Sunday, May 27, 2018

৪৯) আধ্যানের ডায়েরী - বাবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম



মাঝে মাঝেই দেখি বাবা বাড়িতে।  কি, না ওয়ার্ক ফ্রম হোম।  সে আবার কি ? আমি তো রোজ ডে কেয়ারে যাই। সারাদিন কত কিছু করি।  বাবার মতে সেটা অল প্লে , নো ওয়ার্ক।  কিন্তু আমার কাছে সেটাই ওয়ার্ক।  এন্ড আই ডু ইট লাইক ওয়ার্ক।  সারা দিন না খেয়ে দেয়ে , কখনো ভিলেজে , কখনো কিচেনে , কখনো আবার বল পিট্ এ , আমি সারা দিন আমার কাজ করে চলি।  আর বাবা , বাবা সারাদিন বাড়িতে বসে থাকে।  

একদিন ইচ্ছা হলো, বাবা কি করে দেখি।  সেদিন দু চার বার বেশি পটি করে দিলাম আর মা বাবাকে বললো , ‘তুমি যখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমই করছো তখন ছেলেটা থাক। ‘ বাবা মায়ের কাছে বিশেষ কিছু বলতে পারেনা।  আগে একবার সাত দিন বাড়িতে ছিলাম তখন ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি।  এখন ভালো করে বুঝতে হবে যে করে কি লোকটা সারা দিন।  

মা চলে যেতেই , ফোন নিয়ে বসে পড়লো।  আমাকে টিভি চালিয়ে দিয়ে ভলিউম টা আস্তে , মানে খু-ও-ও-ও-ব আস্তে করে দিলো।  আমি শুনতেই পারছিলাম না।  কিন্তু সে ঠিক আছে।  তখন আমার টিভিতে কি হচ্ছে তার দিকে নেশা নেই।  বাবা যখনিই ফোনে বসে থাকে , তখনই নাকি মিটিং এ থাকে।  মিটিং কি আর ফোনে হয় নাকি।  আমার যখন বন্ধুদের সাথে মিটিং থাকে তখন তো আমি গিয়ে সেই পার্কে হাজির হই , যেখানে আমার মতো সবাই থাকে।  কিন্তু বাবার শুধু ঢপবাজি।  ফোনে শুধু “হুঁ “ আর “হ্যাঁ” , এ আবার কিরকম  ধরণের মিটিং।  

আমি কিছু একটা বলতে যাবো , হটাৎ দেখি হাঁই মাই খাঁই করে কিছু একটা বলে দিলো।  তারপর আবার সেই  “হুঁ “ আর “হ্যাঁ” . সামনে আবার ল্যাপটপ খোলা।  সারাদিন ওই ল্যাপটপ নিয়ে যে কি করে বাবা , বুঝিনা বাপু।  খড় খড় করে শুধু আওয়াজ হতে থাকে।  মাঝে মাঝে টুং টাং।  

আমার কিন্তু ল্যাপটপটা বেশ খেলার জিনিস লাগে।  ওই কালো কালো জিনিস গুলোর ওপর হাত দিলেই দেবে যায় , আর পেছনে লাইট জলে ওঠে।  আর দুটো বাটন আছে।  সেগুলো এমনিতে সাদা থাকে , কিন্তু আমি প্রেস করলেই লাল হয়ে যায়।  আমার প্রথম টার্গেট ওটাই থাকে।  কিন্তু ওটা টিপে দিতেই বাবা চিৎকার করতে থাকে , ‘দিলি তো নেট টা কেটে’ . জাল কোথায়।  আর আমি কখন কেটেছি , বুঝিনা বাপু।  কিন্তু আমার খেলাটা বেশ লাগে।  ঠিক যেমন ফোনের মধ্যে ওই লাল বাটনটা টিপতে।  

সেদিন বাবার মিটিং শেষ হতে আমি গিয়ে বসলাম বাবার কাছে।  দেখবো কি করে।  বাবার নাকি খুব কাজ।  সারাদিন কাজ করে।  কিন্তু একি , বাবা শুধু এ বি সি ডি লিখছে।  ওই কালো জিনিস গুলোর ওপর এবিসিডি লেখা আছে।  সেটার ওপর প্রচন্ড স্পিডে আঙ্গুল চালাচ্ছে আর স্ক্রিনে লেখা ফুটে উঠছে।  এ বি সি ডি।  এই নাকি কাজ।  এর জন্যে নাকি পয়সা পাওয়া যায়।  আর তাই নিয়ে নাকি আমার টয় কেনা হয়।  এর চেয়ে আমায় বললেই হয়।  আমিই না হয় সারা দিন বসে বসে তোমার জন্য এবিসিডি লিখে দিতে পারি।  

