Sunday, August 26, 2018

বেলা বোস - প্রতীক্ষার শেষে। .



বেলা বোসের সাথে বিয়ে হওয়ার পর চাকরীসূত্রে সে অনেকদিন দুজনে দুজনকে ছেড়ে থেকেছিল।  শেষে একদিন সে বেলা বোসের পাশের অফিসে চাকরি পায়।  ফোনটা তুলে সেই গানটা আবার মনে পরে।  কিন্তু নাম্বারটা গেছে পাল্টে, তাই একটু অন্যভাবে সে গাইছে। ……..     

চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বৌ শুনছো
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা। 
পাশবালিশটা এইবার তুমি সরিয়ে রাখতে পারো।
রেখে দাও কাজ যা তুমি পারছোনা। 
 
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বৌ সত্যি ,
আর মাত্র কয়েকটা দিন ব্যাস।
নতুন করে শুরু করা যাবে , বিচ্ছেদের এই জীবন
একি বৌ তুমি কথা কেন বলছনা ?
 
এটা কি অভিমান ভরপুর , নাকি সুখের পূর্বাভাস
ও বৌ তুমি পাচ্ছ কি শুনতে। 
সাত বছরের লম্বা বিরহ পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি ,
দেব না কিছুতেই আর হারাতে। 
 
স্বপ্ন এবার হয়ে যাবে বৌ সত্যি ,
এতদিন ধরে এতো অপেক্ষার ,
দাঁতে দাঁত চেপে , দিনক্ষণ গুনে, দুর্বিষহ যুদ্ধ জীবনে   
রুদ্ধশ্বাস কত প্রতীক্ষার।

আর কিছুদিন তারপর বৌ শুরু,
আমাদের ওই দুই বেডরুম ঘর। 
হাসি দিয়ে ঢাকা , মায়া দিয়ে মাখা , স্মৃতির কোটরে সাজাতে , 
আমার তোমার রোজকার সংসার।   
 
হ্যালো , সব কিছুর পরও , দুই থেকে মোরা তিন,
আসবে ফিরে সেই দিন আবার। 
বয়স যাবে ফিরে , সময় চলবে ধীরে ,
প্রয়োজন শুধু সঙ্গে বাঁচবার। 
  
চুপ করে কেন একি বৌ তুমি কাঁদছো ? 
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি ,
মনে ভয় নিয়ে বাঁচতে থাকার সময় গিয়েছে পেরিয়ে     
হ্যালো, তুমি শুনতে পাচ্ছ কি ?

তুমি কি আনন্দে ভরপুর , স্থির ভাসমান মাইন্,
খুশির মাদল পাচ্ছ কি শুনতে। 
শত লড়াই এর পরাজয় শেষে , আজ জিততে পেরেছি ,
দেব না এই ক্ষণটাকে হারাতে। 

তুমি কি ভাবছো এটা ভুল, নাকি স্বপ্নে মশগুল ?
ফিরে এসো তুমি এইদিকে এইবার। 
সময় যাচ্ছে চলে, "আর নয়" শুধু বলে ,  
জরুরি খুব সঙ্গে থাকবার। 

হ্যালো , দেখছ কি তুমি আসছে সুদিন ,
আমি তুমি , সারাটা দিন। 
হ্যালো , দেখছ কি তুমি আসছে সুদিন ,
আমি তুমি, রোজ প্রতিদিন । 
হ্যালো , দেখছ কি তুমি আসছে সুদিন ,
আমি তুমি , সারাটা দিন। 
হ্যালো , দেখছ কি তুমি আসছে সুদিন ,
আমি তুমি, রোজ প্রতিদিন ।  
 
  

