Monday, August 24, 2015

সোশ্যাল সন্যাস

ফোন টা অন্ধকার ঘরে জ্বলে উঠলো সাথে একমেবাদ্বিতীয় iphone রিংটোন।  এলার্ট টোনেও সেম রিংটোন।  চোখ কুচলে দেখলাম বারোটা বেজে গেছে। মাসের প্রথম  দিন শুরু। লেখা ভেসে উঠলো , "সন্যাস শেষ" . ও হ্যা তাইত। আজ থেকে আবার facebook, twitter, instagram, whatsapp ডট ডট ডট চালু। কিন্তু এ কি হলো। সন্যাস শেষ করার আনন্দে হাতে তো মোবাইল টা উঠে এলো না।  আঙ্গুল গুলও নড়ে উঠলো না।  কি চলছে, কেন চলছে , কে বলছে , কে বলছে , কি করছে , কেন করছে আর আমি কি করতে পারি প্রশ্ন গুলো তো মাথার মধ্যে গিজ গিজ করে উঠলো না।  দিব্যি পাশবালিশে মুখ গুঁজে আবার ফিরে গেলাম আমার নিদ্রার জগতে।

হ্যা ঠিক এরকমই হয়েছিল যেদিন আমার এক মাসের সন্যাস শেষ হয়েছিল social networking site থেকে। শুরুটা যদিও ভয়ংকর। হঠাত কি মনে হলো একদিন , তিরিশ তারিখ সগৌরবে ঘোষণা করলাম এক মাস পর দেখা হবে।  পনের মিনিট এর মধ্যে বন্ধু বান্ধব রা আঁতেল, জ্ঞানের গুজিয়া, ন্যাকামো , ঢং, আর সাথে তীব্র খিস্তি সহযোগে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালো। কোনো উত্তর না দিয়ে ধীরে ধীরে সমস্ত app ডিলিট করে সুখনিদ্রায় মগ্ন হলাম।

পরের দিন সকাল থেকে শুরু হলো উসখুশানি। কিছু একটা নেই। আঙ্গুলের মাসল, চোখের পাতা, হাসির চোয়াল সবাই একসাথে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো। ফোনটা পকেট এ রেখে অফিসে এলাম কিন্তু মাঝে মাঝেই ফোন হারিয়ে গেছে এরকম একটা অনুভূতি হতে লাগলো। বুঝলাম ফোনটা আর গরম হচ্ছে না।  তাই কিছু আছে পকেটে সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।  এ তো নোমোফোবিয়া।  নাহ , সে তো ফোন হারিয়ে গেলে হয়।  কিন্তু সত্যি সারাটা দিন ফোন টা যেন পাথর হয়ে থাকলো। না ভাইব্রেশন না তুং তাং না কিছু। মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছি ফোনের দিকে।  কিন্তু পাথর আর সোনা হচ্ছে না।

বিকালে বাড়ি ফিরে দেখি অঢেল সময়। দিন যেন শেষই হতে চায় না।  আচ্ছা মেইল টা কি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মধ্যে পরে।  ভাষাগত দিক থেকে তো পরে।  তাহলে কি ওটাকেও বাদ দিতে হবে।  বেশ কিছুক্ষণ চুলচেরা বিশ্লেষণের পরে ঠিক করলাম, মেইল টা বাদ দেওয়া যাবে না।  কত দরকারী কাজ থাকে। তাই সেটা থাক।  সন্যাস নেওয়ার চক্করে যদি ভাত না খাওয়া হয় তাহলে তো পটল তুলতে হবে।

