাই।"  "গ্যাস ছাড়া জীবনে কিছু বুঝলে। ওই তো দু চারটে খুন্তি নাড়া বিদ্যা, তাই নিয়ে এতো ডায়ালগ কোথা থেকে আসে।" "খুন্তি নাড়া বিদ্যা?? শোনো এখনো তোমার থেকে বেশি মাইনে পাই।" "ওরে আমার অভিমানের জয়াপ্রদা, আসলে তো পুরো ভোঁদা।" "ওটা প্রদা নয় , ভাদুড়ী।" "ওই হোলো। পয়সা তো দাউদ ইব্রাহিমও বেশি কামায়।" "তাও তো কামায়, তোমার মতো , ভুল শুধু ভুল বলে হেমন্তের রেকর্ড চালায় না। " "হেমন্তের হোক আর শরতের হোক।  ফেলিওর ইস দা পিলার অফ সাকসেস, বুঝলে।" "তাই বুঝি। ফেল করলে ইঞ্জিনীরিং পড়তে পড়তে পারতে।" "পারতাম না।  কি হতো তাতে।  এখন আমি সিনিয়র ভাইস চ্যান্সেলর অফ ড্যাশ ড্যাশ  হতে পারতাম।" "ড্যাশ ড্যাশ। .. বাব্বা, বালিশ চাপা দিয়ে ফিস ফিস করে বোলো। দেখবে খাট পর্যন্ত হাসতে হাসতে তোমায় উল্টে ফেলে দেবে। একটা প্রমোশন পাঁচ বছর ধরে পেন্ডিং আছে।  আর ভাইস চ্যান্সেলর হবেন।" "শোনো তোমার জন্য আটকে আছি।  বুঝলে। এই যে ডিম পেড়েছো তার জন্য কত কিছু সাক্রিফাইস করতে হয়েছে আমাকে।""

এইটা বাবা বলেই গিলোটিন এ মাথা ঢুকিয়ে ফেললো। পুরুষ জাতি সত্যি মাথামোটা। দাবার চালে যারা মন্ত্রী আর ঘোড়া নিয়ে খেলে তারা তো  এই সব সুযোগের  অপেক্ষা তাই থাকে। মায়ের চোখে জল।  যুদ্ধ জিতে নিতো  যদি একটু ধৈর্য্য ধরতো।  কিন্তু মা হলেও মেয়ে তো।  যেটা বাজি হারিয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন , "বাচ্চাটা কি শুধু আমার জন্য।" বাবা অপেক্ষা করছিলো মায়ের ব্যাকফুটে যাওয়ার জন্য , "তোমাদের মেয়েদেরই তো খেলনা প্রয়োজন। আমাদের খেলনা বাটির জীবন নয়।  রক্ত, মাংস , ঘাম পিন্ডি চটকে তবে রোজগার করতে হয়।  তোমাদের মতো মুখ দেখে মাইনে দেয় না।" ও এম জি , বাবা একি বলে।  আগুনে ঘি হয় , পুরো পেট্রল।

"কি মনে করো কি তোমরা পুরুষরা। দুটো অফিস করে উদ্ধার করে দিচ্ছ।  আমিও অফিস করি।  বাড়িতে এসে রান্না করি।  তোমার মতো ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাং তুলে টিভি দেখিনা।" "ওটা টিভি নয়।  বিবিসি আর সিএনএন মাঝে মাঝে ডিসকভারি। তোমার মতো প্যানপ্যান সিরিয়াল দেখে দুনিয়ার রাজ্যের প্যাঁচ শিখিনা।"  "আহা রে। বিবিসি আর সিএনএন এ তোমার প্রোডাকশন এর কোড শেখায় তো। " "আর তোমার সিরিয়াল এ রান্না।" "শোনো একদিন যখন আমি চলে যাবো তখন বুঝবে। পুরুষ মানুষ কখনো এক থাকতে পারে না।" "গিয়েই তো দেখেছিলে বাপের বাড়িতে,  কেমন বিন্দাস ছিলাম আমি। নারী মাত্রই ঝামেলার উৎস।  শুধু উৎস কেন মোহনাও বটে।" "ওটা থাকা বলে , রানিং কমেন্টারি শুনতে শুনতে পাগল হয়ে গেছিলাম , "ডানদিকে যাচ্ছি চার পা , তারপর বাঁদিকে তিন পা, কৈ চটি নেই তো। " "নুনের চামচ ভেঙে গেছে বাকি তিন সাইজের চামচ আছে , তার মধ্যে একটা হাতা , কোনটা দিয়ে ডাল তুলবো।" এগুলো তোমার প্রশ্ন ছিল।" "থাকবেই তো।  রান্নাঘর কখনো আমার ডিপার্টমেন্ট ছিল না।  তোমার কোনো কিছুর পাসওয়ার্ড মনে আছে? আমি কেটে পড়লে তো না খেতে পেয়ে মরবে।" "এখনও আমার বাবা বেঁচে আছে।" "যাও তাহলে বাবাকেই বিয়ে করো। যত্তসব মেয়েলি সেন্টিমেন্ট।"

