কি দরকার
ছিল আমাকে ঐভাবে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাওয়ার। আকার
ইঙ্গিতে তো বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে আমি তোকেই ভালোবাসি। তুই বুঝলি না। বুঝলে আরো অনেক কিছু পেতে পারতিস। অনেক দিন ধরে। অনেক ভাবে। কে এই ভুলগুলো বোঝালো তোকে? জানিস,
আমরা মেয়েরা এগিয়ে গিয়ে বলতে পারি, কিন্ত বলিনা। অপেক্ষা করি যাতে তোরা এগিয়ে
আসবি। সবার সামনে হোক, একান্তে হোক এগিয়ে
এসে সাহস দেখাবি। এইটুকু কি আশা করতে পারিনা আমরা মেয়েরা। আমার , আমার পুরুষের কাছে একটাই আবেদন
ছিল জানিস , যে সে শুধু আমাকে রক্ষা করতে পারবে। আমার জন্য দাঁড়াবে , আমার হয়ে বলবে। আর তার প্রথম পরীক্ষা ছিল তোর এগিয়ে
আসার। আসলি না , আমি কত ভাবে হাতছানি দিলাম। তাকিয়ে
থাকতাম তোর দিকে। কে
বোঝালো তোকে যে মেয়েরা তাকিয়ে থাকলে সে শুধু পা ফাঁক করতে চায়। যদি তোর কাওকে ভালো
লাগে , তাহলে কি শুধু তার সাথে সেক্স করতেই ভালো লাগবে। তার সাথে থাকতে ইচ্ছা করবে না? ভালোবাসতিস তো। আমি বুঝতে পারতাম। আমাকে বলেওছিলো তনিমা। আমার ভালো লাগা
সব জিনিস গুলো আমার আসে পাশে জোগাড় তো তুইই করে রাখতিস। আমি জানতাম। আমি বুঝতাম। দেখেও না দেখার ভান করতাম। কিন্ত রাতে একলা বিছানায় শুয়ে সেই
স্মৃতিগুলোই আলতো হাতে মাথায় হাত রাখতো। রোজ
টিউশনি তে গিয়ে মনে হতো, তোর সামনাসামনি বসি। খাতার
পেছনের পাতায় আই লাভ
ইউ লিখে খাতাটা এগিয়ে দি। কিন্ত
কিছুতেই পারতাম না। নিজেকে
ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যেতাম ঘরের এক কোনে। চুপ
করে অপেক্ষা করার শাস্তি দিয়েছিলাম নিজেকে। না
, শাস্তি না। আমি
সহজলভ্য নই। আমার
সঙ্গী আমার যোগ্য হবে। আমার
থেকেও ওপরে থাকবে তার সাহস। জানিস
প্রপোস করাটা কেন খুব সাহসের? জানিস কেন আমি অপেক্ষা করেছিলাম। প্রপোস তারা করতে পারে যাদের নিজের
ওপর আস্থা আছে , আছে হেরে গিয়ে মেনে নিয়ে জীবনপথে এগিয়ে চলার ক্ষমতা। কি হবে তাই ভেবে নখ কামড়ানো নয় ,
চেষ্টা করেছিলাম এই আনন্দে মশগুল থাকা। আমি চাইতাম তুই অমন হোস। চেষ্টা তো
করছিলিস। সাইকেলের
সামনের বাক্সেটে পড়ে
থাকা মোড়কগুলো তো আমি ফেলে দিইনি। তুলেও
নিই নি তার কারণ আমি চেয়েছিলাম তুই বিরক্ত হ। একদিন
সেই বিরক্তির জন্যেই সব ভয়ের বাঁধন কাটিয়ে এগিয়ে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে
চিৎকার করে বল , ‘ এসব কি ? ‘ তুই সেটাও পারলি না। তুই জেতা বাজি হেরে গেলি। এই দুটো হাত যেটা শক্ত করে ধরার
অধিকার শুধু তোর ছিল। সেই
অধিকার তুই অন্যকে দিয়ে দিলি। তারা
কালশিটে ফেলে দিয়েছে। আলতো চাপ দিয়ে ঠেলে দিলে যে হাত দুটো অবশ হয়ে এলিয়ে যেতে
পারতো , সেই দুটো হাত হাঁটুর তলায় চেপে রেখেছিলো ওরা। ঠোঁট বুলিয়ে দিলে যে শিহরণ মিষ্টতার