আমি আমার হাত বাড়ালাম।  বাবা হাত সরিয়ে দিলো।  দেখলে কেমন মানুষ।  হাত বাড়ালে হাত ধরতে হয় , আর এই আহাম্মক বাবা , হাত দিলো সরিয়ে।  কিন্তু আমি বিশেষ কিছু মাইন্ড করিনা।  আমি আবার হাত বাড়ালাম।  এবার বাবা বিরক্ত মুখে আমাকে কোলে তুলে নিলো।  আর আমার কোলে ল্যাপটপ রেখে দিলো।  তারপর আমার আঙ্গুল গুলো নিয়ে ল্যাপটপের ওই কালো জিনিস গুলোর ওপর একটা একটা করে টিপতে লাগলো।  আর স্ক্রিনে এক এক করে এ বি সি ডি ই সব ফুটে উঠতে লাগলো।  বেশ মজাদার।  কিন্তু আরো বেশি মজা লাগছিলো যখন একটা কালোতে বার বার টিপছিলাম আর একই লেখা বার বার ফুটে উঠছিল।  আর বাবা যাচ্ছিলো রেগে।  

বাবার সব কিছু নিয়ম মাফিক হতে হবে।  এ এর পর বি ই আসতে হবে।  কেন ? সে তো বলার সময়।  আমি দেখেছি বাবা যখন লেখে তখন রীতিমতো উল্টোপাল্টা লেখে।  এ এর পর ডি তারপর এইচ , তারপর ওয়াই তারপর আবার এ আবার এন লিখেই বলতে আরম্ভ করলো , আধ্যান।  এরকম উল্টোপাল্টা লিখতে তো আমিও পারি।  ওই কালোগুলোকে বলছে “কিই”।  সে আবার কি।  যাই হোক একবার এক দিক থেকে আরেক দিকে হাত ঘষে দিলেই তো অনেক লেখা ফুটে ওঠে।  কিন্তু আমাকে ধরে ধরে লেখানোর সময় সেই এ , বি , সি , ডি।  কিচ্ছু জানে না বাবা টা।  সারা জীবন তাই বাবা হয়েই থাকলো।  কিছু করতে পারলো না।  

আমি কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলাম ল্যাপটপ।  সেদিন আমার বাবাকে অবসার্ভ করাই উদ্যেশ্য , বাবার সাথে খেলা না। বাবা সারা দিন ফোনে গল্প করলো আর মাঝে মাঝে এবিসিডি লিখলো।  মাঝে আবার দেখি আমার টিভি চ্যানেল পাল্টে কি সব খেলা দেখছে  টিভিতে।  সবাই মিলে একটা বলের পেছনে দৌড়াচ্ছে।  আমি অবাক।  বাবার মতো সব বড় বড় লোক।  সবাই একটা বলের পেছনে দৌড়াচ্ছে কেন।  আমার কাছেই তো অনেক বল আছে।  রেড বল , ইয়ালো বল , পাপল বল, আমিই ওদের দিয়ে দিতে পারি।  সবাই খেলুক সেগুলো নিয়ে।  কিন্তু ওরা একটা বল নিয়েই খেলবে আর বাবাও হাঁ করে দেখবে।  বাবা  কি ওই খেলা দেখার জন্য পয়সা পায়।  

আমি দুপুরে দুধ খাওয়ার পর একটু ন্যাপ নি।  ঘুম ভেঙে দেখি বাবা পাশে শুয়ে সাংঘাতিক নাক ডাকছে।  আমি দু চার বার বললাম লোল ওভা , লোল ওভা, কিন্তু কোনো লাভ নেই।  বাবা সেই নাক ডেকেই চলেছে।  আমি আর কি করি , নিজের পড়াশুনা শুরু করলাম।  বাবাকে নিয়েই হেড , শোল্ডার, নিস্ এন্ড টোস করলাম।  আইস , এন্ড ইয়ার , এন্ড মাউথ এন্ড নোস্।  যেই  নাকের ফুটোয় হাত ঢুকিয়েছি বাবা সেই বিষম টিশম খেয়ে উঠে পড়লো।  আমি বুঝতেই পারলাম না ব্যাপারটা কি হলো।  

ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপ টা দেখলো অন আছে কি না।  বাবার হাতে মাউসটা লাগানো থাকে একটা ব্যান্ড এর সাথে। যখনিই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে তখনি এটা করে।  কি জানি কেন।  কিন্তু মায়ের যেমন ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে অন্ধকার হয়ে যায় , বাবার কিন্তু হয় না।  ল্যাপটপ চেক টেক করে দিব্যি আমার সাথে খেলতে আরম্ভ করলো।  আমার কিন্তু সেদিন কোনো রকম মন ছিল না যে বাবা আমার সাথে খেলুক।  আমি চাই বাবা কাজ করুক আর বিকালে আমার সাথে খেলুক।  কিন্তু ব্যাপারটা দেখি উল্টো, বাবা সারা দিন কোনো কাজই করলো না।  কিছুক্ষন এবিসিডি লিখে আর ফোনে মিটিং করেই কাটিয়ে দিলো।  

আমি ছোট হতে পারি।  কিন্তু রেস্পন্সিবল এবং এথিকাল। আই ডোন্ট টেক এনিথিং ফর গ্র্যান্টেড।  আমি সবার এন্টারটেইনমেন্ট করি , আর তার পরিবর্তে আমি খেতে পাই।  সেটা আমার কাজ।  বাবা কি করে ? কি করে শুনি।  সারা দিন সোফায় বসে থাকে নয়তো টেবিলে বসে থাকে।   সিটিং ইস দা নিউ স্মোকিং , শোনেনি কোনোদিন।  আর তার জন্যেই গাদা গাদা পয়সা পায়।  সেটাও জানিনা ছাই কি পায়।  নিশ্চয় খুব কম , নাহলে সব খেলনা মা কেন কিনে দেয় ? যাই হোক বাবার উচিত একটু কাজে মনোযোগ দেওয়ার।  তাতে নিজের আর ছেলের ভবিষ্যৎ মজবুত হবে।  মুড টা বিগড়ে গেলো বাবার অপকর্ম দেখে। আজেকে আর লিখছি না. 


আধ্যানের ডায়েরির  পাতাগুলি 

Friday, May 25, 2018

প্রবন্ধ ৩১ - আমরা যারা বিপক্ষে



‘দুদিন আগেই তো বলতিস বাজপেয়ী সেরা, মোদী সেরা।  আজ বিজেপির নামে গালাগালি দিচ্ছিস কেন?’ ‘ কমরেড বলে তো লোকে তোকে গালাগালি করতো , এখন হঠাৎ মমতার দিকে হেলে গেলি কেন? ‘ ‘শালা হিপোক্রেট কমিউনিস্ট , এতদিন কংগ্রেসের বুর্জোয়া রাজনীতির এগেনস্ট এ কথা বলতিস , হঠাৎ কি হলো কংগ্রেস কংগ্রেস করছিস।’ এরকম গালাগালি রোজ খাই।  ভরপুর খাই।  মন ভরে খাই।  না কোনো পার্টি করি।  না বাবা কাকা কেউ পার্টি তে আছে যাদের সাপোর্ট করি।  কিন্ত দলবদলের রাজনীতির গালাগালি আদ্যোপান্ত খাই।  লোকে মনে করে যে পার্টি বেশি ঘুঁষ দেয় সেই পার্টির হয়ে বলি।  এখন তো আবার মিডিয়ার কেনা বেচা তো আছে।  আমার এই ইন্টারনেট মুক্ত মঞ্চ এখনো এক পয়সাও দেয়নি , তো পার্টি কোন ছাড়।  

লোকেদের মুখ বন্ধ করার কোনো দরকার নেই।  তবু প্রচুর গালাগালির জবাব দেওয়া বাকি।  তাই বলছি।  আমি কোনো দলের নই।  মন থেকে তীব্র বামপন্থী,যুক্তিবাদী আবার স্পিরিচুয়াল ।  কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মোদী কে সাপোর্ট করতাম।  বাজপেয়ীর গোল্ডেন কোয়াড্রিলিয়টরাল প্রাণ দিয়ে সাপোর্ট করেছি। মমতা কে পাগলী মাগিও বলেছি।  কিন্তু অগ্নিকন্যাও মানি।  খ্যাপামি না থাকলে ওই লেভেল এর পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।  জ্যোতিবসুর মৃত্যুতে হাউ হাউ করে কেঁদেছিলাম।  কিন্তু কমন স্ল্যাং “জ্যোতে পাঁঠা “ বলে খিল্লি করতেও ছাড়িনি।  লালুর কেলেঙ্কারি নিয়ে এথিকাল প্রশ্ন তুলেছিলাম , কিন্তু রেলের ভাড়া কমানোতে সঙ্গে ছিলাম, যদিও সেটাও বড় গিমিক ছিল।  মনমোহনের মৌনতা থেকে আসারামের যৌনতা সব কিছু নিয়েই আমি ভ্যাজাল বকেছি।  তাহলে আমি কি।  