"শোনো , এতো যে ফটফট করছ।  মেয়ে না থাকলে তো তোমাদের হাল বেহাল হতো। ব্যাটা তোমার মতো হয়েছে বলে গ্যাস খেয়ো না।  হয়েছে আমার পেটেই , মুরোদ থাকলে করে দেখিয়ো নিজের পেটে।" "তুমিও আমাকে ছাড়া করে দেখিয়ো "নি-জে-র পে-টে"" "আরেকটা বিয়ে করলেই হবে।" "আমারও উত্তর তাই। তোমরা বাচ্চা তৈরী করতে পারো বলে ভাবো তোমরা বিশাল কিছু।  তোমরা যত না কষ্ট শরীরে নাও তার থেকে বেশি কষ্ট আমরা মাথায় নিই। " "ছাই নাও।  ওসব টেনশন দেখিয়ে সিগারেট খাবার ছুঁতো। এই আমাদের পাওয়ার জন্যই তো এতো ল্যাং ল্যাং করে পেছনে ঘুরতে থাকো। " "ল্যাং ল্যাং কথাটা উইথ্ড্র করো। আমি তোমার পেছনে ঘুরিনি।" "আচ্ছা তাই নাকি।  সেই কনকনে ঠান্ডা , গনগনে গরম , ঝমঝমে বৃষ্টি তে কে দাঁড়িয়ে থাকতো। " "তার মানে তুমি কি আমাকে প্রেম করে দয়া করেছো। " "আলবাত করেছি।" "হ্যা তা করেছো , যেমন আমি তোমার মতো বুড়িকে বিয়ে করে তোমার কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে মুক্তি দিয়েছি।" "শোনো ঘ্যান ঘ্যান টা তোমার বাড়ি থেকে ছিল।  আমার বাবা এখনও আমাকে পুষতে পারবে।" "ঠিক ঠিক , তোমাকে পোষারই তো দরকার। ওয়াইল্ড এনিম্যাল। "

"শোনো জোর করে সামাজিকতার জন্য পদবি পরিবর্তন করিয়েছো বটে।  কিন্তু আমি তোমার ওপর নির্ভর নই।" "হ্যাঁ হ্যাঁ  জানা আছে। বলো দেখি ওয়ান প্লাস ওয়ান কত হয়।" "জানতাম এবার তোমার সোফায় বসে বসে তেলেভাজার জ্ঞান আমার ওপর পরীক্ষা করবে।" "আহা বলই , না।" "আমি তোমার ধান্দা জানিনা আর , দুই বললে বলবে দশ , দশ বললে বলবে দুই।" "তুমি তাহলে কি দুটোই বলছো।" "হ্যা বলছি তো। " "এইজন্যই মেয়েদের কাজে নিয়ে কোনো লাভ নেই।  মাথামোটাগুলো জানেই না প্লাস একটা কনক্যাটিনেশন অপারেটরও বটে।  তাই উত্তর হলো এগারো।" "দেখলে তো।  জোচ্চোরি তোমাদের রক্তে রক্তে। " "তোমাদের জন্যই তো আমরা জোচ্চোর। সাইড করে সুরুৎ করে টিকিট কেটে এনে এথিক্স এর গ্যাংরেপ কে করে।" "তোমরাই তো এগিয়ে দাও।"