রূপ নিতো সেই রূপ ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলো। যখন
তোর চোখে চোখ পরে যেত , কৈ , আমি তো চোখ সরিয়ে নিইনি কখনো। আমি চেয়েছিলাম তোকে চোখ ভোরে দেখতে
যখন তুই আমাকে দেখিস। আমি
তো চেয়েছিলাম তুই দেখিস আমায়। পূর্ণ
ভাবে। কোনো পর্দা ছাড়া। আদিম ভাবে। আমি
ভেবেছিলাম আমার অস্তিত্বর সৃজন হবে তোর চোখের চাহনিতে। তুই দেখবি বলে এই শরীরকে সুন্দর থেকে
সুন্দরতর করে তোলার কত চেষ্টাই না করেছি। সেদিন
তুই দেখলি। সাথে
দেখালি সবাইকে। তাদের
দেখালি যারা থাকবেনা তোর সাথে। আজ ধরা পড়লে কাল তোর নামে দোষ দিতে বিন্দুমাত্র
দ্বিধা করবেনা তারা। আমি কিন্তু থাকতাম । আমি থাকতাম তোর পাশে তোর সাথে। যদি ঝড়
ঝঞ্ঝা অবজ্ঞা করে আমার
জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতিস রাস্তার মোড়ে, আমিও একদিন সব কষ্ট মাথায় তুলে নিতাম তোর জন্য
। কিন্তু সেই ঝড়ের রাতে ওই পশুদের নখ যখন আমার গালে বসে যাচ্ছিল , আমার প্রতিবাদ
দমানোর জন্য যখন ওরা আমার চামড়ার তলায় আটকে দিচ্ছিলো কালো রক্ত , তখন তুই তাদের
সাহায্য করছিলিস । প্রথম
প্রণয়ের যন্ত্রনায় লুকিয়ে
থাকে তৃপ্তির মিষ্টতা। যেটা সেদিন উপড়ে নিয়ে ভাগ করতে চেয়েছিলিস সবার সাথে । তার মিষ্টতার স্বাদ কি
পেলি ? যা শুধু তোর ছিল তাকে ভাগ করতে কেন গেলি ? মিষ্টতা ছিল না , ছিল শুধু
যন্ত্রনা । বুক ভরা নিঃস্বাসে ক্লান্ত হয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম
তোকে নিয়ে। আর সেই নিঃস্বাসে আর্তনাদ যেন না মিশে যায় তার জন্য মুখ চেপে ধরেছিলিস
তুই। তোর হাত , তোর আঙ্গুল যার স্পর্শ পেতে আমি আকুল হয়েথাকতাম , সেদিন তার দৃঢ়তা
আমাকে শিথিল করেনি । যখন মুখ চেপে ধরলি , আমি তখন শেষরক্ষা করতে চেঁচিয়ে বলতে
চেয়েছিলাম , আমি তোকে ভালোবাসি । সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে তোর পরীক্ষার সমাধান ঘোষণার
ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়েছিলাম । গোঙানির শব্দ ছাড়া কিছুই বেরোয়নি। কি বীভৎস ছিল
জায়গাটা । জানিস আর দশটা মেয়ের মতো আমিও ফুল ভালোবাসি।
যে ফুল বিছিয়ে কুমারীত্ব হরণ করার চিরাচরিত রীতি আছে তার বিরুদ্ধে তাই কোনো
প্রতিবাদ করিনা আমরা মেয়েরা । কি সুন্দর স্বপ্ন ছিল সেই দিনটার জন্য । তোকে ,
আমাকে আর ওই সুন্দর ঘরটাকে ঘিরে । সিনেমায় যেসব ন্যাকামি দেখায় সেরকম নয় , কিন্তু
অনেকটা। ধীরে ধীরে যে কাপড় তোর হাতে চলে আসার কথা ছিল , সে কাপড় নানা হাতে ছিঁড়ে
ছিঁড়ে আসছিল । যে রস ভালোবাসার উত্তেজনায় তোর পথ সুগম করতে বেরিয়ে আসতে পারতো , তা
বেরোলো ভয়ের উত্তেজনায়। দুটো এক নয় । শরীরের সাথে শরীরের মিলন যদি ভালোবাসা ছাড়া
হয় , তাতে সব থাকে , আনন্দ থাকে না । যাকে ভালোবেসেছিলিস , যার সাথে জীবন কাটানোর
স্বপ্ন দেখ্তিস তাকে এরকম করে দেখতে ভালো লাগছে তোর? ভয় পাস না , তোর নাম আমি
