Friday, June 15, 2018

মরণের পারে



বলেছিলাম একবার দেখে নাও।  এখন হাতরাচ্ছ তো।  আর হাতড়ে কি হবে।  শুধু তো ড্রপবক্স এর পাসওয়ার্ডটা  মনে রাখলেই হয়ে যেত।  তখন বলেছিলাম আমি মরে গেলে শুধু ড্রপবক্স এ ঢুকে আমার ওই ফাইলটা খুলবে।  ওটার পাসওয়ার্ড তো জানো।  ওটাতেই তো সব কিছু লিখে গেছি।  আমার সব ক্রেডিট কার্ড , আমার সব একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড , আমার সব  ফোন নাম্বার , কি নেই।  তখন মরার কথা বলতেই বলতে , “তুমি আছো তো।” আমি যখন থাকবো না সব ব্যবস্থা করে তবেই তো গেছিলাম।  আহা করছো কি ? ওই মাতালটাকে সব দেখাতে হবে।  জানতাম ও ছোঁক ছোঁক করছে অনেকদিন।  কিন্তু তোমাকে পেতে গেলে আমার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে।  তাই যাচ্ছে শালা।  প্রভিডেন্ড ফান্ড এর নমিনি তুমি।  ও নয়।  হেব্বি গালাগাল খেয়ে খেয়ে পয়সা জমিয়েছি।  খবরদার কারো ওপর ভরসা করবে না।  সবার হাতিয়ে নেওয়ার ধান্দা।  একুশটা একাউন্ট আছে।  কিছুই তো জানোনা। ওসব কাগজ ঘেঁটে কিছু হবে না।  সব অনলাইন এ স্ক্যান করে তুলে রেখেছি আর অরিজিনাল গুলো ভল্ট -এ  . টার্ম ইন্সুরেন্স করে রেখেছি , এবার তুমি কোটিপতি। মরা বর এক কোটি।  জ্যান্ত ছিলাম যখন , তখন ব্রেকফাস্ট পর্যন্ত করে দাওনি।  কিন্তু দেখো এখন।  পেলে কিন্তু মাতালটার দিকে চলে যেওনা।  বিয়ে কোরো , কিন্তু ওই মাতালটাকে না।  শালা দু নম্বরি।  আরে , আরে বারণ করো।  আমার ওই বাক্সে ওকে হাত দিতে দিও না।  আমার লেখা আছে ওখানে।  একটাও পাবলিশ হয়নি বলে গালাগালি করতে , এবার আমার বিরহে পাবলিশ করে দেখো।  কি হ্যাপা।  কেউ পাত্তা দেয়নি।  তুমিও।  এখন সবাই কিরকম পাত্তা দিচ্ছে।  কি সুন্দর , সবার কাছে ইম্পরট্যান্ট।  কালকে অবিচুয়ারি দেখলাম।  ফাইনালি খবরের কাগজে তো নাম উঠলো।  হেব্বি ছবিটা।  কিন্তু ওখানেও বানান ভুল করেছো।  এখন কাঁদলে হবে।  বলেছিলাম , আর টেনশন দিয়ো না।  এমনিতেই হাইপারপারটেনশন আছে। চাপে পরে নার্ভ ছিঁড়ে ফাইনালি মেরে ফেললে তো।  আমি কুল।  এখন কোন চাপ নেই।  যা ইচ্ছা কর।  তোমাকে কাঁদতে দেখলে হেব্বি আত্মতুষ্টি হয়।  কত কথা গিলে ফেলতাম , প্রতিবাদ করলে তো পুরুষের পৌরুষ শেষ হয়ে যায়।  আর ঢোক গিললে মনটা পাশ ফিরে শোয়।  ভেতরটা পচে যাচ্ছিলো।  শালা হেব্বি ডিটোক্সিফায়েড লাগছে।  একদম ফুরফুরে।  মরলে মনে হয় ব্যাচেলর লাইফ ফিরে আসে।  