আমি দেখলাম ঝগড়া বেড়েই চলেছে।  ট্যাকটিক্যাল বাবা আর বদরাগী মা।  দুটোই ভয়ানক, পলিটিশিয়ান আর আর্মির লড়াই।  কিন্তু দুজনের ঝগড়া শধু ফুটানি ছাড়া কিছু নয়।  আমি ছেলে , আমি মেয়ে এই চিৎকার করে চলেছে।  আমি দেখলাম মাহখানে না ঢুকলে এরা থামবে না। আমি আমার মনোলগ আরম্ভ করলাম , "শোনো মা , শোনো বাবা।  তোমরা পুরুষ বা মহিলা হতে পারো।  কিন্তু তোমরা কেউই শিশুর থেকে শক্তিশালী নও।  আমার অস্তিত্ব তোমাদের পূর্ণ করে।  তোমরা সফলতার ভিন্ন মাপকাঠিতে বিচার করলেও মানুষ হিসেবে তোমরা সফল আমার আগমনে। তোমরাই আমাকে বানিয়েছো , ঠিক যেমন কুমোরে মূর্তি গড়ে।  মূর্তি কিন্তু জাগ্রত হয় অধিষ্ঠানে , স্থানে। এক টানে চোখ যে আঁকে তাকে কিন্তু কেউ মনে রাখে না।  আমার কীর্তি তোমাদের সাফল্য দেবে। আমার পরাজয় তোমাদের মুখ থুবড়ে ফেলবে।  আমি ভবিষ্যৎ তোমরা কিন্তু ভূত।  যাদের লোকে মামদো , ব্রম্ভদোত্তি , মেছো ইত্যাদি নাম ঘৃণাসূচক আখ্যা দেবে।  তুমি পুরুষ বলে শক্তির গর্ব করো , তুমি নারী বলে শক্তি হিসেবে পূজিত হও।  কিন্ত আমি শুধু আমি বলে ভালোবাসা পাই।  আমি না আসলে তোমাদের অস্তিত্ব তোমরা নিজেরাই শেষ করতে।  আমি না থাকলেও তাই করবে।  তোমরা বিয়ে করেছো। কিন্তু আমি সংসার বানিয়েছি তোমাদের। তোমাদের পৌরুষ আর নারীত্বের আস্ফালন আমার অস্তিত্বের অবদানের জন্য।  জন্মমুহূর্তে কোটি কোটি জীবাণু , কীটাণুর সাথে লড়াই করে আমি তোমাদের দিয়েছি পিতৃত্ব মাতৃত্ব।  আমি হেরে গেলে , তোমরাও হেরে যেতে, হয়তো কিছুদিনের জন্য , হয়তো সারাজীবনের জন্য।  তোমরা খেলতে খেলতে আমায় সৃষ্টি করেছো , আর আমি যুদ্ধ করে তোমাদের নতুন পরিচয় সৃষ্টি করেছি। আমি তোমাদের এগিয়ে নিয়ে চলেছি।  মা তুমি বাবাকে , বাবা তুমি মা কে এগিয়ে নিয়ে যাও নি।  সাথে থেকেছো।  মানুষ হিসেবে আমি তোমাদের এগিয়ে দিয়েছি।  তোমরা মনে করো না তোমরা আমার জন্য, আমি তোমাদের জন্য।  আজ আমার আগমন তোমাদের অথর্ব ভবিষ্যতের জন্য, আর তোমাদের বেঁচে থাকা আমার সুঠাম ভবিষ্যতের জন্য।  তাই পুরুষ হওয়ার জন্য বা নারী হওয়ার জন্য গর্ব কোরো না।  বাবা বা মা হওয়ার জন্য করো। তোমরা একে অপরের পরিপূরক আর আমি yin আর yang এর পাত্র।  আমি সদ্য এসেছি অসীমের থেকে , তোমরা অসীমের অনেক কাছে এগিয়ে গেছো। তাই বৃথা তোমাদের এই আস্ফালন। .. বৃথা তোমাদের এই ঝগড়া।  তোমরা তুমি নও , তোমরা আমি। "

এক নিঃস্বাসে বলেই চলেছি বলেই চলেছি , খেয়ালই নেই কখন বাবা , মা চুপ করে গেছে। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।  বাবার মুখে প্রসন্ন হাসি , মায়ের মুখে আদুরে।  মা এসে কোলে তুলে নিয়ে চটকে দিলো আর বাবা বললো , "আরে দেখেছো ও ভাওয়েল এর সাথে কনসোনেন্ট বলেও শুরু করেছে।  আমি পরিষ্কার "ব" আর "ম" শুনলাম।" আমি দেখলাম মূর্খদের বোঝানো দায় তাই ফ্যাক করে হেসে মায়ের কোলে সেধিয়ে গেলাম। যা ইচ্ছা করুক, আমি তো জেনে গেছি আমি কি।