মেইলটাই খুলে বসলাম। অর্কুট এর আগে মেইল ই ছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং। আমিও ডাইনোসরের যুগের তাই যতই চল্লিশ টা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নাম থাকুক না কেন yahoo গ্রুপ বা গুগল গ্রুপ গুলো থেকে এখনো নাম কাটাই নি।  আগে দিনে ৫০০ মেইল আস্ত সেটা এখন পাঁচটা মেইল এ ঠেকলেও কিছু লোক এখনো সেকেলে।  তারা এখনো সেখানে পোস্ট করে।  আমি খুব ই কম চেক করি।  কিন্তু এখন খুলে দেখি আমার হাতে পনের হাজার unread মেইল। আরিব্বাস ! পর পর চেক করতে থাকলাম।  বেশ ভালো লাগছিল।  কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বোর।

ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখতে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা ইন্টারেক্টিভ নয়।  মানে কেউ মেল পাঠিয়েছে , ভুলভাল পাঠিয়েছে, খিস্তি মেরে রিপ্লাই করলাম। কিন্তু দেখলাম মেলটা এক বছর পুরনো। reply এর reply ও মনে হয় এক বছর পর পাব।  এখন সব "এখনই" র যুগ।  শুধু তাই নয়।  instagram থেকে প্রথম ছবি নিয়ে ফেইসবুক আর tumbler এ পোস্ট করার যে কি আনন্দ সেটা মেল এ নেই।  একটা দুটো মেল ফরওয়ার্ড করলাম বন্ধুদের কিন্তু দেখলাম আমার আজকের সমস্ত বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজনের ইমেইল id আমার কাছে আছে।  কি বিপদ। শুধু তাই নয়।  কয়েকজনার মেইল আবার বাউন্স করলো। তারা কালকে কি জামা পরেছিল সেটা আমি জানি কিন্তু তারা যে কলেজ লাইফের ইমেইল বন্ধ করে দিয়েছে তার কোনো খবর নেই।

বাঙালির কাছে তর্ক হলো হাজমোলার মত।  দূর বিদেশে ঠেক বা বেঞ্চি কিছুই নেই।  ফোন করে কনফারেন্স হয় না , সময়ের ব্যবধানের জন্য। ওরা যখন দু বোতল বিয়ার নিয়ে খোশ মেজাজে বঙ্গের উরুভঙ্গ করছে তখন আমি ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজছি।  আর ঠেক এর বদলে ওয়ান - টু - ওয়ান , দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত।  বাচিয়েছে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। বোমা মেরে লেপের তলায়। উঠে দেখো কামান এনেছে।  তুমিও জেট এর এক্সেলারেটর এ চাপ দিয়ে আবার লেপের তলায়। বেশ ভালো ছিল।  সন্যাসটা ঠিক হলো না।

এরকম করে দিন কাটতে লাগলো। ভয়ংকর এক একাকিত্ব বেতালের মত চেপে ধরতে লাগলো। শেষে "নিজেকে ভালবাস তুমি এবার" স্বার্থপরতা মুক্তির উপায়। ভুরির দিকে তাকিয়ে সময় কাটানোর এক অনবদ্য উপায় খুঁজে বার করলাম। দৈহিক পরিশ্রম করো , ক্লান্ত হও , ঘুমিয়ে পরো।  ভর্তি হলাম জিম এ।  প্রথম দিনেই বিশাল নাচানাচি করে দ্বিতীয় দিনে কমোট এ বসতে পারছি না।  অথচ পরের দিন যদি না যাই তাহলে এই যন্ত্রণা থেকে যাবে। আবার পরের দিন , এবার ভয়ংকর এক খিঁচ লেগে গেল। trademill এ সজ্যা।  trainer "কি হলো , কি হলো " করে দৌড়ে এসে বলল "একবার ওজনের দিকে দেখুন। আগে কমান তারপর দৌরণ।  আপাতত হাঁটুন আর লাউএর জুস খান।"