আমি সদাই বিপক্ষে।  আমি খুঁত ধরি।  আমি চিৎকার করি।  আমি যাকে আজ ভালো বলি কাল তাকেই গালাগালি দি।  আমি স্তাবক নই।  আমি প্রশংসাও করতে পারি , নৃশংস ঘৃণাও করতে পারি। কাউকে মেনে চলা  মানে তার কাছে, তার চিন্তাভাবনার কাছে হেরে যাওয়া।  ওরা কি বাবা , না মা।  বাবা মার সমালোচনা যখন করতে পারি তখন এরা তো চাকর। কেউ ভালো চাকর , তাদের ভাল কাজকে সাপোর্ট করি।  কেউ ভালো ছিল , এখন বার খেয়ে খারাপ হয়েছে , তাদের দিই ঠুকে।  কেউ খারাপ ছিল কিন্ত লোকেদের মুরগি করে ভালো সেজেছে , দিই এক টানে তার মুখোশ খুলে।  

কারো খুঁত বার করা খুব সহজ।  খুব , খুব , সহজ।  কিন্তু বিপক্ষে থাকা খুব কঠিন।  আর সেটা যদি বস্তু বা ব্যক্তির বিপক্ষে না , তাদের কর্মকান্ডের বিপক্ষে।  কারণ তারা অনেক সময় এমন কাজ করে যেটা তুমি বুঝতে পারছো মাথা ঘোরানোর জন্য করছে , কিন্তু তুমি বলতে পারবে না।  কারণ সেগুলো দরকার।  সবসময় সব কিছু ঠিক করা যায় না।  আর আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখার। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা তাদের সামনে, যারা  আসল কাজ করবে।  যারা কাজ করে তারা কখনোও নিজের কাজ বিচার করতে পারে না।  তাই রান্না করে অন্যদের দিয়ে টেস্ট করাতে হয়।  আমাদের অস্তিত্ব যদি স্বাধীন থাকে তাহলে কোনো কাজ করতে সবাই ভয় পাবে।  এই ভয় এনে দেবে পারফেকশন।  আর তাতেই এগিয়ে যাবে সমাজ।  

আমরা সমালোচনা করবো।  আর সমালোচনা কে যারা ভয় করবে তাদের উপড়ে ফেলবো।  কারণ যারা সমালোচনা কে ভয় করে তারা কাজের যোগ্য নয়।  যারা সমালোচনাকে পাথেয় করে তারা উত্তম কর্মী।  আমরা চাই আমাদের মুখ এরা বন্ধ করুক।  কিন্তু গায়ের জোরে নয়।  বৃক্ষ , ফলেন পরিচয়তে।  করে দেখাক কাজ , আমরা চুপ করে যাবো।  কারণ আমরা কন্সট্রাক্টিভ ক্রিটিসিজম এ বিশ্বাস করি।  ভালো কে আরো ভালো , আরো ভালো করার রসদ যোগাই।  পিঠ চাপড়ে “দারুণ” বলিনা।  বলি , “আরো ভালো করতে হবে।” 

গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ অবদান এই বিপক্ষবাদ।  এর অস্তিত্ব যখন কমতে থাকে বা কমানোর চেষ্টা করা হয় তখন বাতাসে ভরে ওঠে একনায়কতন্ত্রের পচা গন্ধ। ঐসব যদা যদা হয় ধর্মস্য টাইপ কথার দিন শেষ।  কেউ ধর্মী , কেউ অধর্মী নয়।  সবাই চায় পৃথিবীর বুকে কিছু পদচিহ্ন রেখে যেতে।  সবাই চায় , সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন।  ভালো খাওয়া , ভালো পড়া আর শান্তি।  কিন্তু সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট এর কারণে , পাঁঠার ঝোল রবিবারের শান্তি।  আমরা সবসময় সেই পাঁঠাদের দলে।  আমরা চিৎকার করি।  হাত পা ছুঁড়ি , তাতে হয়তো কয়েক ঘন্টার জন্য এই পৃথিবীর বুকে নিঃস্বাস নেওয়ার অধিকার জিতে নিই।  আমার রক্তে দুপুরের ঘুম আসবে বলে আমি গিয়ে হাঁড়ি কাঠে মাথা নিজে থেকে দেব না।  

