Thursday, August 2, 2018

আমি তুমি ও সে





রং পাল্টায় সময়ের।  সবাই পাল্টে যায়।  আমি তুমি আর আমাদের চারপাশে থাকা আমাদের নানা চিন্তা ভাবনা গুলোও।  আমিও বাঁচি, তুমিও বাঁচো, কিন্তু যতক্ষণ তোমাকে মারবো না - আমি বাঁচব কি করে।  কারণ এটাই তো শক্তির নিত্যতা সূত্র।  তাই এখানেও খাদ্যখাদকের ভূমিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি , তুমি , আর তৃতীয় সেই "সে" যে আমাকে তোমাকে লড়াই করতে বলে। যখন ছোট ছিলাম তখন এই "সে" আমার আর তোমার মাঝে এসে দাঁড়াতো না।  আমি আমার মতো চলতাম আর , তুমি যদি কিছু বলতে, তাহলে মা বাবাকে বলে দিতাম।  ব্যাস , তাতেই কাজ হয়ে যেত।  এখানে মা, বা বাবা কখনো "সে" এর মতো ব্যবহার করতো না।   কখনো চাইতো না যে আমি তোমার সাথে ঝগড়া করি।  কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আমরা বড় হয়ে উঠলাম।  তখন মাঝখান থেকে একটা "সে " চলে এলো।  এই "সে" এর নানা রূপ আর তাদের মুখে নানা ধরণের মুখোশ।  তাদের নানা গায়ের গন্ধ।  এদের একই ছন্দে বাঁধা  যাবে না।  একই যুক্তিতে বিচার করা যাবে না।  একই সুরে গাওয়া যাবে না।   একই ছকে ফেলা যাবেনা।  তাই প্রত্যেকটা আলাদা অস্তিত্বকে একটি মাথার মধ্যে এনে আমি আর তুমি আজ এক সহস্র "সে " এর সামনে কক্ষনো মাথা নত করে পরাজয় শিকার করছি, বা কখনো জেতার আনন্দে "সে" এর মাথা মুড়িয়ে খাচ্ছি।  কখনোই এটা নয় যে  "সে" এর সাথে বসে তাকে তুমি তে পরিণত করছি।  চার্বাক পন্থায় যাকে বলে চরম থিওরি অফ কন্ট্রাডিকশন।  শুধু হার , নয়তো জিৎ।  মাঝখানে বন্ধুত্ব -আমি - তুমি সম্পর্ক এসব যেন কোথায় হারিয়ে যায়।  একা বাসে যেতে যেতে, যদি কখনো "সে" এসে পাশে এসে বসে, তাহলে একটাই কথা , "দাদা  একটু সরে বসুন।  আমি তো পরে যাচ্ছি। " আসলে যদি সরে বসে, তাহলে আমার একটু জিৎ হবে।  আমাকে আমি বলবো , "হমম দেখলি কেমন দিলাম। " আমরা সবাই এরকম দিতে চাই।  কিন্তু কি দিতে চাই সেটাই জানিনা।  তাই যখন অফিসে ম্যানেজার ডেকে বলে , "তুমি মাকাল ফল।" তখন তার মনের সেই , "কেমন দিলাম" ভাবটা বুঝে উঠতে পারিনা।  তাই ক্ষমাও করে ওঠা হয় না।  ছন্দ হারানো এক গন্ধ গায়ে নিয়ে নিজেকে বন্ধ করে রাখি নিজের ছোট্ট ঘরে।  যে ঘরে আমার এক গুচ্ছ মরে যাওয়া স্বপ্ন সযত্নে রাখা আছে আমার ধূলি পড়া আবছা একটা ছায়ার অন্ধকারে। তুমি যখন দূর থেকে এসে আমার পাশে বস, আর সব "সে" এর দল ফোন করে বলে , "টাইম ওভার" তখন মনে হয় কি করে আমি এই "টাইম " থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু যখন আমি বিস্তীর্ণ জনতার ভিড়ে থাকা "সে" কে চিৎকার করে বলি "টাইম ওভার " তারা কিন্তু ভাবেনা।  তারা সুর সুর করে বেরিয়ে পরে আমি তুমির কবল থেকে।  আসলে তারাও ভাবে "আমি"র মতো।  আমরা সবাই ভাবি, কিন্তু আসলে আমরা শুধু আমাদের আর তোমাদের কথা বুঝতে পারি, মনে ধরতে পারি, আর চিন্তা করতে পারি।  