তাই করলাম। রোজ বিকালে অফিস থেকে ফিরে কানে হেডফোন লাগিয়ে লম্বা হাঁটা। detroit এ সামার বলতে ফুস্কুরির মত।  ভাগ্গিস শুরু হয়ে গেছিল। তাই হাঁটতে বেশ ভালই লাগছিল। কিন্তু চারপাশে ফুটে থাকা নানা ধরনের ফুল আর ল্যান্ড স্কেপ দেখে হাত টা বার বার মোবাইল কামেরার দিকে চলে যেতে লাগলো। কিন্ত তুলে কি হবে যদি শেয়ার ই না করতে পারি।  নিজে রাঁধি , নিজে খাই নিজেই বলি আহামরি যাই।  তবু থাক।  স্মৃতি তো বাড়ছে।

দশ দিনে দশটা পার্ক ঘোরা হয়ে গেল। আর মোবাইলটা পকেট থেকে বেরোচ্ছে না।  একই ছবি বার বার কি তুলব। কিন্তু একি দৃশ্য বার বার করে দেখে , বার বার নতুন নতুন জিনিস দেখতে পাচ্ছি। ঘাড়টা সোজা করে রাস্তায় হাটছি। কত কিছু চার পাশে। কত লোক কত অদ্ভূত ভাবে হাটছে। বড় বড় কানাডিয়ান গুস তার কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি দাড়িয়ে পরছে তাদের জন্য।  ছবিটা আগেও দেখেছি কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে বিরক্তিসূচক অপেক্ষার প্রতিফলনে চোখ চলে গেছে মেসেজ এর ওপর।  এখন কিন্তু দেখতে পারছি একটা একটা করে তুলোর দলার মত ছোট ছোট বাচ্চা গুলো লাইন দিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে।

অফিসে রোজ দিনই কোনো না কোনো ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়।  সকালে ঘুম থেকে উঠে আধ ঘন্টা ফেইসবুক ঘাঁটলেই দেখা যায় কি চলছে পৃথিবীতে। তাই আলোচনার আগেই সব কিছু উগলে দিয়ে "আমি কি হনু" দেখানোটা আমার কাছে অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছিল। সন্যাস সেটাতেও বন্ধ সেধেছে। বয়স্ক collegue দের প্রাতরাশ এর CNN , BBC র ওয়েবসাইট খোলার ইচ্ছা আমার কখনই ছিল না।  সেই কারণে অভ্যাস করে টেলিগ্রাফ স্টেটসম্যান ও পরিনি বিশেষ। কিন্তু আজ তারাই বিজয়ী। আমি এখন শুধুই বিস্ময় সুচক "তাই??" বলে ওয়েবসাইট দেখতে লাগলাম। সবাই একটু চমকে গেছিল। যে মানুষটা নেপাল ভূমিকম্পর ২৫ মিনিট পরে সবাই কে donation দেওয়ার মেল করেছিল সে কি করে "নেট neutrality" র তোলপার থেকে বাইরে।

আমি তখন কাছের মানুষদের দেখছি। কি করে ব্রায়ান তার খুচরো যোগার করে ভেন্ডিং মেশিন থেকে, পাশের বাড়ির ছেলেটি মাঝ রাতে সিগারেট খেতে খেতে সোমালিয়ায় মায়ের সাথে কথা বলে, divorcee গোরা নাটালি তার দুই দত্তক নেওয়া কালো বাচ্চার সাথে কি করে খাবার খাওয়ায়, চীন থেকে সদ্য আসা তিন বুড়ো বুড়ি বিকেলে মাঠে martial আর্ট করে।  হয়ত খুব সাধারণ কিন্তু সত্যি আগে খেয়াল করিনি। রাতের আঁধারে ছুটে যাওয়া খরগোশের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একা নয়।  আরো দুটো হরিন দুরে দাড়িয়ে আছে।  ওদিকের সিগনাল গ্রীন থেকে রেড হওয়ার পর এক-দুই-তিন বললে তবে এদিকের সিগনাল গ্রিন হয়। সবার পায়ের শব্দ যেমন আলাদা, সবার টাইপ করার শব্দও আলাদা। গাড়ির সামনের জানলা না খুলে পেছনের দরজা খুললে একটা অদ্ভূত হাওয়ার শব্দ হয়।  আর গিন্নির কানের লতিতে হাত ছোয়ালে শরীরে শিহরণ জাগে।