কিন্তু ভূতের সাথে প্রেম করে লাভ নেই।  সব আছে , কিন্তু ছোঁয়া নেই। ওসব প্রচুর ন্যাকামো লেখা আছে ওই বাক্সে।  স্বর্গীয় প্রেম ট্রেম কিছু হয়না।  ঢপের চপ।  স্বর্গ টর্গ কোথায়।  শালা ঝুলে আছি তোমার আসে পাশে।  শুধু দেখছি সব খেলা।  ছেলেটা এখনো বুঝতে পারেনি তো ঘোড়াটা নেই।  ওর বিশেষ কিছু যায় আসে না।  ওর ঘোড়া হওয়ার জন্য হাজার লোক আছে।  সুন্দরীর ছেলেদের ফাদার ফিগার খুব তাড়াতাড়ি জোটে।  ভাগ্যিস অপঘাতে মৃত্যু হয়নি।  নাহলে সব ইনসিওরেন্স, না বলে দিতো।  আমার শরীরটা পচত মর্গে।  দেহদানের লোক গুলো আসার আগেই পুড়িয়ে দিলে।  দোষটা যদিও আমারিই , না বলে দেহদান করেছিলাম।  ধান্দা ছিল একটু পুন্য কামানো।  ভাগ্যিস পুড়িয়ে দিয়েছিলে , ওসব পুন্য টুন্য আসলে  কাজে লাগেনা।  শ্রাদ্ধর ধান্দা করছে সবাই।  প্লিস ঐটা আটকে দিয়ো।  খুব কষ্টে রোজগার করা পয়সা।  হাগড়ে গুলো খেতে এসে আমার নামে মনে মনে খিল্লি করবে।  আমি সবার মন পড়তে পারছি এখন।  তুমি এবার গালাগালি থামাও দেখি।  লোকের সামনে কেঁদে টেদে মনে মনে গালাগালি পাড়ছো।  তোমাকে তো ভাসিয়ে দিয়ে যায়নি।  হ্যাঁ এখন থেকে কয়েকদিন তোমাকে নাহয় জিনিসপত্র টেনে টেনে নিয়ে যেতে হবে।  কয়েকদিন একটু আগে ঘুম থেকে উঠে ছেলেটাকে তৈরী করতে হবে।  কয়েকদিন একটু দুঃখ দুঃখ মুখ করে ঘুরে বেড়াতে হবে।  তারপরেই তো কেউ না কেউ এসে হাজির হবে।  প্লিস একটা বছর ওয়েট কোরো।  লোকে কি বলবে সেটা আমার প্রব্লেম নয়।  আমার প্রব্লেম আমার টাকা গুলো যেন তুমি পাও।  ঐসব বার করে তবে পরের বিয়েটা করো।  আর মনে রেখো সবাই আমার মতো হবে না।  এডজাস্ট করতে শিখতে হবে। ওই দেখো মাতালটা আবার এস এম এস করেছে।  রাত দুটো বাজে।  কি বেপরোয়া।  একটু সবুর করছে না।  আমার মতো ধৈর্য ও ধরতে পারবে না।  ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে না ফেলে।  ছেলেটাকে আমার কথা তো বলতেই হবে।  মিথ্যে বোলো না।  ভীরু , কাপুরুষ , পেটুক , লম্পট , রুগ্ন , মেয়েলি , যা ইচ্ছা গালাগালি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ো ও বাবার মতো বাবা ছিল না।  যে চলে গেছে তার নামে দোষ দিলে কারো ক্ষতি হয়না , বরঞ্চ মন হালকা হয়।  তোমার এখন দুটো দোষ দেওয়ার লোক , নিয়তি ওরফে ভগবান আর আমি।  তাই মন খুলে নিন্দা কোরো।  কি জানি শালা এবার কি হবো।  