বলেছিলাম
একবার দেখে নাও। এখন
হাতরাচ্ছ তো। আর হাতড়ে
কি হবে। শুধু তো ড্রপবক্স এর পাসওয়ার্ডটা মনে রাখলেই হয়ে যেত। তখন বলেছিলাম আমি মরে গেলে শুধু
ড্রপবক্স এ ঢুকে আমার ওই ফাইলটা খুলবে। ওটার
পাসওয়ার্ড তো জানো। ওটাতেই
তো সব কিছু লিখে গেছি। আমার
সব ক্রেডিট কার্ড , আমার সব একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড , আমার সব ফোন নাম্বার , কি নেই। তখন মরার কথা বলতেই বলতে , “তুমি আছো
তো।” আমি যখন থাকবো না সব ব্যবস্থা করে তবেই তো গেছিলাম। আহা করছো কি ? ওই মাতালটাকে সব দেখাতে
হবে। জানতাম ও ছোঁক ছোঁক করছে অনেকদিন। কিন্তু তোমাকে পেতে গেলে আমার লাশের
ওপর দিয়ে যেতে হবে। তাই
যাচ্ছে শালা। প্রভিডেন্ড
ফান্ড এর নমিনি তুমি। ও
নয়। হেব্বি গালাগাল খেয়ে খেয়ে পয়সা
জমিয়েছি। খবরদার
কারো ওপর ভরসা করবে না। সবার
হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা। একুশটা
একাউন্ট আছে। কিছুই তো
জানোনা। ওসব কাগজ ঘেঁটে কিছু হবে না। সব
অনলাইন এ স্ক্যান করে তুলে রেখেছি আর অরিজিনাল গুলো ভল্ট -এ . টার্ম ইন্সুরেন্স করে রেখেছি , এবার
তুমি কোটিপতি। মরা বর এক কোটি। জ্যান্ত
ছিলাম যখন , তখন ব্রেকফাস্ট পর্যন্ত করে দাওনি। কিন্তু দেখো এখন। পেলে কিন্তু মাতালটার দিকে চলে যেওনা।
বিয়ে কোরো , কিন্তু ওই মাতালটাকে না। শালা দু নম্বরি। আরে , আরে বারণ করো। আমার ওই বাক্সে ওকে হাত দিতে দিও না। আমার লেখা আছে ওখানে। একটাও পাবলিশ হয়নি বলে গালাগালি করতে
, এবার আমার বিরহে পাবলিশ করে দেখো। কি
হ্যাপা। কেউ পাত্তা দেয়নি। তুমিও। এখন সবাই কিরকম পাত্তা দিচ্ছে। কি সুন্দর , সবার কাছে ইম্পরট্যান্ট। কালকে অবিচুয়ারি দেখলাম। ফাইনালি খবরের কাগজে তো নাম উঠলো। হেব্বি ছবিটা। কিন্তু ওখানেও বানান ভুল করেছো। এখন কাঁদলে হবে। বলেছিলাম , আর টেনশন দিয়ো না। এমনিতেই হাইপারপারটেনশন আছে। চাপে পরে
নার্ভ ছিঁড়ে ফাইনালি মেরে ফেললে তো। আমি
কুল। এখন কোন চাপ নেই। যা ইচ্ছা কর। তোমাকে কাঁদতে দেখলে হেব্বি
আত্মতুষ্টি হয়। কত
কথা গিলে ফেলতাম , প্রতিবাদ করলে তো পুরুষের পৌরুষ শেষ হয়ে যায়। আর ঢোক গিললে মনটা পাশ ফিরে শোয়। ভেতরটা পচে যাচ্ছিলো। শালা হেব্বি ডিটোক্সিফায়েড লাগছে। একদম ফুরফুরে। মরলে মনে হয় ব্যাচেলর লাইফ ফিরে আসে। কিন্তু ভূতের সাথে প্রেম করে লাভ নেই।