বলিনি । বাকিদের নামও আমি জানিনা । ওরা বার বার জিজ্ঞেস করছিলো, নানা ভাবে আমার
বয়ান নিয়েছে । কেউ লিখে নিয়ে গেছে , কেউ রেকর্ড করেছে অডিও কেউ ভিডিও । সবাই যেন
সেই দিনে সেই ঘটনার একটু ছোঁয়া পেতে চায় । ডাক্তার বলে দেওয়ার পরেও তারা ঘুরিয়ে
ঘুরিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে , বিচার করতে চেষ্টা করে , আমিই কি ধর্ষিতা না কি ওমেন
এমপাওয়ারমেন্ট এর ফায়দা নিচ্ছি । এখনো পর্যন্ত ঘটনা পৌঁছয়নি মিডিয়ার কাছে । ওহ
তোকে থ্যাংক ইউ বলার আছে । ধন্যবাদ, সেদিন প্রাণে মেরে ফেলিসনি বলে । প্রমানগুলো
সব ধুয়ে যাবে বৃষ্টির জলে ভেবে ছেড়ে এসেছিলিস ওই পুকুরের ধারে কাদার মধ্যে -
যেখানে শালুক ফোটে , হাঁস চরে। সকালে
যখন ঘুম ভাঙল, পড়েছিলাম
কাদার মধ্যে । জামা কাপড় জড়িয়েও দেখি শতছিন্ন সালোয়ার কামিজ থেকে উঁকি মারছে আমার
সদ্য পিষে যাওয়া কালশিটে পড়া শরীরটা। ব্যাগটা পড়েছিল পাশের ঝোপে । হাতড়ে মোবাইল
বের করে বাড়িতে ফোনে মা কে জানালাম । এতো কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কাঁদতে পারিনি। কখনো
নিজের মা কে বলে দেখবি নিজের অসহায়তার কাহিনী , দেখবি তোর থেকেও বড় অসহায় তারা।
সারারাত টেনশন করেছে , পুলিশে খবর দিতে পারেনি আমি বদনাম হয়ে যাবো বলে । তাদের আমি বলতে পারিনি তখন যে
মা আমি বদনাম হইনি , আমাকে যে ভালোবেসেছিল সে আমাকে বদনাম করেছে । মা কাপড় নিয়ে
আসার আগে পুকুর ঘাটে স্নান করতে এসেছিলো পাশের ফ্ল্যাট এর দারোয়ানটা । লোকানোর
জায়গা ছিল না । ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম জলে , গলা জলে দাঁড়িয়ে স্নান করার ভান করছিলাম ।
রক্তগুলো জলে গুলে চারপাশ লাল হয়ে যাচ্ছিলো । সাঁতার কাটার ভঙ্গিতে জল ঘুলিয়ে
দেওয়ার চেষ্টা করতে দারোয়ানটা নাক কুঁচকে তাকিয়ে উঠে পড়লো । গা মুছতে মুছতে বলে
উঠলো , " এ সময়ে পুকুরে নাই বা স্নান করলে , সবাই স্নান করে এখানে” অন্য সময়ে
লজ্জায় মাথা ঝুঁকে যেত। রজঃস্বলা মেয়েরা সবসময় ভয় পেয়ে থাকে । কিন্তু আমি যে তখন
সদ্য বে-আব্রু । আমার
লজ্জা পেলো না । তখন আমার চারপাশ জুড়ে শুধু ঘেন্না , পুরুষদের ওপর ,তোর ওপর , আমার
ভালোবাসার ওপর ,আমার নারী জন্মের ওপর । তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম , তুই জীবন
বাঁচিয়েছিস আমার তার প্রতিদান আমি দেব । আমি তোকে ধরিয়ে দিয়ে ফাঁসিতে চড়াবো না ।
তোর আশেপাশেই থাকব । তোর সামনেই ঘুরব ফিরবো । তোকেও ভুলতে দেব না আর আমিও ভুলবো
না। আর শুধু প্রশ্ন করে যাবো , কেন করলি এরকম ? যতদিন তুই উত্তর দিতে পারবি ততদিন।
আমি ভালোবেসেছিলাম তোকে । তুই ভুল
করেছিলিস , আমি তো করিনি । আমি শুধু প্রশ্ন করে যাবো তোর কাছে , বাকি জীবন , সারা
জীবন - উত্তর দিবি তো ?
No comments:
Post a Comment