মনে তো হয় আত্মার ট্রান্সফার হয়। হেব্বি ইচ্ছা আরশোলা হয়ে তোমার পাশে পাশে ঘোরার। সাত জন্মের ঐসব প্রতিজ্ঞা টোতিগ্গা করেছি।  অতো সহজে ছাড়ছি না।  ওই মাতালটা বীরত্ব দেখিয়ে পিষে মেরে দিলে , উকুন হয়ে আবার তোমার মাথায়। তুমি লাইসিল মাখলে ছারপোকা। বাড়ি পাল্টে বার্ন কিনলে , সকালের রুস্টার।  রোস্ট করে খেলে , সালমোনেলা টাইফসা হয়ে জন্মাবো।  ভ্যাকসিন নিলে মশা হয়ে রক্ত চুষে নেবো।  থাবড়ে মেরে ফেললে শেষমেশ শালা আবার শুক্রাণু হয়ে তোমার ভেতরেই ঢুকে তোমার থেকেই বেরিয়ে এসে বাকি জীবন রক্ত চুষবো।  ভেতর থেকে লাথি মেরে মেরে পাট পাট করে দেব।  কি সুন্দর বসে বসে কবিতা লিখতাম , গান শুনতাম , কম্পিউটারে কোড করতাম।  বিয়ে করে হলহলে করে দিলে জীবনটা। আমি একাই কেন ভুগবো , ওই মাতালটার সাথেই তোমার আবার বিয়ে দেব।  সবাই ভুগুক।  আমি ভুগছিলাম খুব , অনেকবার মনে হচ্ছিলো সুইসাইড করে নি।  শুধু তোমাদের কথা চিন্তা করে করতে পারিনি।  সত্যি বলবো , এখন কি কম ভুগছি? আমার এখন ইন্দ্রিয় নেই।  আছে শুধু অস্তিত্ব , যে এখনো ঘুরে চলেছে তোমার আসেপাশে।  তোমাকে আঁকড়ে ধরে।  এই অস্তিত্বের সাথে ইন্দ্রিয়সুখ থাকলে তবে হতো এই মৃত্যু সুন্দর।  আমার অস্তিত্ব ঘিরে আছে তোমার সাথের স্মৃতি নিয়ে।  স্মৃতিমন্থনে আসছে উগ্রতা , পরক্ষনেই তোমার স্পর্শের রোমন্থন এসে মন ভরে তুলছে।  সকালের ধূপের গন্ধ থেকে , রাতের শ্যাম্পু করা ফুরফুরে চুলের মধ্যে ডুবে থাকা মাৎসর্যের অবশেষ হিসেবে শুধুই বেঁচে আছে মনের গভীরে লিখে রাখা অনুভূতি। আঁচড়ে , কামড়ে শেষ করে দেওয়া সেই রাতগুলোর থেকে শুধু ক্লান্তি এখনো ঘিরে আছে আমার অস্তিত্বের মননে।  আমি এখন কি , দেখতে না পাওয়া কালিতে লেখা তোমার আমার দীর্ঘ ইতিহাস।  আমি আছি , আমি তোমার সাথেই আছি।  কিন্তু তোমার স্মৃতিতে আর লেখা হচ্ছে না তোমার আমার কথা।  সেখানে আমি আর নেই।  তুমি মাঝে মাঝে উগলে আনছো , তারপর ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছো।  আর আমি এখন সর্বভূতেহিতেরতাঃ।  নাহঃ , আমার ভালো লাগছে না। শুধু সাথে থাকার যে উদ্যেশ্যে সারাজীবন শুধু লড়ে গেছি , আজ তোমার সাথে পুরো সময় থাকলেও আমি নেই।  একাকীত্ব আগেও সয়েছি , কিন্তু এবার বিচ্ছেদ।  খুব একটা খারাপ  ছিলাম না আমরা।  যখন শরীরে কাছে হেরে গিয়ে মনের লোকের কাছে হাত পেতেছিলাম , ইচ্ছা করলেই সেই হাতটাকে আজ আগুনে পুড়ে অনুভূতিশূন্য নাই করতে পারতে।  …… 