লোকে আমাদের গালাগালি দেয় , সব কিছুতে ফ্যাকড়া তোলার জন্য।  “মানুষটা , একটু ভালো কাজ করতে চেয়েছিলো।  সবাই মিলে বাঁধা দিয়ে কাজটাই পন্ড হয়ে গেলো।” যে কাজ , মানুষের বাঁধা দেওয়ার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।  সেই কাজ কখনো মানুষের স্বার্থে সুখকর হয় না।  সে রাজনৈতিক দল হোক, বা গ্যালিলিওর সমসাময়িক বিশপরাই হোক। আমরা আমাদেরকেই বাঁধা দিই , বাঁধা দেওয়ার জন্য।  আমরা মানুষ।  আমাদেরও ভুল হতে পারে, তাই আমরা চাইনা আমাদের ভুলের জন্য কোনো বাঁধা সৃষ্টি হোক।  আমরা মুক্তমনে চিন্তা গুলো গোল টেবিলে রাখি।  এসো , বিচার কর , তর্ক করো, কিন্তু দেখিয়ে দিয়ো না এটাই পথ।  আমরা থাকবো , আমরা বলবো , তোমরা করবে।  কারণ আমাদের কাজই এটাই।  আমরা ল্যাডারের সেই দিকে দাঁড়িয়ে আছি , যেখানে তোমাদের এসিড টেস্ট হবে।  আমাদের ইগনোর করলে , তোমার কাজ সম্পূর্ণ হবে না।  স্তাবকরা থাকে না দুর্দিনে , আমরা থাকি।  আমরাই বলে দেব কোথায় কোথায় ভুল হয়েছিল।  আবার লড়বে , আবার ঠিক করবে , আর নিজেকে তৈরী করবে সর্বজন গ্রাহ্য করে।  তবেই না হবে গনতন্ত্র।  

রাজনীতি খুব কঠিন। নিজের বাড়িতে নিজের পরিচিত দের নিজের কথা মানানো যায় না।  সেখানে একটা গোটা দেশকে একটা পদক্ষেপে সামিল করা ভয়ঙ্কর কঠিন।  সেটাই মসৃন হয়ে যায় যখন ইঁট গুলো আমরা বিচার করি।  আমাদের দুঃখী করা যায় না।  সুখ আমাদের চাইনা।  আমরা চাই তোমরা এগিয়ে চলো।  আর এমন এক সমাজ দাও যাতে নিঃস্বাস নিতে পারি।  

এই আমি কখন আমার কথা লিখতে লিখতে আমরা হয়ে গেছি বুঝতে পারিনি।  কারণ আমি একটা সত্বা একটা চিন্তা, কিন্তু মৌলিক নই।  আমার মতো অনেকই মনে করে , এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো।  তাই আমি নই , আমরা - বিপক্ষ।      

আগের প্রবন্ধগুলো 



Tuesday, May 22, 2018

৪৮) আধ্যানের ডায়েরী - সব দোষ বাবার




সেদিন খেলছিলাম আমার নতুন গাড়ি নিয়ে।  এই গাড়ি না আমার সাংঘাতিক ভালোবাসা।  যেখানে যাই সেখানে গাড়ি দেখলে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা।  ছুটে ছুটে যাই।  জড়িয়ে ধরি।  আর তারপরেই বেরিয়ে আসে হুইলস ও দা বাস গোস রাউন্ড এন্ড রাউন্ড।  কিন্ত কথাটা সেটা নয়।  কথাটা সেদিনের। ডে কেয়ার থেকে বাড়ি ফিরে আমি খেলছি আমার গাড়ি নিয়ে।  ডে কেয়ারে একটু আগেই আমার নামে কমপ্লেন ঠুকেছে।  আমি নাকি সব কিছু ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলি আর তাতে নাকি একটা টিচারের গায়ে লেগেছে আর সে উন্ডেড হয়ে গেছে।  