ধীরে ধীরে সব কিছু কেমন যেন খুলে যেতে লাগলো।  পরিষ্কার।  পরিছন্ন।  এক অদ্ভূত স্বাদ সেই একাকিত্বের। সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখছি কিন্তু এতদিন দেখতে পারছিলাম না পায়ের কাছের নরম আধভেজা বালিতে হেঁটে যাও শামুকটাকে।  কেউ আমাকে দেখছে না।  কারণ আমি দেখাচ্ছিনা।  যাদের দেখাতাম তারা কিন্তু কিছু করছে না।  যারা করছে তারা দেখাচ্ছে না যে তারা করছে। এক বিচিত্র খোল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম সেই এক মাস।  ঠুলিটা নিজেই পরেছিলাম , কিন্তু ভুলেই গেছিলাম ঠুলি পরেছিলাম। নেশায় উন্মাদ হয়ে দৌড়ে , দৌড়ে ভুলেই গেছিলাম যে নেশার শেষে নিত্য পৃথিবী আছে।

এত দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এ ঢেউ দেখেছিলাম। এদের ফর এ এদের এগেইনস্ট এ কত লোকে কত তর্ক করে। গঙ্গাজলে পেচ্ছাপ করে গঙ্গাপুজো করে চরণামৃত খেতেও দেখেছিলাম। কিন্তু আজ দেখলাম গন্ডগোলটা নিজের। ছোটোবেলার সেই কথা, "কোনো কিছুই বেশি ভালো নয়."  এর ক্ষেত্রেও সত্য। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন দুরের মানুষকে কাছে এনে দিয়েছে তেমনি , কাছের মানুষকে ভুলে যেতেও শিখিয়েছে।  আড্ডা যেমন বাঙালিকে সৃজনশীল বাঙালি করে তুলেছে তেমনি অকর্মন্য করে তুলেছে। তুমি কোন দলে সেটা তোমার ব্যাপার।

রাতের ঘুম শেষ করে সকালে যখন আবার নতুন করে সব apps ইনস্টল করলাম তখন বেশ ভালো লাগলো। hangover কেটে গেছে।  মনের থেকে প্রচুর টক্সিক এলিমেন্ট বেরিয়ে চলে গেছে। এখন হাড়িয়ার জায়গায় এক পেগ স্কচ আর জোকস এর বদলে খুশবন্ত সিং আর জাগ সুরাইয়া।







Wednesday, August 5, 2015

কিছু যায় আসে না

"You have successfully completed PMP exam" দেখে কি আনন্দই না হলো।  চার ঘন্টার বিনা জল আর বিনা বাথরুমে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ধস্তাধস্তির পর যখন বিজয়ী বীর হয়ে বেরিয়ে এলাম তখন মনে হলো যেন "কি আমি হনু।" দাড়িয়ে দাড়িয়ে ল্যাজ দোলাচ্ছি , আর সবাই কে খবর দিচ্ছি।  মানে অফিসের লোকজন। সবাই খুব খুশি। মানে আমি খুশি তাদের বলে কারণ আমার "দ্যাখ কেমন লাগে" ফোনের উত্তরে তাদের মেকি খুশির অভিব্যক্তি বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। "তুই ছেড়ে দে ভাই। .. তুম সে না হো পায়েগা" লোকগুলো গলা ফুলিয়ে "আমি জানতাম, তুই পারবি।" উফ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। just ধরে রাখতে পারছিলাম না।