Thursday, June 14, 2018

আধ্যানের ডায়েরি দ্বিতীয় বছর একত্রে




৫০) আধ্যানের ডায়েরী - দ্বিতীয় জন্মদিন



সকাল থেকে দেখছি বাবা আর মা ছুটোছুটি করছে।  আমার নাকি জন্মদিন।  কালকে প্রচুর লোক আসবে।  প্রচুর খাওয়ানো হবে তাই প্রচুর রান্না বান্না।  মা বাবা তাই ব্যস্ত।  আমার দিকে মন নেই।  আচ্ছা ব্যাপারটা তো আমার।  জন্মদিনটা তো আমার, আর আমিই ইগনোর্ড।  অদ্ভুত ইনহিউম্যান না ব্যাপারটা ।  কোথায় আমাকে নিয়ে তোলা তোলা করে রাখবে , তা না , দু দিন ধরে শুধু আমাকে খ্যাঁচাতে লাগলো।  সারাদিন শুনতে লাগলাম, “এতে হাত দিসনা” , “ওখানে আসিস না” , “সেখানে জাবি না”।  আমি কি করি? 

আমি টিভি দেখি।  এই সুযোগে আমি সারাদিন টিভি দেখে নিলাম চাড্ডি।  সারাদিন বাবা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে দৌড়ে বেড়িয়ে পরিষ্কার করে গেলো আর মা সারাদিন রান্নাঘরে রান্না করে কাটিয়ে দিলো।  পরের দিনও তাই।  কোনো পরিবর্তন নেই।  

বাবার দৌড় দেখে কষ্ট হলো।  ওই বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে থপ থপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর একজায়গায় জিনিস আরেক জায়গায় রাখছে।  আমি ভাবলাম হেল্প করে দিই। কিন্তু হেল্প করতে গিয়ে চোখে পড়লো জলের বোতল।  সবাই খাবে বলে বাবা জলের বোতল নিয়ে এসেছে প্রায় ফিফটি টা।  এগুলো আবার ছোট ছোট বোতল।  ব্যাস আমিও একটা একটা করে তুলে সাজিয়ে রাখতে লাগলাম টেবিলের ওপর।  একটা করে বার করছি আর বাবা একটা করে তুলে এনে অন্য জায়গায় রাখছে।  আরে সবাই তো টেবিল থেকেই তুলে নিয়ে খাবে।  আমি তো বুদ্ধিমানের কাজই করেছি।  কিন্তু না , অন্য জায়গায় আমার নাগালের বাইরে না তুলে রাখলে শান্তি নেই।  

এর পর বাবা আমার সব কিছু খেলনা তুলে তুলে রাখতে লাগলো।  মাও দেখি হাত লাগালো।  আমি হাত লাগাতেই হাঁ হাঁ করে ছুটে এলো।  আমি ভাবলাম সেই পুরোনো সিস্টেম , জন্মদিনে কাজ করা যাবে না, সেই জন্যেই ভালোবেসে সরিয়ে দিচ্ছে।  কিন্তু না , ব্যাপারটা সেরকম না।  ব্যাপারটা হলো আমি নাকি আরো নোংরা করে ফেলছি তাই আমাকে হাত লাগাতে দেবে না।  

শেষে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারই হাতে তুলে নিলাম।  বাবা শুরু করেছিল , কিন্ত আমি জোর করে নিয়ে নিলাম।  বাবাও ছেড়ে দিলো।  আমি বেশ করে সারা ঘরে ঘুরে ঘুরে পরিষ্কার করে ব্যাপারটা বাসযোগ্য করে তুললাম।  হাজার হোক , অনেক লোক তো আসবে।  প্রেস্টিজের একটা ব্যাপার আছে।  কিন্তু বাবা আমার কাজে ভরসা করে না আর মা বাবার কাজে।  তাই প্রথমে বাবা আমার হাত থেকে নিয়ে ভ্যাকুয়াম করলো।  আবার মা বাবার হাত থেকে নিয়ে বাকিটা করে দিলো।  বাবা ততক্ষন চলে গেছে রান্নাঘরে।  

বাবা যে কি করলো জানিনা রান্না ঘরে, সারা ঘর এক অদ্ভুত গন্ধে ভরে গেলো। আর আমার দু চোখ দিয়ে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগলো।  সে কান্না থামতেই চায়না।  যখন মায়ের ম্যাক্সিতে মুখ লুকোলাম তখন দেখি বাবা নিজেই এসে কাটা পিয়াঁজ দেখাতে লাগলো।  ও হরি , তাহলে এতক্ষন পিয়াঁজ কাটছিলো।  আমি ভাবলাম কত না কি। 

পিয়াঁজ কাটা হয়ে গেলে , বাবা আবার পরিষ্কার করতে চলে গেলো, আর মা রান্না ঘরে আর আমি টিভির সামনে।  কি ভয়ানক দিনটা গেলো।  সব কিছু এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলো।  বাবা মাঝে মাঝে বলে উঠতে লাগলো , জায়গা বার করতে হবে।  অনেক জায়গা বার করতে হবে।  আর আমার সমস্ত খেলনা গুলো একদম এক সাইডে পাঠাতে লাগলো।  আমার বইগুলো সব জায়গায় পরে থাকে, আমি যখন তখন একটা একটা করে তুলি , আর পড়ি।  কিছুটা পড়ি , আর যেটা পড়তে পারিনা সেটা খেয়ে নি।  কিন্তু একী , সবাই বই হাওয়া।  বাবা সবগুলো তুলে একটা বাক্স বন্দি করে ফেলেছে।  