Tuesday, August 21, 2018

প্রবন্ধ ৩২) লেখক - পাঠক - সমালোচক


নাঃ পুরোপুরি লেখক আমাকে বলা চলে না।  একটাও বই নেই আমার রেসুমে তে।  আছে একটা ব্লগ আর তাতেই চেষ্টা করি কিছু মনের কথা শব্দে লিখে রাখার।  আর হ্যাঁ , হাত পাকাই।  চেষ্টা করি , আরো ভালো , আরো ভালো কিছু লেখার।  এই চেষ্টায় একাকিত্ব আছে , কারণ গোটা সমাজ নিংড়ে দু চার শব্দে সাজিয়ে রাখার জন্য চাই নিবিড় মনোনিবেশ।  তোমরা ছুটে যাও , দাঁড়িয়ে থাকো , আনন্দে গড়িয়ে পর , শোকে শুকিয়ে যাও , চুমু খাও , থাপ্পড় মারো।  আমি থাকি রিংয়ের বাইরে।  সুকান্ত পোস নিয়ে তোমাদের লড়াই দেখি আর তোমাদের কথা লিখে যাই। তোমরা পড় , ভালো বল , খারাপ বল।  কিন্তু পাঠক হয়ে পড়।  

একটা লেখকের পাঠক কেন দরকার হয় জানো? সেই রগরগে চোখ লাল মাস্টার গুলোর কথা মনে আছে ? যারা প্রশ্নের উত্তর না পেলে বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিতো।  স্কুল কলেজের গন্ডি পেরোতে না পেরোতে সেই চোখ লাল মাস্টার মশায়রা আর নেই।  কেউ তোমায় বলে দেবে না তোমার ভুল।  শুধু আলগোছে এড়িয়ে যাবে , করে দেবে একঘরে , ভুলে যাবে তোমার অস্তিত্ব।  এই পাঠকরাই আমার সেই মাস্টার রা।  যারা ভুল বার করবে।  আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে ওটা “দাবি” না “দাবী”। এই পাঠকদের মধ্যে থেকেই কারো কারোকে লেখক বেছে নেয় ক্রিটিক হিসেবে। হে হে , তুমি ভাবছো ফেমাস ক্রিটিকরা পাঠকের সৃষ্টি ? না হে , লেখকরাই তাদের তৈরী করে। মিথোজীবিতা তাদের মধ্যেই সম্ভব যারা একে অপরের পরিপূরক হয়। একটা লেখকের কেরিয়ার একটা সমালোচক শেষ করে দিতে পারে , কিন্তু সেই লেখকও  শেষ হতে হতে শেষ কামড় দিয়ে যুগান্তকরী সৃষ্টি করে উপড়ে ফেলে দেয় সেই ক্রিটিকের অস্তিত্ব।  যেমন একটা সমালোচকের অনেক লেখক আছে , তেমনিই একটা লেখকের অনেক সমালোচক আছে। কিন্তু লেখক সেই পাঠকদের সমালোচকের মর্যাদা দেয় যারা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে লেখকের লেখার মানবর্ধনে সমর্থ হয়।  

কবিতা আমার পায় , ভাবতে হয় না লেখার সময়।  কিন্তু একটা ছোটগল্প , প্রবন্ধ বা সহজ কথায় গদ্য লেখা অনেক পরিশ্রমের কাজ।  নাথিং কামস আউট অফ নাথিং।  কিছু ঘটনা , কিছু পরিস্থিতি অনুঘটকের মতো লেখকের কল্পনাকে সুড়সুড়ি দেয়।  এমনি হলে কেমন হতো , অমনি হলে কি এমন হতে পারতো , এমন যদি নাই বা হয় , কেমন করে তাহলে হবে।  এই সমস্ত চিন্তাভাবনার ফুটন্ত তেলে ভাজতে ভাজতে প্রথমে মনের গহ্বরে সৃষ্টি হয় চালচিত্র।  ব্যাস , সৃষ্টির কাজ শেষ।  এরপর আছে পরিবেশনার প্রক্রিয়া।  চরিত্র নির্বাচন , শব্দচয়ন , গতিপ্রকৃতি , দৃশ্যায়ন আর শৈলী। চূড়ান্ত ধৈর্যের নিয়মানুবর্তীতায় লেখক শব্দের বাঁধন দিতে থাকে।  