অফিসের খোরাক শেষ করে আয়েশে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এবার পালা বাড়ির লোকেদের।  শেষ ন মাস ধরে এই পরীক্ষার জন্য আমি গর্ভবতী। সবাই কে জালিয়ে পুড়িয়ে  ছারখার করে দিয়েছি। যখন ইচ্ছা ফোন করেছি যখন ইচ্ছা ফোন রেখেছি। কেউ খুব একটা জিগ্গেস করেনি কি করছিস। শুধু কিছু একটা করছি এই  আশায় কেউ বেশি খোচায়নি।  মা মাঝে মাঝে বলে উঠত , "বাবু , ডিপ্রেশন এ যেন চলে যাস না।" একটা পরীক্ষা ফেল করলে কেউ ডিপ্রেশন - এ যায় ? এখন রেসাল্ট হাতে নিয়ে লিখতে বসে প্রচুর কপচাচ্ছি বটে তবে ফেল করলে সত্যি চলে যেতাম ডিপ্রেসন - এ। মা খুব ভালো করে জানে, কারণ আগের সমস্ত যুদ্ধের আগের ও পরের ঘ্যানঘ্যানানি মা ছাড়া আর বেশি কাকে সহ্য করতে হয়েছে।

ঘুম জড়ানো গলায় ফোন তুলে মা হ্যালো বলতে আমি প্রচন্ড উত্তেজিত খুশিতে "মা পাশ করেছি" বলে উঠলাম। লং ডিসটেন্স কল আর সাথে দুর্বল মেলিয়াস, ইনকাস , স্টেপিস কি বুঝলো জানিনা উত্তর এলো , "একটু ধর। আমি এখনো উঠিনি বিছানা ছেড়ে।" বেলুনটা চুপসে গেল।  তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা। ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছু ঠাকুর দেবতা স্মরণ টরণ করে এবার উত্তর এলো, "হ্যা বল.." আমি চেষ্টা করলাম আবার উত্তেজনা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।  পুরো হলো না।  তবু বুকে স্বাস টেনে আবার বলতে যাব হঠাত টিং টং।  "একটু ধর, কে এসছে।" আবার গ্যাদগ্যাদে হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।  কাজের লোকের আগমন। "বাবু একটু পরে ফোন কর।  চা বানিয়ে তোর সাথে কথা বলছি।"

ফোন রেখে একটু ডাউন হয়ে গেলাম।  মায়ের খেয়ালই নেই যে আমার আজকে পরীক্ষা ছিল।  তারপর নিজেরই মনে পরে গেল , আমারই খেয়াল ছিল না মাকে বলার বা পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ নেওয়ার। শোধ বোধ।  whattsapp খুলে বন্ধুদের গ্রুপ এ পোস্ট করলাম। উত্তর এলো , "এটা করে কি এমন বড় ইয়ে হলি।" কথাটা সত্যি। কাঁধের কাছে হাত দিয়ে দেখলাম ডানাটা নেই।  পরের জন , "CONGRATULATION.... " দু তিনটে smiley. মনে হলো কেউ তো বুঝলো।  কিন্তু তার পরের লাইনে লিখলো , "কিন্তু ও তো গু ঘাঁটা। ... ওপর থেকেও খিস্তি নিচের থেকেও খিস্তি।" ম্যানেজার হলে সত্যি দুপক্ষ থেকে খিস্তি খেতে হয় বটে।  কিন্তু তা বলে কি। ..... আরেকজন দেখলাম facebook messenger এ পিং করলো ,"হ্যা রে, ডাম্প কোথায় পেলি।" সেই আবার whatsapp মেসেজ করলো , "ইঞ্জিনিয়ারিং পরে শেষমেষ ম্যানেজমেন্ট।" রাগ হলেও মজা লাগলো।  ভাবলাম উত্তর দিই কিন্তু আরেকটা মেসেজ এলো , "ভাই পার্টি কবে দিচ্ছিস। .. স্কচ কিন্তু। " তারপরেই ঝর উঠলো , "না না। . ভদকা।" "ধুর ভদকা তো মেয়েরা খায়।" "ভাই PMP পাস করলে লোকে ছেলেবেলার Old Monk ভুলে যায়।" "এরকম খুশির খবরে বাংলা  চাই ভাই  ..  বাংলা।" "ব্যাটা গন্ধকুমার তুই খা বাংলা। আমাদের জন্য তুই ভাই স্কচ নিয়ে আসিস।" "শুধু নেশা আর নেশা।.. যারা নেশা করে না তাদের জন্য কি?" "ভাই হারুর জন্য বিয়ার আনিস।" সব অন্য দিকে চলে গেল।  আমি ভোদার মত দেখে গেলাম। ঝগড়া চলতে লাগলো কিছক্ষনের মধ্যে সবাই ভুলে গেল আসল তর্কের কারণটা কি।