সারাদিন চলে গেলো বাবা মার্ কাজ দেখে দেখে।  রাত তখন অনেক।  আমার খিচুড়ি খাওয়া হয়ে গেছে।  আমি খুব স্লীপি।  বিছানায় যাওয়ার আগে দুধলিনের খোঁজ করছি।  এমন সময় যেন ঘরে আগুন লাগলো।  আবার বাবা ছুটছে , মা ছুটছে একটা ছোট সাদা বাক্স খুলে গেলো।  বাক্সে দুটো গোল গোল কেক।  আমার কেক খেতে একটুও ভালো লাগে না।  তারওপর , তার ওপর দুটো ক্যান্ডেল লাগিয়ে দিলো।  বাবার হাতে একটা ফোন তাতে ঠাম্মা এসে গেলো, মায়ের হাতে একটা ফোন সেটাতে দিদা এসে গেলো।  এবার বাবার হাতে দুটো ফোন আমার দিকে তাক করে বসে আছে।  মা আমাকে কোলে নিয়ে শুরু করে দিলো , “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। ” সবাই সাথে চিৎকার করতে আরম্ভ করলো।  আমিও দু চারবার বললাম , “হ্যাপি” . ওর বেশি বেরোলো না।  মা একটু কেক কেটে আমার মুখে দিলো।  আমি থু থু করে ফেলে দিতে দেখি বাবা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  ফোন টোন ফেলে অর্ধেক কেক আমার মুখে দিলো মাখিয়ে।  কি রগড় রে বাবা।  তার ওপর আবার ছবি তোলার ঢং।  

আমার ঠিক আজ থেকে এক বছর আগের কথা মনে পরে গেলো।  যখন বাবা ছিল না আমার কাছে।  মা আর দাদু ঠিক এই ভাবে জন্মদিন করেছিল।  আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।  খুব করে চেয়েছিলাম বাবা চলে আসুক।  কিন্তু তখন আসে নি।  আসতে পারেনি।  আজ যখন বাবা আছে , তখন করে নিক যত আনন্দ চায়।  

বাবা কিন্তু চুটিয়ে আনন্দ করেছে আমার জন্মদিনে। চুটিয়ে খেটেছে , আর চুটিয়ে মজা করেছে।  শুধু আমাকে পাত্তা দেয়নি।  পরেরদিন সকালে আমার ঘুম থেকে ওঠার আগেই কিসব কাবাব টাবাব বানাতে বসে গেছিলো।  বাইরে ব্যালকনিতে একটা কালো জায়গার ওপর কি সুন্দর গোল গোল করে জিনিস বানাচ্ছিল।  আমি যতবার কাছে যেতে যাচ্ছি , আমাকে ঘাড় ধরে সরিয়ে দিচ্ছে , “খুব গরম ” বলে।  আমি আর কি করি , মায়ের পেছনে  পেছনে ঘুর ঘুর করছি।  কিন্ত ঘুর ঘুর করে তো লাভ নেই।  মা তখন চারটে কড়াইতে কি কি সব করছে।  আর সারা ঘরে একটা গুমোট গন্ধ।  

এইসময় একে একে সবাই ফোন করলো।  বাবা বাইরে ছিল , তাই মা আর আমিই বসে বসে কথা বললাম।  সবাই হ্যাপি হ্যাপি করছিলো।  আমিও করছিলাম।  এদিকে বেলা অনেক বেড়ে গেছে , খুব খিদে পেয়ে গেছে।  অথচ , খাবার দেওয়ার নাম নেই।  কোনো খাবার নেই।  এদিকে মা বাবা দুজনেই কিছু না কিছু রান্না করে যাচ্ছে।  কখনো গ্যাসের কাছে কিছু করছে , কখনো মাইক্রোওয়েভে কিছু করছে।  আর এদিকে আমার পেট চুঁ চুঁ করছে।  

যখন বিরক্তি তুঙ্গে উঠে গেছে  তখন   বাবা আমাকে কোলে নিয়ে বসলো টেবিলে।  দেখি অনেক খাবার।  অনেক অনেক খাবার।  কিন্তু আমার খিচুড়ি কৈ।  আমার তো মাথা গেলো গরম হয়ে।  আমার জন্মদিন আর আমার জন্য খিচুড়ি বানানো নেই।  রেড , ইয়ালো , পিঙ্ক , পার্পল কত কিছু আছে খাবারে।  অথচ খিচুড়ি নেই।  বাবা আবার প্রথমেই একটা চামচে করে সাদা কিছু একটা মুখে তুলে দিলো।  ইশশ মিষ্টি পায়েস।  ধুর ধুর।  আমি একটা আলুভাজা তুলে মুখে দিলাম , কিন্তু খিদের চোটে বুক ফেটে কান্না চলে এলো।  তখন সেই খাওয়া ছেড়ে আমাকে ফাইনালি আমার খিচুড়ি দেওয়া হলো।  জন্মদিনে কি কেউ এই ভাবে না খাইয়ে রাখে।  

