ডাচেস অফ কেমব্রিজ
তৃতীয় ডিম পেড়েছে আর বিশ্ব জুড়ে নাচানাচি। দ্বিতীয়টার সময়ও একই নাচানাচি হয়েছিল। নাক
কুঁচকে ভুরু উল্টে ইগনোর মেরে দিয়েছিলাম। কিন্তু টুইটারে , ফেসবুকে , প্রথম পাতায়
, প্রাইম টাইমে এতবার করে দেখাতে লাগল যে এই লেখাটা না লিখে পারলাম না । রাজপুত্রের
বাচ্চা হয়েছে বলে নাকি সবাই উচ্ছাসে ফেটে পড়ছে। কে রাজা ? কোন রাজত্ব ? কি তার পরিচয়?
আমাদের তো রাজা নেই। আমরা তো স্বাধীন হযেছি সত্তর বছর আগে । আর এই হারামজাদাদেরই হাত
থেকে । এই পরিবারের মাথাতেই আছে সেই রাজমুকুট যাতে আমাদের কোহিনূর আছে । সেই রাজ্ পরিবার
যাদের নখের আঁচড়ে আমাদের দেশ আজ ত্রিধা বিভক্ত । যাদের দূরদর্শী পরিকল্পনায় মাজা ভেঙে
দিয়েছে এক অতি উচ্চমেধার প্রাচীন জাতির । যাদের কর্মকান্ডে আমরা হয়েছি গরিব। ব্যবসায়ী
থেকে হয়েছি কেরাণী । এখনো উদ্বাস্তু আর বর্ডার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত পাঞ্জাব ও বাংলা ।
তাহলে কেন আমাদের এই নাচানাচি । রক্তমাখা হাত পুতির মাথায় রেখে ওই রাণী এলিজাবেথ কি
করছে তা নিয়ে আমরা আমাদের মূল্যবান সময় কেন বরবাদ করছি ? এর থেকে তো তাপস পালের ভুঁড়ি
নাচানো ভালো। ঘা গুলো তো শুকিয়ে যায়নি । এখনো সেই মানুষগুলো তো মরেনি যারা নিজেদের
যৌবনে ওই পরিবারের নোংরামি সহ্যকরেছে। বাঙালি বাঙাল হয়েছে । হিন্দ মুসলমান দাঙ্গা করেছে
। তাহলে কেন খুশি । শিশুর জন্মে ? সবার বাচ্চা হয় । কুকুরের বাচ্চাও হয় । কি তফাৎ রাস্তার
ওই পাগলির বাচ্চা হওয়ার সাথে এর বাচ্চা হওয়ার । কালকের যারা দেশনায়ক আজ জন্মাচ্ছে কেউ
কি জানতে পারছে তাদের খবর? কেউ কি খোঁজ নিচ্ছে আজকের ইয়ুথ আইকনদের বাবা হওয়ার ঘটনার
। কেউ কি রেসে নাম দিয়েছে কোনো ভাবে নিজেদের জাতের নাম সেই বাচ্চার প্রসবের কোনো কিছুর
সাথে জুড়ে দিতে ? না , জানতেও পারা যায়না তাদের খবর। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাত নাড়িয়ে
দেখিয়ে দিয়ে গেলো , এবার তোমরা নাড়াও। খুব খারাপ লাগছিলো দেখতে। না শিশু কোলে নিয়ে
রাজপরিবারকে নয় , উচ্ছাসে ফেটে পড়া ভারতীয়দের দেখে , ভারতীয় মিডিয়ার নাচ দেখে , ফেসবুকের
বুকে আলোচনা দেখে । মানুষের উচ্ছাসের কারণ দেখে। সরি , পারলাম না। পারলাম না মেনে নিতে
এই দাসত্বের উচ্ছাস , পারলাম না হতে সেই হাতি যে পলকা শিকল ভেঙে বেরোত পারেনা কারণ
শৈশব কেটেছে শৃঙ্খলে। আমার জন্ম স্বাধীন ভারতে । আমার
জন্ম যুদ্ধের পর , শান্তির সময়ে যখন তীক্ষ্ন বাক্যবানে জর্জরিত শিশু মরছে টপকে আসার
যন্ত্রনায় । দেশজুড়ে পাকিস্তান বাংলাদেশকে গালাগালি করছে লোকে , উঠছে টেরোরিজম , বেকারত্ত্বে
বন্দুক ধরে নিজের লোককে ঝুলিয়ে দিচ্ছে কসাইখানার
আংটাতে । আমি পারলাম না ওদের হাসিতে সামিল হতে । এখনো পারিনি ব্রিটিশদের মেনে নিতে
। কিন্তু দুপয়সার চাকুরে তো হয়তো কোনো দিন এদেরই পা চেটে দেখবো প্রয়োজন হলে । তবে আজ
না , আজ পর্যন্ত না , পারলাম না ।
No comments:
Post a Comment