সব আছে , কিন্তু ছোঁয়া নেই। ওসব
প্রচুর ন্যাকামো লেখা আছে ওই বাক্সে। স্বর্গীয়
প্রেম ট্রেম কিছু হয়না। ঢপের
চপ। স্বর্গ টর্গ কোথায়। শালা ঝুলে আছি তোমার আসে পাশে। শুধু দেখছি সব খেলা। ছেলেটা এখনো বুঝতে পারেনি তো ঘোড়াটা
নেই। ওর বিশেষ কিছু যায় আসে না। ওর ঘোড়া হওয়ার জন্য হাজার লোক আছে। সুন্দরীর ছেলেদের ফাদার ফিগার খুব
তাড়াতাড়ি জোটে। ভাগ্যিস
অপঘাতে মৃত্যু হয়নি। নাহলে
সব ইনসিওরেন্স, না বলে দিতো। আমার
শরীরটা পচত মর্গে। দেহদানের
লোক গুলো আসার আগেই পুড়িয়ে দিলে। দোষটা
যদিও আমারিই , না বলে দেহদান করেছিলাম। ধান্দা
ছিল একটু পুন্য কামানো। ভাগ্যিস
পুড়িয়ে দিয়েছিলে , ওসব পুন্য টুন্য আসলে কাজে
লাগেনা। শ্রাদ্ধর ধান্দা করছে সবাই। প্লিস ঐটা আটকে দিয়ো। খুব কষ্টে রোজগার করা পয়সা। হাগড়ে গুলো খেতে এসে আমার নামে মনে
মনে খিল্লি করবে। আমি
সবার মন পড়তে পারছি এখন। তুমি
এবার গালাগালি থামাও দেখি। লোকের
সামনে কেঁদে টেদে মনে মনে গালাগালি পাড়ছো। তোমাকে
তো ভাসিয়ে দিয়ে যায়নি। হ্যাঁ
এখন থেকে কয়েকদিন তোমাকে নাহয় জিনিসপত্র টেনে টেনে নিয়ে যেতে হবে। কয়েকদিন একটু আগে ঘুম থেকে উঠে
ছেলেটাকে তৈরী করতে হবে। কয়েকদিন
একটু দুঃখ দুঃখ মুখ করে ঘুরে বেড়াতে হবে। তারপরেই
তো কেউ না কেউ এসে হাজির হবে। প্লিস
একটা বছর ওয়েট কোরো। লোকে
কি বলবে সেটা আমার প্রব্লেম নয়। আমার
প্রব্লেম আমার টাকা গুলো যেন তুমি পাও। ঐসব
বার করে তবে পরের বিয়েটা করো। আর
মনে রেখো সবাই আমার মতো হবে না। এডজাস্ট
করতে শিখতে হবে। ওই দেখো মাতালটা আবার এস এম এস করেছে। রাত দুটো বাজে। কি বেপরোয়া। একটু সবুর করছে না। আমার মতো ধৈর্য ও ধরতে পারবে না। ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে না ফেলে। ছেলেটাকে আমার কথা তো বলতেই হবে। মিথ্যে বোলো না। ভীরু , কাপুরুষ , পেটুক , লম্পট ,
রুগ্ন , মেয়েলি , … যা ইচ্ছা গালাগালি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ো
ও বাবার মতো বাবা ছিল না। যে
চলে গেছে তার নামে দোষ দিলে কারো ক্ষতি হয়না , বরঞ্চ মন হালকা হয়। তোমার এখন দুটো দোষ দেওয়ার লোক ,
নিয়তি ওরফে ভগবান আর আমি। তাই
মন খুলে নিন্দা কোরো। কি
জানি শালা এবার কি হবো। মনে
তো হয় আত্মার ট্রান্সফার হয়। হেব্বি ইচ্ছা আরশোলা হয়ে তোমার পাশে পাশে ঘোরার। সাত