ভাবছেন ধুর , এসব হয় নাকি।  বসে টাইপ করলেই তো হয়। তা বটে।  বসে টাইপই তো করি।  যখন লিখি তখন কি এতো কিছু প্রসেস মাথায় থাকে নাকি ? আচ্ছা, টাইপ করা কি কখনো শিখেছেন?  QWERTY কীবোর্ড এ যখন প্রথম আঙ্গুল চালিয়েছিলেন তখন কি ঝরঝর করে লেখা ফুটে উঠতো স্ক্রিনে, বা টাইপরাইটারের পাতায়? উঠতো না তো ? এক একটা অক্ষর ফুটে ওঠার ঠক ঠক শব্দ কানে বাজতো। A এর পর B এর বদলে S কেন , সেই প্রশ্নে বেশ কয়েকদিন বিভোর ছিলেন। কি টাইপ করতে হবে সেটা পাশে কাগজে আগে না লিখলে মাথায় আসতোই না কিছু। আরে বাবা অক্ষর খুঁজবো না সেন্টেন্স ভাববো।  কিন্তু এখন দেখুন দিব্যি আঙ্গুল চলছে আর মাথাও।  প্রক্রিয়ার নাম , অনুশীলন।  

এই অনুশীলনেই লেখকের প্রাথমিক রচনাকাল অতিক্রান্ত হয় পেপার ডাস্টবিনের পাশে বা রিসাইকেল বিনের ধারে।  লেখক লেখে, পাঠক পরে , আর সমালোচক আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ভুল। পরের দিন সমালোচক থাকে না , পাঠক তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি, নিজের সৃষ্টির ডাইপার চেঞ্জ করতে লেখক তখন আবার অনুশীলনে বসে।  কালকে চোখ এঁকেছিলো , আজ ভ্রূ, কাল হয়তো গগলস পড়াতে হবে।  পাঠক দুঃখে ব্যাকুল , লেখককেও তাই রক্ত ঝরাতে হবে।  লেখক ভাবে অন্য ভাবে বলবো, পাঠক বলে ঐভাবে শুনবো না , সমালোচক বলে বলো কিন্তু অন্যভাবে।  পাঠক জুড়ে দেয় নিজের জীবন লেখকের হাতে গড়া চরিত্রের পুতুলের সাথে।  সমালোচক পুতুলমেলায় ঘুরে এসে বলে , “ওই পুতুলের নাকটা তোমার পুতুলের থেকে টিকালো।” লেখক বলে , “ওমা আমার তো নাকবোঁচা তিব্বতি পুতুল।” পাঠক বলে , “ আমার দুটোই চাই।” লেখক একটু ভেবে বলে , “আচ্ছা দাড়াও , গড়ে দিচ্ছি টিকালো নাকের পুতুল। একটু সময় দাও। ”  এই তর্কে বিতর্কে সৃষ্টি হয় আরেক পুতুল , বাড়ে মান লেখকের সৃষ্টির। 

এই মিথোজীবিতাকে অতিক্রম করার কোনো উপায় নেই। যারা অনেক বেশি লিখতে চায়।  তারা প্রতিটা সমালোচনা পাথেয় হিসেবে নেয়।  সাতশো কোটির পৃথিবীতে যদি সমালোচনার বৈচিত্র না আসে তাহলে এক ঘেঁয়ে হয়ে যাবে এই পৃথিবী।  লেখকের ভালো লাগে সূর্যোদয় , তোমার ভালো লাগে সকালের ঘুম। তুমি বলবে, “ধুর, সকালে ওঠার গল্প বেকার। “ লেখক তখন নিয়ে যাবে তোমায় সমুদ্রের ধারে , সি ফেসিং রিসোর্টের বিছানায়।  প্রথম আলোয় উঠবে জেগে , তোমার সামনে নীল সমুদ্রে ফুটবে লাল ফুল।  খুশি হবে তুমি।  