Saturday, September 3, 2016

খাবো না মানে, খাবো না

না খাবো না।  তোমরা কি মনে করেছো টা কি ? তোমরা সবাই চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় খাবার খাবে আর আমার  জন্য শুধুই দুধ।  চলবে না।  আমি এসেছি বলে তোমাদের এতো ফুর্তি। শুনেছিলাম অতিথি দেব ভবঃ।  এখন তো দেখছি খাবার দেবোনা ভাগো।  নাকের  কাছে তেজপাতা, এলাচ  দারচিনি, গোলমরিচের গন্ধ ভুর ভুর করছে আর আমার জন্য সেই ডেইরি প্রোডাক্ট। কি মনে করেছো টা কি? সাত্বিক বানাবে।  কেন বাবা।  তোমরা তো বিন্দাস তামসিক ফুর্তি করে আমায় এনেছো আমাকে এখন একটু রাজসিক হতে দাও।  মাংস টাংস তো দিব্যি চলছে। কি না ভাঙা শরীর গড়ে তোলার জন্য।  তা চোখে কি ন্যাবা হয়েছে।  আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে হারকিউলিস।  হাড়ে জোর পাচ্ছি না বলে উঠে দাঁড়াতে পারছি না। তাও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।  দাদুর হাড়ে জোর নেই বলে ছোট ছোট মাছের ঝাল বানাচ্ছো। আর আমি জুল জুল করে তাকিয়ে আছি।  দাদুর তো দাঁতও নেই আমার  মতো, নকল দাঁত বানিয়ে তার পরে খাওয়াচ্চ। আর আমার বেলায় , "ও মা মাড়ির ভেতরে দাঁত গজাচ্ছে তাই নাল পড়ছে।" ওরে মাথামোটার দল ওটা আমার তোদের খাওয়া দাওয়া দেখে লোভে জিভে জল এসে  যাচ্ছে সেটা কবে বুঝবি।  "দাঁত গজাচ্ছে" , শুনলেই গা পিত্তি জ্বলে যায়। পিত্তির কথা উঠলো যখন , কি ব্যাপার আগে তো দেখিনি ইলিশ মাছের তেল নিয়ে এতো আলোচনা।  এখন দেখছি  সারা ঘর জুড়ে ইলিশের গন্ধ আর সাথে গল্প। একবারও লজ্জা করে না।

আমার সাথে দেখা করতে আসছে লোকে।  মানছি আমার জন্য খেলনা টেলনা নিয়ে আসছে।  কিন্তু ওদের যখন বসিয়ে বসিয়ে তেলেভাজা আর চা খাওয়ানো হচ্ছে তখন কেউ কি আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছে।  গান্ডে পিন্ডে গিলে আমাকে নিয়ে শুধু দোল দোল দুলুনি।  ওরে , দোল দিলে খিদেও     পায়. সেদিকেও নজর রাখা উচিত।  গরম গরম সিঙ্গারার গন্ধ যে আমায় কি  যন্ত্রনা দেয় সে আর কি বলবো। সাথে আছে চা।  ওটা তো এটলিস্ট দেওয়া যায়।  সারাদিন  লোকেদের এন্টারটেইন করে যাচ্ছি, মজুররাও তো এক কাপ চা পায়।  আমার বেলাতেই অনিয়ম। কমপ্লেইন করতে হবে ইউনিয়নকে।

আর হ্যা সবকিছুর সল্যুশন দুধ নয়।  কাঁদলে মুখে বোতল গুঁজে দিচ্ছ। কান্নার টোন গুলো পাল্টে দিলাম , তবুও তোমাদের একই ওষুধ।  দুধ।  স্কুল  কলেজে টুকে পাশ করলে এরকমই বুদ্ধি হয়। কাঁদছি না, খেলতে ভালো লাগছে। ফুরফুরে মেজাজ। না , হবে না।  কোথা থেকে রকেটের মতো দুধের বোতল ছুটে এলো।  কোঁৎ কোঁৎ  করে এমন গিলিয়ে দিলো যে উগলে না দিয়ে আর পারলাম না।  বমি হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমরা কে কবে চুটিয়ে খেয়েছো বলোতো।  আমার বেলাতেই  যত উৎপাত।  বমির গন্ধে গায়ে জ্বর আসছে আর সাথে ওই অত্যাচার। আমরণ অনশনে তো আর নামিনি, যে নাকে নল গুঁজে বাঁচাতে হবে।  বমি ছাড়ো , ডাইপারে পটি করেছি।  সুগন্ধি   ডাইপার বলে গন্ধ বেরোচ্ছে না।  হাত পা ছুড়ে সবাই কে বুঝিয়ে দিচ্ছি তবুও কেউ বুঝছে না।  ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসিয়ে দুধ গেলাচ্ছে।  একবার হেগে তার ওপরে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে বিরিয়ানি খেয়ো তো।  কেমন হড়াত করে হড়কে যায় দেখো।