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি সোফার একদিকে মা , একদিকে বাবা , হাত পা ছেড়ে পরে আছে।  আমি অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম , ঘুম ভেঙে যেই এই ঘরে এসেছি , দুজনেই তিড়িং করে লাফিয়ে পরে আমাকে ধরে আপেল সস খাইয়ে দিলো।  খাইয়েই স্নান করিয়ে দিলো।  আমিও ভ্যা ভ্যা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওরা যা বলছিলো তা করে গেলাম।  এরপর এলো আমার জন্মদিনের ড্রেস।  এ ধরণের ড্রেস আমি কোনোদিন পড়িনি।  পাঞ্জাবি আমি আগেও পড়েছি।  কিন্ত ধুতি ইস টু ফানি।  হেব্বি মজাদার একটা ব্যাপার।  বেশ হাওয়া পাস করছিলো।  কিন্তু অসুবিধার বিষয় হলো বেশ লটপট করছিলাম।  তার ওপর কোমর গেছে নেমে , একটু পেট টেনে ধরলেই সড়াৎ করে নেমে যাচ্ছিলো ধুতিটা।  মা শেষ মেশ ব্যাপারটা ম্যানেজ করে দিলো।  আমার ধুতিটাও একটা দড়ি আছে, সেটা ধরে , টেনে পেটের সাথে এমন চেপে দিলো যে আর খুললো না।  

কিছুক্ষন পরেই দেখি সবাই এসে গেলো।  সবাই মানে অনেকে।  আমার সব বন্ধু বান্ধব আর মা বাবার সব বন্ধুরা। সবাই আমাকে হ্যাপি হ্যাপি করে গেলো আর আমিও সবার সাথে হ্যাপি হ্যাপি করে দিলাম।  কিন্তু এবার একটা ভয়ানক জিনিস হলো।  একটা বি-শা-আ-আ-আ-ল বড় কেক বেরোলো একটা বি-শা-আ-আ-আ-ল বড় বাক্স থেকে।  আমার আজকাল চকোলেট খেতে ভালো লাগে বলে , কালকেও চকোলেট কেক ছিল , আজকেও।  কিন্ত এতো বড় কেক নিয়ে আমি কি করব।  আর আমি জানতাম যে আমার মুখেই প্রথম ঠোসার প্ল্যান আছে এদের।  দিলোও তাই।  আর আমিও অভ্যাসমতো মুখটা মুছে নিলাম আমার পাঞ্জাবি তে।  আমার তখন মন পরে আছে ভুজিয়ার দিকে।  সবাই আমাকে ছেড়ে নিজেদের খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে আমি আমার ভুজিয়া নিয়ে বসলাম। 

রাতে সবাই যখন চলে গেলো , তখন মা আমাকে গিফট গুলো দেখালো।  কত্ত গাড়ি।  ছোট থেকে বড় থেকে মাঝারি।  আর প্রচুর প্রচুর জামা কাপড়।  একজন তো একাই পঞ্চাশটা গাড়ি দিয়েছে।  কিন্তু বাবাটা কিছুতেই খুলতে দিলো না।  বললো , আরেকটু বড় হোক। 

আর কত বড় হবো।  দেখতে দেখতে দু বছর পেরিয়ে গেলাম। গত বছরের ভয়ঙ্কর সময় গুলো এ বছর নেই।  আমি এখন হাঁটতে না দৌড়াতে পারি , বাবা মার ভাষায় কত শব্দ বলতে পারি, এখন আমি নিজে নিজেও অনেক কিছু খেতে পারি , কাঁটা চামচ দিয়ে মা কে খাওয়াতে পারি , বলতে পারি আমি স্লীপি , মা কে জড়িয়ে ধরে হামি খেতে পারি , আর পারি লুকোচুরি খেলতে , দোলনায় দুলতে।  আমি আর এখন প্যারোট ক্লাসে থাকবো না , আমার ট্রান্সিশশান হবে ফ্লেমিংগো তে।  আমি অনেক অনেক বড় হয়ে গেছি।  সারাটা বছর ধরে আমার প্রচুর শেখা হয়েছে।  আরো শেখা বাকি , আরো কত কথা বলার আছে, আরোও কত কিছু এডভেঞ্চার আমার সামনে আছে।  এখন শুধু শুরু। …………. 

আধ্যানের ডায়েরি