জন্মের ঐসব প্রতিজ্ঞা টোতিগ্গা করেছি। অতো
সহজে ছাড়ছি না। ওই
মাতালটা বীরত্ব দেখিয়ে পিষে মেরে দিলে , উকুন হয়ে আবার তোমার মাথায়। তুমি লাইসিল
মাখলে ছারপোকা। বাড়ি পাল্টে বার্ন কিনলে , সকালের রুস্টার। রোস্ট করে খেলে , সালমোনেলা টাইফসা
হয়ে জন্মাবো। ভ্যাকসিন
নিলে মশা হয়ে রক্ত চুষে নেবো। থাবড়ে
মেরে ফেললে শেষমেশ শালা আবার শুক্রাণু হয়ে তোমার ভেতরেই ঢুকে তোমার থেকেই বেরিয়ে
এসে বাকি জীবন রক্ত চুষবো। ভেতর
থেকে লাথি মেরে মেরে পাট পাট করে দেব। কি
সুন্দর বসে বসে কবিতা লিখতাম , গান শুনতাম , কম্পিউটারে কোড করতাম। বিয়ে করে হলহলে করে দিলে জীবনটা। আমি
একাই কেন ভুগবো , ওই মাতালটার সাথেই তোমার আবার বিয়ে দেব। সবাই ভুগুক। আমি ভুগছিলাম খুব , অনেকবার মনে
হচ্ছিলো সুইসাইড করে নি। শুধু
তোমাদের কথা চিন্তা করে করতে পারিনি। সত্যি
বলবো , এখন কি কম ভুগছি? আমার এখন ইন্দ্রিয় নেই। আছে শুধু অস্তিত্ব , যে এখনো ঘুরে
চলেছে তোমার আসেপাশে। তোমাকে
আঁকড়ে ধরে। এই
অস্তিত্বের সাথে ইন্দ্রিয়সুখ থাকলে তবে হতো এই মৃত্যু সুন্দর। আমার অস্তিত্ব ঘিরে আছে তোমার সাথের
স্মৃতি নিয়ে। স্মৃতিমন্থনে
আসছে উগ্রতা , পরক্ষনেই তোমার স্পর্শের রোমন্থন এসে মন ভরে তুলছে। সকালের ধূপের গন্ধ থেকে , রাতের
শ্যাম্পু করা ফুরফুরে চুলের মধ্যে ডুবে থাকা মাৎসর্যের অবশেষ হিসেবে শুধুই বেঁচে
আছে মনের গভীরে লিখে রাখা অনুভূতি। আঁচড়ে , কামড়ে শেষ করে দেওয়া সেই রাতগুলোর থেকে
শুধু ক্লান্তি এখনো ঘিরে আছে আমার অস্তিত্বের মননে। আমি এখন কি , দেখতে না পাওয়া কালিতে
লেখা তোমার আমার দীর্ঘ ইতিহাস। আমি
আছি , আমি তোমার সাথেই আছি। কিন্তু
তোমার স্মৃতিতে আর লেখা হচ্ছে না তোমার আমার কথা। সেখানে আমি আর নেই। তুমি মাঝে মাঝে উগলে আনছো , তারপর
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছো। আর
আমি এখন সর্বভূতেহিতেরতাঃ। নাহঃ
, আমার ভালো লাগছে না। শুধু সাথে থাকার যে উদ্যেশ্যে সারাজীবন শুধু লড়ে গেছি , আজ
তোমার সাথে পুরো সময় থাকলেও আমি নেই। একাকীত্ব
আগেও সয়েছি , কিন্তু এবার বিচ্ছেদ। খুব
একটা খারাপ ছিলাম না
আমরা। যখন শরীরে কাছে হেরে গিয়ে মনের লোকের
কাছে হাত পেতেছিলাম , ইচ্ছা করলেই সেই হাতটাকে আজ আগুনে পুড়ে অনুভূতিশূন্য নাই
করতে পারতে। ……
No comments:
Post a Comment