মা মিস কল দিচ্ছে। গর্বে ফোলা বুক ততক্ষণে ঝুলে গেছে।  মা কে ফোন করতে।  " হ্যা বল এবার। .. এই কাজের লোকেদের জ্বালায় আর পারছি না।  একটু চোখ সরালেই সব গন্ডগোল।" এরপর কিছুক্ষণ পিন্ডি চটকানো হলো।  তারপর এখান ওখানের খবর।  আমিও ভুলে গেলাম যে আমি কিছু বলতে চাইছি। দিব্যি খোশমেজাজে হাবিজাবি গল্প করতে করতে কিছুক্ষণ পর হঠাত মায়ের খেয়াল হলো , "তুই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলিস।" আমি বললাম, "ওই পরীক্ষা নিয়ে আর কি। " ততক্ষণে সব এনার্জি শেষ। ঘাম ঝরিয়ে পরীক্ষা পাশ করে যে ঘ্যাম হয়েছিল তার বিন্দু মাত্র অবশিষ্ট নেই।  মা বলল , "হ্যা তোর ওই পরীক্ষা আর পড়া আর tension. অনেক তো হলো।  এবার একটু বাচ্চা কাচ্চা নিয়েও তো চিন্তা করতে হবে না কি। বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে। এত পড়ে কি করবি? " "মা এটা চাকরিতে আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।" "আর তোর এই উন্নতির লোভ।  আরে যা লেখা আছে ভাগ্যে তাই হবে।  অত ambition থাকলে জীবন নষ্ট হয়। একটু ভালো করে সংসার কর আগে।"
হ্যা হু গা গু করে এখানেও কথা ঘুরে গেল।

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম।  তারপর নিজের গোপন ব্লগ খুলে লিখলাম, "আজ আমি PMP পাস করেছি। খুব খুশি হয়েছিলাম।  ভেবেছিলাম বিশাল কিছু একটা হয়ে গেছি। খুব কঠিন ছিল পরীক্ষা। ভেবেছিলাম সবাই খুব ভালো বলবে। বলেওছে।  কিন্তু নিজের লোকেদের কাছে এর মূল্য অত্যন্ত সাধারণ। ভুল আমারই। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল এ ঘুলিয়ে ফেলেছিলাম । চাকরিতে আমি ভেবেছিলাম একটা কিছু করে হয়ত কেয়াবাত কেয়াবাত পাব।  কিন্তু তারা তো আমায় আমার উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে দেখে না।  তাদের কাছে রোজগার চালু থাকলেই হলো।  তাদের কাছে আমার সৌন্দর্য্য আমার  সঙ্গ।  আমি খুশি হলে, না বুঝেই তারা খুশি।  কিন্তু খুশি আমার সাফল্য বা দুক্ষ আমার পরাজয়ে নয়। তাদের কাছে আমার জন্য কোনো মাপকাঠি নেই। তাই তাদের কিছু যায় আসে না। আর সত্যি তো আমি একটা ইঁট গেথে ভাবছি আমি বিশাল। কিন্তু আমার প্রিয়জনরা সেই ইঁট দেখে বুঝতেও পারবে না যে বাড়ি হয়ত সুন্দরও হতে পারে। তাদের কাছে "আমি" আমার সাফল্য নই।  মোদ্দা কথা , নিজের লোকেদের কাছে বেশি ভাও খেলে এরকমই চুপসে যেতে হয়। "