যখন কবিতা ছেড়ে গদ্য শুরু করি তখন কেউ বিশেষ পড়তো না।  আমার এক বন্ধু ছাড়া।  আজ পর্যন্ত সে আমার সবথেকে বড় ক্রিটিক।  প্রচুর পড়াশোনা তার।  কিন্ত নিজে লেখেনা।  আমার কত কত লেখা , কিছুটা পড়েই বলে দিয়েছে , “ধুর, বেকার।  ফালতু। ” এর মধ্যে কোনটা দেখে বলেছে এই চার লাইনের কোনো মানে হয় না।  বলেছে , “এটা অন্য ভাবে ভেবে দেখতে পারিস।” বলেছে , “মুক্তগদ্য তো হাত পাকানো , চরিত্রায়ন করে যেদিন ফিকশন লিখবি সেদিন বুঝবো।” বলেছে , “ লেখ দেখি ডার্ক কিছু নিয়ে।” বলেছে , “ লিখতে গেলে আগে পড়তে হবে।” শিখিয়েছে সমসাময়িক শব্দের প্রয়োজনীয়তা।  বহু কষ্ট করে একটা লেখা মুখের ওপর বলে দিলো ফালতু।  সেদিন খুব রেগে গেছিলাম। মূল ধারা রেখে পুরো লেখাটা আবার লিখেছিলাম।  না জানিয়ে ব্লগে পোস্ট করেছিলাম।  সবাই ভালো বলতে ওকে বলেছিলাম দেখ শালা।  ও মিচকি হেঁসে বলেছিলো , “রি রাইট করলি তো , এবার আগেরটা পরে দেখ। ” গত কয়েক মাস ধরে সে খুব মানসিক অশান্তিতে আছে।  তার সমস্যার সমাধান আমি করতে পারবো না।  কিন্তু তার অনুপস্থিতি যে কি ভাবে আমার সৃষ্টিশীলতাকে ধাক্কা দিয়েছে , তা বলে বোঝাতে পারবো না।  

তাই লেখক যেন সমালোচনাকে অবজ্ঞা না করে , আর সমালোচক যেন খেলো সমালোচনা না করে সেই কাম্য।  সমালোচকের কাজ ভুল দেখানো , আর লেখকের কাজ সেই ভুল ঠিক করে , অন্য পথে সমালোচককে পরিচালনা করা।  আর পাঠক , সে তো ডোপামিনের সম্পর্ক।  “শুভেচ্ছা” , “ভালোবাসা” , “খুব ভালো লিখেছো” , “তার পর কি হলো ” , “ও মা ওকে মেরে ফেললে” , “ পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম” , “ আমার খুব ভালো লাগে আপনার লেখা” , “ছেলেটাকে ফাঁসিতে না চড়ালেই পারতেন ” , “পরের গল্পটা কিন্তু মেয়েদের জন্যে লিখবেন ” ,”একদম মনের কথা লিখেছেন ”, “আপনি কি আমায় চেনেন , যেন সব মনের কথা জানেন  ”, “গুরু চালিয়ে যাও ”, “তোমার হবে ভাই , ” কি ভালো লাগে শুনতে।  মনে হয় এদের জন্য আরো লিখি আরও আরও।  পাঠক যদি ওই ছোট্ট লাইকের বদলে দু লাইন লিখে দেয়,  লেখকের মনে আসে বল ভরসা।  চলতে থাকে অনুশীলন , বাড়তে থাকে মাসল মেমোরি আর সৃষ্টি হতে থাকে সাহিত্য।  