এস ইউসুয়াল বাবা মা দুজনেই অপমান আমার ওট আর দই কোঁৎ করে গিলে নেবার মতো গিলে নিয়েছে।  আর বাড়ি আসতে আসতে আমার পিন্ডি চটকেছে।  এইখানে আমার একখান কথা আছে।  গাড়ি আমি ছুঁড়েছি মানছি।  আমার ভালো লাগে এখন জিনিস পত্র ছুঁড়ে ফেলতে।  কেন ছুড়ি তার কারণটা বুঝতে হবে।  ‘ইয়া-য়া -য়া ‘ বলে যখন ছুঁড়ি তখন আমার এক্সপেরিমেন্টাল বোন টিকল হয়। এক্সপেরিমেন্ট মানে কি ? ইমাজিন করো ,  ভাবো কিছু একটা হবে , করে দেখো, ফেল করলে অন্য কিছু করো।  দ্যাট ইস এক্সপেরিমেন্ট।  সব সময় দেখি সব কিছু ওপর থেকে নিচে আসে।  কিন্তু নিচ থেকে ওপরে পাঠানোর জন্য আমাকে কি কি করতে হবে সেটা শেখাই  উদ্যেশ্য।  আমি সব কিছু ছুঁড়ে দেখেছি , যে যা ছুঁড়বে , সেটা নিচেই ফিরে আসে।  কেন আসে? কি করলে সেটা ওপরে থাকে সেটা মাপতে থাকি।  প্রত্যেক বার বেশ কিছুক্ষন জিনিসটা ওপরে থাকে।  যত জোরে ছুঁড়ি তত বেশিক্ষন ওটা ওপরে থাকে।  তাই প্রত্যেক দিন এই ছোঁড়ার জোর বাড়িয়েই চলি।  একদিন ঠিক দেখবে আমি কিছু একটা ছুঁড়বো, আর সেটা কোনোদিন নিচে নেমে আসবে না।  সেদিন আমার এক্সপেরিমেন্ট সাকসেসফুল হবে।  

এখন আবার দুটো জিনিস দু হাতে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেখছি।  দেখলাম দু জায়গায় গিয়ে পড়লো।  কিন্ত ওতো উঁচুতে উঠলো না।  আমি চালিয়ে যাবো নানা ভাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো।  ডে  কেয়ারে যদি আমি কোনো জিনিস ছুঁড়ে দি আর সেটা যদি আমার গায়ে এসে লাগে তাহলে আমি তো আমার টিচারের থেকে বেশি উন্ডেড হবো।  হবো না কি ? তাহলে বাবা মার কি এটা বলা উচিত ছিল  না যে উন্ডেড করার মতো জিনিস ডে কেয়ারে রেখেছেন কেন? এই ওল্ড স্পিসিস দের একটাই সমস্যা।  এদের ব্রেন এর কেপাবিলিটি কমে যেতে যেতে এমন হয়েছে , যে এরা ঠিক সময়ে ঠিক ঠাক রিয়াক্ট করতে পারে না। শুধু এর ওর তার নামে দোষ দিয়ে ব্যাপারটা এভোইড করা ছাড়া আর কিছু হয় না।  

সেম ঘটনাটা বাড়িতে রোজ ঘটতে থাকে।  আমরা থাকি দোতলা তে।  কাঠের বাড়ি তাই আমি একটু লাফালাফি করলে নিচ থেকে কমপ্লেন আসে। আর নিচের লোকগুলোরও বলিহারি।  সব কিছুতে কমপ্লেন করার কি আছে।  তার থেকে ফোন করে আমাদের বলে দিলেই হয়।  আমি গুড বয়।  কিন্তু আমি সব সময় বুঝতে পারিনা এই বড়দের কি চাই।  নিজেরাই কনফিউসড।  আর আমাকে বলতে আসে।  

সেদিন যখন খেলছি , দরজায় নক পড়লো।  দরজায় নক পড়লেই আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি।  এমনিতে তো কেউ আসে না।  একটু আসলে খুশিই হই।  এই খুশির চোটে আমি গিয়ে আগে দরজা খুলতে যাই।  কিন্তু খুলতে পারিনা।  আমি দরজার লক খুলতে শিখে গেছি অনেকদিন।  একদিন বেরিয়ে গেছিলাম যখন মা বাথরুমে।  বেরিয়ে গেছি কিন্তু ঢুকতে পারিনা।  ভয়ে সিঁটিয়ে গেছিলাম।  ভাগ্যিস বাবা তখনিই ঢুকেছিলো। সে কি ঝাড় দিয়েছিলো মা কে।  তার পর থেকে আমার হাতের নাগালের বাইরে আরেকটা লক লাগিয়ে দিয়েছে।  