কিন্তু আমি আর তুমি যখন "সে" হয়ে "তাদের ( আমাদের + তোমাদের ) " সামনে দাঁড়াই তখন ওরাও একই কথা ভাবে, যা আমরা এতকাল ভেবে এসেছি। তাই মতি নন্দীর "জীবন সরল রেখা নয় "। সরলীকরণের চেষ্টা করাটাই বৃথা।  আমি আমার মতো "সে" তাদের মতো।  কিন্তু এখানেও আর একটা প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় - "তুমি" কার মতো? এটাও  একটা সমস্যা এনে দাঁড়ায়।  তাই মাঝে মাঝে সেই বুভুক্ষু "সে" দের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করি তোমাকে নিয়ে।  কারণ তুমি তখন আমাকে অনেক কিছু গোপন করেছ।  এই গোপনীয়তার আড়ালে তোমার কি লক্ষ্য তা না জেনে , আমি হাত পেতে দিই , "সে" এর কাছে,  আর  "সে" আমাকে ভবিষ্যতের আগ্রাসনের উদ্যেশ্যে মিথ্যে হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে বলে  , "আমি আর "সে" নই , এখন থেকে শুধু আমি আর তুমি। " নতুন সম্পর্কে দাঁড়ায় অদ্ভুত পরিবর্তন।  যাকে বলে , "আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। " বিশ্বাস অতো সহজ জিনিস নয় যে যাকে তাকে করা যাবে।  তাই সব কিছু শেষের আগে একবার তোমার কাছে পৌঁছে যাই জানার জন্য যে , "তুমি কার মতো। " আর তখন তুমি উত্তর দাও , "তুমি যা চাও তাই আমি। " মনে পরে যায় রবীন্দ্রনাথ এর সেই কথা , "ফুলকে বললাম আমি সুন্দর , সুন্দর হলো সে। " তাহলে আমি কেও বৃথা "তাদের" কাছে হাত পেতে এলাম।  শুরু হয় অন্তহীন দ্বন্দ্ব।  চিনতে শেখে মানুষ , "নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ।  পরঃ পরঃ সদা। " আমি তখন নিজেই নিজেকে সন্দেহ করি।  ভাবতে বসি তাহলে এই কদিনের মধ্যে যাকে আমি , "তুমি" তে পরিণত করেছি তাহলে তারা কারা ? তাহলে কি তাদের ছেড়ে দিতে হবে।  এখানে সঙ্গে দাওনা তুমি, বলো , "অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে। " রাস্তায় সামনের বাসটাকে ওভারটেক করতে গিয়ে একজনের নাকের ডগা দিয়ে গাড়ির আয়নার কাঁচটা চালিয়ে দিয়েছিলো বলে তুমি বলেছিলে  , "শাস্তি পেতে হবে। " কিন্তু তাকে ধরতে পারোনি সেদিন।  তাই তাকে শাস্তি দিতে  পারোনি সেদিন।  কিন্তু আজ আমি ধরা দিয়েছি বলেই কি শাস্তি আমায় পেতে হবে।  তুমিও আমাকে খাদ্য বানালে ! কিন্তু "সে" দের ভিড় আমাকে শাস্তি দিতে ভুলে গেছে।  তারা খেয়ালই রাখেনি যে "আমি" কখন তাদের কাছে "তুমি" থেকে "সে " হয়ে গেছি।  তাই ধীরে ধীরে আমি-তুমি-সে আজ সবাই দাঁড়িয়ে আছি আজ মুখ বাড়িয়ে, একে অপরকে খাবো বলে।  খাচ্ছি আর নিজেকে বিজয়ী মনে করে জয়োল্লাসে হাততালি দিয়ে বলছি , "জয় হো "। ব্যাস পৃথিবী চলছে ড্যাংডেঙ্গিয়ে।  যে জিতছে সে সব নিয়ে চলে যাচ্ছে।  আর যে হারছে সে সবকিছু খুইয়ে দাঁত আর নখে শান দিচ্ছে পরের যুদ্ধে জেতার জন্য।  ভগবানও ঝিমুচ্ছে , কারণ যখন সবাই কে জেতাতে হয় তখনি হিসাব নিকাশের দরকার পরে।  কিন্তু এখানে সবাই সবাইকে হারাতে চায়।  তাই ঘুম ঘুম ঘুম চারিদিক নিঝঝুম। 

No comments:

Post a Comment