বাকি প্রবন্ধগুলো 

Thursday, August 2, 2018

আমি তুমি ও সে





রং পাল্টায় সময়ের।  সবাই পাল্টে যায়।  আমি তুমি আর আমাদের চারপাশে থাকা আমাদের নানা চিন্তা ভাবনা গুলোও।  আমিও বাঁচি, তুমিও বাঁচো, কিন্তু যতক্ষণ তোমাকে মারবো না - আমি বাঁচব কি করে।  কারণ এটাই তো শক্তির নিত্যতা সূত্র।  তাই এখানেও খাদ্যখাদকের ভূমিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি , তুমি , আর তৃতীয় সেই "সে" যে আমাকে তোমাকে লড়াই করতে বলে। যখন ছোট ছিলাম তখন এই "সে" আমার আর তোমার মাঝে এসে দাঁড়াতো না।  আমি আমার মতো চলতাম আর , তুমি যদি কিছু বলতে, তাহলে মা বাবাকে বলে দিতাম।  ব্যাস , তাতেই কাজ হয়ে যেত।  এখানে মা, বা বাবা কখনো "সে" এর মতো ব্যবহার করতো না।   কখনো চাইতো না যে আমি তোমার সাথে ঝগড়া করি।  কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আমরা বড় হয়ে উঠলাম।  তখন মাঝখান থেকে একটা "সে " চলে এলো।  এই "সে" এর নানা রূপ আর তাদের মুখে নানা ধরণের মুখোশ।  তাদের নানা গায়ের গন্ধ।  এদের একই ছন্দে বাঁধা  যাবে না।  একই যুক্তিতে বিচার করা যাবে না।  একই সুরে গাওয়া যাবে না।   একই ছকে ফেলা যাবেনা।  তাই প্রত্যেকটা আলাদা অস্তিত্বকে একটি মাথার মধ্যে এনে আমি আর তুমি আজ এক সহস্র "সে " এর সামনে কক্ষনো মাথা নত করে পরাজয় শিকার করছি, বা কখনো জেতার আনন্দে "সে" এর মাথা মুড়িয়ে খাচ্ছি।  কখনোই এটা নয় যে  "সে" এর সাথে বসে তাকে তুমি তে পরিণত করছি।  চার্বাক পন্থায় যাকে বলে চরম থিওরি অফ কন্ট্রাডিকশন।  শুধু হার , নয়তো জিৎ।  মাঝখানে বন্ধুত্ব -আমি - তুমি সম্পর্ক এসব যেন কোথায় হারিয়ে যায়।  একা বাসে যেতে যেতে, যদি কখনো "সে" এসে পাশে এসে বসে, তাহলে একটাই কথা , "দাদা  একটু সরে বসুন।  আমি তো পরে যাচ্ছি। " আসলে যদি সরে বসে, তাহলে আমার একটু জিৎ হবে।  আমাকে আমি বলবো , "হমম দেখলি কেমন দিলাম। " আমরা সবাই এরকম দিতে চাই।  কিন্তু কি দিতে চাই সেটাই জানিনা।  তাই যখন অফিসে ম্যানেজার ডেকে বলে , "তুমি মাকাল ফল।" তখন তার মনের সেই , "কেমন দিলাম" ভাবটা বুঝে উঠতে পারিনা।  তাই ক্ষমাও করে ওঠা হয় না।  ছন্দ হারানো এক গন্ধ গায়ে নিয়ে নিজেকে বন্ধ করে রাখি নিজের ছোট্ট ঘরে।  যে ঘরে আমার এক গুচ্ছ মরে যাওয়া স্বপ্ন সযত্নে রাখা আছে আমার ধূলি পড়া আবছা একটা ছায়ার অন্ধকারে। তুমি যখন দূর থেকে এসে আমার পাশে বস, আর সব "সে" এর দল ফোন করে বলে , "টাইম ওভার" তখন মনে হয় কি করে আমি এই "টাইম " থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু যখন আমি বিস্তীর্ণ জনতার ভিড়ে থাকা "সে" কে চিৎকার করে বলি "টাইম ওভার " তারা কিন্তু ভাবেনা।  তারা সুর সুর করে বেরিয়ে পরে আমি তুমির কবল থেকে।  আসলে তারাও ভাবে "আমি"র মতো।  আমরা সবাই ভাবি, কিন্তু আসলে আমরা শুধু আমাদের আর তোমাদের কথা বুঝতে পারি, মনে ধরতে পারি, আর চিন্তা করতে পারি।  