দরজায় একটা ফুটো আছে।  সেটা দিয়ে বাইরে দেখা যায়।  মা দেখে বললো দুজন দাঁড়িয়ে আছে।  একটা ছেলে একটা মেয়ে।  বাবা বললো , ‘ নাও আবার মনে হয় নিচ থেকে ছেলের অন্য কমপ্লেন এসেছে। ‘ আগে থেকেই স্পেকুলেশান।  আমি তো হাঁ।  কি করলাম আমি।  কিছুতেই মনে পড়ছে না কাল পরশু আমি কিছু করেছিলাম কিনা।  ভাবতে ভাবতে দেখি বাবা দরজা খুলছে।  আমি বাবার পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়াতে , ওরা বললো ওরা নিচেই থাকে। আমি ভাবলাম হয়ে গেলো।  

বাবা আগেই বলতে আরম্ভ করে দিলো , ‘ আই এম রিয়ালি সরি এবাউট দা নয়েস।’ আমি ততক্ষনে বাইরে বেরিয়ে ওদের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছি।  বাবা বলে চলেছে , ‘ হি ইস রিয়ালি নটি। আই এম সরি।  রিয়ালি সরি.’ লোকটা তখন বাবাকে থামিয়ে বললো, ‘নো , নো , দিস ইস নট ফর হিম।  দিস ইস ফর দা অ্যাশ ইউ থ্রো ফ্রম দা ব্যালকনি।’ বাবা মা কে জিজ্ঞেস করলো , ‘ আধ্যান কি এখন ছাইও ছুঁড়ছে নাকি বাইরে।  ছাই কোথা থেকে পেলো। ‘ মহিলাটি বললো , ‘নো নো , দ্যাটস দা সিগারেট অ্যাশ। ইউ নিড পুট ইট ইন ইওর অ্যাশ ট্রে।  প্লিস ডোন্ট ক্লিয়ার ইট ফ্রম ইওর প্যাটিও।’ লেঃ।  বাবার মুখ চুন।  আমি হিরো।  সব কিছুতে দোষ ধরা তো।  বাবা  সিগারেট খেয়ে ছাই ঝেড়েছে সেটা গিয়ে ওদের ব্যালকনি তে ঢুকেছে।  আর সেই নিয়ে বলতে এসেছে।  

বাবা তার কাজের জন্য দু চারবার সরি টরি চেয়ে আবার শুরু করলো , ‘আই উইল টেক কেয়ার অফ দা অ্যাশ।  ইফ ইউ হ্যাভ এনি আদার প্রব্লেম রিগার্ডিং নয়েস প্লিস কল মি বিফোর কমপ্লেইনিং টু দা সোসাইটি।’ ওরা বার বার বলে চললো , ‘উই হ্যাভ লিটিল  কিড টু।  উই আন্ডারস্ট্যান্ড।  ইউ নিড টু কন্ট্রোল ইওর অ্যাশ অনলি। দ্যাটস অল।’ আমি তখন ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছি।  মুখে মিচকি মিচকি হাসছি।  হেব্বি লেগেছে।  

দরজা বন্ধ হতেই মা শুরু হয়ে গেলো।  কি ঝাড় না ঝাড়লো মা, বাবাকে।  বাবা , যে এতক্ষন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো, সে ভিজে ন্যাতার মতো পরে থাকলো।  হু হু বাবা। এতদিন বলেছি সিগারেট ভালো জিনিস না।  মা এতো চ্যাঁচানোর পরেও সিগারেট খাও।  তোমার সিগারেট খাওয়ার জন্য আমাকে এটিকেট থাকতে হয় আমার প্লে এরিয়া তে।  তার পরেও এসব করো।  লোকে বাড়ি বয়ে এসে অপমান করছে।  ছি ছি।  হেব্বি মনোলোগ দেওয়ার ইচ্ছায় ছিলাম।  কয়েক বছর পর দেব।  আপাতত জেনে রাখুক যে সব দোষ আমার নয়।  আর আমার দোষ ও তোমাদের  দোষ কারণ আমিও আমার নয় , তোমাদের।       

আধ্যানের ডায়েরির আগের পাতাগুলো