সাথে আছে ডাক্তারের অত্যাচার । কথা গুলো শুনে মাথা গরম হয়ে যায়। আমার আর মুরগির মধ্যে কোন ফারাক করে না । ওখানে গেলেই প্রথমে ওজন করে, তারপর ফিতে দিয়ে মাপে। তারপর মুখটা ডাইপারের থেকেও বাজে করে বলে , “ওজন ঠিক ঠাক বারছে না। ” এইটুকু শুনলেই মা খুশি । ব্যাস , দুধের পিপে ঢেলে দেবে আমার ওপর । শিবলিঙ্গ যেন । কিছুক্ষন অন্তর অন্তর এসে বলবে পেট টা নেমে গেছে । তার মানে গোঁজার সময় এসে গেছে । বাবার মত গনেশ না বানিয়ে ছারবে না । তোমরা খাও না বাপু আমি বেশ স্লিম ত্রিম ম্যাচো হতে চাই । কিন্তু কে কার কথা শোনে ।

আর এক হয়েছে আমার এই মা । দুধের সাপ্লাই দিচ্ছে বলে যেন মাথা কিনে নিয়েছে । তোমার দুধ হচ্ছে বলেই আমাকে খেতে হবে তার কি কোন কারন আছে । ফেলে দাও , বেচে দাও আমার দেখার দরকার নেই । প্রথম প্রথম ছাড় দিছছিলাম অনেক স্যাকরিফাইস করেছে বলে। আগে তো আমাকে সাথ দিতে নিজেও দুধ সাবু খেত । ভালো লাগত না , তবুও খেত। আমিও তখন সাথ দিতে অনেক খেতাম। কিন্তু না। হঠাৎ করে দেখি সব বন্ধ । আমি যখন পেটে ছিলাম যে সব খাওয়া বন্ধ ছিল সেসবও চালু হয়ে গেছে । কমলা রঙের কোল্ডদ্রিঙ্কস যে কেউ খেতে চাইবে , এখন মা খায় আর আমায় সেই একই রঙের , একই স্বাদের দুধ ।

কয়েকদিন খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে নিজেই পেছনে বাঁশ নিয়েছিলাম । মানে হাগু বন্ধ হয়ে গেছিল । বিনিময়ে আমার কপালে অন্য স্বাদের কিছু জুটেছিল । একটা ভালো একটা জঘন্য। ভিটামিন ডি টা বেশ খেতে । মিষ্টি মিষ্টি । একটু ঝাঁঝালো টাইপের । দেখতেও সুন্দর । বাবার হুইস্কির মত । কিন্তু গ্রাইপ ওয়াটারটা , ছি ছি । গ্যান্দাল পাতার ঝোলের মত । কই তোমরা তো ওইরকম কালো কুচ্ছিত জিনিস খাও না । আমার বেলাতেই গেলাচ্ছ ।

মায়ের ওপর বিছছিরি রকমের রাগ হয়ে গেছে । নাহ সিরিয়াসলি আর খাব না । অনেক হয়েছে । ভেবেছিলাম এই পৃথিবীতে এসে একটু আনন্দ ফুরতি করব । টক , ঝাল, নোনতা , মিষ্টি স্বাদে ডুবে থাকব । মা আর বাবা এই দুই স্পেসিমেনের আদিখ্যেতা দেখে মনে হয়েছিল পৃথিবীর সব যেন আমার থালায় এনে দেবে । কিন্তু বুঝে গেছি ভোট শেষ । এখন বাবা বাবার গদি পেয়ে গেছে আর মা পেয়ে গেছে মায়ের আসন , আমার মত ল্যাংটো ভিখারির কথা আর কে শুনবে । সবথেকে সস্তার খাওয়া খাইয়ে ফেলে রেখে দিয়েছে । দুধ তাও কিনবে না । কি সাঙ্ঘাতিক উৎপীড়ন । নাহ সোচ্চারে যখন কাজ হল না । এখন নীরবে প্রতিবাদ করে জেতে হবে । আজ থেকে আমি ঠিক করেছি আর দুধ খাবো না। খাবো না মানে, খাবো না । গেলাতে আসলে মুখে কুলকুচি করব । তাও গেলালে গিলে নিয়ে পরে উগলে দেব । কিন্তু জতদিন না স্বাদে পরিবর্তন আসছে ততদিন আর খাবো , কিছুতেই না । দেখ কেমন লাগে ।