কিন্তু আমি আর তুমি যখন "সে" হয়ে "তাদের ( আমাদের + তোমাদের ) " সামনে দাঁড়াই তখন ওরাও একই কথা ভাবে, যা আমরা এতকাল ভেবে এসেছি। তাই মতি নন্দীর "জীবন সরল রেখা নয় "। সরলীকরণের চেষ্টা করাটাই বৃথা।  আমি আমার মতো "সে" তাদের মতো।  কিন্তু এখানেও আর একটা প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় - "তুমি" কার মতো? এটাও  একটা সমস্যা এনে দাঁড়ায়।  তাই মাঝে মাঝে সেই বুভুক্ষু "সে" দের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করি তোমাকে নিয়ে।  কারণ তুমি তখন আমাকে অনেক কিছু গোপন করেছ।  এই গোপনীয়তার আড়ালে তোমার কি লক্ষ্য তা না জেনে , আমি হাত পেতে দিই , "সে" এর কাছে,  আর  "সে" আমাকে ভবিষ্যতের আগ্রাসনের উদ্যেশ্যে মিথ্যে হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে বলে  , "আমি আর "সে" নই , এখন থেকে শুধু আমি আর তুমি। " নতুন সম্পর্কে দাঁড়ায় অদ্ভুত পরিবর্তন।  যাকে বলে , "আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। " বিশ্বাস অতো সহজ জিনিস নয় যে যাকে তাকে করা যাবে।  তাই সব কিছু শেষের আগে একবার তোমার কাছে পৌঁছে যাই জানার জন্য যে , "তুমি কার মতো। " আর তখন তুমি উত্তর দাও , "তুমি যা চাও তাই আমি। " মনে পরে যায় রবীন্দ্রনাথ এর সেই কথা , "ফুলকে বললাম আমি সুন্দর , সুন্দর হলো সে। " তাহলে আমি কেও বৃথা "তাদের" কাছে হাত পেতে এলাম।  শুরু হয় অন্তহীন দ্বন্দ্ব।  চিনতে শেখে মানুষ , "নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ।  পরঃ পরঃ সদা। " আমি তখন নিজেই নিজেকে সন্দেহ করি।  ভাবতে বসি তাহলে এই কদিনের মধ্যে যাকে আমি , "তুমি" তে পরিণত করেছি তাহলে তারা কারা ? তাহলে কি তাদের ছেড়ে দিতে হবে।  এখানে সঙ্গে দাওনা তুমি, বলো , "অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে। " রাস্তায় সামনের বাসটাকে ওভারটেক করতে গিয়ে একজনের নাকের ডগা দিয়ে গাড়ির আয়নার কাঁচটা চালিয়ে দিয়েছিলো বলে তুমি বলেছিলে  , "শাস্তি পেতে হবে। " কিন্তু তাকে ধরতে পারোনি সেদিন।  তাই তাকে শাস্তি দিতে  পারোনি সেদিন।  কিন্তু আজ আমি ধরা দিয়েছি বলেই কি শাস্তি আমায় পেতে হবে।  তুমিও আমাকে খাদ্য বানালে ! কিন্তু "সে" দের ভিড় আমাকে শাস্তি দিতে ভুলে গেছে।  তারা খেয়ালই রাখেনি যে "আমি" কখন তাদের কাছে "তুমি" থেকে "সে " হয়ে গেছি।  তাই ধীরে ধীরে আমি-তুমি-সে আজ সবাই দাঁড়িয়ে আছি আজ মুখ বাড়িয়ে, একে অপরকে খাবো বলে।  খাচ্ছি আর নিজেকে বিজয়ী মনে করে জয়োল্লাসে হাততালি দিয়ে বলছি , "জয় হো "। ব্যাস পৃথিবী চলছে ড্যাংডেঙ্গিয়ে।  যে জিতছে সে সব নিয়ে চলে যাচ্ছে।  আর যে হারছে সে সবকিছু খুইয়ে দাঁত আর নখে শান দিচ্ছে পরের যুদ্ধে জেতার জন্য।  ভগবানও ঝিমুচ্ছে , কারণ যখন সবাই কে জেতাতে হয় তখনি হিসাব নিকাশের দরকার পরে।  কিন্তু এখানে সবাই সবাইকে হারাতে চায়।  তাই ঘুম ঘুম ঘুম চারিদিক নিঝঝুম।